০৪:২২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

নৈতিক অবক্ষয়ের সর্বনিকৃষ্ট কর্ম ব্যভিচার

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০২:৫৯:২২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২১
  • / ৪১৬২ বার দেখা হয়েছে

সম্প্রতি রাজধানীর কলাবাগানে ডলফিন গলিতে ‘ও লেভেল’ পড়ুয়া এক কিশোরীকে শারীরিক নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগীর পরিবার। প্রতিদিন কোথাও না কোথাও এ ধরনের জঘন্য কর্মের সংবাদ পাওয়া যায়। 

নৈতিক অবক্ষয় আর চরিত্রহীনের নিন্দনীয় কাজের সব শেষের নিকৃষ্ট কাজটি হচ্ছে ব্যভিচার। শুধু ইসলাম নয় কোনো ধর্মেই ব্যভিচারের শিক্ষা নেই। ইসলামে ব্যভিচারকে সবচেয়ে নিকৃষ্ট কাজ এবং হারাম আখ্যায়িত করা হয়েছে।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেও না। নিশ্চয়ই এটা প্রকাশ্য অশ্লীলতা এবং অত্যন্ত মন্দ পথ’ (সুরা বনী ইসরাইল, আয়াত: ৩২)। 

আর বাইবেলে বলা হয়েছে- ‘তোমরা ব্যভিচার করবে না।’ 

কোনো ধর্মই ব্যভিচারের শিক্ষা দেয় না। দিনের পর দিন ধর্ষণ এবং নারী নির্যাতনের মাত্রা যেন বেড়েই চলেছে। অথচ ইসলাম ও বিশ্বনবী হজরত মোহাম্মদ (সা.) বিশ্বব্যাপী নারী সমাজের মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার এক জীবন্ত আদর্শ স্থাপন করেছেন। 

মানব মন ও মানব সমাজে নারী প্রগতির গোড়াপত্তন করে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছেন। ইসলামে নারীর স্বাধীন মতপ্রকাশের মৌলিক বাকস্বাধীনতা আছে। নর-নারী উভয়ে আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে স্বীকৃত এবং কর্মফল অনুযায়ী স্বর্গলাভের সমঅধিকার প্রাপ্য। 

যেভাবে পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক ঘোষণা করছেন, ‘তিনি তোমাদের একই সত্তা হতে সৃষ্টি করেছেন এবং তার জীবনসঙ্গিণীকে একই উপাদান হতে সৃষ্টি করেছেন’। (সুরা নেসা, আয়াত: ১)। 

পবিত্র কোরআন এবং হজরত রাসূল করিম (সা.) আমাদের এই শিক্ষাই দিয়েছেন যে, তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যাবে না। আমাদেরকে এমনসব কর্ম থেকে দূরে থাকতে হবে যা নিজেদের মনে কুপ্রভাবের সৃষ্টি করে। 

হজরত রাসূল করিম (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার দু’চোয়ালের হাড্ডির মাঝখান অর্থাৎ জবানের এবং দু’পায়ের মাঝখানের অর্থাৎ লজ্জাস্থানের জামানত আমাকে দিবে, আমি তার জান্নাতের জামিন’ (বোখারি)। 

নবী করিম (সা.) আরও বলেছেন, ‘অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে উপার্জন করা ব্যভিচার। নিষিদ্ধ বস্তুর প্রতি দৃষ্টিপাত করা চোখের ব্যভিচার; যা শ্রবণ করা নিষিদ্ধ তা শোনা কর্ণের ব্যভিচার, যে কথা বলা নিষেধ তা বলা জিহ্বার ব্যভিচার, নিষিদ্ধ জিনিসে হাত দেয়া হাতের ব্যভিচার, নিষিদ্ধ স্থানে যাওয়া পায়ের ব্যভিচার’ (বোখারি ও মুসলিম)।

বিবাহ করা স্ত্রী ছাড়া কারো সাথে কোনরূপ যৌন সম্পর্ক স্থাপন করাকে ইসলাম কঠিনভাবে নিষিদ্ধ করেছে এবং এটিকে মহাপাপ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। 

তাই পবিত্র কোরআনের সুরা নেসায় যুদ্ধবন্দিনীকেও বিবাহ না করা পর্যন্ত তার সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের অনুমতি দেয়া হয়নি বরং কোরআনে স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে যে, এই বন্দিনীগণকে স্ত্রীরূপে রাখার পূর্বে স্বাধীন নারীদের ন্যায় বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ করতে হবে। 

তাই আমাদের প্রকৃত ইসলাম কী শিক্ষা দেয় তা গ্রহণ করতে হবে। যারা এসব অপকর্মে লিপ্ত তারাও তো কোনো না কোনো পিতা-মাতারই সন্তান। 

প্রত্যেকেই যদি তার পরিবারের প্রতি সব সময় খেয়াল রাখতেন তাহলে হয়তো আপনার আমার সন্তানটি এধরনের জঘন্য কাজটি করতে পারতো না। 

আমাদের সন্তানেরা কোথায় যায়, কী করে, কার সাথে সময় কাটায় তা নিয়ে কী আমরা আদৌ চিন্তিত? এছাড়া আমাদের সন্তানরা আজ ইন্টারনেটের প্রতি এতটাই আসক্ত হয়ে পড়েছি যে, মনে হয় ইন্টারনেটই তার কাছে সব কিছু। 

সন্তানরা যেন ইন্টারনেটের অপব্যবহার না করতে পারে সে বিষয়েও পিতামাতাকে নজর রাখতে হবে।  

আমরা যদি আমাদের সন্তানকে ছোটবেলা থেকেই উত্তমভাবে ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত করতাম তাহলে কি আজ এ ধরনের জঘন্য কাজে জড়িয়ে পরার সুযোগ পেত? 

অবশ্যই না। আজ আমরা আধুনিকতার নামে সন্তানদের প্রতি কোন খেয়ালই রাখি না। আমরা আমাদের সন্তানদের উত্তম তরবিয়তের প্রতি দৃষ্টি না দিয়ে তাদের কাছ থেকে ভালো কিছু পাওয়ার আশা আমরা কী করে করতে পারি। 

এজন্যই ইসলাম সন্তান জন্ম দেয়ার পরই তাকে উত্তম শিক্ষায় গড়ে তোলার আদেশ প্রদান করেছে। সন্তান যেন উত্তম গুণের অধিকারী হয় সেজন্য পিতা-মাতাকে সব সময় দোয়াও করতে হয়। 

মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘প্রত্যেক মানব সন্তান ইসলামের ওপর জন্মগ্রহণ করে থাকে। কিন্তু পরে তার পিতা-মাতা তাকে ইহুদি অথবা নাসারায় পরিণত করে।’ (বোখারি)

এ থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, সন্তান খারাপ হওয়ার পেছনে পিতা-মাতাও দায়ী রয়েছেন। আমাদের সবার উচিত, আমাদের সন্তানদের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি রাখা। 

লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট

শেয়ার করুন

x
English Version

নৈতিক অবক্ষয়ের সর্বনিকৃষ্ট কর্ম ব্যভিচার

আপডেট: ০২:৫৯:২২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২১

সম্প্রতি রাজধানীর কলাবাগানে ডলফিন গলিতে ‘ও লেভেল’ পড়ুয়া এক কিশোরীকে শারীরিক নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগীর পরিবার। প্রতিদিন কোথাও না কোথাও এ ধরনের জঘন্য কর্মের সংবাদ পাওয়া যায়। 

নৈতিক অবক্ষয় আর চরিত্রহীনের নিন্দনীয় কাজের সব শেষের নিকৃষ্ট কাজটি হচ্ছে ব্যভিচার। শুধু ইসলাম নয় কোনো ধর্মেই ব্যভিচারের শিক্ষা নেই। ইসলামে ব্যভিচারকে সবচেয়ে নিকৃষ্ট কাজ এবং হারাম আখ্যায়িত করা হয়েছে।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেও না। নিশ্চয়ই এটা প্রকাশ্য অশ্লীলতা এবং অত্যন্ত মন্দ পথ’ (সুরা বনী ইসরাইল, আয়াত: ৩২)। 

আর বাইবেলে বলা হয়েছে- ‘তোমরা ব্যভিচার করবে না।’ 

কোনো ধর্মই ব্যভিচারের শিক্ষা দেয় না। দিনের পর দিন ধর্ষণ এবং নারী নির্যাতনের মাত্রা যেন বেড়েই চলেছে। অথচ ইসলাম ও বিশ্বনবী হজরত মোহাম্মদ (সা.) বিশ্বব্যাপী নারী সমাজের মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার এক জীবন্ত আদর্শ স্থাপন করেছেন। 

মানব মন ও মানব সমাজে নারী প্রগতির গোড়াপত্তন করে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছেন। ইসলামে নারীর স্বাধীন মতপ্রকাশের মৌলিক বাকস্বাধীনতা আছে। নর-নারী উভয়ে আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে স্বীকৃত এবং কর্মফল অনুযায়ী স্বর্গলাভের সমঅধিকার প্রাপ্য। 

যেভাবে পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক ঘোষণা করছেন, ‘তিনি তোমাদের একই সত্তা হতে সৃষ্টি করেছেন এবং তার জীবনসঙ্গিণীকে একই উপাদান হতে সৃষ্টি করেছেন’। (সুরা নেসা, আয়াত: ১)। 

পবিত্র কোরআন এবং হজরত রাসূল করিম (সা.) আমাদের এই শিক্ষাই দিয়েছেন যে, তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যাবে না। আমাদেরকে এমনসব কর্ম থেকে দূরে থাকতে হবে যা নিজেদের মনে কুপ্রভাবের সৃষ্টি করে। 

হজরত রাসূল করিম (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার দু’চোয়ালের হাড্ডির মাঝখান অর্থাৎ জবানের এবং দু’পায়ের মাঝখানের অর্থাৎ লজ্জাস্থানের জামানত আমাকে দিবে, আমি তার জান্নাতের জামিন’ (বোখারি)। 

নবী করিম (সা.) আরও বলেছেন, ‘অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে উপার্জন করা ব্যভিচার। নিষিদ্ধ বস্তুর প্রতি দৃষ্টিপাত করা চোখের ব্যভিচার; যা শ্রবণ করা নিষিদ্ধ তা শোনা কর্ণের ব্যভিচার, যে কথা বলা নিষেধ তা বলা জিহ্বার ব্যভিচার, নিষিদ্ধ জিনিসে হাত দেয়া হাতের ব্যভিচার, নিষিদ্ধ স্থানে যাওয়া পায়ের ব্যভিচার’ (বোখারি ও মুসলিম)।

বিবাহ করা স্ত্রী ছাড়া কারো সাথে কোনরূপ যৌন সম্পর্ক স্থাপন করাকে ইসলাম কঠিনভাবে নিষিদ্ধ করেছে এবং এটিকে মহাপাপ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। 

তাই পবিত্র কোরআনের সুরা নেসায় যুদ্ধবন্দিনীকেও বিবাহ না করা পর্যন্ত তার সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের অনুমতি দেয়া হয়নি বরং কোরআনে স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে যে, এই বন্দিনীগণকে স্ত্রীরূপে রাখার পূর্বে স্বাধীন নারীদের ন্যায় বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ করতে হবে। 

তাই আমাদের প্রকৃত ইসলাম কী শিক্ষা দেয় তা গ্রহণ করতে হবে। যারা এসব অপকর্মে লিপ্ত তারাও তো কোনো না কোনো পিতা-মাতারই সন্তান। 

প্রত্যেকেই যদি তার পরিবারের প্রতি সব সময় খেয়াল রাখতেন তাহলে হয়তো আপনার আমার সন্তানটি এধরনের জঘন্য কাজটি করতে পারতো না। 

আমাদের সন্তানেরা কোথায় যায়, কী করে, কার সাথে সময় কাটায় তা নিয়ে কী আমরা আদৌ চিন্তিত? এছাড়া আমাদের সন্তানরা আজ ইন্টারনেটের প্রতি এতটাই আসক্ত হয়ে পড়েছি যে, মনে হয় ইন্টারনেটই তার কাছে সব কিছু। 

সন্তানরা যেন ইন্টারনেটের অপব্যবহার না করতে পারে সে বিষয়েও পিতামাতাকে নজর রাখতে হবে।  

আমরা যদি আমাদের সন্তানকে ছোটবেলা থেকেই উত্তমভাবে ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত করতাম তাহলে কি আজ এ ধরনের জঘন্য কাজে জড়িয়ে পরার সুযোগ পেত? 

অবশ্যই না। আজ আমরা আধুনিকতার নামে সন্তানদের প্রতি কোন খেয়ালই রাখি না। আমরা আমাদের সন্তানদের উত্তম তরবিয়তের প্রতি দৃষ্টি না দিয়ে তাদের কাছ থেকে ভালো কিছু পাওয়ার আশা আমরা কী করে করতে পারি। 

এজন্যই ইসলাম সন্তান জন্ম দেয়ার পরই তাকে উত্তম শিক্ষায় গড়ে তোলার আদেশ প্রদান করেছে। সন্তান যেন উত্তম গুণের অধিকারী হয় সেজন্য পিতা-মাতাকে সব সময় দোয়াও করতে হয়। 

মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘প্রত্যেক মানব সন্তান ইসলামের ওপর জন্মগ্রহণ করে থাকে। কিন্তু পরে তার পিতা-মাতা তাকে ইহুদি অথবা নাসারায় পরিণত করে।’ (বোখারি)

এ থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, সন্তান খারাপ হওয়ার পেছনে পিতা-মাতাও দায়ী রয়েছেন। আমাদের সবার উচিত, আমাদের সন্তানদের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি রাখা। 

লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট