০২:৪৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৮ মে ২০২৪

অবশেষে চেক নগদায়নের শর্ত থেকে সরে আসছে বিএসইসি

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০৯:৪৩:৫২ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২২
  • / ৪২৯৬ বার দেখা হয়েছে

ফাইল ফটো

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: অবশেষে শাস্তির বিধান রেখে চেক নগদায়নের আগে শেয়ার কেনা যাবে না- এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। রোববার রাতে সংবাদমাধ্যমকে বিএসইসির চেয়ার‌ম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

জানা গেছে, চেক নগদায়ন না করেই শেয়ার কেনার সুযোগ রেখে নতুনভাবে আইন করাত যাচ্ছে সংস্থাটি। তবে ব্রোকারেজ হাউজে চেক জমা দিলেও সেটি ব্যাংকে না পাঠিয়ে শেয়ার কেনার মতো জালিয়াতির আশ্রয় নিলে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

বিএসইসির চেয়ারম্যান ওই নিউজপোর্টালকে বলেন, ‘আমি একটা সলিউশন করে দিয়েছি আজকে মিটিং করে। বাস্তবতার নিরিখে ব্যবস্থা দুই একদিনে মধ্যেই হয়ে যাবে। আইন পরিবর্তন হবে এজন্য অর্ডার দিয়ে করতে পারিনি। আইন বানাচ্ছে হয়তো কালকে বা পরশুর মধ্যে হয়ে যাবে, দিয়ে দেবো। একটা ব্যবস্থা করে দেবো যাতে গভর্ন্যান্সও থাকে জালিয়াতিও না করতে পারে। আর যদি জালিয়াতি করে তার দায়ভারও তাকে নিতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘চেক দিয়ে শেয়ার কেনার সুযোগ করে দিচ্ছি, কিন্তু চেক তো সঙ্গে সঙ্গে জমা দিতে হবে নাকি। পাঁচদিন তো আর রেখে দিতে পারে না। পরবর্তী পসিবল আওয়ার বা ব্যাংকিং ডেতে জমা দিতে হবে।’

নির্দেশনা পাল্টালে আবার যদি একই কাজ হয়, তাহলে কী হবে- জানতে চাইলে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘চেক ডিস অর্নার হলেও কী হবে সেটাও তো বলে দিতে হবে। চেক নিয়ে করতে দেবো, সেখানে দায়-দায়িত্ব নিতে হবে।

‘আজকে আমরা ড্রাফট করে ফেলছি। কাল-পরশুর মধ্যে হয়ে যাবে। তাড়াহুড়া করছি না কারণ অনেক ফাঁকফোকর আছে। মানুষকে ব্যবসা করতে না দিলে তো ইকোনোমি ঠিক থাকবে না।’

তিনি বলেন, ‘চেক দিয়ে এক চাও তো চেক দিয়ে খাওয়া যায় না। আমি চেক দিলে কেউ আমাকে এক কাপ চা দেবে? এটা কোনো কথা যে, ৫০ কোটি, পাঁচ কোটি, ২০ কোটি টাকার শেয়ার চেক দিয়ে কিনে ফেলবেন। তারপর চেকটা জমা দেবেন না। পাঁচ-সাতদিন পর চেকটা বাউন্স করতে পারে। আবার পাঁচটা চেক দিলেন ১০ কোটি করে, তারপর প্রথম দুইটা থেকে যা লাভ হলো সেটা বিক্রি করে চেকগুলো অনার করা শুরু করলেন। এরকম সুযোগ করে দিলে গভর্ন্যান্সের আর কিছু থাকবে?’

আরও পড়ুন: পুঁজিবাজারের সঙ্কট উত্তোরণে বিএসইসিতে বিনিয়োগকারীদের ১২ দফা

চেক নগদায়ন করে শেয়ার কিনতে অনেক ক্ষেত্রে দুই সময় লাগতে পারে, তখন কাঙ্ক্ষিত মূল্যে শেয়ার পাওয়া যেতে নাও পারে- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘ইএসটিএন, আরটিজিএস নাই, পে-অর্ডার নাই? আপনি যদি চান যে এই মুহূর্তে কিনতে হবে, তাহলে ব্যাংক গিয়ে একটা পে-অর্ডার দিলেই তো এক মিনিটে কিনে ফেলতে পারে। দ্বিতীয়ত, ব্যাংকে গিয়ে আরটিজিএস করে দেন রিয়েল টাইম চেক ট্রানজেকশনে ট্রানফার, ইএফটিন করে দেন। আপনাকে ক্যাশ তুলে বা চেক দিয়ে কেন করতে হবে কেন? আরও তো অনেক পদ্ধতি আছে, যদি টাকা থাকে অ্যাকাউন্টে।

‘আরেকটি বিষয় হলো, আমি চেক দিলাম অ্যাকাউন্টে, চেকটা জমা হয় না কেন? একটা জায়গায় পাঁচটা চেক জমা হয় কেন? চেক বাউন্সের জন্য আজ পর্যন্ত কেউ কি কিছু করে?

‘আমাদের ৩৭টি জায়গা থেকে শর্টফল পাওয়া যাচ্ছে কাস্টমার কনসোলিডেটেড অ্যাকাউন্ট থেকে, এই হলো ঘটনা। যেগুলো লাভ হয়েছে সেগুলো তো নিয়ে গেছে। আর লস হয়েছে সেগুলো ওই অ্যাকাউন্ট থেকে নিয়ে দিচ্ছে। তাত শর্টফল হচ্ছে। তাহলে কীভাবে পূরণ করব পাবলিকের টাকা?’

প্রসঙ্গত, ১১ অক্টোবর স্টক ব্রোকারদের প্রতি জারি করা বিএসইসির এক নির্দেশনায় বলা হয়, চেকের টাকা নগদায়নের আগে তা দিয়ে শেয়ার কেনা যাবে না। পরদিন থেকেই পুঁজিবাজারে লেনদেন কমে যেতে থাকে।

এর মধ্যে স্টক ব্রোকারদের সংগঠন ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ বা ডিবিএর পক্ষ থেকে ডিএসই ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিকে চিঠি দিয়ে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে যে, চেক নিয়ে নির্দেশনা না পাল্টালে পুঁজিবাজারে চাপ আরও বাড়বে। ১৭ অক্টোবর এই চিঠির বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে সত্যি সত্যি চাপের বিষয়টি দেখা যায় পরদিন থেকেই।

১২ অক্টোবর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ‍পুঁজিবাজারে সার্বিক সূচক ডিএসইএক্সের অবস্থান ছিল ৬ হাজার ৫০০। সেটি এখন নেমে এসেছে ৬ হাজার ৩৩৪এ। পৌনে তিন’শ কোম্পানি ফ্লোর প্রাইসে লেনদেন হতে থাকার মধ্যে এই দরপতন বিনিয়োগকারীদেরকে আর্থিকভাবে অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।

শিবলী রুবাইয়াত চেয়ারম্যান দেশের বাইরে থাকায় বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারছিল না বিএসইসি। তিনি দেশে ফেরার পর প্রথম কর্মদিবসিই সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠকে বসেন।

বিএসইসি এমন নির্দেশনা দিয়েছে চেক দেয়ার পর ব্যাংকে তা জমা না দিয়ে বিপুল পরিমাণ শেয়ার কেনার ৩৭টি ঘটনা ধরা পড়ার পর। এক টাকা বিনিয়োগ না করেও একটি চক্র এই কৌশলে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

এর আগে বিএসইসির এই নির্দেশনা বাতিলে চিঠি দিয়েছিল ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) এবং সিইও ফোরাম।

ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) পক্ষ থেকে বিএসইসি ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে (ডিএসই)পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, ২০১০ সালের ৬ ডিসেম্বর একবার নির্দেশনা এসেছিল, গ্রাহক থেকে ব্রোকারেজ হাউসগুলো যে চেক পাবে, তা আগে নগদ টাকায় পরিণত করতে হবে। অর্থাৎ চেকের টাকা যখন ব্রোকারেজ হাউসের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হবে। তখন তারা সেই টাকা দিয়ে বিনিয়োগকারীকে শেয়ার কিনে দিতে পারবে।

এই সিদ্ধান্তের পর পুঁজিবাজারে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে দুই দিন পর ২০১০ সালের ৮ ডিসেম্বর ওই নির্দেশনা তুলে দেয়া হয়। এখন আবার নতুন করে নগদ টাকায় শেয়ার কেনার বিষয়টি বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এটির প্রভাব দেশের পুঁজিবাজারের ওপরে ভালো হবে না। তাই এই আদেশের ওপর স্থগিতাদেশ চেয়েছে ডিবিএ।

চিঠিতে বলা হয়েছে, দেশে রিয়েল টাইম ব্যাংকিং ব্যবস্থা নেই। ফলে কখনো কখনো দেখা যায় যে গ্রাহক আগে চেক জমা দেন। সেই চেকের বিপরীতে গ্রাহককে শেয়ার কিনে দেয় ব্রোকারেজ হাউসগুলো। এই নিয়মে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। এ ছাড়া সব গ্রাহক এই সুবিধা পান না। যারা ভালো গ্রাহক, তারাই শুধু এই সুবিধা পান। যেহেতু এর ঝুঁকি ব্রোকারেজকে নিতে হয়।

আরও পড়ুন: চেক নগদায়নের শর্তে টালমাটাল পুঁজিবাজার: নির্দেশনা বাতিলে বিএসইসিতে চিঠি

চিঠিতে আরও বলা হয়, এই নিয়ম বাস্তবায়ন করতে গেলে দেশের পুঁজিবাজারের লেনদেন কমে যাবে। বাজারে সূচক কমে গেলে বিনিয়োগকারীদের একটি বড় অংশ বাজার থেকে তাদের বিনিয়োগ তুলে ফেলতে পারেন। ফলে দীর্ঘমেয়াদে বাজার মন্দা দেখা দিতে পারে। তাই এই আইনের বাস্তবায়নের ওপর স্থগিতাদেশ দেয়া দরকার।

এছাড়া সিইও ফোরামের চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, যখনই কোনও ব্যক্তি বা বিনিয়োগকারী যথাযথ নথি-প্রমাণ বা সত্যতা ছাড়া ডিএসই বা বিএসইসির কাছে অভিযোগ করেন, তখনই ডিএসই বা বিএসইসি অবিলম্বে প্রক্রিয়া বা তদন্ত শুরু করে। এ ছাড়া খবর অনলাইন নিউজ পোর্টাল বা সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রকাশ হওয়ায় পুঁজিবাজার নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত হয়। পাশাপাশি পুঁজিবাজারের মধ্যস্থতাকারীদের সুনাম নষ্ট হয়। তাই বিএসইসি বা ডিএসইতে অভিযোগ দায়েরকারী ব্যক্তি বা বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে যথাযথ সহায়ক নথি-প্রমাণ বা সত্যতা পাওয়ার পরই প্রক্রিয়া বা তদন্ত শুরু করার অনুরোধ জানাচ্ছি।

ঢাকা/এসআর

শেয়ার করুন

x

অবশেষে চেক নগদায়নের শর্ত থেকে সরে আসছে বিএসইসি

আপডেট: ০৯:৪৩:৫২ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২২

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: অবশেষে শাস্তির বিধান রেখে চেক নগদায়নের আগে শেয়ার কেনা যাবে না- এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। রোববার রাতে সংবাদমাধ্যমকে বিএসইসির চেয়ার‌ম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

জানা গেছে, চেক নগদায়ন না করেই শেয়ার কেনার সুযোগ রেখে নতুনভাবে আইন করাত যাচ্ছে সংস্থাটি। তবে ব্রোকারেজ হাউজে চেক জমা দিলেও সেটি ব্যাংকে না পাঠিয়ে শেয়ার কেনার মতো জালিয়াতির আশ্রয় নিলে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

বিএসইসির চেয়ারম্যান ওই নিউজপোর্টালকে বলেন, ‘আমি একটা সলিউশন করে দিয়েছি আজকে মিটিং করে। বাস্তবতার নিরিখে ব্যবস্থা দুই একদিনে মধ্যেই হয়ে যাবে। আইন পরিবর্তন হবে এজন্য অর্ডার দিয়ে করতে পারিনি। আইন বানাচ্ছে হয়তো কালকে বা পরশুর মধ্যে হয়ে যাবে, দিয়ে দেবো। একটা ব্যবস্থা করে দেবো যাতে গভর্ন্যান্সও থাকে জালিয়াতিও না করতে পারে। আর যদি জালিয়াতি করে তার দায়ভারও তাকে নিতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘চেক দিয়ে শেয়ার কেনার সুযোগ করে দিচ্ছি, কিন্তু চেক তো সঙ্গে সঙ্গে জমা দিতে হবে নাকি। পাঁচদিন তো আর রেখে দিতে পারে না। পরবর্তী পসিবল আওয়ার বা ব্যাংকিং ডেতে জমা দিতে হবে।’

নির্দেশনা পাল্টালে আবার যদি একই কাজ হয়, তাহলে কী হবে- জানতে চাইলে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘চেক ডিস অর্নার হলেও কী হবে সেটাও তো বলে দিতে হবে। চেক নিয়ে করতে দেবো, সেখানে দায়-দায়িত্ব নিতে হবে।

‘আজকে আমরা ড্রাফট করে ফেলছি। কাল-পরশুর মধ্যে হয়ে যাবে। তাড়াহুড়া করছি না কারণ অনেক ফাঁকফোকর আছে। মানুষকে ব্যবসা করতে না দিলে তো ইকোনোমি ঠিক থাকবে না।’

তিনি বলেন, ‘চেক দিয়ে এক চাও তো চেক দিয়ে খাওয়া যায় না। আমি চেক দিলে কেউ আমাকে এক কাপ চা দেবে? এটা কোনো কথা যে, ৫০ কোটি, পাঁচ কোটি, ২০ কোটি টাকার শেয়ার চেক দিয়ে কিনে ফেলবেন। তারপর চেকটা জমা দেবেন না। পাঁচ-সাতদিন পর চেকটা বাউন্স করতে পারে। আবার পাঁচটা চেক দিলেন ১০ কোটি করে, তারপর প্রথম দুইটা থেকে যা লাভ হলো সেটা বিক্রি করে চেকগুলো অনার করা শুরু করলেন। এরকম সুযোগ করে দিলে গভর্ন্যান্সের আর কিছু থাকবে?’

আরও পড়ুন: পুঁজিবাজারের সঙ্কট উত্তোরণে বিএসইসিতে বিনিয়োগকারীদের ১২ দফা

চেক নগদায়ন করে শেয়ার কিনতে অনেক ক্ষেত্রে দুই সময় লাগতে পারে, তখন কাঙ্ক্ষিত মূল্যে শেয়ার পাওয়া যেতে নাও পারে- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘ইএসটিএন, আরটিজিএস নাই, পে-অর্ডার নাই? আপনি যদি চান যে এই মুহূর্তে কিনতে হবে, তাহলে ব্যাংক গিয়ে একটা পে-অর্ডার দিলেই তো এক মিনিটে কিনে ফেলতে পারে। দ্বিতীয়ত, ব্যাংকে গিয়ে আরটিজিএস করে দেন রিয়েল টাইম চেক ট্রানজেকশনে ট্রানফার, ইএফটিন করে দেন। আপনাকে ক্যাশ তুলে বা চেক দিয়ে কেন করতে হবে কেন? আরও তো অনেক পদ্ধতি আছে, যদি টাকা থাকে অ্যাকাউন্টে।

‘আরেকটি বিষয় হলো, আমি চেক দিলাম অ্যাকাউন্টে, চেকটা জমা হয় না কেন? একটা জায়গায় পাঁচটা চেক জমা হয় কেন? চেক বাউন্সের জন্য আজ পর্যন্ত কেউ কি কিছু করে?

‘আমাদের ৩৭টি জায়গা থেকে শর্টফল পাওয়া যাচ্ছে কাস্টমার কনসোলিডেটেড অ্যাকাউন্ট থেকে, এই হলো ঘটনা। যেগুলো লাভ হয়েছে সেগুলো তো নিয়ে গেছে। আর লস হয়েছে সেগুলো ওই অ্যাকাউন্ট থেকে নিয়ে দিচ্ছে। তাত শর্টফল হচ্ছে। তাহলে কীভাবে পূরণ করব পাবলিকের টাকা?’

প্রসঙ্গত, ১১ অক্টোবর স্টক ব্রোকারদের প্রতি জারি করা বিএসইসির এক নির্দেশনায় বলা হয়, চেকের টাকা নগদায়নের আগে তা দিয়ে শেয়ার কেনা যাবে না। পরদিন থেকেই পুঁজিবাজারে লেনদেন কমে যেতে থাকে।

এর মধ্যে স্টক ব্রোকারদের সংগঠন ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ বা ডিবিএর পক্ষ থেকে ডিএসই ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিকে চিঠি দিয়ে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে যে, চেক নিয়ে নির্দেশনা না পাল্টালে পুঁজিবাজারে চাপ আরও বাড়বে। ১৭ অক্টোবর এই চিঠির বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে সত্যি সত্যি চাপের বিষয়টি দেখা যায় পরদিন থেকেই।

১২ অক্টোবর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ‍পুঁজিবাজারে সার্বিক সূচক ডিএসইএক্সের অবস্থান ছিল ৬ হাজার ৫০০। সেটি এখন নেমে এসেছে ৬ হাজার ৩৩৪এ। পৌনে তিন’শ কোম্পানি ফ্লোর প্রাইসে লেনদেন হতে থাকার মধ্যে এই দরপতন বিনিয়োগকারীদেরকে আর্থিকভাবে অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।

শিবলী রুবাইয়াত চেয়ারম্যান দেশের বাইরে থাকায় বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারছিল না বিএসইসি। তিনি দেশে ফেরার পর প্রথম কর্মদিবসিই সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠকে বসেন।

বিএসইসি এমন নির্দেশনা দিয়েছে চেক দেয়ার পর ব্যাংকে তা জমা না দিয়ে বিপুল পরিমাণ শেয়ার কেনার ৩৭টি ঘটনা ধরা পড়ার পর। এক টাকা বিনিয়োগ না করেও একটি চক্র এই কৌশলে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

এর আগে বিএসইসির এই নির্দেশনা বাতিলে চিঠি দিয়েছিল ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) এবং সিইও ফোরাম।

ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) পক্ষ থেকে বিএসইসি ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে (ডিএসই)পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, ২০১০ সালের ৬ ডিসেম্বর একবার নির্দেশনা এসেছিল, গ্রাহক থেকে ব্রোকারেজ হাউসগুলো যে চেক পাবে, তা আগে নগদ টাকায় পরিণত করতে হবে। অর্থাৎ চেকের টাকা যখন ব্রোকারেজ হাউসের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হবে। তখন তারা সেই টাকা দিয়ে বিনিয়োগকারীকে শেয়ার কিনে দিতে পারবে।

এই সিদ্ধান্তের পর পুঁজিবাজারে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে দুই দিন পর ২০১০ সালের ৮ ডিসেম্বর ওই নির্দেশনা তুলে দেয়া হয়। এখন আবার নতুন করে নগদ টাকায় শেয়ার কেনার বিষয়টি বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এটির প্রভাব দেশের পুঁজিবাজারের ওপরে ভালো হবে না। তাই এই আদেশের ওপর স্থগিতাদেশ চেয়েছে ডিবিএ।

চিঠিতে বলা হয়েছে, দেশে রিয়েল টাইম ব্যাংকিং ব্যবস্থা নেই। ফলে কখনো কখনো দেখা যায় যে গ্রাহক আগে চেক জমা দেন। সেই চেকের বিপরীতে গ্রাহককে শেয়ার কিনে দেয় ব্রোকারেজ হাউসগুলো। এই নিয়মে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। এ ছাড়া সব গ্রাহক এই সুবিধা পান না। যারা ভালো গ্রাহক, তারাই শুধু এই সুবিধা পান। যেহেতু এর ঝুঁকি ব্রোকারেজকে নিতে হয়।

আরও পড়ুন: চেক নগদায়নের শর্তে টালমাটাল পুঁজিবাজার: নির্দেশনা বাতিলে বিএসইসিতে চিঠি

চিঠিতে আরও বলা হয়, এই নিয়ম বাস্তবায়ন করতে গেলে দেশের পুঁজিবাজারের লেনদেন কমে যাবে। বাজারে সূচক কমে গেলে বিনিয়োগকারীদের একটি বড় অংশ বাজার থেকে তাদের বিনিয়োগ তুলে ফেলতে পারেন। ফলে দীর্ঘমেয়াদে বাজার মন্দা দেখা দিতে পারে। তাই এই আইনের বাস্তবায়নের ওপর স্থগিতাদেশ দেয়া দরকার।

এছাড়া সিইও ফোরামের চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, যখনই কোনও ব্যক্তি বা বিনিয়োগকারী যথাযথ নথি-প্রমাণ বা সত্যতা ছাড়া ডিএসই বা বিএসইসির কাছে অভিযোগ করেন, তখনই ডিএসই বা বিএসইসি অবিলম্বে প্রক্রিয়া বা তদন্ত শুরু করে। এ ছাড়া খবর অনলাইন নিউজ পোর্টাল বা সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রকাশ হওয়ায় পুঁজিবাজার নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত হয়। পাশাপাশি পুঁজিবাজারের মধ্যস্থতাকারীদের সুনাম নষ্ট হয়। তাই বিএসইসি বা ডিএসইতে অভিযোগ দায়েরকারী ব্যক্তি বা বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে যথাযথ সহায়ক নথি-প্রমাণ বা সত্যতা পাওয়ার পরই প্রক্রিয়া বা তদন্ত শুরু করার অনুরোধ জানাচ্ছি।

ঢাকা/এসআর