০৫:০২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪

এনবিআরের পরিপত্রে বিভ্রান্তি: আয়করমুক্ত থাকছে ব্যাক্তি পর্যায়ের ক্যাপিটাল গেইন

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ১০:০৪:২৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২২
  • / ৪২৮৫ বার দেখা হয়েছে

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: ক্যাপিটাল গেইন ইস্যুতে আগামী অর্থবছরের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রকাশিত আয়কর পরিপত্র নিয়ে পুঁজিবাজারে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে। মুলত সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বেচাকেনার মাধ্যমে অর্জিত মূলধনি আয় করমুক্ত ছিল, কিন্তু এখন থেকে করারোপ করা হবে- এমন খবর ছড়িয়ে পড়ে। তবে বিষয়টি সঠিক নয় বলে জানিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, এনবিআরের সঙ্গে যোগাযোগের ভিত্তিতে তারা জানাচ্ছে, ব্যক্তিপর্যায়ে শেয়ার বেচাকেনার মাধ্যমে অর্জিত আয় করমুক্তই থাকছে।

বুধবার পুঁজিবাজারে হঠাৎ বড় দরপতনের কারণ হিসেবে ডলারের বিপরীতে টাকার রেকর্ড পতনের বিষয়টিই বিবেচনা করা হচ্ছিল। তবে এনবিআরের পরিপত্র জারির পর এটা বোঝা যায়, এ বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগও এখানে কাজ করেছে।

২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট কার্যক্রমের মাধ্যমে আয়করের ক্ষেত্রে আনা পরিবর্তন সম্পর্কিত স্পষ্টীকরণে ‘আয়কর পরিপত্র ২০২২-২০২৩’ প্রকাশ করে এনবিআর।

এই আয়কর পরিপত্রের আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪-এর ধারা ৩২ সংশোধনী এনে বলা হয়, ‘১২.২ সরকারি সিকিউরিটিজ এবং পাবলিক কোম্পানির স্টকস্ ও শেয়ার হস্তান্তর হতে অর্জিত মূলধনি আয় করযোগ্য।’

এর ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, ‘বিদ্যমান সেকশন ৩২-এর সাব-সেকশন (৭) অনুযায়ী, সরকারি সিকিউরিটিজ এবং স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত পাবলিক কোম্পানির স্টকস ও শেয়ার হস্তান্তর হতে অর্জিত মূলধনি আয় সেকশন ৩১-এর আওতায় করারোপিত হয় না।

আরও পড়ুনঃ শেয়ার কারসাজিতে জড়িত নয় সাকিব আল হাসান: বিএসইসিশেয়ার কারসাজিতে জড়িত নয় সাকিব আল হাসান: বিএসইসি

অর্থ আইন, ২০২২-এর মাধ্যমে আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪-এর সেকশন ৩২-এর সাব-সেকশন (৭) বিলোপের ফলে সরকারি সিকিউরিটিজ এবং স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত পাবলিক কোম্পানির স্টকস ও শেয়ার হস্তান্তর হতে অর্জিত মূলধনি আয় করযোগ্য আয় হিসেবে পরিগণিত হবে এবং প্রযোজ্য হারে করারোপিত হবে।’

বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়। অনেকেই মনে করতে শুরু করেন, তালিকাভুক্ত যেকোনো স্টক বা শেয়ারের বেচাকেনা থেকে আয়ের ওপর করারোপ করা হচ্ছে। তবে বিষয়টি তা নয় বলে জানিয়েছেন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।

এ বিষয়ে বিএসইসি চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এটা আমাদের নয়, ওইটা ব্যাংকের।’

তিনি বলেন, ‘এই ধোঁয়াশার কারণে বাজারের বেশ ক্ষতি হয়েছে। আজকে বাজার অনেকখানি পড়েছে। বিনিয়োগকারীদের বলব, বিষয়টি ঠিক নয়।’

বিএসইসির মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ারের ক্যাপিটাল গেইন এখনও করমুক্ত আছে। কারণ ২০১৫ সালের এসআরওতে ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের যে কর সুবিধা দেয়া হয়েছিল তা বাতিল করা হয়নি।’

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের আয়কর প্রজ্ঞাপন অর্থাৎ এসআরও নং ১৯৬-আইন/আয়কর/২০১৫ অনুযায়ী, ‘ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, মার্চেন্ট ব্যাংক, বিমা, লিজিং কোম্পানি, পোর্টফোলিও ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি, স্টক ডিলার বা স্টক ব্রোকার কোম্পানির স্পন্সর শেয়ারহোল্ডার বা শেয়ারহোল্ডার ডিরেক্টরদের সিকিউরিটিজ লেনদেন হতে অর্জিত আয়ের ওপর ৫ শতাংশ করারোপ করা হয়েছে।

তবে ওই এআরওর (খ) দফা অনুযায়ী, ‘দফা (ক) এবং উক্ত অর্ডিন্যান্সের সেকশন ৫৪এম-এ বর্ণিত করদাতা ব্যতীত অন্য করদাতাদের স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্তি কোম্পানির সিকিউরিটিজ লেনদেন হতে অর্জিত আয়ের ওপর প্রদেয় আয়কর হতে অব্যাহতি প্রদান করা হলো।’

অর্থাৎ ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীদের শেয়ার কেনাবেচা থেকে অর্জিত আয় করের বাইরে থাকবে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এনবিআরের আয়কর পরিপত্রের ভাষাগত জটিলতার কারণে এ ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। ৩২ (৭) বিলুপ্ত করা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু সেই সঙ্গে এসআরও ২০১৫তে ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের যে সুবিধা দেয়া হয়েছিল তা ঠিক বহাল রয়েছে। ফলে ব্যক্তিপর্যায়ে তা করমুক্তই রয়েছে।

ঢাকা/এসআর

শেয়ার করুন

x

এনবিআরের পরিপত্রে বিভ্রান্তি: আয়করমুক্ত থাকছে ব্যাক্তি পর্যায়ের ক্যাপিটাল গেইন

আপডেট: ১০:০৪:২৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২২

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: ক্যাপিটাল গেইন ইস্যুতে আগামী অর্থবছরের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রকাশিত আয়কর পরিপত্র নিয়ে পুঁজিবাজারে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে। মুলত সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বেচাকেনার মাধ্যমে অর্জিত মূলধনি আয় করমুক্ত ছিল, কিন্তু এখন থেকে করারোপ করা হবে- এমন খবর ছড়িয়ে পড়ে। তবে বিষয়টি সঠিক নয় বলে জানিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, এনবিআরের সঙ্গে যোগাযোগের ভিত্তিতে তারা জানাচ্ছে, ব্যক্তিপর্যায়ে শেয়ার বেচাকেনার মাধ্যমে অর্জিত আয় করমুক্তই থাকছে।

বুধবার পুঁজিবাজারে হঠাৎ বড় দরপতনের কারণ হিসেবে ডলারের বিপরীতে টাকার রেকর্ড পতনের বিষয়টিই বিবেচনা করা হচ্ছিল। তবে এনবিআরের পরিপত্র জারির পর এটা বোঝা যায়, এ বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগও এখানে কাজ করেছে।

২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট কার্যক্রমের মাধ্যমে আয়করের ক্ষেত্রে আনা পরিবর্তন সম্পর্কিত স্পষ্টীকরণে ‘আয়কর পরিপত্র ২০২২-২০২৩’ প্রকাশ করে এনবিআর।

এই আয়কর পরিপত্রের আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪-এর ধারা ৩২ সংশোধনী এনে বলা হয়, ‘১২.২ সরকারি সিকিউরিটিজ এবং পাবলিক কোম্পানির স্টকস্ ও শেয়ার হস্তান্তর হতে অর্জিত মূলধনি আয় করযোগ্য।’

এর ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, ‘বিদ্যমান সেকশন ৩২-এর সাব-সেকশন (৭) অনুযায়ী, সরকারি সিকিউরিটিজ এবং স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত পাবলিক কোম্পানির স্টকস ও শেয়ার হস্তান্তর হতে অর্জিত মূলধনি আয় সেকশন ৩১-এর আওতায় করারোপিত হয় না।

আরও পড়ুনঃ শেয়ার কারসাজিতে জড়িত নয় সাকিব আল হাসান: বিএসইসিশেয়ার কারসাজিতে জড়িত নয় সাকিব আল হাসান: বিএসইসি

অর্থ আইন, ২০২২-এর মাধ্যমে আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪-এর সেকশন ৩২-এর সাব-সেকশন (৭) বিলোপের ফলে সরকারি সিকিউরিটিজ এবং স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত পাবলিক কোম্পানির স্টকস ও শেয়ার হস্তান্তর হতে অর্জিত মূলধনি আয় করযোগ্য আয় হিসেবে পরিগণিত হবে এবং প্রযোজ্য হারে করারোপিত হবে।’

বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়। অনেকেই মনে করতে শুরু করেন, তালিকাভুক্ত যেকোনো স্টক বা শেয়ারের বেচাকেনা থেকে আয়ের ওপর করারোপ করা হচ্ছে। তবে বিষয়টি তা নয় বলে জানিয়েছেন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।

এ বিষয়ে বিএসইসি চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এটা আমাদের নয়, ওইটা ব্যাংকের।’

তিনি বলেন, ‘এই ধোঁয়াশার কারণে বাজারের বেশ ক্ষতি হয়েছে। আজকে বাজার অনেকখানি পড়েছে। বিনিয়োগকারীদের বলব, বিষয়টি ঠিক নয়।’

বিএসইসির মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ারের ক্যাপিটাল গেইন এখনও করমুক্ত আছে। কারণ ২০১৫ সালের এসআরওতে ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের যে কর সুবিধা দেয়া হয়েছিল তা বাতিল করা হয়নি।’

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের আয়কর প্রজ্ঞাপন অর্থাৎ এসআরও নং ১৯৬-আইন/আয়কর/২০১৫ অনুযায়ী, ‘ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, মার্চেন্ট ব্যাংক, বিমা, লিজিং কোম্পানি, পোর্টফোলিও ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি, স্টক ডিলার বা স্টক ব্রোকার কোম্পানির স্পন্সর শেয়ারহোল্ডার বা শেয়ারহোল্ডার ডিরেক্টরদের সিকিউরিটিজ লেনদেন হতে অর্জিত আয়ের ওপর ৫ শতাংশ করারোপ করা হয়েছে।

তবে ওই এআরওর (খ) দফা অনুযায়ী, ‘দফা (ক) এবং উক্ত অর্ডিন্যান্সের সেকশন ৫৪এম-এ বর্ণিত করদাতা ব্যতীত অন্য করদাতাদের স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্তি কোম্পানির সিকিউরিটিজ লেনদেন হতে অর্জিত আয়ের ওপর প্রদেয় আয়কর হতে অব্যাহতি প্রদান করা হলো।’

অর্থাৎ ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীদের শেয়ার কেনাবেচা থেকে অর্জিত আয় করের বাইরে থাকবে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এনবিআরের আয়কর পরিপত্রের ভাষাগত জটিলতার কারণে এ ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। ৩২ (৭) বিলুপ্ত করা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু সেই সঙ্গে এসআরও ২০১৫তে ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের যে সুবিধা দেয়া হয়েছিল তা ঠিক বহাল রয়েছে। ফলে ব্যক্তিপর্যায়ে তা করমুক্তই রয়েছে।

ঢাকা/এসআর