অশান্তি করলে একূল-ওকূল সব হারাতে হবে: শেখ হাসিনা

- আপডেট: ০৭:৪২:৫৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ জুন ২০২২
- / ১০৩৫৩ বার দেখা হয়েছে
বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রেক্ষাপটে বেতনভাতা বাড়ানোর দাবিতে রাজধানীতে তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের আন্দোলনের নামে কেউ গোলমাল বাধানোর চেষ্টা করলে তাকে একূল-ওকূল হারাতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী মঙ্গলবার ঐতিহাসিক ৬ দফা দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির ভাষণে এ সব কথা বলেন। তিনি তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এই সভায় ভার্চুয়ালি যোগ দেন।
অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুক–টুইটার–লিংকডইন–ইন্সটাগ্রাম–ইউটিউব
রাজধানীর শ্রমিক আন্দোলনের হোতাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে আমরা কাজ পাচ্ছি। রপ্তানি বাড়ছে। ক্যাপিটাল মেশিনারিজ আসছে। বিনিয়োগের সুযোগ আসছে। আমরা সেই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছি। করোনার সময় তো আমরা কারখানা বন্ধ হতে দেইনি। চালু রাখার সুযোগ দিয়েছি। এখন কারও কথায় কোনো অশান্তি করলে নিজেরই ক্ষতি, দেশেরই ক্ষতি। সেটা শ্রমিক নেতাদের জানানো উচিত।’
তিনি বলেন, আজকে বেতন বাড়া এটা সেটা নানা ধরনের আন্দোলন যদি করতে যায়… রপ্তানি যদি বন্ধ হয়, তাহলে গার্মেন্টসসহ সব কারখানা তো বন্ধ হয়ে যাবে। তখন আমও যাবে, ছালাও যাবে, বেতন আর বাড়বে না, তখন চাকরিই চলে যাবে। তখন ঘরে ফিরে যেতে হবে। তখন কী করবি?‘
করোনা মহামারির পর ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বিশ্বব্যাপী আর্থিক মন্দার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যে দেশে আমরা রপ্তানি করি, সে দেশে ক্রয় ক্ষমতাও সীমিত হয়ে যাচ্ছে। আমরা আমেরিকায় পাঠাই, আমরা ইউরোপের বিভিন্ন জায়গায় পাঠাই। প্রত্যেক জায়গায় জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। তাই কেউ যদি গোলমাল করার চেষ্টা করে, এ দেশটা যদি একেবারে স্থবির হয়ে যায় তো সাধারণ মানুষের কী অবস্থাটা হবে..?’
শ্রমিক আন্দোলনের নেতাদের সতর্ক করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যে নেতারা উসকানি দিচ্ছে তারা কাদের প্ররোচনায় উসকানি দিচ্ছে সেটাও একটু ভেবে দেখতে হবে। যদি কেউ অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে যায়, তখন একূল ওকূল দুকূল সব হারাতে হবে। এটাও যেন সবাই মনে রাখে।’
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে শ্রমিক আন্দোলনের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা এখন একটা ভালো সুবিধা পাচ্ছি, উৎপাদন বাড়ছে। শ্রমিকদের তাদের বেতন তো বন্ধ হয়নি। আমরা তো সেখানে নিজেরা প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছি, টাকা দিয়েছি। ভর্তুকি দিয়ে তাদের বেতনটা সরাসরি গার্মেন্টসের শ্রমিকরা যাতে পায়, সে ব্যবস্থা করেছি। প্রত্যেকটা শ্রমিক যাতে টাকা পায়, সেজন্য আমরা ফোনের মাধ্যমে সরাসরি টাকা দিয়েছি। মালিকদের হাতে তো দেই নি, সরাসরি তাদের দিয়েছি। বেসরকারি খাতে আমরা আর কত দিবো? আমরা তো ভর্তুকি দিয়েই যাচ্ছি।’
শ্রমিকদের বেতনভাতা ইস্যুতে আওয়ামী লীগ সরকারের নানা অবদানের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, একে তো বেতন বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা। সেসময় সরকারের পক্ষ থেকে টাকা দিয়ে তাদের বেতন আমরা দিয়ে গেছি। আর আওয়ামী লীগ সরকার আসার পর গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন আমরা ১৬০০ টাকা থেকে কত দফা বাড়াইসি! সেটাও হিসাবে নিতে হবে। যারা ১৬০০ টাকা পেত, তারা ৮ হাজার থেকে ১০ হাজার … ওভারটাইম অন্যান্য সুযোগ সুবিধা নিয়ে যথেষ্ট বেশি পাচ্ছে।’
বেতনভাতার দাবিতে আন্দোলনরত পোশাক শ্রমিকদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কারও কথায় কোনোরকম অশান্তি সৃষ্টি করলে দেশের ক্ষতি, নিজেরই ক্ষতি। এটাও সবাইকে মনে রাখতে হবে। আমার তো মনে হয় শ্রমিকদের, শ্রমিক নেতাদেরও এ কথা জানানো উচিত। নেতাদের তো সমস্যা নাই, তারা যেখান থেকে উসকানি পাচ্ছে সেখান থেকে ভালো অঙ্কের টাকা পাবে। কিন্তু শ্রমিকদের ভাগ্যে কি হবে এদের রাস্তায় নামায় দিয়ে এদের তো ক্ষতিই করা হবে। সেটাও মাথায় রাখতে হবে।’
দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘হ্যাঁ, জিনিসের দাম কিছুটা বেড়েছে, এটা ঠিক… এটা যে আরও কত বাড়বে, তারও ঠিক নেই। কারণ এটা শুধু বাংলাদেশ না, এটা বিশ্বব্যাপী। প্রত্যেক জায়গায় জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। ইউরোপ, আমেরিকায় মানুষ যে দুরাবস্থায় আছে, কত মানুষ না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশে আমরা অন্ততপক্ষে সবার খাদ্য, ওষুধ, ভ্যাকসিন দিয়ে যেতে পারছি। ’
আসন্ন বাজেটে দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি গুরুত্ব পাবে আভাস দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের দেশে আমরা দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছি, আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করছি। আমরা সামনে বাজেট দিতে যাচ্ছি। সেখানে চেষ্টা করে যাচ্ছি উন্নয়নের সঙ্গে সবকিছুর যেন সামঞ্জস্য থাকে।’ গ্রামের মানুষ এখন ‘ভালো আছে’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ কৃষি ব্যবস্থার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
তিনি বলেন, ‘একটা কথা বলতে পারি যে গ্রামের মানুষ তাদের এখনও অবস্থা অনেক ভালো আছে। সেটা যাতে ভালো থাকে সেদিকে আমরা বিশেষ দৃষ্টি দিচ্ছি, সেজন্য আমি আহ্বান করেছি এক ইঞ্চি জমি যেন অনাবাদি না থাকে। বিশ্বব্যাপী খাদ্যের অভাব, যেখানে খাদ্য মন্দা, সেখানে আমাদের নিজের মাটি আছে, মানুষ আছে। আমাদের ফসল ফলাতে হবে। নিজের খাবারের ব্যবস্থা অন্তত আমরা নিজেরা করব। এটাই হল বাস্তব। সবাইকে মিতব্যয়ী হতে হবে। কোনোরকম খাদ্য যেন নষ্ট না হয়, সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। প্রত্যেকে নিজের সঞ্চয় করা, নিজের ব্যবস্থা করা, নিজেকে করতে হবে। সব তো আর সরকার করে দিতে পারবে না।’
ঢাকা/এসএ