মার্জিন ঋণ নীতিমালা চূড়ান্ত হলে পুঁজিবাজারে বড় ধস নেমে আসতে পারে: বিসিএমআইএ

- আপডেট: ১০:৫৩:২৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ অগাস্ট ২০২৫
- / ১০২৩৭ বার দেখা হয়েছে
মার্জিন ঋণ-সংক্রান্ত প্রস্তাবিত খসড়ার মাধ্যমে পুঁজিবাজারে একটা ধুম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। এর কারনে বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। খসড়া মার্জিন ঋণ নীতিমালা চূড়ান্ত হলে পুঁজিবাজারে বড় ধরনের ধস নেমে আসতে পারে। তাই খসড়া নীতিমালা প্রত্যাহার করে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থসংরক্ষন করে বিদ্যমান নীতিমালা আধুনিকায়নের দাবি জানিয়েছেন পুঁজিবাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।
গতকাল সোমবার (২৫ আগস্ট) ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরামের (সিএমজেএফ) অডিটরিয়ামে খসড়া মার্জিন বিধিমালার উপরে বিনিয়োগকারীদের মতামত ও সুপারিশ তুলে ধরেন বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট ইনভেস্টর অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএমআইএ) নেতারা।
অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুক–টুইটার–লিংকডইন–ইন্সটাগ্রাম–ইউটিউব
এসময় খসড়া আইনে পি/ই অনুপাতের সীমা সংক্রান্ত বিধির সীমাবদ্ধতা তুলে ধরে তাঁরা বলেন, পি/ই অনুপাতের সীমা ইতোমধ্যেই ৪০ থেকে কমিয়ে ৩০ করা হয়েছে, যা ঝুঁকি হ্রাস করেছে। কিন্তু লোকসানী বা অনিয়মিত কোম্পানির কারণে সেক্টরের পি/ই অনুপাত বিকৃত হয়, ফলে ভাল মৌল ভিত্তির লার্জ ক্যাপ শেয়ারের জন্য এটি অন্যায্য হয়ে দাঁড়ায়। ব্যাংক খাতের মতো খুব কম পি/ই যুক্ত সেক্টরে মার্জিন নিয়ম অত্যধিক কঠোর হয়ে যায়। আবার, প্রবৃদ্ধিশীল কোম্পানিগুলো, যারা তাদের সেক্টরকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে, তাদের ক্ষেত্রেও এই সীমা ভুল বিচার তৈরি করছে।
ক্যাটাগরি পরিবর্তন বিষয়ে খসড়া বিধিমালায় বলা হয়, যদি কোনো মার্জিন অ্যাকাউন্টের ‘এ‘ এবং ’এন’ ক্যাটাগরির শেয়ার পরবর্তীতে ’বি’ এবং ’জেড’ ক্যাটাগরিতে নেমে যায়, তাহলে ৫ কার্যদিবসের দিবসের মধ্যে বিক্রি (ফোর্সড সেল) করতে হবে অথবা অ্যাকাউন্টকে ক্যাশ অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করতে হবে।
বিনিয়োগকারীর পক্ষ থেকে বলা হয়, পাঁচ দিনের মধ্যে জোরপূর্বক বিক্রি করতে বাধ্য করলে বাজারে প্রচণ্ড বিক্রয় চাপ সৃষ্টি হতে পারে এবং একযোগে বিক্রি শুরু হলে ট্রেডিং স্থগিত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। এ ধরনের বিশৃঙ্খলা এড়াতে ন্যূনতম তিন মাসের একটি সমন্বয়কাল রাখার সুপারিশ করেন তাঁরা।
ঋণ-মালিকানা সত্ত্ব (লোন টু ইকুইটি) অনুপাত বিষয়ে খসড়া বিধিমালায় তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর সম্মিলিত চলতি বাজার মূলধন (মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন) যদি পরিশোধিত মূলধনের ৭.০ গুণ বা তার বেশি হয়, তবে সর্বোচ্চ ঋণ-মালিকানা সত্ত্ব অনুপাত ১০০.৫ এ সীমিত থাকবে বলে উল্লেখ করা হয়।
এই বিধানের বিষয়ে তাঁরা বলেন, বাজারের সুচক একটা সীমিত গণ্ডিতে আবদ্ধ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে, যা তারল্য সংকট তৈরি করতে পারে। তাছাড়া বাজার মধ্যস্থতাকারীরা ইতোমধ্যেই অভ্যন্তরীণ ঝুঁকি-ভিত্তিক মার্কিন নীতি অনুসরণ করে, যা সাধারণত পৃথক শেয়ারের অস্বাভাবিক মূল্য পরিবর্তনের সাথে কাজ করে।
অর্থায়নকারী সীমাবদ্ধতা বিষয়ে খসড়া নিয়মে বলা হয়, কোনো বাজার মধ্যস্থতাকারী তার নিজস্ব নিট সম্পদ বা মূল মূলধনের ৩.০ গুণের বেশি ঋণ দিতে পারবে না।
আরও পড়ুন: সূচকের উত্থানে লেনদেন ছাড়ালো ১১৭৭ কোটি টাকা
বিসিএমআইএ নেতারা বলছেন, অধিকাংশ ক্যাপিটাল মার্কেট মধ্যস্থতাকারী ইতোমধ্যেই লোকসান, প্রভিশনিং এবং নেগেটিভ ইকুইটির কারণে দুর্বল অবস্থায় রয়েছে। তাদের বর্তমান নিট মূলধনের ভিত্তিতে ঋণ সীমাবদ্ধ করলে পুরো বাজারের মার্জিন লোন প্রদানের সক্ষমতা আরও সংকুচিত হবে।
সংগঠনটির নেতারা বলেন, বিনিয়োগকারীদের সম্মতি ব্যতীত কোন কোম্পানিকে ডিলিস্টেড করা যাবে না। বরং কোম্পানি চালু করে কর্মসংস্থা সৃষ্টি করার পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে ব্যাপক অবদান রাখতে পারে।
সেইসাথে তাঁরা দাবি জানান, বর্তমান মিউচুয়াল ফান্ডের সম্পদ ব্যবস্থাপকেরা দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে যেসব শেয়ারে বিনিয়োগ করেছেন, তার ফলে বিনিয়োগকারীরা যে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন, তার দায় সম্পদ ব্যবস্থাপকদের নিতে হবে এবং তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে হবে। কোন মিউচুয়াল ফান্ড লিক্যুইডেশন গেলে সর্বোচ্চ তিন মাসের মধ্যে বিনিয়োগকৃত টাকা বিনিয়োগকারীদের ফেরত দিতে হবে।
এছাড়াও কোন কোম্পানীর ফিন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্টে কোন ভুল তথ্য (ইপিএস, ন্যাভ, অপারেটিং ক্যাশফ্লো) প্রদান করে এবং সেটি যদি সন্দেহজনক মনে হয় ও বিনিয়োগকারীরা যদি আপত্তি প্রদান করে, তাহলেএ অডিট রিপোর্ট ফরেনসিক অডিটের আওতায় আনতে হবে।
এসএমই মার্কেটের ক্ষেত্রে ত্রিশ লাখ টাকা বিনিয়োগের বৈষম্য দূর করার দাবি জানান তাঁরা। এক্ষেত্রে মূল মার্কেটের মতো লেনদেন রাখার দাবিও জানিয়েছেন তাঁরা। পাশাপাশি এসএমই মার্কেটের কোম্পানীগুলো বিধান অনুযায়ী লোনের যোগ্য হলে লোন প্রদানের দাবি জানানো হয় সংগঠনটির পক্ষ থেকে।
ঢাকা/এসএইচ