০৪:২১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪

বিনিয়োগোপযোগী সত্ত্বেও বাড়ছে না মৌলভিত্তি ও বড় মূলধনীর শেয়ার দর

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০১:১৭:২৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৫ জুলাই ২০২১
  • / ৪৫৯৬ বার দেখা হয়েছে

ফাইল ফটো

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: বিনিয়োগ উপযোগী হওয়া সত্বেও মৌলভিত্তির এবং বড় মূলধনী কোম্পানিতে বিনিয়োগকারীদের তেমন কোন আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। পরিণতিতে এসব কোম্পানির শেয়ার দর তেমন একটা বাড়েনি। আর শেয়ার দর না বাড়ার কারণে কোম্পানির শেয়ারের পিই রেশিওতে তেমন কোন প্রভাব পড়েনি।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে বিনিয়োগ কতটা নিরাপদ, তা পরিমাপের অন্যতম নির্দেশক মূল্য-আয় অনুপাত বা পিই রেশিও। কোনো কোম্পানির পিই রেশিও বেশি হলে সেটিতে বিনিয়োগে ঝুঁকিও বেশি। অন্যদিকে পিই রেশিও যত কম, বিনিয়োগ তত নিরাপদ। গত বছরের ২৫ মার্চ থেকে এ বছরের জুন পর্যন্ত পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর খাতভিত্তিক পিই রেশিও পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এ সময়ে মৌলভিত্তির ও তুলনামূলক বড় মূলধনি কোম্পানিগুলোর পিই রেশিও বেড়েছে কম। এর বিপরীতে স্বল্প মূলধনি কোম্পানিগুলোর পিই রেশিও বেড়েছে অনেক গুণ।

পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, ঝুঁকি এড়িয়ে পুঁজিবাজার থেকে মুনাফা করতে হলে বিনিয়োগকারীদের মন্দ ও ভালো শেয়ার বাছাই করার সক্ষমতা অর্জন করতে হবে।

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, গত বছরের ৮ মার্চ দেশে কভিড-১৯-এর সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির কারণে ২৬ মার্চ থেকে ৬৬ দিন পুঁজিবাজারে লেনদেন বন্ধ ছিল। সে সময় ২৫ মার্চ সর্বশেষ লেনদেন হয়েছিল পুঁজিবাজারে। গত বছরের ২৫ মার্চ পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর খাতভিত্তিক পিই রেশিওর সঙ্গে এ বছরের ৩০ জুন শেষে খাতভিত্তিক পিই রেশিওর তুলনামূলক পর্যালোচনা করা হয়েছে। এতে দেখা যায়, এ সময়ে সবচেয়ে বেশি পিই রেশিও বেড়েছে দেশের রফতানি আয়ের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উৎস পাট খাতের। গত বছরের ২৫ মার্চ শেষে খাতটির পিই রেশিও ছিল ৩৫ দশমিক ৬, যা এ বছরের জুন শেষে ৭৩১ দশমিক ৪-এ দাঁড়িয়েছে। মূলত এ খাতের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর আয় কমে যাওয়ার কারণে পিই রেশিও বেড়েছে।

দেশের সবচেয়ে বেশি রফতানি আয়ের তালিকায় তৃতীয় স্থানে থাকা চামড়া খাতের পিই রেশিও এ বছরের ৩০ জুন শেষে ৭৫ দশমিক ২-এ দাঁড়িয়েছে, গত বছরের ২৫ মার্চ যা ছিল ১৯ দশমিক ৮। খাতভুক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর বৃদ্ধির প্রভাবে পিই রেশিও বেড়েছে।

কভিডের কারণে ভ্রমণ ও অবকাশ খাতের কোম্পানিগুলোর ব্যবসায় সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে। গত বছরের ২৫ মার্চ খাতটির পিই রেশিও ছিল ২৩, যা এ বছরের জুন শেষে বেড়ে ৭৫ দশমিক ৬-এ দাঁড়িয়েছে। এ খাতের কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর কমলেও আয় বেড়ে যাওয়ায় পিই রেশিও বেড়েছে।

দেশের রফতানি আয়ের মূল খাত বস্ত্র ও তৈরি পোশাক। কভিডের কারণে এ খাতের ব্যবসায় বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে। যদিও পুঁজিবাজারে খাতটির পিই রেশিও বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। গত বছরের ২৫ মার্চ বস্ত্র খাতের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর পিই রেশিও ৯ দশমিক ৭, যা এ বছরের জুন শেষে বেড়ে ২৩ দশমিক ৮-এ দাঁড়িয়েছে। এ খাতের কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর বৃদ্ধির কারণে পিই রেশিও বেড়েছে।

গত বছর থেকেই পুঁজিবাজারের আলোচিত খাত সাধারণ বীমা। এ খাতের কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর বেড়েছে লাগামহীনভাবে। গত বছরের ২৫ মার্চ সাধারণী বীমা খাতের কোম্পানিগুলোর পিই রেশিও ছিল ১০ দশমিক ৮, যা এ বছরের জুন শেষে ২৩ দশমিক ৭-এ দাঁড়িয়েছে।

সেবা ও আবাসন খাতের পিই রেশিও গত বছরের ২৫ মার্চ ছিল ১১, যা দ্বিগুণ বেড়ে এ বছরের জুন শেষে ২২-এ দাঁড়িয়েছে। এ খাতেও শেয়ারদর বাড়ার প্রভাবে পিই রেশিও বেড়েছে।

গত বছরের ২৫ মার্চ টেলিযোগাযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি, কাগজ ও মুদ্রণ, প্রকৌশল, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ওষুধ ও রসায়ন, সিরামিকস, খাদ্য ও আনুষঙ্গিক, ব্যাংক, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ এবং বিবিধ খাতের পিই রেশিও ছিল যথাক্রমে ৯ দশমিক ৫, ১৬ দশমিক ২, ৩০ দশমিক ৩, ১৫, ১৯ দশমিক ২, ১৪ দশমিক ৩, ২১ দশমিক ৪, ১৭, ৬ দশমিক ৯, ৯ দশমিক ৯ ও ১৯ দশমিক ৮। আর এ বছরের জুন শেষে এ খাতগুলোর পিই রেশিও বেড়ে দাঁড়িয়েছে টেলিযোগাযোগ ১৮ দশমিক ৮, তথ্যপ্রযুক্তি ২৫ দশমিক ৩, কাগজ ও মুদ্রণ ৪৬ দশমিক ৩, প্রকৌশল ২১ দশমিক ৩, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ২৪ দশমিক ৬, ওষুধ ও রসায়ন ১৮ দশমিক ১, সিরামিকস ২৬ দশমিক ৯, খাদ্য ও আনুষঙ্গিক ২১, ব্যাংক ৮ দশমিক ২, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ ১১ দশমিক ৬ এবং বিবিধ ২২। এ খাতভুক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে পিই রেশিওর ক্ষেত্রে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, আমাদের দেশে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে মূলধনি মুনাফা অর্জনের প্রবণতা বেশি। এ কারণে তারা দীর্ঘমেয়াদে কোম্পানিতে বিনিয়োগ ধরে রাখার পরিবর্তে স্বল্পমেয়াদে লেনদেন করে মুনাফা করতে চায়। এক্ষেত্রে স্বল্প মূলধনি কোম্পানিগুলো বিনিয়োগকারীদের চাহিদার শীর্ষে থাকে, যার প্রতিফলন আমরা খাতভিত্তিক পিই রেশিও থেকে দেখতে পাই। যেমন যেসব খাতে স্বল্প মূলধনি কোম্পানির আধিক্য রয়েছে, সেসব খাতের পিই রেশিও বেশি বেড়েছে। অন্যদিকে মৌলভিত্তির বড় কোম্পানিগুলোর শেয়ার সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণে এগুলো শেয়ার কেনার চাপ বাড়লেও ছোট কোম্পানির মতো এত বেশি শেয়ারদর বাড়ে না। এ কোম্পানিগুলো আকর্ষণীয় হারে লভ্যাংশ দেয়। ফলে দীর্ঘমেয়াদে এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ ধরে রাখলে বিনিয়োগকারীরা মূলধনি মুনাফা ও লভ্যাংশ দুটোই ভোগ করতে পারে। এক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের মনস্তত্ত্ব পরিবর্তন করে ভালো ও মৌলভিত্তির বড় কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতে হবে।

তারা আরও জানান, গত বছরের মার্চ থেকে এ বছরের জুন পর্যন্ত পুঁজিবাজারের সূচক বেড়েছে প্রায় ৩ হাজার পয়েন্টের মতো। এ সময়ে বাজার মূলধনও বেড়েছে ১ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি। ফলে স্বাভাবিকভাবেই পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত অনেক কোম্পানির শেয়ারদর ও পিই রেশিও বেড়েছে। তবে স্বল্প মূলধনি ও মন্দ কোম্পানির শেয়ারদর ও পিই রেশিও বৃদ্ধির বিষয়টি চোখে পড়েছে বেশি। তবে বাজার মূলধনে এসব কোম্পানির অবদান অনেক কম হওয়ায় পিই রেশিও বাড়লেও সেটি বাজারকে খুব বেশি প্রভাবিত করতে পারে না।

এ বিষয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক মো. শাকিল রিজভী বলেন, বড় মূলধনি কোম্পানির পিই রেশিও বেড়ে গেলে বাজারের ঝুঁকিও অনেক বেড়ে যায়। অন্যদিকে স্বল্প মূলধনির কোম্পানি পিই রেশিও বাড়লেও সেটি বাজারকে খুব বেশি প্রভাবিত করতে পারে না। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বরাবরই ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় কোম্পানির ব্যবসা, আয়, মুনাফা ও পিই রেশিওর মতো নির্দেশকগুলো বিশ্লেষণ করে বিনিয়োগ করা উচিত। তাহলে বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যাবে।

দিকে এক বছরেরও বেশি সময়ের ব্যবধানে শুধু সিমেন্ট খাতের পিই রেশিও কমেছে। গত বছরের ২৫ মার্চ এ খাতের পিই রেশিও ছিল ২৬ দশমিক ৩, যা এ বছরের জুন শেষে কমে ১৩ দশমিক ২-এ দাঁড়িয়েছে। সিমেন্ট খাতের কোম্পানিগুলোর শেয়ারপ্রতি আয় বেড়ে যাওয়ার কারণেই মূলত শেয়ারদর বৃদ্ধি সত্ত্বেও এ খাতের পিই রেশিও কমেছে।

ঢাকা/এসআর

শেয়ার করুন

x
English Version

বিনিয়োগোপযোগী সত্ত্বেও বাড়ছে না মৌলভিত্তি ও বড় মূলধনীর শেয়ার দর

আপডেট: ০১:১৭:২৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৫ জুলাই ২০২১

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: বিনিয়োগ উপযোগী হওয়া সত্বেও মৌলভিত্তির এবং বড় মূলধনী কোম্পানিতে বিনিয়োগকারীদের তেমন কোন আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। পরিণতিতে এসব কোম্পানির শেয়ার দর তেমন একটা বাড়েনি। আর শেয়ার দর না বাড়ার কারণে কোম্পানির শেয়ারের পিই রেশিওতে তেমন কোন প্রভাব পড়েনি।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে বিনিয়োগ কতটা নিরাপদ, তা পরিমাপের অন্যতম নির্দেশক মূল্য-আয় অনুপাত বা পিই রেশিও। কোনো কোম্পানির পিই রেশিও বেশি হলে সেটিতে বিনিয়োগে ঝুঁকিও বেশি। অন্যদিকে পিই রেশিও যত কম, বিনিয়োগ তত নিরাপদ। গত বছরের ২৫ মার্চ থেকে এ বছরের জুন পর্যন্ত পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর খাতভিত্তিক পিই রেশিও পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এ সময়ে মৌলভিত্তির ও তুলনামূলক বড় মূলধনি কোম্পানিগুলোর পিই রেশিও বেড়েছে কম। এর বিপরীতে স্বল্প মূলধনি কোম্পানিগুলোর পিই রেশিও বেড়েছে অনেক গুণ।

পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, ঝুঁকি এড়িয়ে পুঁজিবাজার থেকে মুনাফা করতে হলে বিনিয়োগকারীদের মন্দ ও ভালো শেয়ার বাছাই করার সক্ষমতা অর্জন করতে হবে।

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, গত বছরের ৮ মার্চ দেশে কভিড-১৯-এর সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির কারণে ২৬ মার্চ থেকে ৬৬ দিন পুঁজিবাজারে লেনদেন বন্ধ ছিল। সে সময় ২৫ মার্চ সর্বশেষ লেনদেন হয়েছিল পুঁজিবাজারে। গত বছরের ২৫ মার্চ পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর খাতভিত্তিক পিই রেশিওর সঙ্গে এ বছরের ৩০ জুন শেষে খাতভিত্তিক পিই রেশিওর তুলনামূলক পর্যালোচনা করা হয়েছে। এতে দেখা যায়, এ সময়ে সবচেয়ে বেশি পিই রেশিও বেড়েছে দেশের রফতানি আয়ের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উৎস পাট খাতের। গত বছরের ২৫ মার্চ শেষে খাতটির পিই রেশিও ছিল ৩৫ দশমিক ৬, যা এ বছরের জুন শেষে ৭৩১ দশমিক ৪-এ দাঁড়িয়েছে। মূলত এ খাতের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর আয় কমে যাওয়ার কারণে পিই রেশিও বেড়েছে।

দেশের সবচেয়ে বেশি রফতানি আয়ের তালিকায় তৃতীয় স্থানে থাকা চামড়া খাতের পিই রেশিও এ বছরের ৩০ জুন শেষে ৭৫ দশমিক ২-এ দাঁড়িয়েছে, গত বছরের ২৫ মার্চ যা ছিল ১৯ দশমিক ৮। খাতভুক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর বৃদ্ধির প্রভাবে পিই রেশিও বেড়েছে।

কভিডের কারণে ভ্রমণ ও অবকাশ খাতের কোম্পানিগুলোর ব্যবসায় সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে। গত বছরের ২৫ মার্চ খাতটির পিই রেশিও ছিল ২৩, যা এ বছরের জুন শেষে বেড়ে ৭৫ দশমিক ৬-এ দাঁড়িয়েছে। এ খাতের কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর কমলেও আয় বেড়ে যাওয়ায় পিই রেশিও বেড়েছে।

দেশের রফতানি আয়ের মূল খাত বস্ত্র ও তৈরি পোশাক। কভিডের কারণে এ খাতের ব্যবসায় বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে। যদিও পুঁজিবাজারে খাতটির পিই রেশিও বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। গত বছরের ২৫ মার্চ বস্ত্র খাতের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর পিই রেশিও ৯ দশমিক ৭, যা এ বছরের জুন শেষে বেড়ে ২৩ দশমিক ৮-এ দাঁড়িয়েছে। এ খাতের কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর বৃদ্ধির কারণে পিই রেশিও বেড়েছে।

গত বছর থেকেই পুঁজিবাজারের আলোচিত খাত সাধারণ বীমা। এ খাতের কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর বেড়েছে লাগামহীনভাবে। গত বছরের ২৫ মার্চ সাধারণী বীমা খাতের কোম্পানিগুলোর পিই রেশিও ছিল ১০ দশমিক ৮, যা এ বছরের জুন শেষে ২৩ দশমিক ৭-এ দাঁড়িয়েছে।

সেবা ও আবাসন খাতের পিই রেশিও গত বছরের ২৫ মার্চ ছিল ১১, যা দ্বিগুণ বেড়ে এ বছরের জুন শেষে ২২-এ দাঁড়িয়েছে। এ খাতেও শেয়ারদর বাড়ার প্রভাবে পিই রেশিও বেড়েছে।

গত বছরের ২৫ মার্চ টেলিযোগাযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি, কাগজ ও মুদ্রণ, প্রকৌশল, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ওষুধ ও রসায়ন, সিরামিকস, খাদ্য ও আনুষঙ্গিক, ব্যাংক, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ এবং বিবিধ খাতের পিই রেশিও ছিল যথাক্রমে ৯ দশমিক ৫, ১৬ দশমিক ২, ৩০ দশমিক ৩, ১৫, ১৯ দশমিক ২, ১৪ দশমিক ৩, ২১ দশমিক ৪, ১৭, ৬ দশমিক ৯, ৯ দশমিক ৯ ও ১৯ দশমিক ৮। আর এ বছরের জুন শেষে এ খাতগুলোর পিই রেশিও বেড়ে দাঁড়িয়েছে টেলিযোগাযোগ ১৮ দশমিক ৮, তথ্যপ্রযুক্তি ২৫ দশমিক ৩, কাগজ ও মুদ্রণ ৪৬ দশমিক ৩, প্রকৌশল ২১ দশমিক ৩, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ২৪ দশমিক ৬, ওষুধ ও রসায়ন ১৮ দশমিক ১, সিরামিকস ২৬ দশমিক ৯, খাদ্য ও আনুষঙ্গিক ২১, ব্যাংক ৮ দশমিক ২, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ ১১ দশমিক ৬ এবং বিবিধ ২২। এ খাতভুক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে পিই রেশিওর ক্ষেত্রে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, আমাদের দেশে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে মূলধনি মুনাফা অর্জনের প্রবণতা বেশি। এ কারণে তারা দীর্ঘমেয়াদে কোম্পানিতে বিনিয়োগ ধরে রাখার পরিবর্তে স্বল্পমেয়াদে লেনদেন করে মুনাফা করতে চায়। এক্ষেত্রে স্বল্প মূলধনি কোম্পানিগুলো বিনিয়োগকারীদের চাহিদার শীর্ষে থাকে, যার প্রতিফলন আমরা খাতভিত্তিক পিই রেশিও থেকে দেখতে পাই। যেমন যেসব খাতে স্বল্প মূলধনি কোম্পানির আধিক্য রয়েছে, সেসব খাতের পিই রেশিও বেশি বেড়েছে। অন্যদিকে মৌলভিত্তির বড় কোম্পানিগুলোর শেয়ার সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণে এগুলো শেয়ার কেনার চাপ বাড়লেও ছোট কোম্পানির মতো এত বেশি শেয়ারদর বাড়ে না। এ কোম্পানিগুলো আকর্ষণীয় হারে লভ্যাংশ দেয়। ফলে দীর্ঘমেয়াদে এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ ধরে রাখলে বিনিয়োগকারীরা মূলধনি মুনাফা ও লভ্যাংশ দুটোই ভোগ করতে পারে। এক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের মনস্তত্ত্ব পরিবর্তন করে ভালো ও মৌলভিত্তির বড় কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতে হবে।

তারা আরও জানান, গত বছরের মার্চ থেকে এ বছরের জুন পর্যন্ত পুঁজিবাজারের সূচক বেড়েছে প্রায় ৩ হাজার পয়েন্টের মতো। এ সময়ে বাজার মূলধনও বেড়েছে ১ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি। ফলে স্বাভাবিকভাবেই পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত অনেক কোম্পানির শেয়ারদর ও পিই রেশিও বেড়েছে। তবে স্বল্প মূলধনি ও মন্দ কোম্পানির শেয়ারদর ও পিই রেশিও বৃদ্ধির বিষয়টি চোখে পড়েছে বেশি। তবে বাজার মূলধনে এসব কোম্পানির অবদান অনেক কম হওয়ায় পিই রেশিও বাড়লেও সেটি বাজারকে খুব বেশি প্রভাবিত করতে পারে না।

এ বিষয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক মো. শাকিল রিজভী বলেন, বড় মূলধনি কোম্পানির পিই রেশিও বেড়ে গেলে বাজারের ঝুঁকিও অনেক বেড়ে যায়। অন্যদিকে স্বল্প মূলধনির কোম্পানি পিই রেশিও বাড়লেও সেটি বাজারকে খুব বেশি প্রভাবিত করতে পারে না। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বরাবরই ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় কোম্পানির ব্যবসা, আয়, মুনাফা ও পিই রেশিওর মতো নির্দেশকগুলো বিশ্লেষণ করে বিনিয়োগ করা উচিত। তাহলে বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যাবে।

দিকে এক বছরেরও বেশি সময়ের ব্যবধানে শুধু সিমেন্ট খাতের পিই রেশিও কমেছে। গত বছরের ২৫ মার্চ এ খাতের পিই রেশিও ছিল ২৬ দশমিক ৩, যা এ বছরের জুন শেষে কমে ১৩ দশমিক ২-এ দাঁড়িয়েছে। সিমেন্ট খাতের কোম্পানিগুলোর শেয়ারপ্রতি আয় বেড়ে যাওয়ার কারণেই মূলত শেয়ারদর বৃদ্ধি সত্ত্বেও এ খাতের পিই রেশিও কমেছে।

ঢাকা/এসআর