১০:৪২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২২ মে ২০২৪

মহাসড়কের জমি বন্ধক রেখে ১৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০১:০৬:১১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ এপ্রিল ২০২২
  • / ৪১২৬ বার দেখা হয়েছে

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: মহাসড়কের জমি কেনাবেচা এবং সেই জমি ব্যাংকে বন্ধক রেখে ১৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। গ্রেপ্তার ব্যক্তি একটি হত্যাচেষ্টা মামলারও প্রধান আসামি। গ্রেপ্তার ব্যক্তির নাম মো. গোলাম ফারুক। গতকাল শুক্রবার (১৫ এপ্রিল) রাজধানীর উত্তরা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় তাঁকে।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এই তথ্য জানায়।

খন্দকার আল মঈন বলেন, নানা ধরনের প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ নিয়ে তদন্তে র‌্যাব জানতে পেরেছে, জালিয়াতির মাধ্যমে রাজধানীর উত্তরার আজমপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের একাংশের জমির মালিক হন গোলাম ফারুক। পরে ওই জমি বন্ধক রেখে বেসরকারি একটি ব্যাংক থেকে নেন ১৫ কোটি টাকার ঋণ। ঋণ পরিশোধ না করায় মহাসড়কের ওই অংশের জমি নিলামে তোলে ব্যাংক।

আল মঈন জানান, উত্তরার আজমপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ওই অংশের জমি অধিগ্রহণ করা হয় ১৯৪৮ সালে। ২০০৬ সালে ওই জমির ভুয়া দলিল তৈরি করেন গোলাম ফারুক। ২০১০ সালে ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে ওই জমি নিজের স্ত্রীর নামে কিনে আরেকটি ভুয়া দলিল তৈরি করেন গোলাম ফারুক। ওই বছরই স্ত্রীর কাছ থেকে জমিটি নিজের নামে করে নেন গোলাম ফারুক। মূলত ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করতেই গোলাম ফারুক জালিয়াতি করেন।

র‌্যাব বলছে, ওই জমি সরকারি সংস্থা সড়ক ও জনপথ বিভাগের। গোলাম ফারুককে জালিয়াতির মাধ্যমে জমি নিবন্ধন করতে সহযোগিতা করেন সাবরেজিস্ট্রি অফিস ও ভূমি অফিসের অসাধু কর্মকর্তারা।

র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, ঋণ পরিশোধ না করায় ২০১৩ সালে ব্যাংক ওই জমি নিলামে বিক্রির নোটিশ জারি করে। কিন্তু সরেজমিনে গিয়ে ব্যাংক দেখতে পায়, ওই জমি সড়ক ও জনপথের। তখন গোলাম ফারুক আবারও জালিয়াতি করে বন্ধক রাখা জমির দাগ নম্বর পরিবর্তন করে পাশের ব্যক্তিমালিকানাধীন জমির দাগ নম্বর উল্লেখ করে সংশোধন দলিল করেন। ব্যাংক সেই জমিতে বন্ধকি সম্পত্তির সাইনবোর্ড স্থাপন করতে গেলে জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়ে।

তদন্তে র‌্যাব জানতে পেরেছে, সরকারি জমি বন্ধক রেখে একটি ব্যাংকের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে দুই দফায় এই ঋণ দেওয়া হয়। তবে সেটি ধরা পড়ার পর আবার সংশোধন দলিল করেন। এবার আগের বন্ধককৃত জমির দাগ নম্বর পরিবর্তন করে ব্যাংকে জমা দেন। সংশোধিত দলিলের জমিতে বন্ধকি সম্পত্তির সাইনবোর্ড স্থাপনের চেষ্টা করলে ব্যাংক জানতে পারে সেটিও ভুয়া। গাড়ির ব্যবসা করতে গিয়ে প্রতারণা শুরু।

গোলাম ফারুক র‌্যাবকে জানান, তিনি ২০০০ সাল থেকে গাড়ি আমদানিকারক হিসেবে ব্যবসা শুরু করেন। ওই বছর একটি বেসরকারি ব্যাংকে কোনো বন্ধকি সম্পত্তি ব্যতীত এলসি আবেদন করে গাড়ি আমদানি শুরু করেন। বিদেশি ব্যাংকের টাকা পরিশোধের বাধ্যবাধকতা থাকায় বেসরকারি ব্যাংকটি আমদানি করা গাড়ি বিক্রি করে অর্থ পরিশোধ করার শর্তে তাঁকে সাত কোটি টাকা ডিমান্ড লোন দেয়। কিন্তু ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ না করায় ব্যাংক তাঁকে সম্পত্তি বন্ধক দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করলে তিনি সরকারি জমিকে ব্যক্তি নামে নিবন্ধন করার পরিকল্পনা করেন।

তিনি বলেন, ১৯৪৮ সালে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উত্তরার আজমপুর অংশের অধিগ্রহণ হওয়ার আগের জমির মালিকের ছেলেকে খুঁজে বের করেন তিনি। জালিয়াতির সাহায্যে তিনি ২০০৬ সালে মিথ্যা তথ্য দিয়ে একটি ভুয়া দলিল তৈরি করেন। পরে ওই দলিলমূলে তাঁর স্ত্রীর নামে ২০১০ সালে মাত্র ৩০ হাজার টাকায় জমি কিনে আরেকটি দলিল তৈরি করেন।

ঢাকা/এসএ

শেয়ার করুন

x

মহাসড়কের জমি বন্ধক রেখে ১৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ

আপডেট: ০১:০৬:১১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ এপ্রিল ২০২২

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: মহাসড়কের জমি কেনাবেচা এবং সেই জমি ব্যাংকে বন্ধক রেখে ১৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। গ্রেপ্তার ব্যক্তি একটি হত্যাচেষ্টা মামলারও প্রধান আসামি। গ্রেপ্তার ব্যক্তির নাম মো. গোলাম ফারুক। গতকাল শুক্রবার (১৫ এপ্রিল) রাজধানীর উত্তরা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় তাঁকে।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এই তথ্য জানায়।

খন্দকার আল মঈন বলেন, নানা ধরনের প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ নিয়ে তদন্তে র‌্যাব জানতে পেরেছে, জালিয়াতির মাধ্যমে রাজধানীর উত্তরার আজমপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের একাংশের জমির মালিক হন গোলাম ফারুক। পরে ওই জমি বন্ধক রেখে বেসরকারি একটি ব্যাংক থেকে নেন ১৫ কোটি টাকার ঋণ। ঋণ পরিশোধ না করায় মহাসড়কের ওই অংশের জমি নিলামে তোলে ব্যাংক।

আল মঈন জানান, উত্তরার আজমপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ওই অংশের জমি অধিগ্রহণ করা হয় ১৯৪৮ সালে। ২০০৬ সালে ওই জমির ভুয়া দলিল তৈরি করেন গোলাম ফারুক। ২০১০ সালে ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে ওই জমি নিজের স্ত্রীর নামে কিনে আরেকটি ভুয়া দলিল তৈরি করেন গোলাম ফারুক। ওই বছরই স্ত্রীর কাছ থেকে জমিটি নিজের নামে করে নেন গোলাম ফারুক। মূলত ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করতেই গোলাম ফারুক জালিয়াতি করেন।

র‌্যাব বলছে, ওই জমি সরকারি সংস্থা সড়ক ও জনপথ বিভাগের। গোলাম ফারুককে জালিয়াতির মাধ্যমে জমি নিবন্ধন করতে সহযোগিতা করেন সাবরেজিস্ট্রি অফিস ও ভূমি অফিসের অসাধু কর্মকর্তারা।

র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, ঋণ পরিশোধ না করায় ২০১৩ সালে ব্যাংক ওই জমি নিলামে বিক্রির নোটিশ জারি করে। কিন্তু সরেজমিনে গিয়ে ব্যাংক দেখতে পায়, ওই জমি সড়ক ও জনপথের। তখন গোলাম ফারুক আবারও জালিয়াতি করে বন্ধক রাখা জমির দাগ নম্বর পরিবর্তন করে পাশের ব্যক্তিমালিকানাধীন জমির দাগ নম্বর উল্লেখ করে সংশোধন দলিল করেন। ব্যাংক সেই জমিতে বন্ধকি সম্পত্তির সাইনবোর্ড স্থাপন করতে গেলে জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়ে।

তদন্তে র‌্যাব জানতে পেরেছে, সরকারি জমি বন্ধক রেখে একটি ব্যাংকের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে দুই দফায় এই ঋণ দেওয়া হয়। তবে সেটি ধরা পড়ার পর আবার সংশোধন দলিল করেন। এবার আগের বন্ধককৃত জমির দাগ নম্বর পরিবর্তন করে ব্যাংকে জমা দেন। সংশোধিত দলিলের জমিতে বন্ধকি সম্পত্তির সাইনবোর্ড স্থাপনের চেষ্টা করলে ব্যাংক জানতে পারে সেটিও ভুয়া। গাড়ির ব্যবসা করতে গিয়ে প্রতারণা শুরু।

গোলাম ফারুক র‌্যাবকে জানান, তিনি ২০০০ সাল থেকে গাড়ি আমদানিকারক হিসেবে ব্যবসা শুরু করেন। ওই বছর একটি বেসরকারি ব্যাংকে কোনো বন্ধকি সম্পত্তি ব্যতীত এলসি আবেদন করে গাড়ি আমদানি শুরু করেন। বিদেশি ব্যাংকের টাকা পরিশোধের বাধ্যবাধকতা থাকায় বেসরকারি ব্যাংকটি আমদানি করা গাড়ি বিক্রি করে অর্থ পরিশোধ করার শর্তে তাঁকে সাত কোটি টাকা ডিমান্ড লোন দেয়। কিন্তু ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ না করায় ব্যাংক তাঁকে সম্পত্তি বন্ধক দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করলে তিনি সরকারি জমিকে ব্যক্তি নামে নিবন্ধন করার পরিকল্পনা করেন।

তিনি বলেন, ১৯৪৮ সালে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উত্তরার আজমপুর অংশের অধিগ্রহণ হওয়ার আগের জমির মালিকের ছেলেকে খুঁজে বের করেন তিনি। জালিয়াতির সাহায্যে তিনি ২০০৬ সালে মিথ্যা তথ্য দিয়ে একটি ভুয়া দলিল তৈরি করেন। পরে ওই দলিলমূলে তাঁর স্ত্রীর নামে ২০১০ সালে মাত্র ৩০ হাজার টাকায় জমি কিনে আরেকটি দলিল তৈরি করেন।

ঢাকা/এসএ