০৩:৩৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫

রোজায় এসিডিটি থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায়

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০৭:৩০:২৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ৬ এপ্রিল ২০২২
  • / ১০৩৭৯ বার দেখা হয়েছে

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ মস্তিষ্কের প্রত্যেক মুসলিমের জন্য রোজা পালন করা ফরজ। রোজায় গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা খুব সাধারণ একটি বিষয়। সাধারণত খাদ্যাভাস, সুষম উপাদানের পরিবর্তে বেশি ভাজাপোড়া খেলে এ ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। অনেকের শেষ বিকেলে বমিবমি ভাব দেখা দেয়। সারা দিন অনাহার বা উপবাসের কারণে এমন হয়ে থাকে।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

মানবদেহের পাকস্থলীতে প্রতিদিন প্রায় দেড় থেকে দুই লিটার হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড ক্ষরিত হয়, যার কাজ হচ্ছে পাকস্থলীতে খাবার পরিপাক করতে সহায়তা করা। যদি কোনও কারণে পাকস্থলীতে এই হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড ক্ষরণ এর মাত্রা বেড়ে যায়, তাহলে পাকস্থলীর অভ্যন্তরীণ আবরণ তথা মিউকাস মেমব্রেনে প্রদাহ তৈরি হয় যাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় গ্যাসট্রাইটিস বলে। অতিরিক্ত খাবার খেলে কিংবা অনেকক্ষণ না খেয়ে থাকলে কিংবা বেশি বেশি তৈলাক্ত খাবার খেলে পাকস্থলীতে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে যায় এবং প্রদাহ হয় যাকে আমরা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হিসেবে বিবেচনা করে থাকি। একজন সুস্থ মানুষ রোজা রাখলে তার এসিডিটি হওয়ার তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই যদি সে ইফতারি ও সাহরিতে নিম্নোক্ত নিয়মগুলো মেনে চলে।

ইফতারের সময় যা করতে হবে:

ইফতারে অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার কিংবা তেলে ডুবিয়ে যেসব খাবার তৈরি করা হয় যথা পেঁয়াজু, আলুর চপ, বেগুনি, চিকেন ফ্রাই, জিলাপি ইত্যাদি যতটুকু সম্ভব পরিহার করতে হবে।

ইফতারে ইসুপগুলের শরবত, ডাবের পানি ইত্যাদি খাওয়া, যাতে পরে শর্করা জাতীয় খাবার যথা খেজুর, পেয়ারা, ছোলা, সেমাই ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে।

টমেটো ইফতারির সময় অনেকের প্রিয় খাবার, তবে টমেটোতে প্রচুর পরিমাণ সাইট্রিক এসিড ও ম্যালিক এসিড থাকে এবং এটা পাকস্থলীতে ইরিটেশন করে, তাই টমেটো বেশি পরিমাণ না খাওয়াই উত্তম।

ইফতারি হতে হবে লাইট মিল কিংবা অল্প পরিমাণ খাবার তারপর মাগরিবের নামাজ পড়ে রাতের খাবার খেয়ে নেয়া ভালো। সম্ভব হলে তারাবীর নামাজের আগেই খেয়ে নিতে হবে। তাহলে খাবারের পরে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করে নামাজ পড়তে গেলে নামাজের সময় এক প্রকার ব্যায়াম হয়ে যাবে এবং সেটা খাবার পরিপাকের ক্ষেত্রে সহায়ক সেই সাথে এসিডিটি হবার ঝুঁকি কমে যাবে।

ঝাল খাবার পাকস্থলীতে এসিডিটির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয় তাই কাচা মরিচ কিংবা অতিরিক্ত ঝাল খাবার পরিহার করে চলতে হবে।

গরম খাবার যথা চা, কফি ইত্যাদি পাকস্থলীতে হাইড্রোক্লোরিক এসিড ক্ষরণের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয় তাই রোজার সময় চা, কফি ইত্যাদি পরিহার করে চলা উচিত।

সেহরির সময় যা করণীয়:

ফজর নামাজের সময় হওয়ার আগ পর্যন্ত সেহরি করা যায়। একটু দেরিতে সেহরি করার স্বাস্থ্যগত উপকারিতা রয়েছে। এতে সেহরি শেষ করে ফজর নামাজের প্রস্তুতি নেওয়া যায়। নামাজ শেষ করে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করা যেতে পারে। এটি খাবার পরিপাকে সহায়তা করে। যদি কেউ ফজরের সময় হওয়ার ১-২ ঘন্টা আগে সেহরি করে তাহলে সে সাধারণত খাওয়া শেষ করে ২ ঘন্টা বসে থাকে না। খাবার খেয়ে সাথে সাথে শুয়ে পরা অ্যাসিডিটির অন্যতম কারণ।

সেহরির খাবারেও এসব জিনিস পরিহার করা উচিত যা অ্যাসিডিটি বাড়ায়। যেমন চর্বিজাতীয় খাবার, অতিরিক্ত তেলে ভাজা খাবার, চা কফি ইত্যাদি।

মূলত যাদের অ্যাসিডিটির সমস্যা কিংবা গ্যাস্ট্রিক রোগ রয়েছে, তারা গ্যাস্ট্রিকের ঔষধ খেতে পারেন চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী। তারা রোজা রাখতে পারবেন আর সাথে সাথে উপরের নিয়মগুলি মেনে চলতে হবে। গ্যাস্ট্রিকের কয়েক ধরনের ঔষধ রয়েছে, তার মধ্যে অ্যান্টাসিড কিংবা ল্যান্সোপ্রাজল ক্যাপসুল খাওয়া যেতে পারে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী। অ্যান্টাসিড প্লাস সিরাপ সন্ধ্যায় খাবারের পরে খাওয়া যায় আর ল্যান্সোপ্রাজল ক্যাপসুল ভোর রাত্রে খেলে উপকার পাওয়া যায়। ল্যান্সোপ্রাজল এর কার্যকারিতা দীর্ঘসময় থাকে।

মেডিসিন নেওয়ার পরেও যদি কারো রোজা রাখতে বেশি কষ্ট হয় অথবা যদি প্রচণ্ড বুকে ব্যথা ওঠে তাহলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে রোজা ভঙ্গ করার অবকাশ রয়েছে।

ঢাকা/এসএম

শেয়ার করুন

error: Content is protected ! Please Don't Try!

রোজায় এসিডিটি থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায়

আপডেট: ০৭:৩০:২৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ৬ এপ্রিল ২০২২

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ মস্তিষ্কের প্রত্যেক মুসলিমের জন্য রোজা পালন করা ফরজ। রোজায় গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা খুব সাধারণ একটি বিষয়। সাধারণত খাদ্যাভাস, সুষম উপাদানের পরিবর্তে বেশি ভাজাপোড়া খেলে এ ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। অনেকের শেষ বিকেলে বমিবমি ভাব দেখা দেয়। সারা দিন অনাহার বা উপবাসের কারণে এমন হয়ে থাকে।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

মানবদেহের পাকস্থলীতে প্রতিদিন প্রায় দেড় থেকে দুই লিটার হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড ক্ষরিত হয়, যার কাজ হচ্ছে পাকস্থলীতে খাবার পরিপাক করতে সহায়তা করা। যদি কোনও কারণে পাকস্থলীতে এই হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড ক্ষরণ এর মাত্রা বেড়ে যায়, তাহলে পাকস্থলীর অভ্যন্তরীণ আবরণ তথা মিউকাস মেমব্রেনে প্রদাহ তৈরি হয় যাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় গ্যাসট্রাইটিস বলে। অতিরিক্ত খাবার খেলে কিংবা অনেকক্ষণ না খেয়ে থাকলে কিংবা বেশি বেশি তৈলাক্ত খাবার খেলে পাকস্থলীতে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে যায় এবং প্রদাহ হয় যাকে আমরা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হিসেবে বিবেচনা করে থাকি। একজন সুস্থ মানুষ রোজা রাখলে তার এসিডিটি হওয়ার তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই যদি সে ইফতারি ও সাহরিতে নিম্নোক্ত নিয়মগুলো মেনে চলে।

ইফতারের সময় যা করতে হবে:

ইফতারে অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার কিংবা তেলে ডুবিয়ে যেসব খাবার তৈরি করা হয় যথা পেঁয়াজু, আলুর চপ, বেগুনি, চিকেন ফ্রাই, জিলাপি ইত্যাদি যতটুকু সম্ভব পরিহার করতে হবে।

ইফতারে ইসুপগুলের শরবত, ডাবের পানি ইত্যাদি খাওয়া, যাতে পরে শর্করা জাতীয় খাবার যথা খেজুর, পেয়ারা, ছোলা, সেমাই ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে।

টমেটো ইফতারির সময় অনেকের প্রিয় খাবার, তবে টমেটোতে প্রচুর পরিমাণ সাইট্রিক এসিড ও ম্যালিক এসিড থাকে এবং এটা পাকস্থলীতে ইরিটেশন করে, তাই টমেটো বেশি পরিমাণ না খাওয়াই উত্তম।

ইফতারি হতে হবে লাইট মিল কিংবা অল্প পরিমাণ খাবার তারপর মাগরিবের নামাজ পড়ে রাতের খাবার খেয়ে নেয়া ভালো। সম্ভব হলে তারাবীর নামাজের আগেই খেয়ে নিতে হবে। তাহলে খাবারের পরে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করে নামাজ পড়তে গেলে নামাজের সময় এক প্রকার ব্যায়াম হয়ে যাবে এবং সেটা খাবার পরিপাকের ক্ষেত্রে সহায়ক সেই সাথে এসিডিটি হবার ঝুঁকি কমে যাবে।

ঝাল খাবার পাকস্থলীতে এসিডিটির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয় তাই কাচা মরিচ কিংবা অতিরিক্ত ঝাল খাবার পরিহার করে চলতে হবে।

গরম খাবার যথা চা, কফি ইত্যাদি পাকস্থলীতে হাইড্রোক্লোরিক এসিড ক্ষরণের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয় তাই রোজার সময় চা, কফি ইত্যাদি পরিহার করে চলা উচিত।

সেহরির সময় যা করণীয়:

ফজর নামাজের সময় হওয়ার আগ পর্যন্ত সেহরি করা যায়। একটু দেরিতে সেহরি করার স্বাস্থ্যগত উপকারিতা রয়েছে। এতে সেহরি শেষ করে ফজর নামাজের প্রস্তুতি নেওয়া যায়। নামাজ শেষ করে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করা যেতে পারে। এটি খাবার পরিপাকে সহায়তা করে। যদি কেউ ফজরের সময় হওয়ার ১-২ ঘন্টা আগে সেহরি করে তাহলে সে সাধারণত খাওয়া শেষ করে ২ ঘন্টা বসে থাকে না। খাবার খেয়ে সাথে সাথে শুয়ে পরা অ্যাসিডিটির অন্যতম কারণ।

সেহরির খাবারেও এসব জিনিস পরিহার করা উচিত যা অ্যাসিডিটি বাড়ায়। যেমন চর্বিজাতীয় খাবার, অতিরিক্ত তেলে ভাজা খাবার, চা কফি ইত্যাদি।

মূলত যাদের অ্যাসিডিটির সমস্যা কিংবা গ্যাস্ট্রিক রোগ রয়েছে, তারা গ্যাস্ট্রিকের ঔষধ খেতে পারেন চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী। তারা রোজা রাখতে পারবেন আর সাথে সাথে উপরের নিয়মগুলি মেনে চলতে হবে। গ্যাস্ট্রিকের কয়েক ধরনের ঔষধ রয়েছে, তার মধ্যে অ্যান্টাসিড কিংবা ল্যান্সোপ্রাজল ক্যাপসুল খাওয়া যেতে পারে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী। অ্যান্টাসিড প্লাস সিরাপ সন্ধ্যায় খাবারের পরে খাওয়া যায় আর ল্যান্সোপ্রাজল ক্যাপসুল ভোর রাত্রে খেলে উপকার পাওয়া যায়। ল্যান্সোপ্রাজল এর কার্যকারিতা দীর্ঘসময় থাকে।

মেডিসিন নেওয়ার পরেও যদি কারো রোজা রাখতে বেশি কষ্ট হয় অথবা যদি প্রচণ্ড বুকে ব্যথা ওঠে তাহলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে রোজা ভঙ্গ করার অবকাশ রয়েছে।

ঢাকা/এসএম