১২:১৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ইটিএফ বিনিয়োগের নতুন একটি খাত: ড. মিজানুর রহমান

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০৫:৩৬:২৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ মার্চ ২০২৩
  • / ১০৫৮৭ বার দেখা হয়েছে

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার ড. মিজানুর রহমান বলেন, ইটিএফ হলো বিনিয়োগের নতুন একটি খাত, পূর্ববর্তী কমিশন ইটিএফ নিয়ে আইন প্রণয়ন করলেও কোন ইটিএফ বাজারে আসেনি। দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) পণ্যের বৈচিত্র্য আনয়নে ইতোমধ্যে পুঁজিবাজারে ইসলামী সুকুক বন্ড, সরকারি সিকিউরিটিজ, এসএমই কোম্পানি এবং এটিবি বোর্ডে লেনদেন শুরু হয়েছে৷ এরই ধারাবাহিকতায় এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড (ইটিএফ) চালুর কার্যক্রমও চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ইটিএফ চালুর প্রাক্কালে ডিএসই এবং লংকাবাংলা সিকিউরিটিজ লিমিটেড এর যৌথ উদ্যোগে এক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড (ইটিএফ) এর অপারেশনাল প্রসিডিউর বিষয়ক এক কর্মশালা ডিএসই ও লংকাবাংলা সিকিউরিটিজ লিমিটেডের যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয়৷ কর্মশালা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএসইসির কমিশনার ড. মিজানুর রহমান৷

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

স্বাগত বক্তব্যে মার্কেট ডেভোলপমেন্ট বিভাগের সিনিয়র জিএম মোঃ ছামিউল ইসলাম বলেন, এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড (ইটিএফ) এর অপারেশনাল প্রসিডিউর-এর উপর এই কর্মশালার আয়োজন করতে পেরে আমরা গর্বিত৷ ওপেন-এন্ড ফান্ডের তুলনায় ইটিএফ-এর বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে। উল্লেখযোগ্য সুবিধা হলো পোর্টফোলিও বৈচিত্র্য ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, কম খরচ এবং ট্যাক্স সুবিধা। ইটিএফ চালু হলে বাজারের অস্থিরতা এবং পুঁজিবাজারে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সরাসরি অংশগ্রহণ কমে গিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পাবে যা বাজারকে স্থিতিশীল পর্যায়ে নিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

বিএসইসির কমিশনার ড. মিজানুর রহমান বলেন, পুঁজিবাজারে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের তালিকাভুক্তির পর দেখা যায় মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোর এক তৃতীয়াংশ মূলধন হ্রাস পেয়েছে। ওপেন এন্ড মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ক্ষেত্রে দেখা যায় ক্রয় মূল্যের সাথে এনএভিরব্যবধান রয়েছে। এছাড়াও ক্লোজ এন্ড মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ক্ষেত্রে এনএভি’র ১০-৩০% পর্যন্ত কম মূল্যে লেনদেন হচ্ছে। অনুসন্ধানে দেখা যায়, বিভিন্ন অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির বিনিয়োগ যথোপযুক্ত না হওয়ার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আমরা গত আড়াই থেকে ৩ বছর যাবত অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির কার্যক্রম উন্নয়নের জন্য কাজ করছি। এখনো এ খাতে এ ধরনের উন্নয়ন হয়নি, এর কারণ হলো ভালো অ্যাসেট ম্যানেজারদের পুরস্কৃত এবং মন্দ অ্যাসেট ম্যানেজারদের শাস্তি প্রদান না করা।

আরও পড়ুন: নেগেটিভ ইক্যুইটির বিপরীতে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর প্রভিশনিংয়ের মেয়াদ বেড়েছে

তিনি আরও বলেন, ইটিএফ হলো বিনিয়োগের নতুন একটি খাত। পূর্ববর্তী কমিশন ইটিএফ নিয়ে আইন প্রণয়ন করলেও কোন ইটিএফ বাজারে আসেনি। ২০২১ সালে এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড রুলস নিয়ে কাজ করার সময় সেখানে কিছু ঘাটতি দেখতে পাওয়া যায়। পরবর্তীতে আমরা সমস্যাগুলো সমাধানে কয়েকটি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করি। এ খাত একটি ব্যাপক সম্ভাবনাময় খাত। আমরা আশা করি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি এই অ্যাসেট ক্লাসে তারল্য বাড়াতে সক্ষম হবে। অনুমোদিত অংশগ্রহণকারী, মার্কেট মেকারদের পর্যাপ্ত তরল্য নিশ্চিত করার ও ইটিএফ এর ন্যাভ এবং বিক্রয় মূল্যের মধ্যে ন্যূনতম স্প্রেড নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় আইন কানুন করা হয়েছে। খরচ সবসময় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং পাইপলাইনে যে দুইটি ইটিএফ রয়েছে তাদের অপারেটিং খরচ সম্পর্কে খুব সতর্ক ছিলাম। আমরা মিউচুয়াল ফান্ডের সমস্ত সমস্যা বাদ দিতে চাই যা ইটিএফ-এ থাকবে না। ইটিএফ ক্লোজ এন্ড মিউচুয়াল ফান্ডের সাথে খুব ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত৷ কিন্তু পার্থক্য হল যে ইটিএফ স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন করা হবে৷ তাই এখানে ইক্যুইটির একাধিক উৎস থাকবে। তবে আশার কথা হচ্ছে আমরা ইটিএফ-এর ক্ষেত্রে পারফরম্যান্স ফি অন্তর্ভূক্ত করেছি। মিউচ্যুয়াল ফান্ডে কোন পারফরমেন্স ফি ছিলনা। এখানে যদি ভাল পারফরমেন্স করা যায় তবে বিনিয়োগকারীর সাথে অ্যাসেট ম্যানেজারগণও এর অংশীদার হবেন। একাউন্টিং ভ্যালুয়েশন রিপোর্টিং আইন অনুযায়ী পরিপালন করতে হবে। ইটিএফ-এর রিপোর্টিং মিউচ্যুয়াল ফান্ড থেকে ভিন্ন হবে। আমি ডিএসইকে অনুরোধ করব যে অ্যাসেট ম্যানেজারদের কোনো বিলম্ব এবং কোনো হেরফের ছাড়াই রিপোর্ট জমা দেয়া নিশ্চিত করতে। আমাদের স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা ও ভবিষতের প্রবৃদ্ধি জন্য কাজ করতেও হবে। আর এর মাধ্যমে আমাদের অর্থনীতি উন্নত অর্থনীতিতে পরিণত হবে।

ডিএসই’র চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবু বলেন, পুঁজিবাজার উত্থান-পতনের এই সংকটময় মুহূর্তে এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড (ইটিএফ) বাজারে আসছে যা বাজারে পণ্যের বৈচিত্র্য আনয়নে কাজ করবে। এটি বাজারের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ, যা তারল্যের সীমাবদ্ধতা এবং বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে যে সমস্ত সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে তার সমাধানে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

আরও পড়ুন: এটিবিতে বিনিয়োগ নিরাপদ: শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম

তিনি বলেন, মাত্র ২ বছর আগের একটি গবেষণাপত্রে ২০০৩ থেকে ২০২২ পর্যন্ত বিশ্ব বাজারে ইটিঅফ প্রায় ১০ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার সংগ্রহ করেছে এমন একটি তথ্য দেখা গিয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে অনেক উত্থান-পতন এবং তারল্য সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে। এই সংকট উত্তরণের জন্য পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন নতুন নতুন পণ্য বাজারে নিয়ে আসছে এবং আরও নতুন পণ্য আনার কথা ভাবছে, যা পণ্যের সীমাবদ্ধতা দূর করবে এবং বাজারের তারল্য বৃদ্ধিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে। আজকের এই কর্মশালা থেকে শেখা এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ডের কার্যপ্রণালী শুধুমাত্র আজকেই নয় ভবিষ্যতেও বার বার আলোচনা হবে।

তিনি আরও বলেন, বাজারে এই উপকরণটি চালু করার পর অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করতে হবে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে ইটিএফ একটি নতুন উপকরণ হওয়ায় আমাদে স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। আমাদের স্টেকহোল্ডারদের ইটিএফ-এর সুবিধাগুলি ব্যাখ্যা করতে হবে যাতে স্টেকহোল্ডাররা এই ইটিএফ-এর সামগ্রিক, সুবিধা এবং সীমাবদ্ধতাগুলি জানতে পারে এবং তাদের ভূমিকা বা করণীয় সম্পর্কে বুঝতে পারে।

ডিএসই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) এম. সাইফুর রহমান মজুমদার, এফসিএ বলেন, এক্সচেঞ্জের ট্রেডেড ফান্ড নিয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ অনেক দিন ধরে কাজ করছে। ইটিএফ ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের বোর্ডে আনার বিষয়ে যে সমস্ত সীমাবদ্ধতা ছিল সেগুলো অতিক্রম করে আসছে। এতে প্রযুক্তিগত কোন বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ নেই। আমাদের প্রতিবেশি দেশগুলোতে ইটিএফ একটি জনপ্রিয় প্রোডাক্ট। আমরা আশা করছি খুব কম সময়ের মধ্যেই আমাদের যে সমস্ত প্রযুক্তিগত ঘাটতি
ছিল সেগুলো আমরা সমাধান করবো। প্রযুক্তিগত উন্নয়নে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পক্ষ হতে ব্যাপক বিনিয়োগ করা হয়েছে। এখন আমাদের পণ্যের বৈচিত্র্যকরণ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আশা করছি যেসকল সীমাবদ্ধতা রয়েছে সেগুলো বিএসইসি’র পূর্ণ সমর্থন এবং আমাদের নিরলস প্রচেষ্টায় সমাধানপূর্বক খুব অল্প সময়ের মধ্যেই প্রোডাক্টটি বাজারে আনতে পারবো। আজকের এই কর্মশালায় আলোচনার ফলশ্রুতিতে যেসকল দিকনির্দেশনা ও ফাইন্ডিংসগুলো আসবে সেগুলো সমাধানের মাধ্যমে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের বোর্ডে ইটিএফ অন্ত‍ভূ‍র্ক্ত করতে পারবো।

আরও পড়ুন: ব্লকে লেনদেনের ৬২ শতাংশই দুই কোম্পানির

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেডের প্রোডাক্ট এন্ড মার্কেট ডেভেলপমেন্ট বিভাগের প্রধান সাইদ মাহমুদ জুবায়ের এবং লঙ্কাবাংলা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের এজিএম সাইমন ইবনে মুজিব এই কর্মশালার প্রধান উপস্থাপক ছিলেন। তারা প্রধান বিষয়গুলি ট্রেডিং, ক্লিয়ারিং এবং সেটেলমেন্ট, ক্রিয়েশন এবং রিডেম্পশন প্রক্রিয়া, আইনের কাঠামো, সূচক তৈরির প্রক্রিয়া, তালিকাভুক্তিকরন প্রক্রিয়া, তহবিল গঠন, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, গবেষণা, তথ্য প্রকাশ প্রক্রিয়া ইত্যাদি সম্পর্কিত এক্সচেঞ্জ
ট্রেড ফান্ডের অপারেশনাল পদ্ধতির উপর আলোকপাত করে। উল্লেখ্য যে, বিএসইসি ইটিএফ(ETF) রুলস্‌ এর অধীনে ইতোমধ্যে দুটি ইটিএফ (ETF) অনুমোদন করেছে। এর একটি এলবি মাল্টি অ্যাসেট ইনকাম ইটিএফ (LB Multi Asset Income ETF) এবং অপরটি এফএএম ডিজি বেঙ্গল টাইগার ইটিএফ (FAM DG Bengal Tiger ETF)৷ এলবি মাল্টি অ্যাসেট ইনকাম ইটিএফের ফান্ডের আকার হচ্ছে ১০০ কোটি টাকা যা লঙ্কাবাংলা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড দ্বারা পরিচালিত হবে এবং ফএএম ডিজি বেঙ্গল টাইগার ইটিএফের ফান্ডের আকার হল ৫০ কোটি টাকা যা ফ্রন্টিয়ার অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড এবং ডন গ্লোবাল লিমিটেড দ্বারা পরিচালিত হবে।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিএসই’র চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হাফিজ মুহাম্মদ হাসান বাবু৷ এসময় উপস্থিত ছিলেন ডিএসই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) এম. সাইফুর রহমান মজুমদার, এফসিএ, লংকাবাংলা সিকিউিরিটিজ লিঃ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন চৌধুরী, ডিএসই’র মার্কেট ডেভলপম্যান্ট বিভাগের সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার মোঃ ছামিউল ইসলাম, প্রোডাক্ট এন্ড মার্কেট ডেভেলপমেন্ট ডিপার্টমেন্টের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার সাইদ জুবায়ের মাহমুদ এবং অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড কোম্পানির প্রতিনিধিবৃন্দ৷

ঢাকা/এসএ

শেয়ার করুন

ইটিএফ বিনিয়োগের নতুন একটি খাত: ড. মিজানুর রহমান

আপডেট: ০৫:৩৬:২৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ মার্চ ২০২৩

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার ড. মিজানুর রহমান বলেন, ইটিএফ হলো বিনিয়োগের নতুন একটি খাত, পূর্ববর্তী কমিশন ইটিএফ নিয়ে আইন প্রণয়ন করলেও কোন ইটিএফ বাজারে আসেনি। দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) পণ্যের বৈচিত্র্য আনয়নে ইতোমধ্যে পুঁজিবাজারে ইসলামী সুকুক বন্ড, সরকারি সিকিউরিটিজ, এসএমই কোম্পানি এবং এটিবি বোর্ডে লেনদেন শুরু হয়েছে৷ এরই ধারাবাহিকতায় এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড (ইটিএফ) চালুর কার্যক্রমও চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ইটিএফ চালুর প্রাক্কালে ডিএসই এবং লংকাবাংলা সিকিউরিটিজ লিমিটেড এর যৌথ উদ্যোগে এক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড (ইটিএফ) এর অপারেশনাল প্রসিডিউর বিষয়ক এক কর্মশালা ডিএসই ও লংকাবাংলা সিকিউরিটিজ লিমিটেডের যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয়৷ কর্মশালা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএসইসির কমিশনার ড. মিজানুর রহমান৷

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

স্বাগত বক্তব্যে মার্কেট ডেভোলপমেন্ট বিভাগের সিনিয়র জিএম মোঃ ছামিউল ইসলাম বলেন, এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড (ইটিএফ) এর অপারেশনাল প্রসিডিউর-এর উপর এই কর্মশালার আয়োজন করতে পেরে আমরা গর্বিত৷ ওপেন-এন্ড ফান্ডের তুলনায় ইটিএফ-এর বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে। উল্লেখযোগ্য সুবিধা হলো পোর্টফোলিও বৈচিত্র্য ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, কম খরচ এবং ট্যাক্স সুবিধা। ইটিএফ চালু হলে বাজারের অস্থিরতা এবং পুঁজিবাজারে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সরাসরি অংশগ্রহণ কমে গিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পাবে যা বাজারকে স্থিতিশীল পর্যায়ে নিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

বিএসইসির কমিশনার ড. মিজানুর রহমান বলেন, পুঁজিবাজারে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের তালিকাভুক্তির পর দেখা যায় মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোর এক তৃতীয়াংশ মূলধন হ্রাস পেয়েছে। ওপেন এন্ড মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ক্ষেত্রে দেখা যায় ক্রয় মূল্যের সাথে এনএভিরব্যবধান রয়েছে। এছাড়াও ক্লোজ এন্ড মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ক্ষেত্রে এনএভি’র ১০-৩০% পর্যন্ত কম মূল্যে লেনদেন হচ্ছে। অনুসন্ধানে দেখা যায়, বিভিন্ন অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির বিনিয়োগ যথোপযুক্ত না হওয়ার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আমরা গত আড়াই থেকে ৩ বছর যাবত অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির কার্যক্রম উন্নয়নের জন্য কাজ করছি। এখনো এ খাতে এ ধরনের উন্নয়ন হয়নি, এর কারণ হলো ভালো অ্যাসেট ম্যানেজারদের পুরস্কৃত এবং মন্দ অ্যাসেট ম্যানেজারদের শাস্তি প্রদান না করা।

আরও পড়ুন: নেগেটিভ ইক্যুইটির বিপরীতে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর প্রভিশনিংয়ের মেয়াদ বেড়েছে

তিনি আরও বলেন, ইটিএফ হলো বিনিয়োগের নতুন একটি খাত। পূর্ববর্তী কমিশন ইটিএফ নিয়ে আইন প্রণয়ন করলেও কোন ইটিএফ বাজারে আসেনি। ২০২১ সালে এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড রুলস নিয়ে কাজ করার সময় সেখানে কিছু ঘাটতি দেখতে পাওয়া যায়। পরবর্তীতে আমরা সমস্যাগুলো সমাধানে কয়েকটি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করি। এ খাত একটি ব্যাপক সম্ভাবনাময় খাত। আমরা আশা করি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি এই অ্যাসেট ক্লাসে তারল্য বাড়াতে সক্ষম হবে। অনুমোদিত অংশগ্রহণকারী, মার্কেট মেকারদের পর্যাপ্ত তরল্য নিশ্চিত করার ও ইটিএফ এর ন্যাভ এবং বিক্রয় মূল্যের মধ্যে ন্যূনতম স্প্রেড নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় আইন কানুন করা হয়েছে। খরচ সবসময় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং পাইপলাইনে যে দুইটি ইটিএফ রয়েছে তাদের অপারেটিং খরচ সম্পর্কে খুব সতর্ক ছিলাম। আমরা মিউচুয়াল ফান্ডের সমস্ত সমস্যা বাদ দিতে চাই যা ইটিএফ-এ থাকবে না। ইটিএফ ক্লোজ এন্ড মিউচুয়াল ফান্ডের সাথে খুব ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত৷ কিন্তু পার্থক্য হল যে ইটিএফ স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন করা হবে৷ তাই এখানে ইক্যুইটির একাধিক উৎস থাকবে। তবে আশার কথা হচ্ছে আমরা ইটিএফ-এর ক্ষেত্রে পারফরম্যান্স ফি অন্তর্ভূক্ত করেছি। মিউচ্যুয়াল ফান্ডে কোন পারফরমেন্স ফি ছিলনা। এখানে যদি ভাল পারফরমেন্স করা যায় তবে বিনিয়োগকারীর সাথে অ্যাসেট ম্যানেজারগণও এর অংশীদার হবেন। একাউন্টিং ভ্যালুয়েশন রিপোর্টিং আইন অনুযায়ী পরিপালন করতে হবে। ইটিএফ-এর রিপোর্টিং মিউচ্যুয়াল ফান্ড থেকে ভিন্ন হবে। আমি ডিএসইকে অনুরোধ করব যে অ্যাসেট ম্যানেজারদের কোনো বিলম্ব এবং কোনো হেরফের ছাড়াই রিপোর্ট জমা দেয়া নিশ্চিত করতে। আমাদের স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা ও ভবিষতের প্রবৃদ্ধি জন্য কাজ করতেও হবে। আর এর মাধ্যমে আমাদের অর্থনীতি উন্নত অর্থনীতিতে পরিণত হবে।

ডিএসই’র চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবু বলেন, পুঁজিবাজার উত্থান-পতনের এই সংকটময় মুহূর্তে এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড (ইটিএফ) বাজারে আসছে যা বাজারে পণ্যের বৈচিত্র্য আনয়নে কাজ করবে। এটি বাজারের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ, যা তারল্যের সীমাবদ্ধতা এবং বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে যে সমস্ত সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে তার সমাধানে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

আরও পড়ুন: এটিবিতে বিনিয়োগ নিরাপদ: শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম

তিনি বলেন, মাত্র ২ বছর আগের একটি গবেষণাপত্রে ২০০৩ থেকে ২০২২ পর্যন্ত বিশ্ব বাজারে ইটিঅফ প্রায় ১০ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার সংগ্রহ করেছে এমন একটি তথ্য দেখা গিয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে অনেক উত্থান-পতন এবং তারল্য সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে। এই সংকট উত্তরণের জন্য পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন নতুন নতুন পণ্য বাজারে নিয়ে আসছে এবং আরও নতুন পণ্য আনার কথা ভাবছে, যা পণ্যের সীমাবদ্ধতা দূর করবে এবং বাজারের তারল্য বৃদ্ধিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে। আজকের এই কর্মশালা থেকে শেখা এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ডের কার্যপ্রণালী শুধুমাত্র আজকেই নয় ভবিষ্যতেও বার বার আলোচনা হবে।

তিনি আরও বলেন, বাজারে এই উপকরণটি চালু করার পর অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করতে হবে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে ইটিএফ একটি নতুন উপকরণ হওয়ায় আমাদে স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। আমাদের স্টেকহোল্ডারদের ইটিএফ-এর সুবিধাগুলি ব্যাখ্যা করতে হবে যাতে স্টেকহোল্ডাররা এই ইটিএফ-এর সামগ্রিক, সুবিধা এবং সীমাবদ্ধতাগুলি জানতে পারে এবং তাদের ভূমিকা বা করণীয় সম্পর্কে বুঝতে পারে।

ডিএসই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) এম. সাইফুর রহমান মজুমদার, এফসিএ বলেন, এক্সচেঞ্জের ট্রেডেড ফান্ড নিয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ অনেক দিন ধরে কাজ করছে। ইটিএফ ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের বোর্ডে আনার বিষয়ে যে সমস্ত সীমাবদ্ধতা ছিল সেগুলো অতিক্রম করে আসছে। এতে প্রযুক্তিগত কোন বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ নেই। আমাদের প্রতিবেশি দেশগুলোতে ইটিএফ একটি জনপ্রিয় প্রোডাক্ট। আমরা আশা করছি খুব কম সময়ের মধ্যেই আমাদের যে সমস্ত প্রযুক্তিগত ঘাটতি
ছিল সেগুলো আমরা সমাধান করবো। প্রযুক্তিগত উন্নয়নে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পক্ষ হতে ব্যাপক বিনিয়োগ করা হয়েছে। এখন আমাদের পণ্যের বৈচিত্র্যকরণ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আশা করছি যেসকল সীমাবদ্ধতা রয়েছে সেগুলো বিএসইসি’র পূর্ণ সমর্থন এবং আমাদের নিরলস প্রচেষ্টায় সমাধানপূর্বক খুব অল্প সময়ের মধ্যেই প্রোডাক্টটি বাজারে আনতে পারবো। আজকের এই কর্মশালায় আলোচনার ফলশ্রুতিতে যেসকল দিকনির্দেশনা ও ফাইন্ডিংসগুলো আসবে সেগুলো সমাধানের মাধ্যমে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের বোর্ডে ইটিএফ অন্ত‍ভূ‍র্ক্ত করতে পারবো।

আরও পড়ুন: ব্লকে লেনদেনের ৬২ শতাংশই দুই কোম্পানির

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেডের প্রোডাক্ট এন্ড মার্কেট ডেভেলপমেন্ট বিভাগের প্রধান সাইদ মাহমুদ জুবায়ের এবং লঙ্কাবাংলা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের এজিএম সাইমন ইবনে মুজিব এই কর্মশালার প্রধান উপস্থাপক ছিলেন। তারা প্রধান বিষয়গুলি ট্রেডিং, ক্লিয়ারিং এবং সেটেলমেন্ট, ক্রিয়েশন এবং রিডেম্পশন প্রক্রিয়া, আইনের কাঠামো, সূচক তৈরির প্রক্রিয়া, তালিকাভুক্তিকরন প্রক্রিয়া, তহবিল গঠন, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, গবেষণা, তথ্য প্রকাশ প্রক্রিয়া ইত্যাদি সম্পর্কিত এক্সচেঞ্জ
ট্রেড ফান্ডের অপারেশনাল পদ্ধতির উপর আলোকপাত করে। উল্লেখ্য যে, বিএসইসি ইটিএফ(ETF) রুলস্‌ এর অধীনে ইতোমধ্যে দুটি ইটিএফ (ETF) অনুমোদন করেছে। এর একটি এলবি মাল্টি অ্যাসেট ইনকাম ইটিএফ (LB Multi Asset Income ETF) এবং অপরটি এফএএম ডিজি বেঙ্গল টাইগার ইটিএফ (FAM DG Bengal Tiger ETF)৷ এলবি মাল্টি অ্যাসেট ইনকাম ইটিএফের ফান্ডের আকার হচ্ছে ১০০ কোটি টাকা যা লঙ্কাবাংলা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড দ্বারা পরিচালিত হবে এবং ফএএম ডিজি বেঙ্গল টাইগার ইটিএফের ফান্ডের আকার হল ৫০ কোটি টাকা যা ফ্রন্টিয়ার অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড এবং ডন গ্লোবাল লিমিটেড দ্বারা পরিচালিত হবে।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিএসই’র চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হাফিজ মুহাম্মদ হাসান বাবু৷ এসময় উপস্থিত ছিলেন ডিএসই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) এম. সাইফুর রহমান মজুমদার, এফসিএ, লংকাবাংলা সিকিউিরিটিজ লিঃ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন চৌধুরী, ডিএসই’র মার্কেট ডেভলপম্যান্ট বিভাগের সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার মোঃ ছামিউল ইসলাম, প্রোডাক্ট এন্ড মার্কেট ডেভেলপমেন্ট ডিপার্টমেন্টের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার সাইদ জুবায়ের মাহমুদ এবং অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড কোম্পানির প্রতিনিধিবৃন্দ৷

ঢাকা/এসএ