০৩:৩০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ মে ২০২৪

তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হ্রাসে শর্ত প্রত্যাহারসহ বিএপিএলসির ৬ দাবি

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০৫:০১:৫৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ জুন ২০২২
  • / ৪১১৫ বার দেখা হয়েছে

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ঘোষিত জাতীয় বাজেট ও অর্থবিলের কিছু প্রস্তাবনা সংশোধনের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজ (বিএপিএলসি)। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- মুনাফা অংশীদারত্ব তহবিলে (Workers Profit Participation-WPPF) দেওয়া অর্থকে কোম্পানির ব্যয় হিসেবে দেখানোর সুযোগ বহাল রাখা, তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার হ্রাসে প্রস্তাবিত শর্ত প্রত্যাহার, ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের করপোরেট করহার কমানো।

গত রোববার (১৯ জুন) তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর এই প্ল্যাটফরমের পক্ষ থেকে অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামালের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এই দাবি জানানো হয়েছে।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

বিএপিএলসি সভাপতি এম. আনিস উদ দৌলা সাক্ষরিত ওই চিঠিতে বিনিয়োগকারী ও উদ্যোক্তাসহ পুঁজিবাজারের বৃহত্তর স্বার্থে অর্থবিল ২০২২ এর কিছু ধারা প্রত্যাহার এবং সংশোধন করা প্রয়োজন বলে উল্লেখ করা হয়।

বিএপিএলসির চিঠিতে প্রতি বছর শ্রমিকদের লাভের অংশগ্রহণ তহবিলে (ডব্লিউপিপিএফ) একটি কোম্পানি যে অর্থ দিয়ে থাকে, তাকে কোম্পানির ব্যয় হিসেবে গণ্য করার দাবি জানানো হয়।

বর্তমানে এটি ব্যয় হিসেবে গণ্য হলেও আগামী অর্থবছরে তা আর ব্যায় হিসেবে গণ্য হবে না বলে অর্থবিলে উল্লেখ করা হয়েছে। এটি কোম্পানির উপর অতিরিক্ত করের বোঝা চাপিয়ে দিবে এবং এই বিধান বিদ্যমান থাকলে, একই আয়ের উপর দুইবার কর দিতে হবে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।

সঞ্চয় এবং স্থায়ী আমানতের সুদ থেকে উৎসে কর কর্তন প্রসঙ্গে বিএপিএলসির তরফ থেকে বলা হয়, পূর্বে সঞ্চয় আমানত এবং স্থায়ী আমানতের সুদের বিপরীতে বিদ্যমান উইথহোল্ডিং ট্যাক্সের হার ব্যক্তি এবং কোম্পানি উভয়ের জন্য ১০ শতাংশ নির্ধারীত ছিলো। কিন্তু ফাইন্যান্স বিল ২০২২-এ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য এই উইথহোল্ডিং ট্যাক্স আগের ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশে সংশোধন করা হয়েছে। এই বিধানটি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ব্যাংক এবং এনবিএফআই প্রতিষ্ঠানে তাদের উদ্বৃত্ত তহবিল জমা দিতে উল্লেখযোগ্যভাবে নিরুৎসাহিত করবে, ফলে ব্যাংক এবং এনবিএফআই প্রতিষ্ঠানগুলি পর্যাপ্ত আমানত আকৃষ্ট করতে প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হবে এবং এর ফলে তাদের ঋণ দেওয়ার ক্ষমতা ব্যাপকভাবে হ্রাস পাবে। এর ফলে বেসরকারি খাতের ঋণ ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

এছাড়াও, পণ্যের রপ্তানি আয়ের উপর উৎস কর ০.৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। অন্যান্য রপ্তানিকারকদের সাথে গার্মেন্টস সেক্টরগুলি মহামারী ব্যাঘাত কাটিয়ে উঠছে। বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে রপ্তানিকারকদের জন্য প্রস্তাবিত করের হার ‘অত্যন্ত কঠিন’ হবে। তাই দেশের রপ্তানি বিশেষ করে প্রধান উপার্জনকারী পোশাক খাতের আরও অগ্রগতির জন্য করের হার ০.৫ রাখার অনুরোধ জানানো হয় চিঠিটিতে।

চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ব্যাংক, এনবিএফআই এবং বীমা কোম্পানীর জন্য কর্পোরেট করের হার অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে যা ৩৭.৫ শতাংশ । বর্তমানে, অনেক ব্যাংক এবং নন-ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলো মূলধনের ঘাটতির সম্মুখীন এবং তাদের সংবিধিবদ্ধ রিজার্ভ নিয়ে লড়াই করছে৷ তাদের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে এবং বৈশ্বিক মুদ্রাস্ফীতির সাথে মোকাবিলা করার জন্য ব্যাংক এবং নন-ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য কর্পোরেট করের হার ৩৫ শতাংশে নামিয়ে আনা উচিত৷

সর্বজনীনভাবে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলির জন্য শর্তসাপেক্ষ কর কর্তন প্রসঙ্গে চিঠিতে বলা হয়, ফিনান্স বিল ২০২২ অনুসারে, হ্রাসকৃত করের জন্য যোগ্য হওয়ার শর্তগুলি অর্থাৎ সমস্ত প্রাপ্তি এবং আয় অবশ্যই ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে করা এবং বার্ষিক ১২ লাখ টাকার অতিরিক্ত সমস্ত খরচ এবং বিনিয়োগ ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে করতে হবে। দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রকৃতি, লেনদেন পরিচালনার পদ্ধতি, নগদ অর্থনীতির আকার, ব্যাংকিং নেটওয়ার্কের প্রাপ্যতা, ডিজিটাল অর্থের ব্যবহার এবং সামগ্রিক বিরাজমান আর্থ-সামাজিক পরিবেশ বিবেচনা করে এই শর্তগুলি অবাস্তব বলে মনে হয়।

চিঠিতে এ বিষইয়ে আরও বলা হয়, যেসকল কোম্পানি সরাসরি খুচরা বিক্রেতাদের কাছে পণ্য বিক্রি করছে বা যাদের খুচরা চেইন ব্যবসা আছে বা যারা কৃষি উপকরণ ও আউটপুট ইত্যাদি ব্যবসায় নিয়োজিত তারা সম্পূর্ণরূপে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহের শর্ত পূরণ করতে পারবে না। অন্যদিকে, পরিবহন, ক্ষুদ্র ক্রয়, নৈমিত্তিক শ্রম বিল,পরিবহন, সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে কৃষি কাঁচামাল ক্রয় ইত্যাদির মতো অনেক খরচ ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে নির্বাহ করা সম্ভব হবে না। তাই এসকল বিষয়গুলি বিবেচনা করে, প্রস্তাবিত কর কর্তনের হ্রাসকৃত করের জন্য যোগ্য হওয়ার শর্তগুলি প্রত্যাহার করার জন্য অনুরোধ করা হয়।

ঢাকা/টিএ

শেয়ার করুন

x

তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হ্রাসে শর্ত প্রত্যাহারসহ বিএপিএলসির ৬ দাবি

আপডেট: ০৫:০১:৫৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ জুন ২০২২

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ঘোষিত জাতীয় বাজেট ও অর্থবিলের কিছু প্রস্তাবনা সংশোধনের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজ (বিএপিএলসি)। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- মুনাফা অংশীদারত্ব তহবিলে (Workers Profit Participation-WPPF) দেওয়া অর্থকে কোম্পানির ব্যয় হিসেবে দেখানোর সুযোগ বহাল রাখা, তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার হ্রাসে প্রস্তাবিত শর্ত প্রত্যাহার, ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের করপোরেট করহার কমানো।

গত রোববার (১৯ জুন) তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর এই প্ল্যাটফরমের পক্ষ থেকে অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামালের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এই দাবি জানানো হয়েছে।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

বিএপিএলসি সভাপতি এম. আনিস উদ দৌলা সাক্ষরিত ওই চিঠিতে বিনিয়োগকারী ও উদ্যোক্তাসহ পুঁজিবাজারের বৃহত্তর স্বার্থে অর্থবিল ২০২২ এর কিছু ধারা প্রত্যাহার এবং সংশোধন করা প্রয়োজন বলে উল্লেখ করা হয়।

বিএপিএলসির চিঠিতে প্রতি বছর শ্রমিকদের লাভের অংশগ্রহণ তহবিলে (ডব্লিউপিপিএফ) একটি কোম্পানি যে অর্থ দিয়ে থাকে, তাকে কোম্পানির ব্যয় হিসেবে গণ্য করার দাবি জানানো হয়।

বর্তমানে এটি ব্যয় হিসেবে গণ্য হলেও আগামী অর্থবছরে তা আর ব্যায় হিসেবে গণ্য হবে না বলে অর্থবিলে উল্লেখ করা হয়েছে। এটি কোম্পানির উপর অতিরিক্ত করের বোঝা চাপিয়ে দিবে এবং এই বিধান বিদ্যমান থাকলে, একই আয়ের উপর দুইবার কর দিতে হবে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।

সঞ্চয় এবং স্থায়ী আমানতের সুদ থেকে উৎসে কর কর্তন প্রসঙ্গে বিএপিএলসির তরফ থেকে বলা হয়, পূর্বে সঞ্চয় আমানত এবং স্থায়ী আমানতের সুদের বিপরীতে বিদ্যমান উইথহোল্ডিং ট্যাক্সের হার ব্যক্তি এবং কোম্পানি উভয়ের জন্য ১০ শতাংশ নির্ধারীত ছিলো। কিন্তু ফাইন্যান্স বিল ২০২২-এ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য এই উইথহোল্ডিং ট্যাক্স আগের ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশে সংশোধন করা হয়েছে। এই বিধানটি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ব্যাংক এবং এনবিএফআই প্রতিষ্ঠানে তাদের উদ্বৃত্ত তহবিল জমা দিতে উল্লেখযোগ্যভাবে নিরুৎসাহিত করবে, ফলে ব্যাংক এবং এনবিএফআই প্রতিষ্ঠানগুলি পর্যাপ্ত আমানত আকৃষ্ট করতে প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হবে এবং এর ফলে তাদের ঋণ দেওয়ার ক্ষমতা ব্যাপকভাবে হ্রাস পাবে। এর ফলে বেসরকারি খাতের ঋণ ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

এছাড়াও, পণ্যের রপ্তানি আয়ের উপর উৎস কর ০.৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। অন্যান্য রপ্তানিকারকদের সাথে গার্মেন্টস সেক্টরগুলি মহামারী ব্যাঘাত কাটিয়ে উঠছে। বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে রপ্তানিকারকদের জন্য প্রস্তাবিত করের হার ‘অত্যন্ত কঠিন’ হবে। তাই দেশের রপ্তানি বিশেষ করে প্রধান উপার্জনকারী পোশাক খাতের আরও অগ্রগতির জন্য করের হার ০.৫ রাখার অনুরোধ জানানো হয় চিঠিটিতে।

চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ব্যাংক, এনবিএফআই এবং বীমা কোম্পানীর জন্য কর্পোরেট করের হার অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে যা ৩৭.৫ শতাংশ । বর্তমানে, অনেক ব্যাংক এবং নন-ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলো মূলধনের ঘাটতির সম্মুখীন এবং তাদের সংবিধিবদ্ধ রিজার্ভ নিয়ে লড়াই করছে৷ তাদের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে এবং বৈশ্বিক মুদ্রাস্ফীতির সাথে মোকাবিলা করার জন্য ব্যাংক এবং নন-ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য কর্পোরেট করের হার ৩৫ শতাংশে নামিয়ে আনা উচিত৷

সর্বজনীনভাবে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলির জন্য শর্তসাপেক্ষ কর কর্তন প্রসঙ্গে চিঠিতে বলা হয়, ফিনান্স বিল ২০২২ অনুসারে, হ্রাসকৃত করের জন্য যোগ্য হওয়ার শর্তগুলি অর্থাৎ সমস্ত প্রাপ্তি এবং আয় অবশ্যই ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে করা এবং বার্ষিক ১২ লাখ টাকার অতিরিক্ত সমস্ত খরচ এবং বিনিয়োগ ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে করতে হবে। দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রকৃতি, লেনদেন পরিচালনার পদ্ধতি, নগদ অর্থনীতির আকার, ব্যাংকিং নেটওয়ার্কের প্রাপ্যতা, ডিজিটাল অর্থের ব্যবহার এবং সামগ্রিক বিরাজমান আর্থ-সামাজিক পরিবেশ বিবেচনা করে এই শর্তগুলি অবাস্তব বলে মনে হয়।

চিঠিতে এ বিষইয়ে আরও বলা হয়, যেসকল কোম্পানি সরাসরি খুচরা বিক্রেতাদের কাছে পণ্য বিক্রি করছে বা যাদের খুচরা চেইন ব্যবসা আছে বা যারা কৃষি উপকরণ ও আউটপুট ইত্যাদি ব্যবসায় নিয়োজিত তারা সম্পূর্ণরূপে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহের শর্ত পূরণ করতে পারবে না। অন্যদিকে, পরিবহন, ক্ষুদ্র ক্রয়, নৈমিত্তিক শ্রম বিল,পরিবহন, সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে কৃষি কাঁচামাল ক্রয় ইত্যাদির মতো অনেক খরচ ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে নির্বাহ করা সম্ভব হবে না। তাই এসকল বিষয়গুলি বিবেচনা করে, প্রস্তাবিত কর কর্তনের হ্রাসকৃত করের জন্য যোগ্য হওয়ার শর্তগুলি প্রত্যাহার করার জন্য অনুরোধ করা হয়।

ঢাকা/টিএ