০১:০৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ মে ২০২৪

বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ: ন্যাশনাল ব্যাংক পর্ষদের পদত্যাগ

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ১২:৪৮:৩৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ মে ২০২৪
  • / ৪২৮০ বার দেখা হয়েছে

কোনো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত না হয়ে নিজেরাই সবল হতে চায় বেসরকারি ন্যাশনাল ব্যাংক। কিন্তু বাংলাদেশ  ব্যাংক জোর করে তাদের অন্য ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করতে চায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এমন স্বেচ্ছাচারিতা ও অযাচিত হস্তক্ষেপের প্রতিবাদে ন্যাশনাল ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যানসহ পর্ষদের বে‌শিরভাগ সদস্য পদত্যাগ করেছেন।

পদত্যাগ করা একাধিক পরিচালক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

না প্রকাশ না করার শর্তে পদত্যাগ করা এক পরিচালক  জানান, ব্যাংকের পর্ষদে সিদ্ধান্ত হয়েছিল যেকোনো ব্যাংকের সঙ্গে এখন একীভূত না হয়ে আমরা নিজেরাই সবল হব। দেশের বড় বড় গ্রুপ বসুন্ধরা, নাসা, এস আলমসহ অনেক প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তারা প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। তাদের দেওয়া ঋণ আদায় হলে ও খেলাপিদের কাছ থেকে ঋণ আদায় করতে পারলে ব্যাংকটি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। এমন পরিকল্পনা নিয়ে আমরা এগিয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক এটি পছন্দ করছে না। বাংলাদেশ ব্যাংক এ সুযোগ না দিয়ে খেলাপিদের টাকা লুটপাটের সুযোগ করে দিয়েছে। তারা স্বেচ্ছাচারিতা ও অযাচিত হস্তক্ষেপের মাধ্যমে পর্ষদকে না জানিয়ে নিজেরাই ইউসিবি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এসব কারণে চেয়ারম্যানসহ পর্ষদের বে‌শিরভাগ পরিচালক গত বৃহস্পতিবার (২ মে) পদত্যাগ করেছেন।

এদিকে পর্ষদের চেয়ারম্যানসহ বে‌শিরভাগ পরিচালক পদত্যাগ করায় ব্যাংকটি অচল হয়ে পড়েছে। ফলে বাধ্য হয়ে রোববার (৫ মে) বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে খলিলুর রহমানকে নিয়োগ দিয়েছে। পর্ষদে বেশ কয়েকজন পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংকের কর্তৃত্ব নিয়ে সিকদার পরিবারের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। প্রয়াত জয়নুল হক সিকদারের মেয়ে পারভীন হক সিকদার আছেন একদিকে, অন্যদিকে তার দুই ভাই রিক হক সিকদার ও রন হক সিকদার।

ভার্চুয়াল এজিএমে পাতানো ভোটের মাধ্যমে তাকে পর্ষদ থেকে বাদ দেওয়া হতে পারে– এমন শঙ্কায় পারভীন হক সিকদারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ২১ ডিসেম্বর নির্ধারিত বার্ষিক সাধারণ সভার (এজিএম) ওপর স্থিতাবস্থা দেন আদালত।

এর আগে একই শঙ্কা জানিয়ে এজিএম বন্ধের উদ্যোগ নিতে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান বরাবর চিঠি লেখেন তিনি। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই সময় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সুপারিশে বোর্ড ভেঙে নতুন পর্ষদ গঠনের আদেশ জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। যেখানে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান ড. সৈয়দ ফরহাত আনোয়ার। এছাড়া পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম, সাউথইস্ট ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. কামাল হোসেন, খলিলুর রহমান, পারভিন হক সিকদার, শফিকুর রহমান ও মোয়াজ্জেম হোসেন। কিন্তু সাড়ে চার মাস যেতে না যেতেই স্বয়ং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অযাচিত হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলে পদত্যাগ করল ব্যাংকটির পরিচালকরা।

ব্যাংকটির দীর্ঘদিনের চেয়ারম্যান জয়নুল হক সিকদার মারা যান ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে। এরপর থেকে চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন তার স্ত্রী মনোয়ারা সিকদার। তাদের মেয়ে পারভীন হক সিকদার, ছেলে রিক হক সিকদার ও রন হক সিকদার ব্যাংকটির পরিচালক ছিলেন।

৯ সদস্যের পরিচালনা পর্ষদে সিকদার ইন্সুরেন্সের প্রতিনিধি হিসেবে ছিলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. সফিকুর রহমান। সবমিলিয়ে ন্যাশনাল ব্যাংকে সিকদার পরিবারের শেয়ার রয়েছে ১৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ।

ঢাকা/এসএইচ

শেয়ার করুন

x

বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ: ন্যাশনাল ব্যাংক পর্ষদের পদত্যাগ

আপডেট: ১২:৪৮:৩৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ মে ২০২৪

কোনো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত না হয়ে নিজেরাই সবল হতে চায় বেসরকারি ন্যাশনাল ব্যাংক। কিন্তু বাংলাদেশ  ব্যাংক জোর করে তাদের অন্য ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করতে চায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এমন স্বেচ্ছাচারিতা ও অযাচিত হস্তক্ষেপের প্রতিবাদে ন্যাশনাল ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যানসহ পর্ষদের বে‌শিরভাগ সদস্য পদত্যাগ করেছেন।

পদত্যাগ করা একাধিক পরিচালক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

না প্রকাশ না করার শর্তে পদত্যাগ করা এক পরিচালক  জানান, ব্যাংকের পর্ষদে সিদ্ধান্ত হয়েছিল যেকোনো ব্যাংকের সঙ্গে এখন একীভূত না হয়ে আমরা নিজেরাই সবল হব। দেশের বড় বড় গ্রুপ বসুন্ধরা, নাসা, এস আলমসহ অনেক প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তারা প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। তাদের দেওয়া ঋণ আদায় হলে ও খেলাপিদের কাছ থেকে ঋণ আদায় করতে পারলে ব্যাংকটি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। এমন পরিকল্পনা নিয়ে আমরা এগিয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক এটি পছন্দ করছে না। বাংলাদেশ ব্যাংক এ সুযোগ না দিয়ে খেলাপিদের টাকা লুটপাটের সুযোগ করে দিয়েছে। তারা স্বেচ্ছাচারিতা ও অযাচিত হস্তক্ষেপের মাধ্যমে পর্ষদকে না জানিয়ে নিজেরাই ইউসিবি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এসব কারণে চেয়ারম্যানসহ পর্ষদের বে‌শিরভাগ পরিচালক গত বৃহস্পতিবার (২ মে) পদত্যাগ করেছেন।

এদিকে পর্ষদের চেয়ারম্যানসহ বে‌শিরভাগ পরিচালক পদত্যাগ করায় ব্যাংকটি অচল হয়ে পড়েছে। ফলে বাধ্য হয়ে রোববার (৫ মে) বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে খলিলুর রহমানকে নিয়োগ দিয়েছে। পর্ষদে বেশ কয়েকজন পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংকের কর্তৃত্ব নিয়ে সিকদার পরিবারের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। প্রয়াত জয়নুল হক সিকদারের মেয়ে পারভীন হক সিকদার আছেন একদিকে, অন্যদিকে তার দুই ভাই রিক হক সিকদার ও রন হক সিকদার।

ভার্চুয়াল এজিএমে পাতানো ভোটের মাধ্যমে তাকে পর্ষদ থেকে বাদ দেওয়া হতে পারে– এমন শঙ্কায় পারভীন হক সিকদারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ২১ ডিসেম্বর নির্ধারিত বার্ষিক সাধারণ সভার (এজিএম) ওপর স্থিতাবস্থা দেন আদালত।

এর আগে একই শঙ্কা জানিয়ে এজিএম বন্ধের উদ্যোগ নিতে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান বরাবর চিঠি লেখেন তিনি। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই সময় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সুপারিশে বোর্ড ভেঙে নতুন পর্ষদ গঠনের আদেশ জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। যেখানে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান ড. সৈয়দ ফরহাত আনোয়ার। এছাড়া পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম, সাউথইস্ট ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. কামাল হোসেন, খলিলুর রহমান, পারভিন হক সিকদার, শফিকুর রহমান ও মোয়াজ্জেম হোসেন। কিন্তু সাড়ে চার মাস যেতে না যেতেই স্বয়ং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অযাচিত হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলে পদত্যাগ করল ব্যাংকটির পরিচালকরা।

ব্যাংকটির দীর্ঘদিনের চেয়ারম্যান জয়নুল হক সিকদার মারা যান ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে। এরপর থেকে চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন তার স্ত্রী মনোয়ারা সিকদার। তাদের মেয়ে পারভীন হক সিকদার, ছেলে রিক হক সিকদার ও রন হক সিকদার ব্যাংকটির পরিচালক ছিলেন।

৯ সদস্যের পরিচালনা পর্ষদে সিকদার ইন্সুরেন্সের প্রতিনিধি হিসেবে ছিলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. সফিকুর রহমান। সবমিলিয়ে ন্যাশনাল ব্যাংকে সিকদার পরিবারের শেয়ার রয়েছে ১৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ।

ঢাকা/এসএইচ