১১:৪২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০১ মে ২০২৪

শেয়ার বিক্রিতেও মিলবে না টাকা!

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ১২:৪০:৩২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ এপ্রিল ২০২১
  • / ৪৬৪৬ বার দেখা হয়েছে

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদকঃ দেশব্যাপি করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি এখন বিভীষিকায় রুপ নিয়েছে। একদিকে যেমনি বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা, তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। আর এমন পরিস্থিতিতে করোনার লাগাম টানতে সরকার এক সপ্তাহের সর্বাত্মক লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছে। যার কারণে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আগামী ১৪ এপ্রিল বুধবার থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ থাকবে শেয়ারবাজারও।

সে হিসেবে বিনিয়োগকারীদের হাতে আছে শুধু একদিন অর্থ্যাৎ মঙ্গলবার। এখন প্রশ্ন হলো কি হবে এই একদিনের লাভ-লোকসানের সমীকরণ? কি করবেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা? লকডাউন ঘোষনার কারণে আতঙ্কিত হয়ে হাতে থাকা শেয়ার কমদামে ছাড়বেন, না কি লকডাউন কতোদিন দীর্ঘায়িত হয় সে চিন্তা করে হাতে নগদ অর্থ সংরক্ষণের আশায় শেয়ার বিক্রি করবেন, না কি প্যানিকড না হয়ে ধৈর্য্যশীলতার সাথে বুদ্ধিমত্ত্বার পরিচয় দিবেন? তবে এটা জেনে রাখা ভালো, যে কারণেই মঙ্গলবার বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করেন না কেন, আদতে তা কোন কাজেই আসবে না। কারণ মাত্র একদিনে কোন শেয়ারেরই সেটেলমেন্ট সাইকেল পূর্ণ হয় না। পরিণতিতে ওই শেয়ার বিক্রিতো হবেই, কিন্তু টাকায় রুপ লাভ করবে না।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজার বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবরে কিছু বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হয়তো আতঙ্ক তৈরী হবে। তবে সেটা বিচক্ষন বিনিয়োগকারীদের আচরণ হবে না। কারণ আগামীকাল শেয়ার বিক্রি করলে মার্জিণ ঋণতো অ্যাডজাস্ট হবে না। মার্জিন ঋণ অ্যাডজাস্ট না হলে সুদ থেকেতো রেহাই পাওয়া যাবে না। সেই সঙ্গে আপনার ব্যাংকে অথবা পকেটেও টাকা আসবে না। তাহলে কম দরে শেয়ার ছেড়ে লাভ কী? বাজার যখন খুলবে, তখনতো সেই শেয়ার বেশি দরেই কিনতে হবে। সুতরাং অনর্থক পেনিক না হয়ে ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করাটাই শ্রেয় হবে।
জানা গেছে, আগামী ১৪ এপ্রিল বুধবার থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ থাকছে শেয়ারবাজার। কারণ  সরকার ঘোষিত লকডাউনের কারণে আলোচ্য সময়ে দেশের সব তফসিলি ব্যাংকের কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এর আগে বিএসইসি জানিয়েছিল, ব্যাংক খোলা থাকলে পুঁজিবাজারও খোলা থাকবে। আর ব্যাংক বন্ধ থাকলে লেনদেনও বন্ধ থাকবে।

এর আগে বুধবার (১৪ এপ্রিল) থেকে শুরু হয়ে আগামী ২১ এপ্রিল পর্যন্ত করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে সার্বিক কার্যাবলি/চলাচলের ওপর আট দিনের বিধিনিষেধ দিয়েছে সরকার। সোমবার (১২ এপ্রিল) এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

প্রজ্ঞাপনে বিধিনিষেধ আরোপ করে ১৩টি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকবে।

এতে বলা হয়, সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত ও বেসরকারি অফিস/আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে ও সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী নিজ নিজ কর্মস্থলে অবস্থান করবেন। তবে বিমান, সমুদ্র, নৌ ও স্থলবন্দর এবং এ সংশ্লিষ্ট অফিসগুলো এ নিষেধাজ্ঞার আওতাবহির্ভূত থাকবে।

নির্দেশনায় যেসব কথা বলা হয়, তার মধ্যে রয়েছে শিল্প-কারখানাগুলো স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু থাকবে। তবে শ্রমিকদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থাপনায় আনা-নেয়া নিশ্চিত করতে হবে।

এছাড়া আইনশৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিষেবা, যেমন- কৃষি উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি), খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহন, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, কোভিড-১৯ টিকা প্রদান, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস/জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, বন্দরগুলোর (স্থলবন্দর, নদীবন্দর ও সমুদ্রবন্দর) কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারি-বেসরকারি), গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাক সেবাসহ অন্যান্য জরুরি ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিস, তাদের কর্মচারী ও যানবাহন এ নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে থাকবে।

এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগ প্রয়োজনে সম্পূরক নির্দেশনা জারি করতে পারবে বলেও প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনারোগী শনাক্ত হওয়ার পর থেকেই পুঁজিবাজারে বড় পতন হয়। অব্যাহত পতন ঠেকাতে বাধ্য হয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ২৬ মার্চ পুঁজিবাজার বন্ধ করে দেয়। কারণ সাধারণ বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত হয়ে তাদের শেয়ার দেদারছে বিক্রি করতে থাকে। বড় লোকসানে থাকার পরও তারা পানির দরে শেয়ার হাতছাড়া করতে থাকে। ওই পেনিক থেকে মৌলভিত্তির শেয়ারও বাদ যায়নি। কিন্তু যারা ওই সময়ে সাহস করে বিনিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তারাই পুঁজিবাজার খোলার পরে বড় মুনাফার মুখ দেখে। তখন আফসোস করতে হয়েছে পানির দরে শেয়ার বিক্রি করা অস্থির বিনিয়োগকারীদের।

অনেকটা সেই পরিস্থিতি আগামীকাল ফিরছে। আগামীকালের পর আবারও বন্ধ হতে যাচ্ছে দেশের পুঁজিবাজার। আগামীকালই শেষ লেনদেন। আগামীকাল বিনিয়োগকারীরা গতবারের মতো পানির দামে শেয়ার বিক্রি করবেন, নাকি ধরে রাখবেন, সেই সিদ্ধান্ত তাদেরকেই নিতে হবে।
ঢাকা/জেএইচ

আরও পড়ুন:

শেয়ার করুন

x
English Version

শেয়ার বিক্রিতেও মিলবে না টাকা!

আপডেট: ১২:৪০:৩২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ এপ্রিল ২০২১

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদকঃ দেশব্যাপি করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি এখন বিভীষিকায় রুপ নিয়েছে। একদিকে যেমনি বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা, তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। আর এমন পরিস্থিতিতে করোনার লাগাম টানতে সরকার এক সপ্তাহের সর্বাত্মক লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছে। যার কারণে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আগামী ১৪ এপ্রিল বুধবার থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ থাকবে শেয়ারবাজারও।

সে হিসেবে বিনিয়োগকারীদের হাতে আছে শুধু একদিন অর্থ্যাৎ মঙ্গলবার। এখন প্রশ্ন হলো কি হবে এই একদিনের লাভ-লোকসানের সমীকরণ? কি করবেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা? লকডাউন ঘোষনার কারণে আতঙ্কিত হয়ে হাতে থাকা শেয়ার কমদামে ছাড়বেন, না কি লকডাউন কতোদিন দীর্ঘায়িত হয় সে চিন্তা করে হাতে নগদ অর্থ সংরক্ষণের আশায় শেয়ার বিক্রি করবেন, না কি প্যানিকড না হয়ে ধৈর্য্যশীলতার সাথে বুদ্ধিমত্ত্বার পরিচয় দিবেন? তবে এটা জেনে রাখা ভালো, যে কারণেই মঙ্গলবার বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করেন না কেন, আদতে তা কোন কাজেই আসবে না। কারণ মাত্র একদিনে কোন শেয়ারেরই সেটেলমেন্ট সাইকেল পূর্ণ হয় না। পরিণতিতে ওই শেয়ার বিক্রিতো হবেই, কিন্তু টাকায় রুপ লাভ করবে না।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজার বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবরে কিছু বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হয়তো আতঙ্ক তৈরী হবে। তবে সেটা বিচক্ষন বিনিয়োগকারীদের আচরণ হবে না। কারণ আগামীকাল শেয়ার বিক্রি করলে মার্জিণ ঋণতো অ্যাডজাস্ট হবে না। মার্জিন ঋণ অ্যাডজাস্ট না হলে সুদ থেকেতো রেহাই পাওয়া যাবে না। সেই সঙ্গে আপনার ব্যাংকে অথবা পকেটেও টাকা আসবে না। তাহলে কম দরে শেয়ার ছেড়ে লাভ কী? বাজার যখন খুলবে, তখনতো সেই শেয়ার বেশি দরেই কিনতে হবে। সুতরাং অনর্থক পেনিক না হয়ে ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করাটাই শ্রেয় হবে।
জানা গেছে, আগামী ১৪ এপ্রিল বুধবার থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ থাকছে শেয়ারবাজার। কারণ  সরকার ঘোষিত লকডাউনের কারণে আলোচ্য সময়ে দেশের সব তফসিলি ব্যাংকের কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এর আগে বিএসইসি জানিয়েছিল, ব্যাংক খোলা থাকলে পুঁজিবাজারও খোলা থাকবে। আর ব্যাংক বন্ধ থাকলে লেনদেনও বন্ধ থাকবে।

এর আগে বুধবার (১৪ এপ্রিল) থেকে শুরু হয়ে আগামী ২১ এপ্রিল পর্যন্ত করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে সার্বিক কার্যাবলি/চলাচলের ওপর আট দিনের বিধিনিষেধ দিয়েছে সরকার। সোমবার (১২ এপ্রিল) এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

প্রজ্ঞাপনে বিধিনিষেধ আরোপ করে ১৩টি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকবে।

এতে বলা হয়, সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত ও বেসরকারি অফিস/আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে ও সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী নিজ নিজ কর্মস্থলে অবস্থান করবেন। তবে বিমান, সমুদ্র, নৌ ও স্থলবন্দর এবং এ সংশ্লিষ্ট অফিসগুলো এ নিষেধাজ্ঞার আওতাবহির্ভূত থাকবে।

নির্দেশনায় যেসব কথা বলা হয়, তার মধ্যে রয়েছে শিল্প-কারখানাগুলো স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু থাকবে। তবে শ্রমিকদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থাপনায় আনা-নেয়া নিশ্চিত করতে হবে।

এছাড়া আইনশৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিষেবা, যেমন- কৃষি উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি), খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহন, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, কোভিড-১৯ টিকা প্রদান, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস/জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, বন্দরগুলোর (স্থলবন্দর, নদীবন্দর ও সমুদ্রবন্দর) কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারি-বেসরকারি), গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাক সেবাসহ অন্যান্য জরুরি ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিস, তাদের কর্মচারী ও যানবাহন এ নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে থাকবে।

এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগ প্রয়োজনে সম্পূরক নির্দেশনা জারি করতে পারবে বলেও প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনারোগী শনাক্ত হওয়ার পর থেকেই পুঁজিবাজারে বড় পতন হয়। অব্যাহত পতন ঠেকাতে বাধ্য হয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ২৬ মার্চ পুঁজিবাজার বন্ধ করে দেয়। কারণ সাধারণ বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত হয়ে তাদের শেয়ার দেদারছে বিক্রি করতে থাকে। বড় লোকসানে থাকার পরও তারা পানির দরে শেয়ার হাতছাড়া করতে থাকে। ওই পেনিক থেকে মৌলভিত্তির শেয়ারও বাদ যায়নি। কিন্তু যারা ওই সময়ে সাহস করে বিনিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তারাই পুঁজিবাজার খোলার পরে বড় মুনাফার মুখ দেখে। তখন আফসোস করতে হয়েছে পানির দরে শেয়ার বিক্রি করা অস্থির বিনিয়োগকারীদের।

অনেকটা সেই পরিস্থিতি আগামীকাল ফিরছে। আগামীকালের পর আবারও বন্ধ হতে যাচ্ছে দেশের পুঁজিবাজার। আগামীকালই শেষ লেনদেন। আগামীকাল বিনিয়োগকারীরা গতবারের মতো পানির দামে শেয়ার বিক্রি করবেন, নাকি ধরে রাখবেন, সেই সিদ্ধান্ত তাদেরকেই নিতে হবে।
ঢাকা/জেএইচ

আরও পড়ুন: