ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করবে আমরা তার গ্রাউন্ড তৈরি করে দিবো: বিডা নির্বাহী চেয়ারম্যান

- আপডেট: ০৫:৩৬:২৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫
- / ১০৩৭৫ বার দেখা হয়েছে
বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথোরিটির (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেছেন, আগামী ৬ মাস থেকে ১ বছরের মাঝে দেখবেন সরকারকে আমরা ধীরে ধীরে অনেক ব্যবসা থেকে সরিয়ে আনবো। সরকারের ব্যবসা করার দরকার নেই। ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করবে আমরা তার গ্রাউন্ড তৈরি করে দিবো।
অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুক–টুইটার–লিংকডইন–ইন্সটাগ্রাম–ইউটিউব
তিনি বলেন, আমরা বড় কনজ্যুমারের কাছে এই সম্পত্তিগুলো হস্তান্তর করবো, তারা তাদের মতো করে ব্যবসা করবে। সেক্ষেত্রে আমাদের নতুন করে ইকোনমিক জোন না করে সেই যায়গাগুলোকেই ইকনোমিক জোন হিসেবে কাজে লাগানো একটি বিকল্প সমাধান হিসেবে কাজ করবে।
বুধবার (১৫ জানুয়ারি) অর্থ ও বাণিজ্যবিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত ‘বিনিয়োগের সম্ভাবনা এবং চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বেসরকারি খাতে সরকারের সম্পৃক্ততা প্রসঙ্গে আশিক চৌধুরী বলেন, বিভিন্ন উন্নত দেশে দেখা যায় সরকার মূলত জাতীয় কিংবা জাতীয় নিরাপত্তাজনিত স্বার্থ আছে এমন সংস্থায় সম্পৃক্ত হয়। বাংলাদেশ সরকারের এমন অনেক ব্যবসায় মালিকানা বা পার্টনারশিপ আছে যেখানে আসলে থাকার দরকার নেই। আমরা মনে করি যে সেক্টরে সরকারের সম্পৃক্ততার দরকার নেই সেখান থেকে সরকারের বের হয়ে আসা উচিৎ।
তিনি বলেন, বিডায় আমাদের জার্নিটাকে আমরা তিন ভাগে ভাগ করেছি। প্রথম ভাগে সমস্যাগুলো সনাক্ত করেছি। বিডার লিস্টেড ইনভেস্টরদের থেকে আমরা হাজার এর বেশি সমস্যার তথ্য পেয়েছি। তবে একসাথে এতো সমস্যা নিয়ে কাজ করা কঠিন তাই দ্বিতীয় ভাগে আমার কোন কোন সেক্টরে প্লে করবো সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তাই আমরা সমস্যাগুলোকে শর্ট করে ২১ টা আইটেম বানিয়েছি। আর তিন নম্বর ধাপে আমাদের ভবিষ্যত কল্পনা কি হতে পারে তা নিয়ে আমরা পরিকল্পনা করেছি।
আরও পড়ুন: ব্যাংকে বিকল্প পরিচালক নিয়োগে প্রজ্ঞাপন, লাগবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন
গ্যাস-বিদ্যুৎ সরবরাহ ঘাটতি প্রসঙ্গে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, বেজাতে আমরা বলেছি যে গ্যাস-বিদ্যুৎ সরবরাহ ঘাটতি আমাদের শিল্প কারখানাগুলোতে একটি বড় ইস্যু। এই ঘাটতির বড় একটি কারণ বিগত সরকারের গোলপোস্ট বা লক্ষ্য ভুল ছিলো। ১০০ ইকোনমিক জোন তৈরির উদ্যোগটি মোটেও সময়োপযোগী নয়। আমরা এখন সরকার থেকে ৫ টি ইকনোমিক জোনে ফোকাস করবো।
আশিক চৌধুরি বলেন, আমাদের এখনো অনেক দূর যাওয়ার আছে। দেশে এতে চ্যালেঞ্জ থাকার পরেও যারা এখনও ব্যবসা করছেন তাদেরকে ধন্যবাদ দেওয়া উচিৎ৷ এ বছর আমরা একটা ইনভেস্টমেন্ট সামিট করতে যাচ্ছি এপ্রিলের ৭ থেকে ১০ এপ্রিল আমাদের এই সামিট অনুষ্ঠিত হবে। সামিটের প্রথম ধাপে আমরা ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন লোকেশন ভিজিট করাবো। আর দ্বিতীয় ধাপে আমরা ঢাকায় সামিটের আনুষ্ঠানিকতা করবো। আমরা এবার খুব বড় বড় কিছু বিদেশী ইনভেস্টদের দেশে ইনভাইট করছি। উনারা দেশে আসুক এসে বাংলাদেশের বাস্তবিক অবস্থা দেখুক, তারপর বিনিয়োগ করুক।
ইআরএফ সভাপতি দৌলত আকতার মালার সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এ সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন, হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ কে আজাদ, লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইকবাল চৌধুরী, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সাবেক প্রেসিডেন্ট আবুল কাসেম খান, বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) প্রশাসক, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের সদস্য ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. হাফিজুর রহমা্ন এবং বিডার বিজনেস ডেভেলপমেন্ট প্রধান নাহিয়ান রহমান রোচি।
এসময় হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ কে আজাদ বলেছেন, তরুণরা দেখিয়ে দিয়েছে, পরিবর্তন সম্ভব। দেশ পরিবর্তন হতে হবেই। তবে এতে সময় দরকার। বর্তমান নেওয়া নীতিগুলো বাস্তবায়ন হলে দেশের চিত্র পাল্টে যাবে।
তিনি বলেন, নীতি নির্ধারকরা সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে প্রোডাক্ট কস্ট এনালাইসিস করা দরকার। কাচা মালের আমদানি করতে পারছি না আমরা। ব্যবসায়ী হওয়া মানে আমি একজন অপরাধী। সবাই চুষে খায়। নতুন কোনো বিনিয়োগ হচ্ছে না। সমস্ত সরকারের ক্যারেক্টার এক।
লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইকবাল চৌধুরী বলেন, আমার কাছে রোড শো কখনই ইফেক্টিভ মনে হতো না৷ বাহিরের দেশে অনেক রোড শো করেছি। আমরা যতোই বাহিরের দেশে গিয়ে বলিনা কেন। আমি যদি কাস্টমারকে ভালো ফিডব্যাক দিতে না পারি তাহলে কোন লাভ নেই।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সাবেক প্রেসিডেন্ট আবুল কাসেম খান বলেন, সাপ্লাই চেইন ম্যাকনিজমে আমরা অনেক দূর্বল। আমি একজন বাংলাদেশী হিসেবে আমি লিমিটেড ইনভেস্টমেন্টের সুযোগ পাচ্ছি। ফরেন একচেঞ্জ ইনভেস্টমেন্টের লিমিটেশনস আছে৷ সনি, টয়েটা, মিতসুবিশি দিয়ে সবাই জাপানকে চেনে, আমাদের কে কিভাবে চেনে? এমন কোন ব্র্যান্ড কি আছে আমাদের যার মাধ্যমে পুরো পৃথিবী আমাদের চেনে?
তিনি বলেন, আমাদের পলসি মেকাররা ফরেন এক্সচেঞ্জের বিষয়ে ন্যারো মাইন্ডেড। তারা মনে করেন সব ব্যবসায়ীরা দেশ ছেড়ে চলে যাবে টাকা নিয়ে। যারা যাবার তারা চলে গেছেন, আমরা কিন্তু রয়ে গেছি। আমরা যাচ্ছিনা কোথাও।
বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) প্রশাসক, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের সদস্য ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. হাফিজুর রহমা্ন বলেন, নতুন উদ্যোগক্তাদের মাঝে অস্থিরতা কাজ করছে। ইনভেস্ট করবো কি করবোনা। তাদেরকে সেই অনিশ্চয়তা থেকে বের করে সেই পরিবেশ দিতে হবে যেন তারা বিনিয়োগে আগ্রহী হয়।
তিনি বলেন, নতুন উদ্যোক্তারা যদি কেউ ব্যবসা শুরু করতে চায় তার জন্য ইনস্যুরেন্স নেই। ফেইল করলে আর আর উঠে দাড়াবোর সুযোগ নেই। অথচ ফেইল করেই তারা শিক্ষালাভ করে। অভিজ্ঞতা বাড়ে। কিন্তু তারা একবার ফেইল করলে আর তাদের উঠে দাড়াবার সুযোগ দেয়া হচ্ছেনা।
তিনি বলেন, নতুন্দের জন্য টেক্স ভিতিকর এক অবস্থা। আমাদের উচিৎ তাদের জন্য বিষয়টি একটু রিলাক্স করা যায় কিনা তা নিয়ে ভাবা। নতুন ও ছোট ব্যাবসা করার জন্য নতুনদের সুইটেবল পরিবেশ দেওয়া দরকার।
ঢাকা/এসএইচ