ফিরে দেখা- ২০২২
টানাপোড়েন সত্ত্বেও বেড়েছে বাজার মূলধন

- আপডেট: ০৫:৫১:৪০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২২
- / ১০৯২১ বার দেখা হয়েছে
টানা সূচক ও লেনদেনের পতনে ন্যুব্জ হয়ে পড়েছে দেশের পুঁজিবাজার। বিনিয়োগকারীরা বলছেন বাজারের পতনের শেষ পর্যায়ে এসে পৌঁছে গেছে। বাজারের মন্দায় নতুন করে আর কেউ আসছেন না নতুন করে বিনিয়োগ করতে। আর বিদ্যমান বিনিয়োগকারীরাও হাত গুটিয়ে বসে আছেন সাইডলাইনে। পরিণতিতে বিনিয়োগকারীদের উপস্থিতি কমে যাওয়ায় ফাঁকা হয়ে পড়েছে সিকিউরিটিজ হাউসগুলো। ২০২২ সালে শুরুটা ভালো হলেও মাস না পেরুতেই থেমে থেমে বছরজুরে বাজারে টানাপড়েন চলছে। এতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা। প্রাত্যহিক কর্মকান্ড-সর্বস্ব বাজারে নেই কোনো প্রাণচাঞ্চল্য। মুমূর্ষু অবস্থায় পুঁজিবাজারের জীবন আছে কিন্তু প্রাণ নেই। দরপতনই এখন পুঁজিবাজারের প্রতিদিনের নিয়মে পরিণত হয়েছে।
অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুক–টুইটার–লিংকডইন–ইন্সটাগ্রাম–ইউটিউব
তবে এ সময়ে বেড়েছে বাজার মূলধনের পরিমাণ। বছরের শুরুতে ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৫ লাখ ৪৪ হাজার ৬৩৫ কোটি ৩৯ লাখ ৬১ হাজার টাকা। ২১ ডিসেম্বর বাজার মূলধন ছিল ৭ লাখ ৬০ হাজার ৮৬২ কোটি ১২ লাখ ৬১ হাজার টাকা। অর্থাৎ মূলধন বেড়েছে ২ লাখ ১৬ হাজার ২২৬ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। অবশ্য চলতি বছরের ১২ অক্টোবর ডিএসইর বাজার মূলধন সর্বোচ্চ ৭ লাখ ৭৪ হাজার ৬৬৯ কোটি ১১ লাখ টাকায় ওঠেছিলো।
তবে মূলধন বাড়লেও বাজারের সার্বিক পরিস্থিতিকে ভয়াবহ বলেই মন্তব্য করেছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, বাজারের বর্তমান অবস্থাকে ১৯৯৬ সালের চেয়েও ভয়াবহ। কেননা ১৯৯৬ সালের বাজারে ঋণের কোনো বিষয় ছিল না। তখনকার বাজারে বিনিয়োগকারীদের পুরোটাই ছিল তাদের নিজস্ব বিনিয়োগ। তখন যারা শেয়ার নিজের নামে হস্তান্তর করে অপেক্ষা করেছিলেন, তারা দীর্ঘ সময় পর হলেও মুনাফা পেয়েছেন। কিন্তু এবার টানা দরপতনের কারণে ইতোমধ্যে অনেকই তাদের নিজস্ব বিনিয়োগের পুরোটাই হারিয়েছেন। এমনকি ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের দেওয়া ঋণেরও পুরোটাই প্রায় যায় যায় অবস্থায় রয়েছে। এ জন্য বিনিয়োগকারীর চেয়ে ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোই এখন ঝুঁকিতে রয়েছে।
আরও পড়ুন: আইপিও ইস্যুতে ধীরে চলো নীতিতে বিএসইসি: কমেছে অর্থ সংগ্রহের পরিমাণ
চলতি বছরের ২৮ জুলাই পুঁজিবাজারের দরপতন ঠেকাতে সর্বনিম্ন বাজার মূল্য বা ফ্লোর প্রাইস বেঁধে দেয় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। তবে বিএসইসির এ সিদ্ধান্তে ধারাবাহিক দরপতন হয়ত কিছুটা আটকানো সম্ভব হয়েছে, তবে সেই সাথে আটকে গেছে অধিকাংশ বিনিয়োগকারীর ভাগ্য।
অধিকাংশ বিনিয়োগকারীই মনে করছেন, সূচক একদিকে আর বেশিরভাগ শেয়ারদর অন্যদিকে, যা সুষ্ঠু বাজারের চিত্র নয়। এ বাজারে অল্প কিছু মানুষ ব্যবসা করছেন। রাতারাতি কয়েকটি শেয়ারের দর হু-হু করে বাড়ছে। অথচ বেশিরভাগ শেয়ার দর হারাচ্ছে। সব শ্রেণির বিনিয়োগকারীদের শেয়ার কেনাবেচায় স্বাভাবিক ও স্বতঃস্ফূর্ত লেনদেনের মাধ্যমে এমন দরের উত্থান ঘটছে- এমন কেউই মনে করছেন না। তারপরও এ নিয়ে কেউ প্রশ্ন করছেন না।
আরও পড়ুন: পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছেন বিদেশী বিনিয়োগকারীরা
এদিকে সিকিউরিটিজ হাউজ সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, ফ্লোর প্রাইসের কারণে পুঁজিবাজারের কোম্পানির শেয়ার ও ফান্ডের ইউনিটে সর্বনিম্ন দর বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এতে শেয়ারের প্রকৃত বাজার মূল্য প্রতিফলিত হচ্ছে না। এছাড়া প্রত্যাশা অনুযায়ী শেয়ারের ক্রেতা বা বিক্রেতা না থাকায় বিনিয়োগ আটকে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর বিনিয়োগ আটকে যাওয়ার সম্ভাবনায় অনেক ব্যক্তি, প্রাতিষ্ঠানিক ও বিদেশি বিনিয়োগকারী নতুন বিনিয়োগে আসছে না। একইসঙ্গে লেনদেন কমে যাওয়ায় ব্রোকারেজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর লোকসান ক্রমেই বেড়ে চলেছে। এ পরিস্থিতি দীর্ঘমেয়াদি হলে অনেক ব্রোকারেজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকে শাখা বন্ধের পাশাপাশি কর্মী ছাঁটাইয়ের সম্ভাবনা দেখা দিবে।
দায়িত্বশীলরা যদি মনে করেন, গুটিকয়েক ব্যক্তির লেনদেন ও তাঁদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতের জন্য এ বাজার, তাহলে সিংহভাগ বিনিয়োগকারী এ বাজার থেকে ফের মুখ ফিরিয়ে নিতে পারেন। এখন ফ্লোর প্রাইস দিয়ে দরপতন ঠেকিয়ে রাখা হয়েছে, যা কোনো টেকসই পদক্ষেপ নয়।
বিজনেস জার্নাল/ঢাকা