একদিনেই এক শেয়ারের দাম বেড়েছে ৬৭ লাখ শতাংশ

- আপডেট: ০৬:৩৯:৩০ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৪
- / ১০৬৬২ বার দেখা হয়েছে
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত একটি কোম্পানির শেয়ার দাম এক দিনেই বেড়েছে ৬৬,৯২,৫৩৫ শতাংশ বা প্রায় ৬৭ লাখ শতাংশ। এমন কাণ্ড ঘটেছে ভারতের মুম্বাইয়ে। সেখানকার শেয়ারবাজারে ছোট একটি কোম্পানি এলসিড ইনভেস্টমেন্টসের শেয়ারের দাম এক দিনের লেনদেনে এতটাই বেড়েছে যে সবার চোখ কপালে উঠেছে।
অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুক–টুইটার–লিংকডইন–ইন্সটাগ্রাম–ইউটিউব
ইকোনমিক টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, এটিই এখন ভারতের সবচেয়ে দামি শেয়ার। প্রতিবেদনে বলা হয়, চাঙা বাজারে শেয়ারের দাম বাড়া স্বাভাবিক ব্যাপার। তবে তার একটা সীমা থাকে।
এলসিড ইনভেস্টমেন্টসের শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধিকে বলা যায়, কল্পনাকেও হার মানিয়েছে। কোনো শেয়ারের দাম এক দিনে ৬৭ লাখ শতাংশ বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি অনেকটা অচিন্তনীয়। ফলে তরুণ থেকে বয়স্ক বিনিয়োগকারীরা রীতিমতো ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন।
স্বল্প পরিচিত এলসিড ইনভেস্টমেন্টসের শেয়ার ২০২৪ সালে মাত্র একবারই কেনাবেচা হয়েছিল। মুম্বাইয়ের স্টক এক্সচেঞ্জে গত ২১ জুন কোম্পানিটির মাত্র ৫০০ শেয়ারের হাতবদল ঘটে। তখন প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ৩.৫৩ রুপি।
মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) সেই শেয়ারই বিক্রি হয়েছে প্রতিটি ২ লাখ ৩৬ হাজার ২৫০ রুপিতে। খুব সামান্যসংখ্যক শেয়ার অবশ্য হাতবদল হয়েছে—মাত্র ২৪১টি।
সেদিন হঠাৎ করে শেয়ারের দামে যে বিশাল উল্লম্ফন ঘটেছে, তা একটি নজিরবিহীন ঘটনা। কারণ এক দিনে এলসিডের শেয়ারের দাম বেড়েছে ৬৬,৯২,৫৩৫ শতাংশ।
আরও পড়ুন: পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা ফেরাতে স্বল্প মধ্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করা হচ্ছে: অর্থ উপদেষ্টা
এমআরএফের প্রতিটি শেয়ারের দাম ১ লাখ ২০ হাজার রুপি। প্রশ্ন হলো, একটি শেয়ারের দাম এক দিনে ৬৭ লাখ শতাংশ কীভাবে বাড়ল, যখন শেয়ারবাজারে মূল্য খুব বেশি বৃদ্ধির ঠেকাতে একটি ঊর্ধ্বসীমা ঠিক করা আছে।
ইকোনমিক টাইমস জানিয়েছে, মুম্বাইভিত্তিক এলসিড একটি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক কোম্পানি। এশিয়ান পেইন্টসের মালিকদের ৭৫ শতাংশ হিস্যা রয়েছে এই কোম্পানিতে। এ ছাড়া হাইড্রা ট্রেডিং ও থ্রিএ ক্যাপিটাল সার্ভিসেস যথাক্রমে ৯.০৪ শতাংশ ও ৩.৩৪ শতাংশ শেয়ারের মালিক।
ব্যাংকবহির্ভূত এই আর্থিক কোম্পানির মোট বাজার মূলধন ৪ হাজার ৭২৫ কোটি রুপি। অর্থাৎ কোম্পানিটির বাজার মূলধনের ৮০ শতাংশই এশিয়ান পেইন্টসের দখলে। গত অর্থবছরে তাদের আয় ছিল ২৩৫ কোটি রুপি, যার বেশির ভাগ এসেছে ডিভিডেন্ড থেকে। আর মুনাফার পরিমাণ ছিল ১৭৬ কোটি রুপি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১১ সাল থেকেই এলসিডের শেয়ার দাম ছিল কমবেশি ৩ রুপি করে। তবে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি বুক ভ্যালু ছিল ৫ লাখ ৮৫ হাজার ২২৫ রুপি।
এই বিশাল পার্থক্যের কারণে চলতি শেয়ারধারীরা কোনোভাবেই কম দামে শেয়ার বিক্রি করতে চাইতেন না। যে কারণে শেয়ারবাজারে এলসিড ইনভেস্টমেন্টসের শেয়ার একেবারেই বিক্রি হতো না বলা যায়।
ইকোনমিক টাইমস জানিয়েছে, এলসিড শেয়ারধারীদের জীবনে পরিবর্তন ঘটে ভারতের শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেবির এক সিদ্ধান্তের কারণে। সেবি নির্দেশ দিয়েছিল, স্টক এক্সচেঞ্জগুলোকে একটি বিশেষ লেনদেন সেশন পরিচালনা করতে হবে, যার মাধ্যমে শেয়ারের প্রকৃত মূল্য খুঁজে বের করা হবে। এর ফলে এলসিডের মতো আরও যেসব হোল্ডিং কোম্পানি রয়েছে, তাদের মূল্য জানা যাবে।
এর অংশ হিসেবে বোম্বে স্টক এক্সচেঞ্জ (বিএসই) ও ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জে (এনএসই) চলতি সপ্তাহে একটি বিশেষ অকশন সেশন পরিচালনা করে। হোল্ডিং কোম্পানিগুলোর জন্য এক্ষেত্রে দামের কোনো সীমা আরোপ করা ছিল না। উদ্দেশ্য ছিল, বাজারে তারল্য বাড়ানো এবং কোম্পানিগুলোর সঠিক মূল্য খুঁজে বের করা।
এলসিআইডি এমন একটি কোম্পানি ছিল যার শেয়ার খুব কম লেনদেন করা হতো এবং এমনকি যদি সেগুলি বিক্রি করা হয়, তবে এটি বুক ভ্যালু মূল্যের কম দামে ছিল। ফলস্বরূপ, বিশেষ মূল্য-সন্ধানী লেনদেনে এর শেয়ারের মূল্য 6.7 মিলিয়ন শতাংশ বেড়েছে। এই বৃদ্ধি ভারতীয় স্টক মার্কেটে যে কোনও শেয়ারের দাম এক দিনে বৃদ্ধির রেকর্ড ছিল।
এলসিড কোম্পানির শেয়ার খুবই কম লেনদেন হতো এবং হলেও তা হতো বুক ভ্যালুর চেয়ে অনেক কম দামে। এ কোম্পানির মতো বুক ভ্যালুর অনেক নিচে লেনদেন হওয়া এবং লেনদেন না হওয়া কোম্পানিগুরোর শেয়ারের প্রকৃত দাম খুঁজে পাওয়ার সুযোগ করে দিলে শেয়ারটির দাম ৬৭ লাখ শতাংশ বেড়ে যায়। এই বৃদ্ধি ছিল ভারতের শেয়ারবাজারে এক দিনে কোনো শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধির একটি রেকর্ড।
তবে মঙ্গলবার সামান্য সংখ্যক শেয়ার হাতবদলের পর আজ বুধবার এলসিডের শেয়ার কেনাবেচাই হয়নি।
ঢাকা/এসএইচ