০৯:২০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

ফু-ওয়াং ফুডসের আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম, বিএসইসির ব্যাখ্যা তলব

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ১২:৪০:৫৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২১ মার্চ ২০২২
  • / ৪২৩৪ বার দেখা হয়েছে

ফাইল ফটো

বিজনেস জার্নাল ডেস্ক: পুঁজিবাজারে খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের তালিকাভুক্ত কোম্পানি ফু-ওয়াং ফুডসের ২০২১ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরের বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদনে অসঙ্গতি ও অবমূল্যায়নের সন্দেহ প্রকাশ করেছে নিরীক্ষক ম্যাবস অ্যান্ড জে পার্টনার্স। কোম্পানিটির বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদনে উল্লিখিত আয়, ইনভেন্টরি, ডেফার্ড ট্যাক্সের ব্যয় ও দায়, ব্যয়বহুল পরিচালনা, অগ্রিম লেনদেন, কাঁচামাল ও মেশিনারিজের বিষয়ে সঠিক নথিসহ ব্যাখ্যা প্রদান করতে পারেনি বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট নিরীক্ষক।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

ফলে কোম্পানিটির বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন অযাচাইকৃত এবং অবমূল্যায়িত বলে মনে করছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এ জন্য সংশ্লিষ্ট সহায়ক নথিসহ কোম্পানির অবস্থান স্পষ্ট করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে কমিশন সূত্রে জানা গেছে।

সম্প্রতি ফু-ওয়াং ফুডসের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে। একইসঙ্গে বিষয়টি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সিআরওকে অবহিত করা হয়েছে।

বিএসইসির চিঠিতে বলা হয়েছে, কোম্পানির বার্ষিক প্রতিবেদন যাচাই করার পর এবং বৈধ নিরীক্ষকের যোগ্য মতামতের পরিপ্রেক্ষিতে কমিশন বেশ কিছু বিষয় দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে- নিরীক্ষকের প্রদান করা তথ্য থেকে জানা গেছে, কোম্পানির বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদনে ৮৯ কোটি ৬০ লাখ ১৪ হাজার ৩৫৮ টাকার মোট বিক্রয়ের বিষয়ে বলা হয়েছে, কিন্তু কোনো সঠিক হিসাব বই এবং সহায়ক নথি (যেমন চালান ও বিক্রয় বই) নিরীক্ষকের কাছে উপস্থাপন করা হয়নি। সুতরাং আর্থিক প্রতিবেদনে বিক্রয় ও আয় অবমূল্যায়ন বা বেশি করে দেখানো হতে পারে।

এছাড়াও কোম্পানিটির ব্যবসা ও অন্যান্য প্রাপ্যের পরিমাণ ৫৩ কোটি ১৫ লাখ ৯৫ হাজার ৮১ টাকা, কিন্তু এর মধ্যে ৩২ কোটি ৪০ লাখ ২৬ হাজার ১৩৫ টাকার বিষয়ে নিরীক্ষক নিশ্চিত করতে পারেনি। কারণ কোম্পানির ব্যবস্থাপনা উল্লেখ্য টাকার বিষয়ে সঠিক তথ্য দিতে পারেনি।

এদিকে নিরীক্ষক ৩ কোটি ২৯ লাখ ৪ হাজার ৪৪০ টাকার বিষয়ে নিশ্চিত করতে দেনাদারদের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে। কিন্তু নিরীক্ষক ২ কোটি ৯০ লাখ ৫৮ হাজার ৮৩২ টাকা দেনাদারদের কাছ থেকে সাড়া পায়নি। সুতরাং, আর্থিক প্রতিবেদনে অযাচাইকৃত এবং অনিশ্চিত পাওনার কথা বলা হতে পারে।

আর পৃথক আর্থিক প্রতিবেদনে কোম্পানির ইনভেন্টরি বাবদ ২৮ কোটি ৩০ লাখ ৭৮ হাজার ৩৮১ টাকা উল্লেখ করেছে কোম্পানি। কিন্তু নিরীক্ষক যাচাই করতে যেয়ে ২০ কোটি ৫৭ লাখ ৮১ হাজার ২০ টাকা নিশ্চিত করতে পারেনি। ফলস্বরূপ ক্লোজিং ইনভেন্টরি বেশি দেখানো হয়েছে।

সেই সঙ্গে নিরীক্ষকের যোগ্য মতামতের ভিত্তিতে পাওয়া যায় যে, ডেফার্ড ট্যাক্সের ব্যয় বাবদ ২৬ লাখ ৭৩ হাজার ৩২৯ টাকা এবং ডেফার্ড ট্যাক্স দায় বাবদ ৭ কোটি ৯ লাখ ৪৯ হাজার ৪১৯ টাকা দেখানো হয়েছে। কিন্তু সর্বশেষ মূল্যায়ন করে ফলাফল দাঁড়ায় ২ কোটি ৬৬ লাখ ৭৩ হাজার ৪৩৩ টাকা এবং ৯ কোটি ৪ লাখ ৩৬ হাজার ৫৮৯ টাকায়। অতএব, আর্থিক প্রতিবেদনে ডেফার্ড ট্যাক্সের ব্যয় এবং ডেফার্ড ট্যাক্সের দায় অবমূল্যায়ন হয়েছে।

এছাড়াও কোম্পানিটি অগ্রিম বেতনের জন্য ওপেনিং ব্যালেন্স ৪৪ লাখ ২২ হাজার ৩২৬ টাকা, বৃষ্টি বিস্কুট কারখানার জন্য দেওয়া অগ্রিম ১৯ লাখ ৫৬ হাজার ৫৯৮ টাকা এবং সহযোগী কোম্পানির সঙ্গে ৮ কোটি ৪১ লাখ ১৮ হাজার ৪২৬ টাকার লেনদেনের বিষয়ে নিরীক্ষকের কাছে কোনো সহায়ক নথি প্রদান করতে পারেনি।

চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদনে কাঁচামাল ক্রয়ের পরিমাণ বাবদ ৪৬ কোটি ১৬ লাখ ৫৩ হাজার ৭৮১ টাকা দেখিয়েছে। কিন্তু প্রাসঙ্গিক নথি এবং নিরীক্ষকের কাছে দেওয়া খাতা যাচাই করে ৪৪ কোটি ৮৩ লাখ ৬১ হাজার ১৬৭ টাকার হিসাব পাওয়া যায়। সুতরাং, ১ কোটি ৩২ লাখ ৯২ হাজার ৬১৪ টাকার কাঁচামালের হিসাব অযাচাইকৃত রয়েছে।

একই সঙ্গে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ড (আইএএস) এর ১৬ অনুসারে, পিপিই এর পুনর্মূল্যায়ন নিয়মিতভাবে করা উচিত, যাতে আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশের তারিখে সম্পদের পরিমাণ তার ন্যায্য মূল্য থেকে বস্তুগতভাবে আলাদা না হয়। ২০১০ সালের ডিসেম্বরে সম্পত্তি, গাছপালা ও যন্ত্রপাতি ৩ কোটি ৬ লাখ ৪১ হাজার ৩০৯ টাকার ক্রয় করা হয়েছিল। কিন্তু এগুলো সংগ্রহের পর থেকে গত ১১ বছরে কোনো পুনর্মূল্যায়ন করা হয়নি। এর পাশাপাশি প্ল্যান্ট অ্যান্ড মেশিনারি রয়েছে, যার নিট মূল্য ২৯ কোটি ৪৯ লাখ ১৭ হাজার ৯০০ টাকা। এর মধ্যে বেশ কিছু মেশিনারি রয়েছে যা মেরামতের পর্যায় এবং কিছু নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে আছে। কিন্তু আইএএস-৩৬ অনুযায়ী, সেসব সম্পদের লোকসানের কোনো হিসাব করা হয়নি।

কোম্পানি তার ব্যয়বহুল পরিচালনার জন্য ইনভেন্টরি, সম্ভাব্য পাওনা টাকার হিসাব এবং অন্যান্য অগ্রিম খরচের বিষয়ে গত দুই বছরে যোগ্য নিরীক্ষিত মতামত দেওয়া হয়েছিল। তাই এ বিষয়ে নিরীক্ষকের ভূমিকাসহ ব্যবস্থাপনার তথ্য প্রকাশের বিস্তারিত জানা প্রয়োজন।

তাই উল্লিখিত বিষয়ে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিনেন্স, ১৯৬৯ এর ধারা ১১(২) অনুযায়ী সহায়ক নথিসহ কোম্পানির অবস্থান স্পষ্ট করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হলো।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএসইসির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ফু-ওয়াং ফুডসের আর্থিক প্রতিবেদনে অনেক অসঙ্গতি পাওয়া গেছে। সেই সঙ্গে আর্থিক প্রতিবেদনে তাদের দেওয়া তথ্যের শতভাগ সত্যতা পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে নিরীক্ষক কমিশনকে জানিয়েছে। ফলে কোম্পানির বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্যে জালিয়াতি ও অবমূল্যায়নের সন্দেহ করছে কমিশন। তাই কোম্পানির কাছে সংশ্লিষ্ট বিষয়ক নথি ও তাদের ব্যাখ্যা জানতে চাওয়া হয়েছে।

ফু-ওয়াং ফুডসের নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসাব মিয়া মামুনকে মনোনীত করা হয়। তিনি মিনোরি বাংলাদেশের মনোনীত পরিচালক।

ফু-ওয়াং ফুডস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পরিচালনা পর্ষদ মিনোরি বাংলাদেশের মনোনীত পরিচালক মিয়া মামুনকে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। আসন্ন সাধারণ সভায় শেয়ারহোল্ডারদের পোস্ট-ফ্যাক্টো অনুমোদন সাপেক্ষে অবিলম্বে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে।

গত ২০ জানুয়ারি ৮০৮তম নিয়মিত কমিশন সভায় ফু-ওয়াং ফুডসের মালিকানা মিনোরি বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তরের অনুমোদন দেয় শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

ফু-ওয়াং ফুডসের ৮৪ লাখ ৪২ হাজার ৭২৬টি শেয়ার মিনোরি বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তরের প্রস্তাব কমিশন অনুমোদন দিয়েছে। ফু-ওয়াং ফুডসের শেয়ার বিক্রি করেছেন আরিফ আহমেদ চৌধুরী, আফসানা তারান্নুম ও লুবাবা তাবাসসুম। ডিপোজিটর (ব্যবহারিক) প্রবিধান ২০০৩, এর বিধি ৪২ এবং সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) উপ-বিধি ১১.৬ (মিলিত লেনদেন) এর অধীনে শেয়ার ক্রয় চুক্তি (এসপিএ) অনুসারে প্রতিটি শেয়ার ১০ টাকা মূল্যে হস্তান্তর হয়েছে। এক্সচেঞ্জের ট্রেডিং সিস্টেমের বাইরে এই শেয়ার হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।

পরবর্তীতে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা ও সক্ষমতা বাড়াতে ফু-ওয়াং ফুডসের পরিচালনা পর্ষদ ফের পুনর্গঠন করে বিএসইসি। কোম্পানির আগের পরিচালনা পর্ষদকে বাতিল করে নতুন একজন শেয়ারহোল্ডার পরিচালক ও দুজন স্বতন্ত্র পরিচালককে নিযুক্ত করা হয়েছে। একইসঙ্গে কোম্পানির নতুন পর্ষদকে সিকিউরিটিজ ও কোম্পানি আইন যথাযতভাবে পরিপালন করাসহ ৫টি শর্ত মেনে চলতে নির্দেশ দিয়েছে বিএসইসি।

নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ফু-ওয়াং ফুডসের নতুন পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা হলেন- শেয়ারহোল্ডার পরিচালক মাইনরি বাংলাদেশ এক বা তার অধিক পরিচালক (৭.৬১ শতাংশ শেয়ারধারণে বিপরীতে মনোনীত হতে পারেন), স্বতন্ত্র পরিচালক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস (এমআইএস) বিভাগের অধ্যাপক মো. আবুল কাশেম এবং স্বতন্ত্র পরিচালক একই বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস (এআইএস) বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ইশতার মহল।

আর ওই শেয়ারহোল্ডার পদে মিনোরি বাংলাদেশের মনোনীত পরিচালক হিসেবে মিয়া মামুনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যিনি ফু-ওয়াং ফুডসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। সূত্র: রাইজিংবিডি

ট্যাগঃ

শেয়ার করুন

x
English Version

ফু-ওয়াং ফুডসের আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম, বিএসইসির ব্যাখ্যা তলব

আপডেট: ১২:৪০:৫৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২১ মার্চ ২০২২

বিজনেস জার্নাল ডেস্ক: পুঁজিবাজারে খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের তালিকাভুক্ত কোম্পানি ফু-ওয়াং ফুডসের ২০২১ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরের বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদনে অসঙ্গতি ও অবমূল্যায়নের সন্দেহ প্রকাশ করেছে নিরীক্ষক ম্যাবস অ্যান্ড জে পার্টনার্স। কোম্পানিটির বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদনে উল্লিখিত আয়, ইনভেন্টরি, ডেফার্ড ট্যাক্সের ব্যয় ও দায়, ব্যয়বহুল পরিচালনা, অগ্রিম লেনদেন, কাঁচামাল ও মেশিনারিজের বিষয়ে সঠিক নথিসহ ব্যাখ্যা প্রদান করতে পারেনি বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট নিরীক্ষক।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

ফলে কোম্পানিটির বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন অযাচাইকৃত এবং অবমূল্যায়িত বলে মনে করছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এ জন্য সংশ্লিষ্ট সহায়ক নথিসহ কোম্পানির অবস্থান স্পষ্ট করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে কমিশন সূত্রে জানা গেছে।

সম্প্রতি ফু-ওয়াং ফুডসের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে। একইসঙ্গে বিষয়টি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সিআরওকে অবহিত করা হয়েছে।

বিএসইসির চিঠিতে বলা হয়েছে, কোম্পানির বার্ষিক প্রতিবেদন যাচাই করার পর এবং বৈধ নিরীক্ষকের যোগ্য মতামতের পরিপ্রেক্ষিতে কমিশন বেশ কিছু বিষয় দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে- নিরীক্ষকের প্রদান করা তথ্য থেকে জানা গেছে, কোম্পানির বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদনে ৮৯ কোটি ৬০ লাখ ১৪ হাজার ৩৫৮ টাকার মোট বিক্রয়ের বিষয়ে বলা হয়েছে, কিন্তু কোনো সঠিক হিসাব বই এবং সহায়ক নথি (যেমন চালান ও বিক্রয় বই) নিরীক্ষকের কাছে উপস্থাপন করা হয়নি। সুতরাং আর্থিক প্রতিবেদনে বিক্রয় ও আয় অবমূল্যায়ন বা বেশি করে দেখানো হতে পারে।

এছাড়াও কোম্পানিটির ব্যবসা ও অন্যান্য প্রাপ্যের পরিমাণ ৫৩ কোটি ১৫ লাখ ৯৫ হাজার ৮১ টাকা, কিন্তু এর মধ্যে ৩২ কোটি ৪০ লাখ ২৬ হাজার ১৩৫ টাকার বিষয়ে নিরীক্ষক নিশ্চিত করতে পারেনি। কারণ কোম্পানির ব্যবস্থাপনা উল্লেখ্য টাকার বিষয়ে সঠিক তথ্য দিতে পারেনি।

এদিকে নিরীক্ষক ৩ কোটি ২৯ লাখ ৪ হাজার ৪৪০ টাকার বিষয়ে নিশ্চিত করতে দেনাদারদের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে। কিন্তু নিরীক্ষক ২ কোটি ৯০ লাখ ৫৮ হাজার ৮৩২ টাকা দেনাদারদের কাছ থেকে সাড়া পায়নি। সুতরাং, আর্থিক প্রতিবেদনে অযাচাইকৃত এবং অনিশ্চিত পাওনার কথা বলা হতে পারে।

আর পৃথক আর্থিক প্রতিবেদনে কোম্পানির ইনভেন্টরি বাবদ ২৮ কোটি ৩০ লাখ ৭৮ হাজার ৩৮১ টাকা উল্লেখ করেছে কোম্পানি। কিন্তু নিরীক্ষক যাচাই করতে যেয়ে ২০ কোটি ৫৭ লাখ ৮১ হাজার ২০ টাকা নিশ্চিত করতে পারেনি। ফলস্বরূপ ক্লোজিং ইনভেন্টরি বেশি দেখানো হয়েছে।

সেই সঙ্গে নিরীক্ষকের যোগ্য মতামতের ভিত্তিতে পাওয়া যায় যে, ডেফার্ড ট্যাক্সের ব্যয় বাবদ ২৬ লাখ ৭৩ হাজার ৩২৯ টাকা এবং ডেফার্ড ট্যাক্স দায় বাবদ ৭ কোটি ৯ লাখ ৪৯ হাজার ৪১৯ টাকা দেখানো হয়েছে। কিন্তু সর্বশেষ মূল্যায়ন করে ফলাফল দাঁড়ায় ২ কোটি ৬৬ লাখ ৭৩ হাজার ৪৩৩ টাকা এবং ৯ কোটি ৪ লাখ ৩৬ হাজার ৫৮৯ টাকায়। অতএব, আর্থিক প্রতিবেদনে ডেফার্ড ট্যাক্সের ব্যয় এবং ডেফার্ড ট্যাক্সের দায় অবমূল্যায়ন হয়েছে।

এছাড়াও কোম্পানিটি অগ্রিম বেতনের জন্য ওপেনিং ব্যালেন্স ৪৪ লাখ ২২ হাজার ৩২৬ টাকা, বৃষ্টি বিস্কুট কারখানার জন্য দেওয়া অগ্রিম ১৯ লাখ ৫৬ হাজার ৫৯৮ টাকা এবং সহযোগী কোম্পানির সঙ্গে ৮ কোটি ৪১ লাখ ১৮ হাজার ৪২৬ টাকার লেনদেনের বিষয়ে নিরীক্ষকের কাছে কোনো সহায়ক নথি প্রদান করতে পারেনি।

চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদনে কাঁচামাল ক্রয়ের পরিমাণ বাবদ ৪৬ কোটি ১৬ লাখ ৫৩ হাজার ৭৮১ টাকা দেখিয়েছে। কিন্তু প্রাসঙ্গিক নথি এবং নিরীক্ষকের কাছে দেওয়া খাতা যাচাই করে ৪৪ কোটি ৮৩ লাখ ৬১ হাজার ১৬৭ টাকার হিসাব পাওয়া যায়। সুতরাং, ১ কোটি ৩২ লাখ ৯২ হাজার ৬১৪ টাকার কাঁচামালের হিসাব অযাচাইকৃত রয়েছে।

একই সঙ্গে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ড (আইএএস) এর ১৬ অনুসারে, পিপিই এর পুনর্মূল্যায়ন নিয়মিতভাবে করা উচিত, যাতে আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশের তারিখে সম্পদের পরিমাণ তার ন্যায্য মূল্য থেকে বস্তুগতভাবে আলাদা না হয়। ২০১০ সালের ডিসেম্বরে সম্পত্তি, গাছপালা ও যন্ত্রপাতি ৩ কোটি ৬ লাখ ৪১ হাজার ৩০৯ টাকার ক্রয় করা হয়েছিল। কিন্তু এগুলো সংগ্রহের পর থেকে গত ১১ বছরে কোনো পুনর্মূল্যায়ন করা হয়নি। এর পাশাপাশি প্ল্যান্ট অ্যান্ড মেশিনারি রয়েছে, যার নিট মূল্য ২৯ কোটি ৪৯ লাখ ১৭ হাজার ৯০০ টাকা। এর মধ্যে বেশ কিছু মেশিনারি রয়েছে যা মেরামতের পর্যায় এবং কিছু নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে আছে। কিন্তু আইএএস-৩৬ অনুযায়ী, সেসব সম্পদের লোকসানের কোনো হিসাব করা হয়নি।

কোম্পানি তার ব্যয়বহুল পরিচালনার জন্য ইনভেন্টরি, সম্ভাব্য পাওনা টাকার হিসাব এবং অন্যান্য অগ্রিম খরচের বিষয়ে গত দুই বছরে যোগ্য নিরীক্ষিত মতামত দেওয়া হয়েছিল। তাই এ বিষয়ে নিরীক্ষকের ভূমিকাসহ ব্যবস্থাপনার তথ্য প্রকাশের বিস্তারিত জানা প্রয়োজন।

তাই উল্লিখিত বিষয়ে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিনেন্স, ১৯৬৯ এর ধারা ১১(২) অনুযায়ী সহায়ক নথিসহ কোম্পানির অবস্থান স্পষ্ট করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হলো।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএসইসির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ফু-ওয়াং ফুডসের আর্থিক প্রতিবেদনে অনেক অসঙ্গতি পাওয়া গেছে। সেই সঙ্গে আর্থিক প্রতিবেদনে তাদের দেওয়া তথ্যের শতভাগ সত্যতা পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে নিরীক্ষক কমিশনকে জানিয়েছে। ফলে কোম্পানির বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্যে জালিয়াতি ও অবমূল্যায়নের সন্দেহ করছে কমিশন। তাই কোম্পানির কাছে সংশ্লিষ্ট বিষয়ক নথি ও তাদের ব্যাখ্যা জানতে চাওয়া হয়েছে।

ফু-ওয়াং ফুডসের নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসাব মিয়া মামুনকে মনোনীত করা হয়। তিনি মিনোরি বাংলাদেশের মনোনীত পরিচালক।

ফু-ওয়াং ফুডস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পরিচালনা পর্ষদ মিনোরি বাংলাদেশের মনোনীত পরিচালক মিয়া মামুনকে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। আসন্ন সাধারণ সভায় শেয়ারহোল্ডারদের পোস্ট-ফ্যাক্টো অনুমোদন সাপেক্ষে অবিলম্বে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে।

গত ২০ জানুয়ারি ৮০৮তম নিয়মিত কমিশন সভায় ফু-ওয়াং ফুডসের মালিকানা মিনোরি বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তরের অনুমোদন দেয় শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

ফু-ওয়াং ফুডসের ৮৪ লাখ ৪২ হাজার ৭২৬টি শেয়ার মিনোরি বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তরের প্রস্তাব কমিশন অনুমোদন দিয়েছে। ফু-ওয়াং ফুডসের শেয়ার বিক্রি করেছেন আরিফ আহমেদ চৌধুরী, আফসানা তারান্নুম ও লুবাবা তাবাসসুম। ডিপোজিটর (ব্যবহারিক) প্রবিধান ২০০৩, এর বিধি ৪২ এবং সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) উপ-বিধি ১১.৬ (মিলিত লেনদেন) এর অধীনে শেয়ার ক্রয় চুক্তি (এসপিএ) অনুসারে প্রতিটি শেয়ার ১০ টাকা মূল্যে হস্তান্তর হয়েছে। এক্সচেঞ্জের ট্রেডিং সিস্টেমের বাইরে এই শেয়ার হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।

পরবর্তীতে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা ও সক্ষমতা বাড়াতে ফু-ওয়াং ফুডসের পরিচালনা পর্ষদ ফের পুনর্গঠন করে বিএসইসি। কোম্পানির আগের পরিচালনা পর্ষদকে বাতিল করে নতুন একজন শেয়ারহোল্ডার পরিচালক ও দুজন স্বতন্ত্র পরিচালককে নিযুক্ত করা হয়েছে। একইসঙ্গে কোম্পানির নতুন পর্ষদকে সিকিউরিটিজ ও কোম্পানি আইন যথাযতভাবে পরিপালন করাসহ ৫টি শর্ত মেনে চলতে নির্দেশ দিয়েছে বিএসইসি।

নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ফু-ওয়াং ফুডসের নতুন পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা হলেন- শেয়ারহোল্ডার পরিচালক মাইনরি বাংলাদেশ এক বা তার অধিক পরিচালক (৭.৬১ শতাংশ শেয়ারধারণে বিপরীতে মনোনীত হতে পারেন), স্বতন্ত্র পরিচালক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস (এমআইএস) বিভাগের অধ্যাপক মো. আবুল কাশেম এবং স্বতন্ত্র পরিচালক একই বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস (এআইএস) বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ইশতার মহল।

আর ওই শেয়ারহোল্ডার পদে মিনোরি বাংলাদেশের মনোনীত পরিচালক হিসেবে মিয়া মামুনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যিনি ফু-ওয়াং ফুডসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। সূত্র: রাইজিংবিডি