১১:৫৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

‘এস আলম’ বিশ্বের সবচেয়ে বড় ব্যাংক কেলেঙ্কারি: আহসান এইচ মনসুর

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০৬:০৬:১৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৪
  • / ১৫১৯৯ বার দেখা হয়েছে

আমার জানামতে এটাই বিশ্বের সবচেয়ে বড় ব্যাংক কেলেঙ্কারি। যেখানে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে সুনিপুণভাবে দুর্নীতি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ‌গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। আজ বুধবার (২৮ আগস্ট) বাংলাদেশ ব্যাংকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

তিনি বলেন, বাজেয়াপ্ত হওয়ার ভয়ে গোপনে সম্পদ বিক্রি করে দিচ্ছে এস আলম গ্রুপ। আইনি জটিলতার কারণে এখনি হস্তক্ষেপ করতে পারছে না বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে শিগগিরই আইনি উপায় খুঁজে বের করা হবে। তাই সর্বসাধারণকে সাবধান করা হচ্ছে এস আলম গ্রুপের সম্পদ কেউ কিনবেন না। সাংবাদিকদের মাধ্যমে আমি হুঁশিয়ার করে দিচ্ছি। এসব সম্পদ জনগণের। এখানে কেউ হাত দেবেন না।

ইসলামী ব্যাংকে ঘটে যাওয়া কেলেঙ্কারি এবং পরিচালনা পর্ষদ নিয়ে গভর্নর বলেন, এইরকম ভাবে, এত বিস্তৃতভাবে, সুপরিকল্পিত এবং রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে ব্যাংক কেলেঙ্কারির ঘটনা আমি আগে কখনো দেখিনি। বিশ্বে আমি এরচেয়ে বড় ব্যাংক কেলেঙ্কারি আর দেখিনি। সম্ভবত এটাই সবচেয়ে বড় ব্যাংক কেলেঙ্কারি। আমাদের জন্য এটা একটি শিক্ষণীয় মডেল। তবে এটা এড়িয়ে চলতে হবে। ইসলামী ব্যাংকের যে নতুন বোর্ড গঠন করা হয়েছে তাদের সঙ্গে বসবো। তাদেরকে আমি এক সপ্তাহ সময় দিয়েছি। তারা আমাদের একটি কর্মপরিকল্পনা দিবে। এখন আর বসে থাকার সময় নেই। কাজ করতে হবে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গেই কাজ করতে হবে।

জীবনটা গঠন করা হয়েছে সেটা সম্পূর্ণ ইন্ডিপেন্ডেন্ট বোর্ড এখানে কোনো মালিক নেই। তাই তাদেরকে সরকারের স্বার্থে, ব্যাংকের স্বার্থে এবং আমানতকারীদের স্বার্থে কাজ করতে হবে। বোর্ড দিয়েছি, দরকার হলে বোর্ড চেঞ্জ করবো। প্রত্যেকেই যেন ইফেক্টিভলি তাদের কাজ করে।

গভর্নর আরো বলেন, ইতিমধ্যে ছয়টি ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে। খুব শীঘ্রই আরো কয়েকটি পুনর্গঠন করা হবে। তারা রাষ্ট্রের প্রতিনিধি হিসেবে এখন ব্যাংক পরিচালনা করবে। যদি তারা ঠিকমতো কাজ না করে তাহলে তাদেরকেও প্রয়োজনে পরিবর্তন করা হবে।

ব্যাংকের মার্জার প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই প্রক্রিয়ায় এখন বাতিল। ভবিষ্যতে ব্যাংকিং কমিশন বা ট্রাস্ট ফোর্স এসে যেরকম পরামর্শ দিবেন সেভাবে কাজ হবে।

আরও পড়ুন: ‘প্রভাবশালীরা নামে-বেনামে কত টাকা আত্মসাৎ করেছে তার হিসাব হচ্ছে’

মূল্যস্ফীতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন যেহেতু দেশে একটি বড় বন্যা হয়ে গেছে। তাই আগামী দুই তিন মাস মূল্যস্ফিতি নাও কমতে পারে। তবে আমি আশাবাদী আগামী ৬ থেকে ৮ মাসের মধ্যে ইনফ্লেশন কমে যাবে। কারণ মূল্যস্ফীতি কমাতে দুই দিক থেকেই কাজ করতে হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক এবং সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা। আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নিয়েছি। সাপ্লাই সাইট ঠিক হলে মূল্যস্ফিতি এমনিতেই কমে আসবে।

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আর এক ডলার বিক্রি করা হবে না। তবে সরকারি পেমেন্ট পরিশোধ করার জন্য মার্কেট থেকে ডলার সংগ্রহ করে আমরা সোনালী সহ অন্যান্য ব্যাংকগুলোকে দিচ্ছি। যেসব এলসি আগে খোলা হয়েছে সেসব দায় পরিশোধ, বিদ্যুতের দেনা পরিশোধ এবং সার আমদানির বিষয় গুরুত্ব দিয়ে মার্কেট থেকেই আমরা ডলার ব্যবস্থাপনা করছি। কিন্তু রিজার্ভ থেকে এক ডলার বিক্রি করারও কোনো পরিকল্পনা নেই।

আমানতকারীদের ধৈর্য ধারণ করার পরামর্শ দিয়ে গভর্নর বলেন, সবাই একসঙ্গে টাকা তুলতে গেলে পৃথিবীর কোনো ব্যাংকে টাকা দিতে পারবে না। তাই যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু ছাড়া অতিরিক্ত টাকা ব্যাংক থেকে এখন না ওঠানোর পরামর্শ দিয়েছেন গভর্নর।

তিনি বলেন, আমরা ইতিমধ্যেই সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছি। আশা করি ব্যাংকগুলো ঘুরে দাঁড়াবে তবে একটু সময় লাগবে। এতদিন পর্যন্ত আপনারা একটু অপেক্ষা করুন।

পূর্বের মতো ব্যাংকগুলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সহায়তা দেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকার টাকা চেপে আর কোনো ব্যাংকে অবৈধ সুবিধা দেবে না। আমানতকারীদের আস্থা ব্যাংকগুলোকেই ফেরাতে হবে। এখন টাকা চেপে আমানতকারীদের সহযোগিতা দিলে পুরো বাংলাদেশে এটার জন্য ইফেক্টেড হবে। তাই এখন আমানতকারীদের ধৈর্য ধরা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।

ঢাকা/এসএইচ

শেয়ার করুন

‘এস আলম’ বিশ্বের সবচেয়ে বড় ব্যাংক কেলেঙ্কারি: আহসান এইচ মনসুর

আপডেট: ০৬:০৬:১৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৪

আমার জানামতে এটাই বিশ্বের সবচেয়ে বড় ব্যাংক কেলেঙ্কারি। যেখানে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে সুনিপুণভাবে দুর্নীতি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ‌গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। আজ বুধবার (২৮ আগস্ট) বাংলাদেশ ব্যাংকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

তিনি বলেন, বাজেয়াপ্ত হওয়ার ভয়ে গোপনে সম্পদ বিক্রি করে দিচ্ছে এস আলম গ্রুপ। আইনি জটিলতার কারণে এখনি হস্তক্ষেপ করতে পারছে না বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে শিগগিরই আইনি উপায় খুঁজে বের করা হবে। তাই সর্বসাধারণকে সাবধান করা হচ্ছে এস আলম গ্রুপের সম্পদ কেউ কিনবেন না। সাংবাদিকদের মাধ্যমে আমি হুঁশিয়ার করে দিচ্ছি। এসব সম্পদ জনগণের। এখানে কেউ হাত দেবেন না।

ইসলামী ব্যাংকে ঘটে যাওয়া কেলেঙ্কারি এবং পরিচালনা পর্ষদ নিয়ে গভর্নর বলেন, এইরকম ভাবে, এত বিস্তৃতভাবে, সুপরিকল্পিত এবং রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে ব্যাংক কেলেঙ্কারির ঘটনা আমি আগে কখনো দেখিনি। বিশ্বে আমি এরচেয়ে বড় ব্যাংক কেলেঙ্কারি আর দেখিনি। সম্ভবত এটাই সবচেয়ে বড় ব্যাংক কেলেঙ্কারি। আমাদের জন্য এটা একটি শিক্ষণীয় মডেল। তবে এটা এড়িয়ে চলতে হবে। ইসলামী ব্যাংকের যে নতুন বোর্ড গঠন করা হয়েছে তাদের সঙ্গে বসবো। তাদেরকে আমি এক সপ্তাহ সময় দিয়েছি। তারা আমাদের একটি কর্মপরিকল্পনা দিবে। এখন আর বসে থাকার সময় নেই। কাজ করতে হবে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গেই কাজ করতে হবে।

জীবনটা গঠন করা হয়েছে সেটা সম্পূর্ণ ইন্ডিপেন্ডেন্ট বোর্ড এখানে কোনো মালিক নেই। তাই তাদেরকে সরকারের স্বার্থে, ব্যাংকের স্বার্থে এবং আমানতকারীদের স্বার্থে কাজ করতে হবে। বোর্ড দিয়েছি, দরকার হলে বোর্ড চেঞ্জ করবো। প্রত্যেকেই যেন ইফেক্টিভলি তাদের কাজ করে।

গভর্নর আরো বলেন, ইতিমধ্যে ছয়টি ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে। খুব শীঘ্রই আরো কয়েকটি পুনর্গঠন করা হবে। তারা রাষ্ট্রের প্রতিনিধি হিসেবে এখন ব্যাংক পরিচালনা করবে। যদি তারা ঠিকমতো কাজ না করে তাহলে তাদেরকেও প্রয়োজনে পরিবর্তন করা হবে।

ব্যাংকের মার্জার প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই প্রক্রিয়ায় এখন বাতিল। ভবিষ্যতে ব্যাংকিং কমিশন বা ট্রাস্ট ফোর্স এসে যেরকম পরামর্শ দিবেন সেভাবে কাজ হবে।

আরও পড়ুন: ‘প্রভাবশালীরা নামে-বেনামে কত টাকা আত্মসাৎ করেছে তার হিসাব হচ্ছে’

মূল্যস্ফীতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন যেহেতু দেশে একটি বড় বন্যা হয়ে গেছে। তাই আগামী দুই তিন মাস মূল্যস্ফিতি নাও কমতে পারে। তবে আমি আশাবাদী আগামী ৬ থেকে ৮ মাসের মধ্যে ইনফ্লেশন কমে যাবে। কারণ মূল্যস্ফীতি কমাতে দুই দিক থেকেই কাজ করতে হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক এবং সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা। আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নিয়েছি। সাপ্লাই সাইট ঠিক হলে মূল্যস্ফিতি এমনিতেই কমে আসবে।

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আর এক ডলার বিক্রি করা হবে না। তবে সরকারি পেমেন্ট পরিশোধ করার জন্য মার্কেট থেকে ডলার সংগ্রহ করে আমরা সোনালী সহ অন্যান্য ব্যাংকগুলোকে দিচ্ছি। যেসব এলসি আগে খোলা হয়েছে সেসব দায় পরিশোধ, বিদ্যুতের দেনা পরিশোধ এবং সার আমদানির বিষয় গুরুত্ব দিয়ে মার্কেট থেকেই আমরা ডলার ব্যবস্থাপনা করছি। কিন্তু রিজার্ভ থেকে এক ডলার বিক্রি করারও কোনো পরিকল্পনা নেই।

আমানতকারীদের ধৈর্য ধারণ করার পরামর্শ দিয়ে গভর্নর বলেন, সবাই একসঙ্গে টাকা তুলতে গেলে পৃথিবীর কোনো ব্যাংকে টাকা দিতে পারবে না। তাই যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু ছাড়া অতিরিক্ত টাকা ব্যাংক থেকে এখন না ওঠানোর পরামর্শ দিয়েছেন গভর্নর।

তিনি বলেন, আমরা ইতিমধ্যেই সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছি। আশা করি ব্যাংকগুলো ঘুরে দাঁড়াবে তবে একটু সময় লাগবে। এতদিন পর্যন্ত আপনারা একটু অপেক্ষা করুন।

পূর্বের মতো ব্যাংকগুলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সহায়তা দেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকার টাকা চেপে আর কোনো ব্যাংকে অবৈধ সুবিধা দেবে না। আমানতকারীদের আস্থা ব্যাংকগুলোকেই ফেরাতে হবে। এখন টাকা চেপে আমানতকারীদের সহযোগিতা দিলে পুরো বাংলাদেশে এটার জন্য ইফেক্টেড হবে। তাই এখন আমানতকারীদের ধৈর্য ধরা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।

ঢাকা/এসএইচ