পুঁজিবাজারে স্বল্প মূলধনীর দৌড়ে মুখ থুবড়ে পড়ছে মৌলভিত্তির কোম্পানিগুলো!
- আপডেট: ০৮:৫৮:২৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ মার্চ ২০২৩
- / ৪৪৬৯ বার দেখা হয়েছে
উত্থান-পতনই পুঁজিবাজারের ধর্ম। সূচক কিংবা কোম্পানির শেয়ার দর শুধুই বাড়বে কিংবা টানা কমবে- পুজিবাজারে এমন গ্যারান্টি কেউই দিতে পারবে না। তবে বাড়ুক কিংবা কমুক- তা হতে হবে যৌক্তিক পর্যায়ে। মূলকথা হলো পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতায় বাজারের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থার বিষয়টি সুনিশ্চিত করতে হবে।
তবে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে ‘আস্থা’ নামক শব্দটি নেই বললেই চলে। পরিণতিতে সাম্প্রতিক লেনদেনে এক রকম খরা-ই চলছে। লেনদেন কমতে কমতে গত ফেব্রুয়ারিতে ১৭৮ কোটিতে এসে ঠেঁকেছিল। যদিও দুয়েক দিন লেনদেন কিছুটা বাড়ে, কিন্তু তার অধিকাংশই স্বল্প মূলধনী প্রতিষ্ঠানকে ঘিরে সম্পন্ন হয়ে থাকে। আর যেসব কোম্পানিতে (মূলধনী কিংবা যাদের আর্থিক সক্ষমতা রয়েছে) সেসব কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগকারীরা ফিরেও তাকান না।
অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুক–টুইটার–লিংকডইন–ইন্সটাগ্রাম–ইউটিউব
বাজার বিশ্লেষনে দেখা যায়স যেসব কোম্পানির মূলধন ৫০ বা ১০০ কোটির নিচে সেসব কোম্পানির তুলনায় অধিক মূলধনী কোম্পানির শেয়ার দাম বাড়ায় গতি নেই বললেই চলে। আর বিষয়টি আদর্শ পুঁজিবাজারের ক্ষেত্রে মোটেও স্বাভাবিক আচরন নয়। প্রশ্ন হলো বিনিয়োগকারীরা কিসের ভরসায় বা কার পরামর্শে এসব দুর্বল কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেন- তা বোধগগম্য নয়।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, আজ বুধবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন হওয়া ৩০৬টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দর বেড়েছে ২১টি বা ৬.৮৬ শতাংশ কোম্পানির। লেনদেন কমেছে ১১০টি বা ৩৫.৯৪ শতাংশ কোম্পানির। আর অপরিবর্তিত ছিল ১৭৫টি বা ৫৭.১৮ শতাংশ কোম্পানির। লেনদেন হয়েছে ৬০৭ কোটি ১৬ লাখ টাকার। যা গত কার্যদিবস থেকে ৪৩ কোটি ৫৩ লাখ টাকা বেশি।
কিন্তু দেখার বিষয় হলো দর বাড়া ২১টি কোম্পানির অধিকাংশই স্বল্প মূলধনী কোম্পানি। এরমধ্যে দর বাড়ার তালিকায় থাকা আলহাজ টেক্সটাইলের মূলধন ২২ কোটি ২৯ লাখ টাকা। কোম্পানিটি সমাপ্ত ২০২১ ও ২০২২ যথাক্রমে ১ ও ৩ শতাংশ ডিভিডেন্ড দিয়েছে। বিপরীতে কোম্পানিটির বর্তমান পিই রেশিও ২০৮.৫৭ পয়েন্ট। আজ কোম্পানিটিতে লেনদেন হয়েছে ৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা।
একই অবস্থা গেইনারের তালিকার পদ্মা ইসলামি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের। কোমাপানিটির দর বেড়েছে ৮০ পয়সা বা ১.৮৭ শতাংশ। কোম্পানিটির বর্তমান মূলধন ৩৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা। কোম্পানিটি গত ২০২১ সালে ২ শতাংশ ডিভিডেন্ড দিয়েছে। কোম্পানিটিতে আজ মোট ১ কোটি ৪৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
আরও পড়ুন: ব্যাংক বন্ধ করার পর্যায়ে আসেনি বাংলাদেশ: মশিউর রহমান
অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে চাটার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মূলধন ৩৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। কোম্পানিটিতে আজ ৫ কোটি ৯৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
এডিএন টেলিকমের মূলধন ৬৪ কোটি ৬৫ লাখ। কোম্পানিটি গত তিন বছর ১০ শতাংশ করে ডিভিডেন্ড দিয়েছে। কোম্পানিটিতে আজ ২৮ কোটি ২৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মূলধন ৪৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। কোম্পানিটি গত ২০২০ ও ২০২১ সালে যথাক্রমে ১০ ও ১৫ শতাংশ ডিভিডেন্ড দিয়েছে। কোম্পানিটিতে আজ ১১ কোটি ৬০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
অন্যদিকে মূলধনী ও আর্থিক সক্ষমতা ভালো এমন কোম্পানিগুলোকে নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০’র কোম্পানিগুলোতে লেনদেন নেই বললেই চলে। ডিএস-৩০ তে থাকা কোম্পানিগুলোর মধ্যে ৩টি কোম্পানির দর বেড়েছে, ৬টি কোম্পানির দর কমেছে, ১৯ কোম্পানির অপরিবর্তিত রয়েছে। আর লেনদেন হয়নি দুই কোম্পানির।
এ তালিকায় থাকা দর বাড়া কোম্পানির মধ্যে বিকন ফার্মার মূলধন ২৩১ কোটি টাকা। কোম্পানিটি ২০২১ ও ২০২২ সালে ডিভিডেন্ড দিয়েছে যথাক্রমে ১০ ও ১৫ শতাংশ। কোম্পানিটির বর্তমান পিই রেশিও ৬৭.২৮ পয়েন্ট। কোম্পানিটিতে আজ ১ কোটি ৩৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
একই অবস্থা ইসলামী ব্যাংকের। ব্যাংকটির বর্তমান মূলধন ১৬ হাজার ১০০ কোটি টাকা। সর্বশেষ ২০২০ ও ২০২১ সালে কোম্পানিটি ১০ শতাংশ ডিভিডেন্ড দিয়েছে। ব্যাংকটির পিই রেশিও ১১.১৭ পয়েন্ট। ব্যাংকটিতে আজ ৪৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
এ তালিকায় থাকা অপর কোম্পানি বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের দর কমেছে। আজ কোম্পানিটির ২.৪ টাকা বা ১.৮৮ শতাংশ দর কমেছে। মোট ৮ কোটি ৭৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। কোম্পানিটির বর্তমান মূলধন ১৫২ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। ২০২০ ও ২০২১ সালে কোম্পানিটি যথাক্রমে ১২ ও ২০ শতাংশ ডিভিডেন্ড দিয়েছে।
বহুজাতিক কোম্পানি ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর বর্তমান মূলধন ৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। গত ২০২০ ও ২০২১ সালে কোম্পানিটি যথাক্রমে ৬০০ ও ২৭৫ শতাংশ ডিভিডেন্ড দিয়েছে। কোম্পানিটির আজ শেয়ার দরে কোন পরিবর্তন হয় নি।
শেয়ার দর অপরিবর্তিত থাকা অন্য কোম্পানিগুলো হলো- বিবিএস ক্যাবলস, বেক্সিমকো, ব্র্যাক ব্যাংক, বাংলাদেশ স্যাবমেরিন ক্যাবল, বাংলাদেশ স্টীল রি-রোলিং মিলস, বেক্সিমকো ফার্মা, সিটি ব্যাংক, ফরচুন সুজ, গ্রামীণ ফোন, জিপিএইচ ইস্পাত, আইএফআইসি ব্যাংক, লাফার্জোহোলসিম বাংলাদেশ, রেনেটা, রবি, সাইথইস্ট ব্যাংক, স্কয়ার ফার্মা, তিতাস গ্যাস ও ইউনাইটেড পাওয়ার।
বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, স্বল্প মূলধনি কোম্পানিগুলোতে কারসাজি চক্র খুব সহজেই টার্গেট করে গেম করতে পারে। আর এক ধরনের অতিলোভী বিনিয়োগকারী স্বল্পসময়ে পুঁজি বাড়ানোর জন্য এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেন। যে কারণে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে এসব কোম্পানির শেয়ারদর ঊর্ধ্বমুখী থাকে। আর দর যখন পড়তে শুরু করে, তখন এসব শেয়ার নিয়ে ভোগান্তিতে পড়েন তারা। এর দায় বিএসইসি ও ডিএসই এড়াতে পারে না।
তাদের মতে, বারবার সতর্ক করার পরও ঝুঁকিপূর্ণ কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা থেকে বের হতে পারছেন না বিনিয়োগকারীরা। বরং এসব নামসর্বস্ব কোম্পানিতে তাদের আস্থা বাড়ছে। যার জেরে এ ধরনের কোম্পানির আধিপত্য কমছে না। কিছুতেই টেনে ধরা যাচ্ছে না এসব কোম্পানির দরবৃদ্ধির লাগাম। তবে এসব কোম্পানিতে যাদের বিনিয়োগ রয়েছে, তাদের ‘মূলধারার বিনিয়োগকারী’ বলতে নারাজ বাজার সংশ্লিষ্টরা।
বিজনেস জার্নাল/ঢাকা