০৩:৩০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ মে ২০২৪

‘নগদ লেনদেন সীমিত করা হলে উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে’

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০১:১৩:৫৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ জুন ২০২৩
  • / ৪২০৪ বার দেখা হয়েছে

দেশের মধ্যে নগদ লেনদেন সীমিত করা হলে উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে। কারণ বাংলাদেশ এখনও পুরোপুরি নগদহীন লেনদেন করার ক্ষমতা অর্জন করতে পারেনি বলে জানিয়েছে বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের সংস্থা ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ফিকি) সভাপতি নাসের এজাজ বিজয়।

বুধবার (১৪ জুন) রাজধানীর একটি হোটেলে বাজেট পরবর্তী এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট এবং আয়কর আইন (আইটিএ) ২০২৩-এর খসড়া নিয়ে কিছু উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। বাংলাদেশের ব্যবসাখাত ও এর কর্মচারীদের ওপর এর প্রভাব রয়েছে বলে মনে করছেন সংগঠন সংশ্লিষ্টরা।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউভ

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, কর্পোরেট এবং সংস্থাগুলোর জন্য নগদ লেনদেন সীমিত করলে দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে। কারণ বাংলাদেশ এখনও পুরোপুরি নগদহীন লেনদেন করার ক্ষমতা অর্জন করতে পারেনি। সরকারের উচিত কোম্পানিগুলোর নগদ লেনদেনের জন্য একটি নির্দিষ্ট সংখ্যা নির্ধারণ না করে তার খরচের ন্যূনতম শতাংশ ব্যয় করার অনুমতি দেওয়া। যেন পরবর্তী ৫ বছরে ধীরে ধীরে তারা শতভাগ নগদহীন লেনদেনের লক্ষা অর্জন করতে পারে।

আসন্ন ২০২০-২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য বড় বরাদ্দের প্রশংসা করার পাশাপাশি স্বাস্থ্য, কৃষি এবং শিক্ষা খাতে বরাদ্দের অপ্রতুলতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ফিকি। অন্যদিকে, খসড়া আয়কর আইন (আইটিএ) ২০২৩-এর বিধানগুলোর গভীর ও বিস্তৃত পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। কারণ এই আইনের কিছু বিধান আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪-এর বিবেচনায় অযৌক্তিক বলে মনে হয়।

ফিকি জানায়, আমরা আশা করেছিলাম নতুন আইনে ন্যূনতম কর বিধানগুলো ধীরে ধীরে প্রত্যাহার করা হবে। তার পরিবর্তে সেগুলো উল্লেখযোগ্যহারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিশেষ করে কার্বোনেটেড পানীয় শিল্পের (বেভারেজ ইন্ডাস্ট্রি) ন্যূনতম কর দশমিক ৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে মোট প্রাপ্তির ৫ শতাংশ (৮ গুণ বৃদ্ধি) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। যার ফলে কোমল পানীয়ের দাম ৩০ শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি পাবে। এই খাতে ইতোমধ্যে ৫ থেকে ১০ শতাংশ শুল্কের পাশাপাশি পরোক্ষ কর (এসডি + ভ্যাট) ৪৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ দিতে হয়। যার পরিমাণ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। এর ফলে পণ্যের ভোগ কমে যাবে এবং পরবর্তীতে সরকারি কর আদায় হ্রাস পাবে। যা শেষ পর্যন্ত বিদেশি বিনিয়োগ পরিকল্পনা এবং এই খাতে কর্মসংস্থানকে প্রভাবিত করতে পারে। তাই এই শিল্পের বিকাশের সুযোগ দিতে সরকারকে ন্যূনতম কর ১ শতাংশ করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।

সংগঠনটি আরও জানায়, আরেকটি উল্লেখযোগ্য উদ্বেগের বিষয় হলো ধার্য করের বিধান থেকে একটি অনুবিধি বাদ দেওয়া। এই অনুবিধির অনুপস্থিতিতে অনিশ্চয়তা তৈরি হতে পারে এবং বিধানটি তার কার্যকারিতা হারাতে পারে। আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪-এর মতো একই বিধান প্রস্তাবিত আইনে বা বিধিতে অব্যাহত না থাকলে আধুনিক বাণিজ্যে ডিস্ট্রিবিউটরদের সরবরাহের উপর করের বোঝা, আমদানিকৃত পণ্যের সরবরাহ, ইত্যাদি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে।

আরও পড়ুন: ৩.৬ বিলিয়ন ডলার ঋণের প্রতিশ্রুতি বিশ্বব্যাংকের

প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী, প্রণোদনা বোনাস অতিরিক্ত লভ্যাংশ হিসেবে বিবেচিত হবে। ফিকি’র পর্যালোচনা অনুযায়ী, এটি কোম্পানির উপর আরও করের বোঝা চাপিয়ে দেবে এবং পরবর্তীতে কর্মচারীদের উপার্জনের উপরও প্রভাব ফেলতে পারে। ব্যবসায়িক ক্ষতির বিপরীতে অন্য আয় সচল রাখার অনুমতি না দেওয়া কর আগ্রহের বিরুদ্ধে যায়। পাশাপাশি বিদেশী ঋণের সুদের উপর করের বিধান এবং তৃতীয় পক্ষের বিক্রেতার মাধ্যমে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার প্রমাণ দেওয়ার ব্যর্থতার জন্য তার সম্পূর্ণ পারিশ্রমিক দিতে অনুনমোদন দেওয়ার বিধানটি বাদ দেওয়া উচিত।

এছাড়া সম্পত্তির উপর বর্ধিত কর জনগণকে সরকারি দলিলে প্রকৃত সম্পত্তির মূল্য উল্লেখ না করে মৌজা রেট উল্লেখ করতে প্রণোদিত করবে। এটি সরকারকে করের বিশাল একটি উৎস থেকে বঞ্চিত করতে পারে। যে কারণে সম্পত্তি কর লেনদেনের খরচ বৃদ্ধি করার পরিবর্তে তা যথেষ্ট পরিমাণে কমিয়ে আনা উচিত এবং বাজার মূল্য প্রতিফলিত করার জন্য মৌজা মূল্যকে পর্যায়ক্রমে আপডেট করতে হবে।

ঢাকা/এসএ

শেয়ার করুন

x

‘নগদ লেনদেন সীমিত করা হলে উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে’

আপডেট: ০১:১৩:৫৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ জুন ২০২৩

দেশের মধ্যে নগদ লেনদেন সীমিত করা হলে উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে। কারণ বাংলাদেশ এখনও পুরোপুরি নগদহীন লেনদেন করার ক্ষমতা অর্জন করতে পারেনি বলে জানিয়েছে বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের সংস্থা ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ফিকি) সভাপতি নাসের এজাজ বিজয়।

বুধবার (১৪ জুন) রাজধানীর একটি হোটেলে বাজেট পরবর্তী এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট এবং আয়কর আইন (আইটিএ) ২০২৩-এর খসড়া নিয়ে কিছু উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। বাংলাদেশের ব্যবসাখাত ও এর কর্মচারীদের ওপর এর প্রভাব রয়েছে বলে মনে করছেন সংগঠন সংশ্লিষ্টরা।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউভ

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, কর্পোরেট এবং সংস্থাগুলোর জন্য নগদ লেনদেন সীমিত করলে দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে। কারণ বাংলাদেশ এখনও পুরোপুরি নগদহীন লেনদেন করার ক্ষমতা অর্জন করতে পারেনি। সরকারের উচিত কোম্পানিগুলোর নগদ লেনদেনের জন্য একটি নির্দিষ্ট সংখ্যা নির্ধারণ না করে তার খরচের ন্যূনতম শতাংশ ব্যয় করার অনুমতি দেওয়া। যেন পরবর্তী ৫ বছরে ধীরে ধীরে তারা শতভাগ নগদহীন লেনদেনের লক্ষা অর্জন করতে পারে।

আসন্ন ২০২০-২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য বড় বরাদ্দের প্রশংসা করার পাশাপাশি স্বাস্থ্য, কৃষি এবং শিক্ষা খাতে বরাদ্দের অপ্রতুলতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ফিকি। অন্যদিকে, খসড়া আয়কর আইন (আইটিএ) ২০২৩-এর বিধানগুলোর গভীর ও বিস্তৃত পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। কারণ এই আইনের কিছু বিধান আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪-এর বিবেচনায় অযৌক্তিক বলে মনে হয়।

ফিকি জানায়, আমরা আশা করেছিলাম নতুন আইনে ন্যূনতম কর বিধানগুলো ধীরে ধীরে প্রত্যাহার করা হবে। তার পরিবর্তে সেগুলো উল্লেখযোগ্যহারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিশেষ করে কার্বোনেটেড পানীয় শিল্পের (বেভারেজ ইন্ডাস্ট্রি) ন্যূনতম কর দশমিক ৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে মোট প্রাপ্তির ৫ শতাংশ (৮ গুণ বৃদ্ধি) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। যার ফলে কোমল পানীয়ের দাম ৩০ শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি পাবে। এই খাতে ইতোমধ্যে ৫ থেকে ১০ শতাংশ শুল্কের পাশাপাশি পরোক্ষ কর (এসডি + ভ্যাট) ৪৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ দিতে হয়। যার পরিমাণ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। এর ফলে পণ্যের ভোগ কমে যাবে এবং পরবর্তীতে সরকারি কর আদায় হ্রাস পাবে। যা শেষ পর্যন্ত বিদেশি বিনিয়োগ পরিকল্পনা এবং এই খাতে কর্মসংস্থানকে প্রভাবিত করতে পারে। তাই এই শিল্পের বিকাশের সুযোগ দিতে সরকারকে ন্যূনতম কর ১ শতাংশ করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।

সংগঠনটি আরও জানায়, আরেকটি উল্লেখযোগ্য উদ্বেগের বিষয় হলো ধার্য করের বিধান থেকে একটি অনুবিধি বাদ দেওয়া। এই অনুবিধির অনুপস্থিতিতে অনিশ্চয়তা তৈরি হতে পারে এবং বিধানটি তার কার্যকারিতা হারাতে পারে। আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪-এর মতো একই বিধান প্রস্তাবিত আইনে বা বিধিতে অব্যাহত না থাকলে আধুনিক বাণিজ্যে ডিস্ট্রিবিউটরদের সরবরাহের উপর করের বোঝা, আমদানিকৃত পণ্যের সরবরাহ, ইত্যাদি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে।

আরও পড়ুন: ৩.৬ বিলিয়ন ডলার ঋণের প্রতিশ্রুতি বিশ্বব্যাংকের

প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী, প্রণোদনা বোনাস অতিরিক্ত লভ্যাংশ হিসেবে বিবেচিত হবে। ফিকি’র পর্যালোচনা অনুযায়ী, এটি কোম্পানির উপর আরও করের বোঝা চাপিয়ে দেবে এবং পরবর্তীতে কর্মচারীদের উপার্জনের উপরও প্রভাব ফেলতে পারে। ব্যবসায়িক ক্ষতির বিপরীতে অন্য আয় সচল রাখার অনুমতি না দেওয়া কর আগ্রহের বিরুদ্ধে যায়। পাশাপাশি বিদেশী ঋণের সুদের উপর করের বিধান এবং তৃতীয় পক্ষের বিক্রেতার মাধ্যমে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার প্রমাণ দেওয়ার ব্যর্থতার জন্য তার সম্পূর্ণ পারিশ্রমিক দিতে অনুনমোদন দেওয়ার বিধানটি বাদ দেওয়া উচিত।

এছাড়া সম্পত্তির উপর বর্ধিত কর জনগণকে সরকারি দলিলে প্রকৃত সম্পত্তির মূল্য উল্লেখ না করে মৌজা রেট উল্লেখ করতে প্রণোদিত করবে। এটি সরকারকে করের বিশাল একটি উৎস থেকে বঞ্চিত করতে পারে। যে কারণে সম্পত্তি কর লেনদেনের খরচ বৃদ্ধি করার পরিবর্তে তা যথেষ্ট পরিমাণে কমিয়ে আনা উচিত এবং বাজার মূল্য প্রতিফলিত করার জন্য মৌজা মূল্যকে পর্যায়ক্রমে আপডেট করতে হবে।

ঢাকা/এসএ