০২:০৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

পাঁচ শতাংশ করছাড়ে পুঁজিবাজারে ভালো কোম্পানি আসবে না: বক্তারা

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ১১:৩৭:২৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৯ জুলাই ২০২৫
  • / ১০৩৫১ বার দেখা হয়েছে

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর কোম্পানিগুলোর নানা খাতে খরচ বাড়ে। যেকারণে মাত্র ৫ শতাংশ কর–সুবিধা পেতে সেই খরচ বাড়িয়ে কোনো কোম্পানি শেয়ারবাজারে আসতে আগ্রহী হবে না। এ জন্য গত পাঁচ–ছয় বছরে ভালো কোনো কোম্পানি শেয়ারবাজারে আসেনি।

শেয়ারবাজার নিয়ে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এমন মন্তব্য করেছেন শিল্পোদ্যোক্তা ও অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

গতকাল মঙ্গলবার (০৮ জুলাই) বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) ‘পুঁজিবাজারের সম্প্রসারণ: টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন কাঠামো’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এমন মন্তব্য করেছেন শিল্পোদ্যোক্তা ও অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর। রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত এই আলোচনা সভায় উদ্যোক্তা ও তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর। তিনি তাঁর বক্তব্যে শেয়ারবাজারে ভালো কোম্পানি কেন তালিকাভুক্ত হতে আগ্রহী হচ্ছে না, এ বিষয়ে তাঁর অভিমত তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, আমাদের শেয়ারবাজারে অনেক ধরনের সমস্যা রয়েছে, যা ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্ত হওয়ার পথে বড় বাধা। অনেক কোম্পানি শেয়ারবাজারে আসতে ভয় পায়। কারণ, শেয়ারবাজারে এমন সব নিয়ম বা বিধিবিধান রয়েছে, যেখানে কোম্পানিগুলো লোকসান করতে পারে, এমন কোনো বাস্তবতাই যেন নেই। কোনো কোম্পানি যদি বছর শেষে লভ্যাংশ দিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে সেই কোম্পানিকে নানা ধরনের জবাবদিহির মধ্যে পড়তে হয়। আবার প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিও মাধ্যমে শেয়ারবাজার থেকে টাকা তুলতে দেড়–দুই বছর লেগে যায়। তালিকাভুক্ত হলে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কোনো কর–সুবিধাও পাওয়া যায় না। কোম্পানির সম্পদ মূল্যায়নেরও যথাযথ ব্যবস্থা নেই। মুষ্টিমেয় কিছু খারাপ লোকের জন্য এই বাজারে সবার হাত–পা বেঁধে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে—এটা কখনো হতে পারে না।

সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদায় নিযুক্ত বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী। আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) চেয়ারম্যান এ কে এম হাবিবুর রহমান, প্রাণ–আরএফএল গ্রুপের পরিচালক উজমা চৌধুরী, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাঈদ কুতুব, রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিরঞ্জন চন্দ্র দেবনাথ। স্বাগত বক্তব্য দেন বিএমবিএর সভাপতি মাজেদা খাতুন। আরও বক্তব্য দেন বিএমবিএর সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ এ হাফিজ, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির পরিচালক আবুল কালাম প্রমুখ। সভায় শেয়ারবাজারে নতুন কোম্পানি তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা নিয়ে উপস্থাপনা তুলে ধরেন লংকাবাংলা ইনভেস্টমেন্টসের প্রধান নির্বাহী ইফতেখার আলম।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে আনিসুজ্জামান বলেন, অর্থবাজার ও পুঁজিবাজার হচ্ছে অর্থনীতির দুটি পা। অর্থনীতিকে সামনে এগিয়ে নিতে হলে দুটি পা–কেই সমানভাবে সক্ষম করে তুলতে হবে। বিগত সরকার দেশের অর্থনীতিকে এমন অবস্থায় রেখে গেছে, এখনো অনেক ব্যাংক তারল্যসংকটে ভুগছে। এ অবস্থায় পুঁজিবাজার চাঙা হয়ে যাবে, এটা আশা করা যায় না। তবে বর্তমান সরকার পুঁজিবাজারকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে।

আরও পড়ুন: ৬ মাসেরও কম সময়ের মধ‍্যে আইপিও প্রক্রিয়া শেষ করা হবে: ডিএসই চেয়ারম্যান

ডিএসইর সভাপতি মমিনুল ইসলাম বলেন, সরকার ও পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সব সময় শেয়ারবাজারকে শিশু হিসেবে বিবেচনা করছে। এ কারণে এত দিনেও এই বাজারের নিজস্ব সক্ষমতা তৈরি হয়নি। গত ১৫ বছরে শেয়ারবাজারে ১৩৮টি কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়েছে, যেগুলোর গুণগত মান নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে।

শিল্পোদ্যোক্তা উজমা চৌধুরী বলেন, শেয়ারবাজারে পণ্যবৈচিত্র্য কম। এ ছাড়া বাজার নিয়ে অনেক পরিকল্পনা ও পরিবর্তন নিয়ে কথা হচ্ছে, কিন্তু সেগুলোর বাস্তবায়ন দেখা যাচ্ছে কম।

সভায় শেয়ারবাজারে নতুন কোম্পানি তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতার কথা তুলে ধরা হয়। এসব প্রতিবন্ধকতার মধ্যে রয়েছে কোম্পানি তালিকাভুক্তির প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে দীর্ঘ সময় লাগে, কোম্পানির সম্পদ মূল্যায়ন ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে ভালো কোম্পানি ভালো দাম পাচ্ছে না, উদ্যোক্তাদের জন্য প্রণোদনা কম, ন্যূনতম শেয়ার ধারণের বাধ্যবাধকতা আরোপ, সরাসরি তালিকাভুক্তির বিধানের ক্ষেত্রে বৈষম্য, তালিকাচ্যুত হওয়ার বিধান না থাকা ইত্যাদি।

ঢাকা/এসএইচ

শেয়ার করুন

error: Content is protected ! Please Don't Try!

পাঁচ শতাংশ করছাড়ে পুঁজিবাজারে ভালো কোম্পানি আসবে না: বক্তারা

আপডেট: ১১:৩৭:২৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৯ জুলাই ২০২৫

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর কোম্পানিগুলোর নানা খাতে খরচ বাড়ে। যেকারণে মাত্র ৫ শতাংশ কর–সুবিধা পেতে সেই খরচ বাড়িয়ে কোনো কোম্পানি শেয়ারবাজারে আসতে আগ্রহী হবে না। এ জন্য গত পাঁচ–ছয় বছরে ভালো কোনো কোম্পানি শেয়ারবাজারে আসেনি।

শেয়ারবাজার নিয়ে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এমন মন্তব্য করেছেন শিল্পোদ্যোক্তা ও অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

গতকাল মঙ্গলবার (০৮ জুলাই) বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) ‘পুঁজিবাজারের সম্প্রসারণ: টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন কাঠামো’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এমন মন্তব্য করেছেন শিল্পোদ্যোক্তা ও অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর। রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত এই আলোচনা সভায় উদ্যোক্তা ও তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর। তিনি তাঁর বক্তব্যে শেয়ারবাজারে ভালো কোম্পানি কেন তালিকাভুক্ত হতে আগ্রহী হচ্ছে না, এ বিষয়ে তাঁর অভিমত তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, আমাদের শেয়ারবাজারে অনেক ধরনের সমস্যা রয়েছে, যা ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্ত হওয়ার পথে বড় বাধা। অনেক কোম্পানি শেয়ারবাজারে আসতে ভয় পায়। কারণ, শেয়ারবাজারে এমন সব নিয়ম বা বিধিবিধান রয়েছে, যেখানে কোম্পানিগুলো লোকসান করতে পারে, এমন কোনো বাস্তবতাই যেন নেই। কোনো কোম্পানি যদি বছর শেষে লভ্যাংশ দিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে সেই কোম্পানিকে নানা ধরনের জবাবদিহির মধ্যে পড়তে হয়। আবার প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিও মাধ্যমে শেয়ারবাজার থেকে টাকা তুলতে দেড়–দুই বছর লেগে যায়। তালিকাভুক্ত হলে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কোনো কর–সুবিধাও পাওয়া যায় না। কোম্পানির সম্পদ মূল্যায়নেরও যথাযথ ব্যবস্থা নেই। মুষ্টিমেয় কিছু খারাপ লোকের জন্য এই বাজারে সবার হাত–পা বেঁধে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে—এটা কখনো হতে পারে না।

সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদায় নিযুক্ত বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী। আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) চেয়ারম্যান এ কে এম হাবিবুর রহমান, প্রাণ–আরএফএল গ্রুপের পরিচালক উজমা চৌধুরী, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাঈদ কুতুব, রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিরঞ্জন চন্দ্র দেবনাথ। স্বাগত বক্তব্য দেন বিএমবিএর সভাপতি মাজেদা খাতুন। আরও বক্তব্য দেন বিএমবিএর সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ এ হাফিজ, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির পরিচালক আবুল কালাম প্রমুখ। সভায় শেয়ারবাজারে নতুন কোম্পানি তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা নিয়ে উপস্থাপনা তুলে ধরেন লংকাবাংলা ইনভেস্টমেন্টসের প্রধান নির্বাহী ইফতেখার আলম।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে আনিসুজ্জামান বলেন, অর্থবাজার ও পুঁজিবাজার হচ্ছে অর্থনীতির দুটি পা। অর্থনীতিকে সামনে এগিয়ে নিতে হলে দুটি পা–কেই সমানভাবে সক্ষম করে তুলতে হবে। বিগত সরকার দেশের অর্থনীতিকে এমন অবস্থায় রেখে গেছে, এখনো অনেক ব্যাংক তারল্যসংকটে ভুগছে। এ অবস্থায় পুঁজিবাজার চাঙা হয়ে যাবে, এটা আশা করা যায় না। তবে বর্তমান সরকার পুঁজিবাজারকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে।

আরও পড়ুন: ৬ মাসেরও কম সময়ের মধ‍্যে আইপিও প্রক্রিয়া শেষ করা হবে: ডিএসই চেয়ারম্যান

ডিএসইর সভাপতি মমিনুল ইসলাম বলেন, সরকার ও পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সব সময় শেয়ারবাজারকে শিশু হিসেবে বিবেচনা করছে। এ কারণে এত দিনেও এই বাজারের নিজস্ব সক্ষমতা তৈরি হয়নি। গত ১৫ বছরে শেয়ারবাজারে ১৩৮টি কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়েছে, যেগুলোর গুণগত মান নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে।

শিল্পোদ্যোক্তা উজমা চৌধুরী বলেন, শেয়ারবাজারে পণ্যবৈচিত্র্য কম। এ ছাড়া বাজার নিয়ে অনেক পরিকল্পনা ও পরিবর্তন নিয়ে কথা হচ্ছে, কিন্তু সেগুলোর বাস্তবায়ন দেখা যাচ্ছে কম।

সভায় শেয়ারবাজারে নতুন কোম্পানি তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতার কথা তুলে ধরা হয়। এসব প্রতিবন্ধকতার মধ্যে রয়েছে কোম্পানি তালিকাভুক্তির প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে দীর্ঘ সময় লাগে, কোম্পানির সম্পদ মূল্যায়ন ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে ভালো কোম্পানি ভালো দাম পাচ্ছে না, উদ্যোক্তাদের জন্য প্রণোদনা কম, ন্যূনতম শেয়ার ধারণের বাধ্যবাধকতা আরোপ, সরাসরি তালিকাভুক্তির বিধানের ক্ষেত্রে বৈষম্য, তালিকাচ্যুত হওয়ার বিধান না থাকা ইত্যাদি।

ঢাকা/এসএইচ