০৬:৪৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ মে ২০২৪

অস্থিতিশীল পুঁজিবাজারে দিশেহারা বিনিয়োগকারীদের মানববন্ধন

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০৬:১৩:২৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
  • / ৪৩৮০ বার দেখা হয়েছে

থেমে থেমে পুঁজিবাজারের দর পতনে কষ্টার্জিত পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হওয়ার পথে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। বর্তমানে পুঁজিবাজারের লেনদেন তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। তার উপর আস্থাহীনতায় প্রায় ৮০ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার ফ্লোর প্রাইজে আটকে থাকায় বিনিয়োগকারীদের জন্য ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’- এর মত। এমতাবস্থায় দিশেহারা বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতায় প্রধানমন্ত্রী বরাবর ১২ দফা দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি পেশ ও মানববন্ধন করেছেন।

রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারী) সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পক্ষে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কাজী আবদুর রাজ্জাক স্বাক্ষরিত স্মারকলিপিটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জমা দেওয়া হয়। এর আগে মতিঝিলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ভবনের সামনে পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতায় ও কারসাজিরোধে মানববন্ধন করেন বিনিয়োগকারীরা।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

পাঠকদের জন্য বিনিয়োগকারীদের দাবি সমূহ হুবহু তুলে ধরা হলো:

১. আপনি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানের ঘোষণা দিয়েছেন। তাই আমরা অনিয়ম ও দূর্নীতিমুক্ত স্মার্ট পুঁজিবাজার গঠনের জন্য আপনার নিকট জোর দাবী জানাচ্ছি।

২. পুঁজিবাজারের চলমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য সহজ শর্তে অর্থাৎ ৩ শতাংশ সুদে ১০ (দশ) হাজার কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্ধ দেওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি। যা আইসিবি বিভিন্ন মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকার হাউজ এর মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ৫ শতাংশ সুদে লোন হিসেবে বিনিয়োগের সুযোগ পাবে। এতে পুঁজিবাজারে অর্থের যোগান বৃদ্ধি পাবে এবং পুঁজিবাজার স্থিতিশীল হতে সহায়তা করবে।

৩. পুঁজিবাজারের বন্ড ও মিচ্যুয়াল ফান্ডের বিনিয়োগ এক্সপোজার লিমিটেডের বাহিরে রাখার বিষয়ে দ্রুত প্রজ্ঞাপন জারী করার জোর দাবী জানাচ্ছি। এতে পুঁজিবাজারে তারল্য বাড়বে এবং বাজার স্থিতিশীল হবে।

৪. বাজার স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত চলমান ফ্লোর প্রাইজ বহাল রাখা, ফোর্স সেল বন্ধ রাখা এবং সকল প্রকার IPO ও রাইট শেয়ার ইস্যু বন্ধ রাখার দাবী করছি।

৫. লভ্যাংশের উপর ট্যাক্স: লভ্যাংশের উপর থেকে ট্যাক্স সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করতে হবে। কোম্পানীগুলো লভ্যাংশের ঘোষণার পূর্বে সরকারকে অগ্রীম যে ট্যাক্স দিয়ে থাকে সেটাকে চূড়ান্ত ট্যাক্স হিসাবে গণ্য করতে হবে। ভাল লভ্যাংশ পাওয়ার আশায় বিনিয়োগকারীরা দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগে আগ্রহী হবে। এতে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়বে এবং পুঁজিবাজারের অস্থিরতা কমবে।

৬. লভ্যাংশ প্রদান: পুঁজিবাজারে তালিকাভূক্ত অনেক কোম্পানী ভালো মুনাফা করা স্বত্বেও উপযুক্ত লভ্যাংশ প্রদানে গড়িমসি করে। কোম্পানীগুলোর নীট মুনাফার নুন্যতম ৫০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ হিসাবে শেয়ারহোল্ডারদের প্রদান করার ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানাচ্ছি। উপযুক্ত পরিমাণ লভ্যাংশ পাওয়ার প্রত্যাশায় পুঁজিবাজারে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ বাড়বে এবং পুঁজিবাজার স্থিতিশীল হবে।

৭. তালিকাভুক্ত কোম্পানীগুলোর কর হার এবং অতালিকাভুক্ত কোম্পানীগুলোর কর হারের পার্থক্য সাড়ে ৭ শতাংশ বিদ্যমান। এ সুবিধা ভালোমানের কোম্পানীগুলোকে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্তের জন্য উৎসাহিত করেন। তাই তালিকাভূক্ত কোম্পানী এবং অতালিকাভুক্ত কোম্পানীর কর হারের পার্থক্য ১৫ শতাংশ করার জোর দাবী করছি। এতে বহু ভালো মানের কোম্পানী পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে আগ্রহী হবে, কোম্পানীগুলোর নীট মুনাফা বৃদ্ধি পাবে এবং লভ্যাংশ প্রদানের সক্ষমতা বাড়বে। ফলে পুঁজিবাজার গতিশীল হবে।

৮. পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতার বৃহত্তর স্বার্থে “বাইব্যাক আইন” পাশ করার জোড় দাবী জানাচ্ছি। এক্ষেত্রে কোম্পানীর পরিচালনা পর্ষদকে ইস্যুমূল্যে অথবা NAV এর ৫ শতাংশ কম এই দুইটি মধ্যে যেটি বেশী হবে সেই মূল্যে শেয়ার বাইব্যাক করতে হবে।

আরও পড়ুন: তলানিতে ঠেকেছে পুঁজিবাজারের লেনদেন

৯. অপ্রদর্শিত অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ: অপ্রদর্শিত অর্থ ৫ শতাংশ কর প্রদান করে বিনা শর্তে শুধুমাত্র পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ দিতে হবে। এতে পুঁজিবাজারে অর্থের যোগান বৃদ্ধি পাবে, পুঁজিবাজার গতিশীল হবে, বিদেশে অর্থ পাচার বন্ধ হবে, দেশীয় শিল্প উন্নয়ন বৃদ্ধি পাবে। এতে সরকারেরও প্রচুর পরিমানে রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে।

১০. মহামান্য হাইকোর্ট কর্তৃক নির্দেশিত বিএসইসির 2CC ধারা মোতাবেক শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিটি কোম্পানী পরিচালকগনকে সম্মেলিতভাবে নূন্যতম ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ এবং ব্যক্তিগতভাবে ২ শতাংশ শেয়ার ধরণে বাধ্য করার দাবী জানাচ্ছি।

১১. পুঁজিবাজারের সুশাসন ও স্থিতিশীলতার জন্য ভবিষ্যতে কোন কোম্পানীকে IPO এর মাধ্যমে টাকা তুলতে হলে কমপক্ষে পরিশোধিত মূলধনের ১০ শতাংশ শোয়ার অপলোড করার বিধান রাখার জোড় দাবী করছি।

১২. কারসাজি বন্ধে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে BFIU এর মতো একটি নতুন ইউনিট চালু করার দাবী জানাচ্ছি। যেখানে DGFI, NSI, SB এর কর্মকর্তারা সংযুক্ত থাকবেন এবং যা সরাসরি কমিশনের চেয়ারম্যান মহোদয়ের নেতৃত্বাধীন থাকবে।

ঢাকা/এসএ

শেয়ার করুন

x

অস্থিতিশীল পুঁজিবাজারে দিশেহারা বিনিয়োগকারীদের মানববন্ধন

আপডেট: ০৬:১৩:২৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

থেমে থেমে পুঁজিবাজারের দর পতনে কষ্টার্জিত পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হওয়ার পথে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। বর্তমানে পুঁজিবাজারের লেনদেন তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। তার উপর আস্থাহীনতায় প্রায় ৮০ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার ফ্লোর প্রাইজে আটকে থাকায় বিনিয়োগকারীদের জন্য ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’- এর মত। এমতাবস্থায় দিশেহারা বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতায় প্রধানমন্ত্রী বরাবর ১২ দফা দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি পেশ ও মানববন্ধন করেছেন।

রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারী) সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পক্ষে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কাজী আবদুর রাজ্জাক স্বাক্ষরিত স্মারকলিপিটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জমা দেওয়া হয়। এর আগে মতিঝিলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ভবনের সামনে পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতায় ও কারসাজিরোধে মানববন্ধন করেন বিনিয়োগকারীরা।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

পাঠকদের জন্য বিনিয়োগকারীদের দাবি সমূহ হুবহু তুলে ধরা হলো:

১. আপনি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানের ঘোষণা দিয়েছেন। তাই আমরা অনিয়ম ও দূর্নীতিমুক্ত স্মার্ট পুঁজিবাজার গঠনের জন্য আপনার নিকট জোর দাবী জানাচ্ছি।

২. পুঁজিবাজারের চলমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য সহজ শর্তে অর্থাৎ ৩ শতাংশ সুদে ১০ (দশ) হাজার কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্ধ দেওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি। যা আইসিবি বিভিন্ন মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকার হাউজ এর মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ৫ শতাংশ সুদে লোন হিসেবে বিনিয়োগের সুযোগ পাবে। এতে পুঁজিবাজারে অর্থের যোগান বৃদ্ধি পাবে এবং পুঁজিবাজার স্থিতিশীল হতে সহায়তা করবে।

৩. পুঁজিবাজারের বন্ড ও মিচ্যুয়াল ফান্ডের বিনিয়োগ এক্সপোজার লিমিটেডের বাহিরে রাখার বিষয়ে দ্রুত প্রজ্ঞাপন জারী করার জোর দাবী জানাচ্ছি। এতে পুঁজিবাজারে তারল্য বাড়বে এবং বাজার স্থিতিশীল হবে।

৪. বাজার স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত চলমান ফ্লোর প্রাইজ বহাল রাখা, ফোর্স সেল বন্ধ রাখা এবং সকল প্রকার IPO ও রাইট শেয়ার ইস্যু বন্ধ রাখার দাবী করছি।

৫. লভ্যাংশের উপর ট্যাক্স: লভ্যাংশের উপর থেকে ট্যাক্স সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করতে হবে। কোম্পানীগুলো লভ্যাংশের ঘোষণার পূর্বে সরকারকে অগ্রীম যে ট্যাক্স দিয়ে থাকে সেটাকে চূড়ান্ত ট্যাক্স হিসাবে গণ্য করতে হবে। ভাল লভ্যাংশ পাওয়ার আশায় বিনিয়োগকারীরা দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগে আগ্রহী হবে। এতে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়বে এবং পুঁজিবাজারের অস্থিরতা কমবে।

৬. লভ্যাংশ প্রদান: পুঁজিবাজারে তালিকাভূক্ত অনেক কোম্পানী ভালো মুনাফা করা স্বত্বেও উপযুক্ত লভ্যাংশ প্রদানে গড়িমসি করে। কোম্পানীগুলোর নীট মুনাফার নুন্যতম ৫০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ হিসাবে শেয়ারহোল্ডারদের প্রদান করার ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানাচ্ছি। উপযুক্ত পরিমাণ লভ্যাংশ পাওয়ার প্রত্যাশায় পুঁজিবাজারে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ বাড়বে এবং পুঁজিবাজার স্থিতিশীল হবে।

৭. তালিকাভুক্ত কোম্পানীগুলোর কর হার এবং অতালিকাভুক্ত কোম্পানীগুলোর কর হারের পার্থক্য সাড়ে ৭ শতাংশ বিদ্যমান। এ সুবিধা ভালোমানের কোম্পানীগুলোকে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্তের জন্য উৎসাহিত করেন। তাই তালিকাভূক্ত কোম্পানী এবং অতালিকাভুক্ত কোম্পানীর কর হারের পার্থক্য ১৫ শতাংশ করার জোর দাবী করছি। এতে বহু ভালো মানের কোম্পানী পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে আগ্রহী হবে, কোম্পানীগুলোর নীট মুনাফা বৃদ্ধি পাবে এবং লভ্যাংশ প্রদানের সক্ষমতা বাড়বে। ফলে পুঁজিবাজার গতিশীল হবে।

৮. পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতার বৃহত্তর স্বার্থে “বাইব্যাক আইন” পাশ করার জোড় দাবী জানাচ্ছি। এক্ষেত্রে কোম্পানীর পরিচালনা পর্ষদকে ইস্যুমূল্যে অথবা NAV এর ৫ শতাংশ কম এই দুইটি মধ্যে যেটি বেশী হবে সেই মূল্যে শেয়ার বাইব্যাক করতে হবে।

আরও পড়ুন: তলানিতে ঠেকেছে পুঁজিবাজারের লেনদেন

৯. অপ্রদর্শিত অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ: অপ্রদর্শিত অর্থ ৫ শতাংশ কর প্রদান করে বিনা শর্তে শুধুমাত্র পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ দিতে হবে। এতে পুঁজিবাজারে অর্থের যোগান বৃদ্ধি পাবে, পুঁজিবাজার গতিশীল হবে, বিদেশে অর্থ পাচার বন্ধ হবে, দেশীয় শিল্প উন্নয়ন বৃদ্ধি পাবে। এতে সরকারেরও প্রচুর পরিমানে রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে।

১০. মহামান্য হাইকোর্ট কর্তৃক নির্দেশিত বিএসইসির 2CC ধারা মোতাবেক শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিটি কোম্পানী পরিচালকগনকে সম্মেলিতভাবে নূন্যতম ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ এবং ব্যক্তিগতভাবে ২ শতাংশ শেয়ার ধরণে বাধ্য করার দাবী জানাচ্ছি।

১১. পুঁজিবাজারের সুশাসন ও স্থিতিশীলতার জন্য ভবিষ্যতে কোন কোম্পানীকে IPO এর মাধ্যমে টাকা তুলতে হলে কমপক্ষে পরিশোধিত মূলধনের ১০ শতাংশ শোয়ার অপলোড করার বিধান রাখার জোড় দাবী করছি।

১২. কারসাজি বন্ধে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে BFIU এর মতো একটি নতুন ইউনিট চালু করার দাবী জানাচ্ছি। যেখানে DGFI, NSI, SB এর কর্মকর্তারা সংযুক্ত থাকবেন এবং যা সরাসরি কমিশনের চেয়ারম্যান মহোদয়ের নেতৃত্বাধীন থাকবে।

ঢাকা/এসএ