বাজেটে দরিদ্র্য বিমোচন গুরুত্ব পাবে

- আপডেট: ০৮:০৪:১৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ৮ জুন ২০২২
- / ১০২৯৪ বার দেখা হয়েছে
বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: দরিদ্র্য বিমোচনকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট দিতে যাচ্ছে সরকার। সরকারের প্রেক্ষিত পরিকল্পনা, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ও অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই প্রণীত হচ্ছে বাজেট। সেইসঙ্গে করোনা মহামারি, ইউরোপের যুদ্ধ ও বিশ্ব অর্থনীতির টালমাটাল পরিস্থিতি বিবেচনায়, বাজেটে করের বোঝা না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার ফলে স্বস্তি পাবেন ব্যবসায়ী ও সাধারণ আয়ের মানুষ। জনকণ্ঠকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন স্কোয়াড্রন লীডার (অব.) সাদরুল আহমেদ খান।
অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুক–টুইটার–লিংকডইন–ইন্সটাগ্রাম–ইউটিউব
তিনি বলেন, করোনা-পরবর্তী অবস্থা ও ইউরোপে যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে বিভিন্ন দ্রব্যের দাম বেড়েছে। আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় দেশের বাজারেও অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে। তাই, আসন্ন বাজেটে নিম্নআয়ের মানুষের দুর্ভোগ কমাতে রেকর্ড পরিমাণ ভর্তুকি রাখা হচ্ছে। আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরে মোট ভর্তুকির পরিমাণ দাঁড়াবে ৮৩ হাজার ৮৪৪ কোটি টাকা। তন্মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ১৮ হাজার কোটি টাকা, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) আমদানি মূল্য পরিশোধ ও প্রণোদনা প্যাকেজের সুদ ভর্তুকি বাবদ ১৭ হাজার ৩০০ কোটি, খাদ্য ভর্তুকি ৬ হাজার ৭৪৫ কোটি এবং কৃষি প্রণোদনা বাবদ ১৫ হাজার কোটি টাকা। খাদ্য ভর্তুকি বাবদ মোট ৬ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা লাগতে পারে।
সাদরুল আহমেদ খান বলেন, করোনাভাইরাস সংকট পরবর্তী অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে খাদ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতকে প্রধান্য দিয়ে বাজেট প্রস্তাবনা করা হচ্ছে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই কৃষককে সার, বীজসহ অন্যান্য কৃষি উপকরণে প্রণোদনা অব্যাহত রাখবে সরকার। কৃষি পণ্য উৎপাদন বাড়াতে সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে ৪% সুদে কৃষি ঋণ বিতরণের আদেশ দেয়া হয়েছে ইতোমধ্যেই রাসায়নিক সারের দাম বিশ্বব্যাপী প্রায় ৫৮ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ সারের দাম না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বাজেটে সার প্রণোদনা (ভর্তুকি) ১৫ হাজার কোটি টাকা রাখার পরিকল্পনা করা হয়েছে। বাজেটে খাদ্য নিরাপত্তায় ১৯ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। খাদ্য নিরাপত্তায় ওএমএস, ভিজিডি, ভিজিএফ, কাবিখা, খাদ্য বান্ধব কর্মসূচিও রয়েছে এবং উপকারভোগীর সংখ্যাও বাড়ানো হবে।
তিনি বলেন, ভোজ্য তেল উৎপাদনে আত্মনির্ভরশীল হবার লক্ষে কাজ করছে সরকার। বাংলাদেশে প্রতি বছর ভোজ্যতেলের চাহিদা ২০ লক্ষ টন, চাহিদার ৯০ শতাংশই আমদানি করতে হয়। অথচ রাইস ব্রান ওয়েল বা সরিষা তেলের উৎপাদন বাড়াতে পারলে এ নির্ভরতা ৫০ ভাগ কমিয়ে আনা সম্ভব।
বাজেটে এজন্য বাড়তি উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। তেল জাতীয় শস্যের উৎপাদন বাড়াতে থাকছে বিশেষ উদ্যোগ। এছাড়া ভালো মানের বীজ সরবরাহ এবং মাঠে উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ করে সরিষা, তিল, তিসি, চীনা
সাদরুল আহমেদ খান বলেন, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটান্স অর্থনীতির অন্যতম স্রোতধারা। প্রবাস থেকে রেমিট্যান্স পাঠানো সহজ করতে এবং রেমিট্যান্সের বিপরীতে আকর্ষণীয় প্রণোদনার ঘোষণা আসবে বাজেটে। প্রবাসী রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের সম্মানীত করতে এবং বিদেশে নতুন শ্রম বাজার খোজার ক্ষেত্রে বদ্ধপরিকর সরকার।
কর ও ভ্যাট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমদানী, রপ্তানি, কর ও ভ্যাট প্রদান করতে গিয়ে ব্যবসায়ীরা যেসব সমস্যায় পড়তেন, সেক্ষেত্রেও ব্যবসাবান্ধব কিছু পদক্ষেপ আসছে। ব্যবসা-বাণিজ্য চাঙ্গা করতে কর ও ভ্যাট ছাড় দিয়ে বাজেট ঘোষণা করা হবে। জুয়েলারি ব্যবসা ও রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় ভ্যাট কমানো হবে। অন্যদিকে ফ্রিজ উৎপাদনে ও মোবাইল ফোনের ব্যবসা পর্যায়ে ভ্যাট হার বাড়ানো হতে পারে, এতে বাজারে পণ্য দু’টির দাম বাড়তে পারে।
মেড ইন বাংলাদেশ পণ্যে কর অব্যাহতি থাকতে পারে। অটোমোবাইল, থ্রি হুইলার, ফোর হুইলার, হোম অ্যাপ্লায়েন্স, ও হাল্কা প্রকৌশল শিল্পকে ১০ বছরের কর অব্যাহতি দিতে ভাবছে সরকার। অতিপ্রয়োজনীয় পণ্য, জীবন রক্ষাকারী ওষুধ ও ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্কও মুসক হার কমলেও বাড়বে বিদেশ থেকে আনা গাড়ির, আসবাবপত্র, ফল, ফুল, পানীয় ইলেক্ট্রনিক্সের মতো বিলাসী পণ্যের। স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সব ধরনের দ্রব্যের দাম কমবে। আর সিগারেট, বিড়ি ও জর্দার মতো পণ্যের দাম বাড়বে।
দামি কসমেটিক্স পণ্য আমদানিতে শুল্কহার বাড়লেও কমবে সব ধরনের ভোগ্যপণ্য বিশেষ করে চাল, ডাল, পেঁয়াজ ইত্যাদির। এছাড়া ব্যবসায়ীরা নতুন বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে ভূমিকা রাখতে পারলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর ও ভ্যাট ছাড় পাবেন। ক্ষুদ্র ও মাঝারি নারী উদ্যোক্তাদের বার্ষিক লেনদেনেও কর ছাড় আসছে। আমদানি পর্যায়ে আগাম আয়কর (এআইটি) হার কমানোর বিষয়টিও বিবেচনায় থাকছে। আমদানি পর্যায়ে আগাম কর (এটি) ও ভ্যাট কমলে ব্যবসায়ীদের কাছে নগদ অর্থের পরিমাণ বাড়বে।
রপ্তানি বাণিজ্যে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে সক্ষমতার নতুন মাইল ফলক অর্জন করেছে। এ ধারা অব্যাহত রাখতে থাকছে আকর্ষণীয় প্রণোদনা। আয়কর ও ভ্যাট রিটার্ন জমা না দিলে জরিমানার পরিমাণ কমবে। বর্তমানে করদাতা রিটার্ন জমা না দিলে বিলম্ব ফি হিসেবে ২ শতাংশ হারে সরল সুদে জরিমানা করা হয়। এটি কমিয়ে ১ শতাংশ করা হতে পারে। এছাড়া বর্তমানে কোনো প্রতিষ্ঠান প্রতি মাসে ভ্যাট রিটার্ন না দিলে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করার বিধান রয়েছে। আগামী বাজেটে এই জরিমানা পাঁচ হাজার টাকায় নামিয়ে আনা হতে পারে।
বাজেট বাস্তবায়নে প্রসঙ্গে সাদরুল আহমেদ খান বলেন, গত দুবছর করোনা মহামারি সত্ত্বেও রেকর্ড তৈরির বাজেট প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করে সারা বিশ্বকে অবাক করে দিয়েছে বাংলাদেশ। বিগত করোনাকালীন সময়ে বিশাল সংখ্যক জনগোষ্ঠীকে বিনামূল্যে করোনা টিকার কার্যক্রমের আওতায় আনা হয়েছে, যা এখনো চলমান। মেগা প্রকল্পগুলোর কাজ চলেছে পুরোদমে, পদ্মা সেতুর মতো স্বপ্নের প্রকল্পের সমাপ্তি। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মেট্রোরেল, কর্ণফুলি টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ বড় বড় প্রকল্পেগুলোর আশানুরূপ বাস্তবায়নের সক্ষমতায় সরকার এখন অন্য যেকোনো সময়ের চাইতে বেশি আত্মবিশাসী। আর এটা সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে পরিশ্রমী বীর বাঙালি জাতির অক্লান্ত ঘাম আর জননেত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ হাতে দেশ পরিচালনায়।
বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আগামী ৯ জুনের বাজেট দেশবাসীর জন্য নিয়ে আসছে একগুচ্ছ সুখবর। আর সে সুখবর কাছে পেতে আগামীকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
ঢাকা/এসএ