১২:৩৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ মে ২০২৪

নো ডিভিডেন্ডেও থামেনি ইমাম বাটনের শেয়ারের দৌঁড়!

তাছলিমা আক্তার:
  • আপডেট: ০৭:০৪:২০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৩
  • / ৪৩০০ বার দেখা হয়েছে

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ইমাম বাটন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। গত শনিবার (২১ অক্টোর ২০২৩) ওষুধ ও রসায়ন খাতের এ কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ বিগত পাঁচ বছরের আর্থিক হিসাব পর্যালোচনা করে নো ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। শুধু তাই নয়, এই পাঁচ বছরে কোম্পানিটি শেয়ার প্রতি লোকসান দেখিয়েছে প্রায় ৪ টাকা।

কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো- টানা পাঁচ বছরের নো ডিভিডেন্ড কিংবা পাঁচ বছরে কোম্পানির ধারাবাহিক লোকসানও কোম্পানিটির শেয়ার দরের আকাশচুম্বী গতিপথে বাধ সাধতে পারেনি। নো ডিভিডেন্ড ঘোষণার পরের দুই কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ২১ টাকারও বেশি।  দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

ডিএসই’র তথ্যানুযায়ী, তালিকাভুক্তির পর কোম্পানিটি শুধুমাত্র ২০১০ সালে বিনিয়োগকারীদের ১০ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড দেয়। এরপর থেকে আর কোন ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেনি কোম্পানিটি।

বিশ্লেষকদের বলছেন, কোনো কারণ ছাড়াই দুর্বল ও লোকসানি কোমপানির শেয়ারের দাম বাড়ছে। আর ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা স্বল্পসময়ে লাভের আসায় মরীচিকার পেছনে ছুটে নিজের বিনিয়োগকে ঝুঁকিতে ফেলছেন। মূলত কারসাজি আর সিন্ডিকেটের কারণে এসব শেয়ারের দর বাড়ে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার উচিত তদন্ত করে এ ধরনের কোম্পানির লেনদেন বন্ধ করে দেওয়া।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, গত ৩০ জুন, ২০২৩ তারিখে সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য নো ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। কোম্পানিটি আলোচ্য বছরে বিনিয়োগকারীদের কোন ডিভিডেন্ড দেবে না। পাশাপাশি কোম্পানিটি গত চার বছর অথাৎ ২০১৯ ও ২০২০ ও ২০২১ এবং ২০২২ সালে নো ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে।

এছাড়া শনিবার প্রকাশিত আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, ২০১৯ থেকে ২০২২ পর্যন্ত প্রতি বছর কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান ছিলো। ২০১৯ সালে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান ৪৯ পয়সা, ২০২০ সালে ১ টাকা ০৭ পয়সা , ২০২১ সালে ৮০ পয়সা এবং ২০২২ সালে কোম্পানিটির লোকসান হয়েছিলো ৭৩ পয়সা।

আরও পড়ুন: এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ ও শাহজালাল ইক্যুইটিকে বিশাল অঙ্কের জরিমানা

সর্বশেষ ৩০ জুন, ২০২৩ তারিখে সমাপ্ত হিসাববছরে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ৭৬ পয়সা।

ডিএসইর তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, বোর্ড মিটিংয়ের পরদিন অর্থ্যাৎ গতকাল রোববার কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ৭ টাকারও বেশি। এদিন কোম্পানিটির শেয়ার দর ১৪৪.৮০ টাকা থেকে বেড়ে সর্বশেষ ১৫১.৯০ টাকায় লেনদেন হয়েছে। এছাড়া আজ সোমবার কোম্পানিটির শেয়ার দর ১৪ টাকা বেড়েছে। আজ কোম্পানিটির শেয়ার দর ১৫১.৯০ টাকা থেকে বেড়ে সর্বশেষ ১৬৫.৯০ টাকায় লেনদেন হয়েছে।

জানতে চাইলে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বিজনেস জার্নালকে বলেন, লোকসানি কোম্পানির দাম বাড়ে, এটা জুয়া খেলা। জুয়াড়িরা সিন্ডিকেট ট্রেডিং করে। এটা এখন ওপেন সিক্রেট। এ জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে দায়ী করে তিনি বলেন, অকারণ মূল্যবৃদ্ধি বিএসইসি ঠেকাতে পারত। ওদের ট্রেডিং সাসপেন্ড করা উচিত; কিন্তু করা হচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, যে কোম্পানিটি ২০১০ সালের পর থেকে কোন ডিভিডেন্ড দেয়নি এবং উৎপাদন বন্ধ, সেই কোম্পানিতে কারা, কোন কারণে এতো উচ্চ মূল্যে বিনিয়োগ করেন- তা আমার বোধগম্য নয়।

আবু আহমেদ বলেন, আগেতো কোম্পানিগুলো বিনিয়োগকারীদের নিয়ে স্ব-শরীরে এজিএম করতো, তখন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা এসব প্রশ্ন তুলতে পারতো। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় কোভিড চলে যাওয়ার এতোদিন পর দেশের সবকিছু স্বশরীরে হলেও শুধুমাত্র এজিএমটাই ভার্চুয়ালি রয়ে গেছে। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য বিএসইসির প্রতি আহ্বান জানান। সেই সঙ্গে শুধু আমাম বাটনই নয়, যেসব লোকসানি কোম্পানির শেয়ার কোন কারণ ছাড়া মাত্রাতিরিক্ত বাড়ছে সেসব কোম্পানির লেনদেন তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ কা উচিত বলে মনে করেন তিনি।

প্রসঙ্গত, ১৯৯৬ সালে দেশের শেয়ারবাজারে ওষুধ ও রসায়ন খাতে তালিকাভুক্ত হয় ইমাম বাটন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। তালিকাভুক্তির পর শুধুমাত্র ২০১০ সালে বিনিয়োগকারীদের ১০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দেয় কোম্পানিটি। ২০১৯ সাল থেকে কোম্পানিটির বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) হয়নি।

৩ কোটি ২২ লাখ টাকা পূঞ্জীভূত লোকসানে থাকা কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা। কোম্পানিটির ৩০ দশমিক ০৮ শতাংশ শেয়ার উদ্যোক্তা ও পরিচালকরা ধারণ করছেন। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে আছে ৬০ দশমিক ৯১ শতাংশ শেয়ার। আর বাকি ৯ দশমিক ০১ শতাংশ শেয়ার প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে। দীর্ঘদিন লভ্যাংশ না দেওয়ায় লোকসানি কোম্পানিটির শেয়ার বর্তমানে জেড ক্যাটাগরিতে লেনদেন হচ্ছে।

ঢাকা/এসআর

 

 

 

ট্যাগঃ

শেয়ার করুন

x

নো ডিভিডেন্ডেও থামেনি ইমাম বাটনের শেয়ারের দৌঁড়!

আপডেট: ০৭:০৪:২০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৩

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ইমাম বাটন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। গত শনিবার (২১ অক্টোর ২০২৩) ওষুধ ও রসায়ন খাতের এ কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ বিগত পাঁচ বছরের আর্থিক হিসাব পর্যালোচনা করে নো ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। শুধু তাই নয়, এই পাঁচ বছরে কোম্পানিটি শেয়ার প্রতি লোকসান দেখিয়েছে প্রায় ৪ টাকা।

কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো- টানা পাঁচ বছরের নো ডিভিডেন্ড কিংবা পাঁচ বছরে কোম্পানির ধারাবাহিক লোকসানও কোম্পানিটির শেয়ার দরের আকাশচুম্বী গতিপথে বাধ সাধতে পারেনি। নো ডিভিডেন্ড ঘোষণার পরের দুই কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ২১ টাকারও বেশি।  দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

ডিএসই’র তথ্যানুযায়ী, তালিকাভুক্তির পর কোম্পানিটি শুধুমাত্র ২০১০ সালে বিনিয়োগকারীদের ১০ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড দেয়। এরপর থেকে আর কোন ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেনি কোম্পানিটি।

বিশ্লেষকদের বলছেন, কোনো কারণ ছাড়াই দুর্বল ও লোকসানি কোমপানির শেয়ারের দাম বাড়ছে। আর ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা স্বল্পসময়ে লাভের আসায় মরীচিকার পেছনে ছুটে নিজের বিনিয়োগকে ঝুঁকিতে ফেলছেন। মূলত কারসাজি আর সিন্ডিকেটের কারণে এসব শেয়ারের দর বাড়ে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার উচিত তদন্ত করে এ ধরনের কোম্পানির লেনদেন বন্ধ করে দেওয়া।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, গত ৩০ জুন, ২০২৩ তারিখে সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য নো ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। কোম্পানিটি আলোচ্য বছরে বিনিয়োগকারীদের কোন ডিভিডেন্ড দেবে না। পাশাপাশি কোম্পানিটি গত চার বছর অথাৎ ২০১৯ ও ২০২০ ও ২০২১ এবং ২০২২ সালে নো ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে।

এছাড়া শনিবার প্রকাশিত আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, ২০১৯ থেকে ২০২২ পর্যন্ত প্রতি বছর কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান ছিলো। ২০১৯ সালে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান ৪৯ পয়সা, ২০২০ সালে ১ টাকা ০৭ পয়সা , ২০২১ সালে ৮০ পয়সা এবং ২০২২ সালে কোম্পানিটির লোকসান হয়েছিলো ৭৩ পয়সা।

আরও পড়ুন: এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ ও শাহজালাল ইক্যুইটিকে বিশাল অঙ্কের জরিমানা

সর্বশেষ ৩০ জুন, ২০২৩ তারিখে সমাপ্ত হিসাববছরে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ৭৬ পয়সা।

ডিএসইর তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, বোর্ড মিটিংয়ের পরদিন অর্থ্যাৎ গতকাল রোববার কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ৭ টাকারও বেশি। এদিন কোম্পানিটির শেয়ার দর ১৪৪.৮০ টাকা থেকে বেড়ে সর্বশেষ ১৫১.৯০ টাকায় লেনদেন হয়েছে। এছাড়া আজ সোমবার কোম্পানিটির শেয়ার দর ১৪ টাকা বেড়েছে। আজ কোম্পানিটির শেয়ার দর ১৫১.৯০ টাকা থেকে বেড়ে সর্বশেষ ১৬৫.৯০ টাকায় লেনদেন হয়েছে।

জানতে চাইলে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বিজনেস জার্নালকে বলেন, লোকসানি কোম্পানির দাম বাড়ে, এটা জুয়া খেলা। জুয়াড়িরা সিন্ডিকেট ট্রেডিং করে। এটা এখন ওপেন সিক্রেট। এ জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে দায়ী করে তিনি বলেন, অকারণ মূল্যবৃদ্ধি বিএসইসি ঠেকাতে পারত। ওদের ট্রেডিং সাসপেন্ড করা উচিত; কিন্তু করা হচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, যে কোম্পানিটি ২০১০ সালের পর থেকে কোন ডিভিডেন্ড দেয়নি এবং উৎপাদন বন্ধ, সেই কোম্পানিতে কারা, কোন কারণে এতো উচ্চ মূল্যে বিনিয়োগ করেন- তা আমার বোধগম্য নয়।

আবু আহমেদ বলেন, আগেতো কোম্পানিগুলো বিনিয়োগকারীদের নিয়ে স্ব-শরীরে এজিএম করতো, তখন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা এসব প্রশ্ন তুলতে পারতো। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় কোভিড চলে যাওয়ার এতোদিন পর দেশের সবকিছু স্বশরীরে হলেও শুধুমাত্র এজিএমটাই ভার্চুয়ালি রয়ে গেছে। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য বিএসইসির প্রতি আহ্বান জানান। সেই সঙ্গে শুধু আমাম বাটনই নয়, যেসব লোকসানি কোম্পানির শেয়ার কোন কারণ ছাড়া মাত্রাতিরিক্ত বাড়ছে সেসব কোম্পানির লেনদেন তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ কা উচিত বলে মনে করেন তিনি।

প্রসঙ্গত, ১৯৯৬ সালে দেশের শেয়ারবাজারে ওষুধ ও রসায়ন খাতে তালিকাভুক্ত হয় ইমাম বাটন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। তালিকাভুক্তির পর শুধুমাত্র ২০১০ সালে বিনিয়োগকারীদের ১০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দেয় কোম্পানিটি। ২০১৯ সাল থেকে কোম্পানিটির বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) হয়নি।

৩ কোটি ২২ লাখ টাকা পূঞ্জীভূত লোকসানে থাকা কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা। কোম্পানিটির ৩০ দশমিক ০৮ শতাংশ শেয়ার উদ্যোক্তা ও পরিচালকরা ধারণ করছেন। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে আছে ৬০ দশমিক ৯১ শতাংশ শেয়ার। আর বাকি ৯ দশমিক ০১ শতাংশ শেয়ার প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে। দীর্ঘদিন লভ্যাংশ না দেওয়ায় লোকসানি কোম্পানিটির শেয়ার বর্তমানে জেড ক্যাটাগরিতে লেনদেন হচ্ছে।

ঢাকা/এসআর