এস আলমের আভিভা ইক্যুইটির ঋণ-অর্থপাচার তদন্ত করবে বিএসইসি

- আপডেট: ০২:০১:২৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / ১০৩১২ বার দেখা হয়েছে
পুঁজিবাজারের সদস্যভুক্ত ব্রোকারেজ হাউজ আভিভা ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের (আগের নাম রিলায়েন্স ব্রোকারেজ সার্ভিস) নেওয়া ঋণ, বিভিন্ন আর্থিক লেনদেন ও অর্থপাচার বিষয়ে তদন্তে নেমেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। আর্থিক খাতের বহুল আলোচিত এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন আভিভা ফাইন্যান্স লিমিটেডের (আগের নাম রিলায়েন্স ফাইন্যান্স) সহযোগী প্রতিষ্ঠান আভিভা ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড।
পুঁজিবাজার এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় বেশকিছু নির্দেশনা সাপেক্ষে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছে কমিশন।
সম্প্রতি বিএসইসির মার্কেট ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন বিভাগ থেকে এ বিষয়ে একটি আদেশ জারি করা হয়েছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে। তদন্তের বিষয়ে আভিভা ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অবহিত করা হয়েছে।
তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন— বিএসইসির পরিচালক মনসুর রহমান, যুগ্ম পরিচালক সুলতানা পারভীন ও সহকারী পরিচালক মো. মারুফ হাসান।
বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, আভিভা ফাইন্যান্স থেকে ঋণ নিয়েছে আভিভা ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট। কোন কোন ক্ষেত্রে ওই ঋণের টাকা ব্যবহার করা হয়েছে, যথাযথ নিয়ম মেনে তা ব্যবহার করা হয়েছে কি না, ওই ঋণের টাকা থেকে কোনো রিলেটেড পার্টিকে মার্জিন ঋণ দেওয়া হয়েছে কি না, ওই ঋণ মানিলন্ডারিংয়ে ব্যবহৃত হয়েছে কি না, যথাসময়ে পরিশোধে ব্যর্থতার কারণ কী—এসব বিষয় তদন্ত করবে বিএসইসি গঠিত তদন্ত কমিটি।
বিএসইসির তদন্তের আদেশ
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন মনে করে, পুঁজিবাজার এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বৃহত্তর স্বার্থে এনআরবি ব্যাংক সিকিউরিটিজ লিমিটেডের কার্যক্রম তদন্ত করা প্রয়োজন।
তাই, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন, ১৯৯৩-এর ধারা ১৭(ক) এবং মানিলন্ডারিং প্রিভেনশন রুলস, ২০১৯ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে কমিশন তিন কর্মকর্তার সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটি আভিভা ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্টের বিভিন্ন কার্যপরিধি তদন্ত করে দেখবে। কর্মকর্তারা এই আদেশ জারির তারিখ থেকে ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করবেন এবং কমিশনের কাছে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখির করবেন।
তদন্ত কমিটি যেসব বিষয় খতিয়ে দেখবে
আভিভা ফাইন্যান্স থেকে আভিভা ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট কত টাকা ঋণ নিয়েছে এবং ২০২৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত সুদসহ মোট ঋণের পরিমাণ কত, তা যাচাই করবে তদন্ত কমিটি। একইসঙ্গে প্রতিষ্ঠানটি ওই ঋণের কত টাকা পরিশোধ করেছে, অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো ঋণ নিয়েছে কি না এবং নিয়ে থাকলে বর্তমানে সুদসহ তার পরিমাণ কত, তা যাচাই করা হবে।
প্রতিষ্ঠানটির নেওয়া ওই ঋণ কোন কোন খাতে ব্যবহার করা হয়েছে, তা সিকিউরিটিজ আইন ও প্রযোজ্য নিয়ম মেনে ব্যয় হয়েছে কি না, এই ঋণ থেকে কোনো সম্পর্কিত পক্ষকে (রিলেটেড পার্টি) মার্জিন ঋণ দেওয়া হয়েছে কি না, দিয়ে থাকলে তার অংক ও সুদসহ বর্তমান অবস্থা কত এবং সেসব ঋণ ফেরত এসেছে কি না, তাও খতিয়ে দেখবে তদন্ত কমটি।
পাশাপাশি, আভিভা ফাইন্যান্স থেকে আভিভা ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্টের নেওয়া ঋণ মানিলন্ডারিংয়ে ব্যবহৃত হয়েছে কি না, তাও অনুসন্ধান করবে তদন্ত কমিটি। এছাড়া, ঋণ যথাসময়ে পরিশোধে আভিভা ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট কেন ব্যর্থ হয়েছে এবং প্রতিষ্ঠানটি আদৌ ঋণ শোধ করতে সক্ষম কি না, তা যাচাই করা হবে। ঋণ পরিশোধে সক্ষম হলে কবে নাগাদ তা পরিশোধ করা সম্ভব এবং এ সম্পর্কিত অন্যান্য সকল তথ্য যাচাই করবে তদন্ত কমিটি।
আভিভা ফাইন্যান্সের চেয়ারম্যান ছিলেন এস আলম গ্রুপের কর্ণধার মোহাম্মদ সাইফুল আলম। তবে, বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে তাকে এই প্রতিষ্ঠান থেকে সরিয়ে দেয়। অর্থ কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত পি কে হালদার ২০০৯ সালে আভিভা ফাইন্যান্সের (তৎকালীন রিলায়েন্স ফাইন্যান্স) ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আর্থিক কেলেঙ্কারির পর ২০২০ সালে রিলায়েন্স ফাইন্যান্সের নাম পরিবর্তন করে আভিভা ফাইন্যান্স রাখা হয়। একই সঙ্গে তৎকালীন তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠান রিলায়েন্স ব্রোকারেজের নাম পরিবর্তন করে আভিভা ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট রাখা হয়।
ব্রোকারেজ হাউজটির বিরুদ্ধে শেয়ার কারসাজি, সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে (সিসিএ) ঘাটতি, নেগেটিভ অ্যাকাউন্টে ঋণ প্রদান, ডিলার অ্যাকাউন্ট ও নেগেটিভ অ্যাকাউন্টে শেয়ার ডাম্পিং, অতিরিক্ত দামে প্লেসমেন্ট শেয়ার ক্রয় এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের অর্থ আত্মসাৎ করাসহ নানা অভিযোগ আছে। এসব ঘটনার সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. শহিদুল ইসলামের সম্পৃক্ততা থাকার অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএসইসির একজন কর্মকর্তা বলেছেন, “প্রাথমিক অভিযোগ ও অনুসন্ধানের ভিত্তিতে কিছু শর্ত সাপেক্ষে বিএসইসি সম্প্রতি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন দাখিলের পরিপ্রেক্ষিতে কমিশন পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।”
ঢাকা/এসএইচ