০৫:১৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের আগ্রহ নেই ব্যাংকগুলোর

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০৩:৪৮:০০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২১
  • / ৪১৮৮ বার দেখা হয়েছে

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ধার করে প্রতিটি ব্যাংক বিশেষ তহবিলের অধীনে ২০০ কোটি টাকা করে নিতে পারে। চাইলে সব ব্যাংকের এ তহবিলের অধীনে ১২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের সুযোগ আছে ব্যাংকগুলোর। কেন্দ্রীয় ব্যাংকও এ সুযোগ নিতে বলেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত বিনিয়োগ হয়েছে মাত্র ১ হাজার ৯৯০ কোটি টাকার, যা সম্ভাব্য সুযোগের মাত্র ১৬ শতাংশ। যদিও বিশেষ তহবিলের অধীনে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে এ বিনিয়োগ ব্যাংকের শেয়ারবাজার এক্সপোজারের বাইরেও রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

অস্বাভাবিক দরপতনের প্রেক্ষাপটে গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি সার্কুলার জারি করে বিশেষ বিনিয়োগ তহবিল গঠনের সুযোগ দেয়। ওই সার্কুলার অনুযায়ী, ব্যাংক চাইলে নিজের টাকায় বা কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার নিয়েও বিনিয়োগ করতে পারে। এ সুযোগ সৃষ্টির পর এ পর্যন্ত দেশের ৬০টি ব্যাংকের মধ্যে ৩২টি এ বিনিয়োগের সুযোগ নিয়েছে। ৩২টি ব্যাংক চাইলে ছয় হাজার ৪০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ তহবিল গঠন করতে পারত, কিন্তু গঠন করেছে চার হাজার ৫১০ কোটি টাকার তহবিল। আবার গঠন করা তহবিল থেকে এখন পর্যন্ত বিনিয়োগ করেছে মাত্র ১ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা, যা গঠিত তহবিলের ৪৪ শতাংশ।

প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সরকারি চার ব্যাংক সোনালী, রূপালী, অগ্রণী ও জনতা মিলে শেয়ারবাজার বিশেষ তহবিলের অধীনে মোট ৭২০ কোটি টাকার তহবিল গঠন করেছে। তবে এখন পর্যন্ত বিনিয়োগ করেছে ৩১২ কোটি টাকারও কম, যা গঠিত তহবিলের ৪৩ শতাংশ।

এ বিষয়ে অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম বলেন, বিশেষ তহবিলের অধীনে ২০০ কোটি বিনিয়োগ তহবিল গঠন করেছে অগ্রণী। শেয়ারবাজারের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় পুরোটা বিনিয়োগ করা হয়নি।

বেসরকারি ব্যাংকের বিনিয়োগেও একই চিত্র দেখা গেছে। বিশেষ এ তহবিলের অধীনে এখন পর্যন্ত ২৮ বেসরকারি ব্যাংক তিন হাজার ৭৯০ কোটি টাকার তহবিল গঠন করেছে। কিন্তু বিনিয়োগ করেছে এক হাজার ৬৭৮ কোটি টাকা, যা গঠিত তহবিলের ৪৪ শতাংশ। চাইলে এ ২৮ ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শেয়ারবাজার বিশেষ তহবিলের অধীনে পাঁচ হাজার ৬০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ করতে পারে।

পর্যালোচনায় আরও দেখা গেছে, ৩২ ব্যাংকের মধ্যে ১৭টি ২০০ কোটি টাকা করে বিনিয়োগ তহবিল গঠন করেছে। ২০০ কোটি টাকার তহবিল গঠনের সুযোগ থাকলেও ছয়টি ব্যাংক ১০০ থেকে ১২০ কোটি টাকার এবং বাকি নয় ব্যাংক ১০ থেকে ৮০ কোটি টাকার তহবিল গঠন করেছে।

জানা গেছে, যে ৩২ ব্যাংক বিশেষ তহবিল থেকে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করছে, তাদের ১৯টিই গঠিত তহবিলের ৫০ শতাংশই ব্যবহার করেনি। আটটি ব্যাংক গঠিত তহবিলের ৮০ থেকে প্রায় শতভাগ বিনিয়োগ করেছে। যদিও এ আট ব্যাংক এক হাজার ৬০০ কোটি বিনিয়োগ তহবিল গঠনের সুযোগের বিপরীতে মাত্র ৬৪০ কোটি টাকার তহবিল গঠন করে ৫৯২ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে।

জানতে চাইলে সাউথইস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম কামাল হোসেন জানান, ২০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ তহবিল গঠন করে বিনিয়োগ করেছে ৫০ কোটি টাকার বেশি। এত কম বিনিয়োগের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, সুকুক বন্ডসহ দুটি বড় বিনিয়োগ প্রস্তাব আছে। পর্ষদে অনুমোদন হলে এ বিনিয়োগ থেকে বিশেষ তহবিলের বিনিয়োগের হার বাড়বে।

শেয়ারবাজার-সংশ্নিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শুধু বিশেষ তহবিলই নয়, দুই সিংহভাগ ব্যাংকই নিজস্ব পোর্টফোলিও বিনিয়োগেও সক্রিয় নয়। যদিও ব্যাংকগুলো নিজস্ব মূলধনের ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারে। এ হিসাবে বর্তমানের তুলনায় অন্তত দ্বিগুণে উন্নীত করার সুযোগ আছে।

সব ব্যাংকের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ বাজারমূল্যে হিসাব না করে ক্রয়মূল্যে হিসাব করার দাবি উঠেছে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিসহ সংশ্নিষ্ট পক্ষগুলোর দিক থেকে। এ ইস্যুতে টালমাটাল শেয়ারবাজার। গতকাল রোববারও ডিএসইতে কেনাবেচা হওয়া ৩৭৬ শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ২৪২টিরই দরপতন হয়েছে। ডিএসইএক্স ৬৪ পয়েন্ট হারিয়ে ৬৯২০ পয়েন্টে নেমেছে।

সংশ্নিষ্টদের ধারণা, ব্যাংকগুলোর শেয়ারবাজার এক্সপোজার বাজার মূল্যের পরিবর্তে ক্রয়মূল্যে হিসাব হলে তাদের বিনিয়োগের সুযোগ বাড়বে। তবে ভিন্ন মতও আছে। ব্যাপক সুযোগ থাকা সত্ত্বেও ব্যাংকগুলো যখন বিনিয়োগ করছে না, তখন ক্রয়মূল্যে এক্সপোজার গণনার সুযোগ দিলে যে করবে তার নিশ্চয়তা নেই। সূত্র: সমকাল

ট্যাগঃ

শেয়ার করুন

x
English Version

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের আগ্রহ নেই ব্যাংকগুলোর

আপডেট: ০৩:৪৮:০০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২১

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ধার করে প্রতিটি ব্যাংক বিশেষ তহবিলের অধীনে ২০০ কোটি টাকা করে নিতে পারে। চাইলে সব ব্যাংকের এ তহবিলের অধীনে ১২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের সুযোগ আছে ব্যাংকগুলোর। কেন্দ্রীয় ব্যাংকও এ সুযোগ নিতে বলেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত বিনিয়োগ হয়েছে মাত্র ১ হাজার ৯৯০ কোটি টাকার, যা সম্ভাব্য সুযোগের মাত্র ১৬ শতাংশ। যদিও বিশেষ তহবিলের অধীনে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে এ বিনিয়োগ ব্যাংকের শেয়ারবাজার এক্সপোজারের বাইরেও রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

অস্বাভাবিক দরপতনের প্রেক্ষাপটে গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি সার্কুলার জারি করে বিশেষ বিনিয়োগ তহবিল গঠনের সুযোগ দেয়। ওই সার্কুলার অনুযায়ী, ব্যাংক চাইলে নিজের টাকায় বা কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার নিয়েও বিনিয়োগ করতে পারে। এ সুযোগ সৃষ্টির পর এ পর্যন্ত দেশের ৬০টি ব্যাংকের মধ্যে ৩২টি এ বিনিয়োগের সুযোগ নিয়েছে। ৩২টি ব্যাংক চাইলে ছয় হাজার ৪০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ তহবিল গঠন করতে পারত, কিন্তু গঠন করেছে চার হাজার ৫১০ কোটি টাকার তহবিল। আবার গঠন করা তহবিল থেকে এখন পর্যন্ত বিনিয়োগ করেছে মাত্র ১ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা, যা গঠিত তহবিলের ৪৪ শতাংশ।

প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সরকারি চার ব্যাংক সোনালী, রূপালী, অগ্রণী ও জনতা মিলে শেয়ারবাজার বিশেষ তহবিলের অধীনে মোট ৭২০ কোটি টাকার তহবিল গঠন করেছে। তবে এখন পর্যন্ত বিনিয়োগ করেছে ৩১২ কোটি টাকারও কম, যা গঠিত তহবিলের ৪৩ শতাংশ।

এ বিষয়ে অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম বলেন, বিশেষ তহবিলের অধীনে ২০০ কোটি বিনিয়োগ তহবিল গঠন করেছে অগ্রণী। শেয়ারবাজারের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় পুরোটা বিনিয়োগ করা হয়নি।

বেসরকারি ব্যাংকের বিনিয়োগেও একই চিত্র দেখা গেছে। বিশেষ এ তহবিলের অধীনে এখন পর্যন্ত ২৮ বেসরকারি ব্যাংক তিন হাজার ৭৯০ কোটি টাকার তহবিল গঠন করেছে। কিন্তু বিনিয়োগ করেছে এক হাজার ৬৭৮ কোটি টাকা, যা গঠিত তহবিলের ৪৪ শতাংশ। চাইলে এ ২৮ ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শেয়ারবাজার বিশেষ তহবিলের অধীনে পাঁচ হাজার ৬০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ করতে পারে।

পর্যালোচনায় আরও দেখা গেছে, ৩২ ব্যাংকের মধ্যে ১৭টি ২০০ কোটি টাকা করে বিনিয়োগ তহবিল গঠন করেছে। ২০০ কোটি টাকার তহবিল গঠনের সুযোগ থাকলেও ছয়টি ব্যাংক ১০০ থেকে ১২০ কোটি টাকার এবং বাকি নয় ব্যাংক ১০ থেকে ৮০ কোটি টাকার তহবিল গঠন করেছে।

জানা গেছে, যে ৩২ ব্যাংক বিশেষ তহবিল থেকে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করছে, তাদের ১৯টিই গঠিত তহবিলের ৫০ শতাংশই ব্যবহার করেনি। আটটি ব্যাংক গঠিত তহবিলের ৮০ থেকে প্রায় শতভাগ বিনিয়োগ করেছে। যদিও এ আট ব্যাংক এক হাজার ৬০০ কোটি বিনিয়োগ তহবিল গঠনের সুযোগের বিপরীতে মাত্র ৬৪০ কোটি টাকার তহবিল গঠন করে ৫৯২ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে।

জানতে চাইলে সাউথইস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম কামাল হোসেন জানান, ২০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ তহবিল গঠন করে বিনিয়োগ করেছে ৫০ কোটি টাকার বেশি। এত কম বিনিয়োগের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, সুকুক বন্ডসহ দুটি বড় বিনিয়োগ প্রস্তাব আছে। পর্ষদে অনুমোদন হলে এ বিনিয়োগ থেকে বিশেষ তহবিলের বিনিয়োগের হার বাড়বে।

শেয়ারবাজার-সংশ্নিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শুধু বিশেষ তহবিলই নয়, দুই সিংহভাগ ব্যাংকই নিজস্ব পোর্টফোলিও বিনিয়োগেও সক্রিয় নয়। যদিও ব্যাংকগুলো নিজস্ব মূলধনের ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারে। এ হিসাবে বর্তমানের তুলনায় অন্তত দ্বিগুণে উন্নীত করার সুযোগ আছে।

সব ব্যাংকের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ বাজারমূল্যে হিসাব না করে ক্রয়মূল্যে হিসাব করার দাবি উঠেছে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিসহ সংশ্নিষ্ট পক্ষগুলোর দিক থেকে। এ ইস্যুতে টালমাটাল শেয়ারবাজার। গতকাল রোববারও ডিএসইতে কেনাবেচা হওয়া ৩৭৬ শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ২৪২টিরই দরপতন হয়েছে। ডিএসইএক্স ৬৪ পয়েন্ট হারিয়ে ৬৯২০ পয়েন্টে নেমেছে।

সংশ্নিষ্টদের ধারণা, ব্যাংকগুলোর শেয়ারবাজার এক্সপোজার বাজার মূল্যের পরিবর্তে ক্রয়মূল্যে হিসাব হলে তাদের বিনিয়োগের সুযোগ বাড়বে। তবে ভিন্ন মতও আছে। ব্যাপক সুযোগ থাকা সত্ত্বেও ব্যাংকগুলো যখন বিনিয়োগ করছে না, তখন ক্রয়মূল্যে এক্সপোজার গণনার সুযোগ দিলে যে করবে তার নিশ্চয়তা নেই। সূত্র: সমকাল