এস আলম পুরো ব্যাংক খাত ধ্বংস করে দিয়েছে: মাসরুর আরেফিন

- আপডেট: ০৮:০৯:০০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / ১০১৮২ বার দেখা হয়েছে
একাই পুরো ব্যাংক খাত ধ্বংস করে দিয়েছেন এস আলম গ্রুপের কর্ণধার – এমন মন্তব্য করেছেন সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন। তিনি বলেন, একজন মাত্র ব্যক্তি যেমন একটি ব্যাংক ধ্বংস করে দিতে পারে, উল্টোভাবে এক-দুজন সৎ পরিচালকও একটি ব্যাংকের সফলতার জন্য যথেষ্ট।
রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে ‘ব্যাংক খাতের সংকট, সংস্কার ও নিয়ন্ত্রণ’ শীর্ষক একটি প্যানেল আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।
আলোচনায় মাসরুর আরেফিন আরও বলেন, দেশে ব্যাংক খাতে মোট ঋণের পরিমাণ ১৮ লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রায় ১১ লাখ কোটি টাকা সমস্যাপূর্ণ বা ‘ডিস্ট্রেসড’। ৬০টি ব্যাংকের মধ্যে বিদেশি বাদে ৫০টি স্থানীয় ব্যাংকের মধ্যে প্রায় ৪০টি মানসম্মত নয়। এর মধ্যে প্রায় ১৫টি ‘জম্বি ব্যাংক’, যেগুলোর অর্ধেকই লুটপাটের শিকার।
আয়োজনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন মাহমুদ ওসমান ইমাম। তিনি বলেন, খেলাপি ঋণ ও শাসনব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে ব্যাংক খাত সংস্কার জটিল ও ব্যয়বহুল। অনেক জম্বি ব্যাংকে ঋণের ৯০% খেলাপি। বাংলাদেশ ব্যাংককে আরও স্বাধীনতা এবং নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করে এক পরিবারের দুইজনের বেশি বোর্ডে না রাখা, চেয়ারম্যান ও নির্বাহী চেয়ারম্যানকে মালিক পক্ষের বাইরে রাখা এবং পরিচালকের মেয়াদ ১২ বছর থেকে কমিয়ে ৬ বছর করার সুপারিশ দেন।
সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন বলেন, “আইনের খসড়ায় ৫০% স্বতন্ত্র পরিচালক রাখা, একটি পরিবারকে ১০% শেয়ার রাখার সীমা, আত্মীয়তার সংজ্ঞায় বিভ্রান্তি ইত্যাদি বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গে মানানসই নয়। বড় লুটপাট হয়েছে বেনামি নামে, বৈধ মালিকানায় নয়।”
পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী বলেন, ২০২৫ সালের জুন নাগাদ খেলাপি ঋণ ৪.২ ট্রিলিয়ন থেকে আরও ১.৫ ট্রিলিয়ন বেড়ে যেতে পারে, যা ব্যাংক খাতকে গভীর সংকটে ফেলেছে। তারল্য সংকটে আমানতকারীরা টাকা তুলতে পারছেন না।
ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহেল আর কে হোসেন বলেন, হুইসেলব্লোয়িং নীতিকে শক্তিশালী করা, রেটিং এজেন্সিগুলোর জবাবদিহি বাড়ানো ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা বাড়ানো জরুরি।
তিনি বলেন, ১২টি ব্যাংক কার্যত দেউলিয়া, কিন্তু রেটিং এজেন্সি, দুর্নীতি দমন কমিশন বা বাংলাদেশ ব্যাংকের যথাযথ পদক্ষেপ দেখা যায়নি।
সবশেষে তিনি বলেন, কাগজে-কলমে নয়, বাস্তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা ও ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষমতা নিশ্চিত করতে হবে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের অনিয়ম রোধেও কার্যকর নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।
ঢাকা/এসএইচ