১১:৩৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪

তালিকাভুক্ত ৬ ব্যাংকসহ ৯টির প্রভিশন ঘাটতি ২২ হাজার কোটি টাকা

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ১২:৪৪:০২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৪ মার্চ ২০২২
  • / ৪১৩৭ বার দেখা হয়েছে

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: ব্যাংক খাতে  প্রভিশন সংরক্ষণে ঘাটতির পরিমাণ বাড়ছে। গত বছর শেষে সরকারি ও বেসরকারি মোট ৯টি ব্যাংক খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এই ৯ ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকেরই ঘাটতি হয়েছে প্রায় সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা।

এর বাইরে বেসিক, অগ্রণী ও ন্যাশনাল ব্যাংক বড় ধরনের প্রভিশন ঘাটতিতে পড়েছে। এতে পুরো খাতে প্রভিশন ঘাটতি ১৪ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এক বছর আগে ২০২১ সালে পুরো ব্যাংকিং খাতে প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ ছিল মাত্র ১২৩ কোটি টাকা। যদিও সার্বিক ব্যাংকিং খাতে প্রভিশন ঘাটতিতে পড়ার নজির খুবই কম দেখা যায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ও প্রভিশনিং সংক্রান্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনায় এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের যে পরিমাণ ঋণ বিতরণ করে তার বেশিরভাগই আমানতকারীদের অর্থ। আমানতকারীদের অর্থ যেন কোনোভাবে ঝুঁকির মুখে না পড়ে সে জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করা আছে। এর একটি হলো- প্রভিশন সংরক্ষণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মানুযায়ী, ব্যাংকের অশ্রেণিকৃত বা নিয়মিত ঋণের বিপরীতে দশমিক ২৫ থেকে পাঁচ শতাংশ হারে প্রভিশন রাখতে হয়। নিম্নমান বা সাব-স্ট্যান্ডার্ড ঋণের বিপরীতে রাখতে হয় ২০ শতাংশ, সন্দেহজনক ঋণের বিপরীতে ৫০ এবং মন্দ বা কু-ঋণের বিপরীতে ১০০ শতাংশ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়।

ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রভিশন ঘাটতি থাকলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কোনো লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারে না। এ ছাড়া যেসব ব্যাংক প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়, তাদের মূলধন ঘাটতিতে পড়ার আশঙ্কা থাকে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ও নিয়মিত ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলোর প্রভিশন সংরক্ষণে প্রয়োজন ছিল ৮০ হাজার ৬৫৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। কিন্তু সংরক্ষণ করতে পেরেছে ৬৬ হাজার ৬৪৭ কোটি ২২ লাখ টাকা। ফলে পুরো ব্যাংকিং খাতে প্রভিশন ঘাটতি হয়েছে ১৪ হাজার ৭ কোটি ২৪ লাখ টাকা। তিন মাস আগে পুরো ব্যাংকিং খাতে প্রভিশন ঘাটতি ছিল ৬ হাজার ২০৪ কোটি টাকা। আর এক বছর আগে ২০২০ সালে ছিল ১২৩ কোটি ৪৯ লাখ টাকা।

এ সময়ে ৯টি ব্যাংক প্রভিশন ঘাটতিতে রয়েছে। তাদের মোট ঘাটতির পরিমাণ ২২ হাজার ৫৭৩ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। এই ৯ ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের ৪টি। এসব ব্যাংকের ঘাটতি হয়েছে ১৮ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকেরই ঘাটতি ১০ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা। এ ছাড়া বেসিক ব্যাংকের ৪ হাজার ১১৫ কোটি ৩৪ লাখ, অগ্রণীর ২ হাজার ৬১৮ কোটি ৩২ লাখ ও রূপালী ব্যাংকের ১ হাজার ২০৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। অপর ৫টি হলো বেসরকারি খাতের ব্যাংক।

এসব ব্যাংকের মোট ঘাটতির পরিমাণ ৪ হাজার ১৪৫ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে ন্যাশনাল ব্যাংকেরই ঘাটতি হয়েছে ৩ হাজার ২৬২ কোটি ৬২ লাখ টাকা। এ ছাড়া বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ৩১৬ কোটি ১৮ লাখ, আইএফআইসির ২১২ কোটি ৪৭ লাখ, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ২০৫ কোটি ১০ লাখ ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ১৪৯ কোটি টাকা প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে। এক বছর আগে ১১টি ব্যাংক প্রভিশন ঘাটটিতে ছিল। এর মধ্যে তিনটি রাষ্ট্রায়ত্ত, দুটি বিশেষায়িত ও ছয়টি বেসরকারি ব্যাংক ছিল। এই ১১ ব্যাংকের মোট ঘাটতির পরিমাণ ছিল সাত হাজার ১৪৬ কোটি টাকা।

উল্লেখ্য, বিদায়ী বছরে নানা ছাড় দেওয়ার পরও খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকা। ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতের খেলাপি দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩ হাজার ২৭৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ। এক বছর আগে ২০২০ সালে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৮৮ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা বা ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ।

ঢাকা/এইচকে

শেয়ার করুন

x

তালিকাভুক্ত ৬ ব্যাংকসহ ৯টির প্রভিশন ঘাটতি ২২ হাজার কোটি টাকা

আপডেট: ১২:৪৪:০২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৪ মার্চ ২০২২

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: ব্যাংক খাতে  প্রভিশন সংরক্ষণে ঘাটতির পরিমাণ বাড়ছে। গত বছর শেষে সরকারি ও বেসরকারি মোট ৯টি ব্যাংক খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এই ৯ ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকেরই ঘাটতি হয়েছে প্রায় সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা।

এর বাইরে বেসিক, অগ্রণী ও ন্যাশনাল ব্যাংক বড় ধরনের প্রভিশন ঘাটতিতে পড়েছে। এতে পুরো খাতে প্রভিশন ঘাটতি ১৪ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এক বছর আগে ২০২১ সালে পুরো ব্যাংকিং খাতে প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ ছিল মাত্র ১২৩ কোটি টাকা। যদিও সার্বিক ব্যাংকিং খাতে প্রভিশন ঘাটতিতে পড়ার নজির খুবই কম দেখা যায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ও প্রভিশনিং সংক্রান্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনায় এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের যে পরিমাণ ঋণ বিতরণ করে তার বেশিরভাগই আমানতকারীদের অর্থ। আমানতকারীদের অর্থ যেন কোনোভাবে ঝুঁকির মুখে না পড়ে সে জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করা আছে। এর একটি হলো- প্রভিশন সংরক্ষণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মানুযায়ী, ব্যাংকের অশ্রেণিকৃত বা নিয়মিত ঋণের বিপরীতে দশমিক ২৫ থেকে পাঁচ শতাংশ হারে প্রভিশন রাখতে হয়। নিম্নমান বা সাব-স্ট্যান্ডার্ড ঋণের বিপরীতে রাখতে হয় ২০ শতাংশ, সন্দেহজনক ঋণের বিপরীতে ৫০ এবং মন্দ বা কু-ঋণের বিপরীতে ১০০ শতাংশ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়।

ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রভিশন ঘাটতি থাকলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কোনো লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারে না। এ ছাড়া যেসব ব্যাংক প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়, তাদের মূলধন ঘাটতিতে পড়ার আশঙ্কা থাকে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ও নিয়মিত ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলোর প্রভিশন সংরক্ষণে প্রয়োজন ছিল ৮০ হাজার ৬৫৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। কিন্তু সংরক্ষণ করতে পেরেছে ৬৬ হাজার ৬৪৭ কোটি ২২ লাখ টাকা। ফলে পুরো ব্যাংকিং খাতে প্রভিশন ঘাটতি হয়েছে ১৪ হাজার ৭ কোটি ২৪ লাখ টাকা। তিন মাস আগে পুরো ব্যাংকিং খাতে প্রভিশন ঘাটতি ছিল ৬ হাজার ২০৪ কোটি টাকা। আর এক বছর আগে ২০২০ সালে ছিল ১২৩ কোটি ৪৯ লাখ টাকা।

এ সময়ে ৯টি ব্যাংক প্রভিশন ঘাটতিতে রয়েছে। তাদের মোট ঘাটতির পরিমাণ ২২ হাজার ৫৭৩ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। এই ৯ ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের ৪টি। এসব ব্যাংকের ঘাটতি হয়েছে ১৮ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকেরই ঘাটতি ১০ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা। এ ছাড়া বেসিক ব্যাংকের ৪ হাজার ১১৫ কোটি ৩৪ লাখ, অগ্রণীর ২ হাজার ৬১৮ কোটি ৩২ লাখ ও রূপালী ব্যাংকের ১ হাজার ২০৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। অপর ৫টি হলো বেসরকারি খাতের ব্যাংক।

এসব ব্যাংকের মোট ঘাটতির পরিমাণ ৪ হাজার ১৪৫ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে ন্যাশনাল ব্যাংকেরই ঘাটতি হয়েছে ৩ হাজার ২৬২ কোটি ৬২ লাখ টাকা। এ ছাড়া বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ৩১৬ কোটি ১৮ লাখ, আইএফআইসির ২১২ কোটি ৪৭ লাখ, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ২০৫ কোটি ১০ লাখ ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ১৪৯ কোটি টাকা প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে। এক বছর আগে ১১টি ব্যাংক প্রভিশন ঘাটটিতে ছিল। এর মধ্যে তিনটি রাষ্ট্রায়ত্ত, দুটি বিশেষায়িত ও ছয়টি বেসরকারি ব্যাংক ছিল। এই ১১ ব্যাংকের মোট ঘাটতির পরিমাণ ছিল সাত হাজার ১৪৬ কোটি টাকা।

উল্লেখ্য, বিদায়ী বছরে নানা ছাড় দেওয়ার পরও খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকা। ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতের খেলাপি দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩ হাজার ২৭৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ। এক বছর আগে ২০২০ সালে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৮৮ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা বা ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ।

ঢাকা/এইচকে