ফ্লোর প্রাইস ইস্যুতে বিএসইসির নয়া নির্দেশনা
সর্বোচ্চ এক শতাংশ কমতে পারবে ১৬৯ কোম্পানির শেয়ার দর

- আপডেট: ০৭:০৫:০১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২২
- / ১০৯৬৮ বার দেখা হয়েছে
পুঁজিবাজারের দরপতন রোধে ফ্লোর প্রাইস বেধে দিয়েছিল নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। তবে বাজারের স্থিতিশীলতা রক্ষার উদ্দেশ্যে বিএসইসির এ নির্দেশনায় কতোটুকু সুফল মেলেছে- তা নিয়ে প্রশ্নও ওঠেছিল। অর্থনীতিবিদ ও ব্রোকারদের ভাষ্য অনুযায়ী এ নির্দেশনার কারণেই বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
আর এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বাজারে গতি ফেরাতে ১৬৯ প্রতিষ্ঠানের ফ্লোর প্রাইস তুলে দিয়েছে বিএসইসি। ফ্লোর প্রাইস উঠিয়ে দেওয়া এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম এখন থেকে একদিনে সর্বোচ্চ এক শতাংশ কমতে পারবে। বুধবার (২১ ডিসেম্বর) বিএসইসি থেকে এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুক–টুইটার–লিংকডইন–ইন্সটাগ্রাম–ইউটিউব
চলতি বছরের ২৮ জুলাই পুঁজিবাজারের দরপতন ঠেকাতে সর্বনিম্ন বাজার মূল্য বা ফ্লোর প্রাইস বেঁধে দেয় বিএসইসি। তবে বিএসইসির এ সিদ্ধান্তে ধারাবাহিক দরপতন হয়ত কিছুটা আটকানো সম্ভব হয়েছে, তবে সেই সাথে আটকে গেছে অধিকাংশ বিনিয়োগকারীর ভাগ্য।
অধিকাংশ বিনিয়োগকারীই জানিয়েছিলেন, গুটিকয়েক ব্যক্তির লেনদেন ও তাঁদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতের জন্য এ বাজার, তাহলে সিংহভাগ বিনিয়োগকারী এ বাজার থেকে ফের মুখ ফিরিয়ে নিতে পারেন। এখন ফ্লোর প্রাইস দিয়ে দরপতন ঠেকিয়ে রাখা হয়েছে, যা কোনো টেকসই পদক্ষেপ নয়। অথচ সূচক একদিকে আর বেশিরভাগ শেয়ারদর অন্যদিকে, যা সুষ্ঠু বাজারের চিত্র নয়। এ বাজারে অল্প কিছু মানুষ ব্যবসা করছেন। রাতারাতি কয়েকটি শেয়ারের দর হু-হু করে বাড়ছে। অথচ বেশিরভাগ শেয়ার দর হারাচ্ছে। সব শ্রেণির বিনিয়োগকারীদের শেয়ার কেনাবেচায় স্বাভাবিক ও স্বতঃস্ফূর্ত লেনদেনের মাধ্যমে এমন দরের উত্থান ঘটছে- এমন কেউই মনে করছেন না। তারপরও এ নিয়ে কেউ প্রশ্ন করছেন না।
সিকিউরিটিজ হাউজ সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছিলেন, ফ্লোর প্রাইসের কারণে পুঁজিবাজারের কোম্পানির শেয়ার ও ফান্ডের ইউনিটে সর্বনিম্ন দর বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এতে শেয়ারের প্রকৃত বাজার মূল্য প্রতিফলিত হচ্ছে না। এছাড়া প্রত্যাশা অনুযায়ী শেয়ারের ক্রেতা বা বিক্রেতা না থাকায় বিনিয়োগ আটকে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর বিনিয়োগ আটকে যাওয়ার সম্ভাবনায় অনেক ব্যক্তি, প্রাতিষ্ঠানিক ও বিদেশি বিনিয়োগকারী নতুন বিনিয়োগে আসছে না। একইসঙ্গে লেনদেন কমে যাওয়ায় ব্রোকারেজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর লোকসান ক্রমেই বেড়ে চলেছে। এ পরিস্থিতি দীর্ঘমেয়াদি হলে অনেক ব্রোকারেজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকে শাখা বন্ধের পাশাপাশি কর্মী ছাঁটাইয়ের সম্ভাবনা দেখা দিবে।
আরও পড়ুন: আইপিও ইস্যুতে ধীরে চলো নীতিতে বিএসইসি: কমেছে অর্থ সংগ্রহের পরিমাণ
সম্প্রতি লেনদেন খরা আরও প্রকট হয়েছে। সেইসঙ্গে দেখা দিয়েছে টানা দরপতন। শেষ ছয় কার্যদিবস শেয়ারবাজারে টানা দরপতন হয়েছে। আর লেনদেন হয়েছে তিনশো থেকে চারশো কোটি টাকার ঘরে।
এমন পরিস্থিতিতে ১৬৯ প্রতিষ্ঠানের ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানালো বিএসইসি। ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়া এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম একদিনে সর্বোচ্চ এক শতাংশ কমতে পারবে। অন্যদিকে দাম বাড়ার ক্ষেত্রে স্বাভাবিক সার্কিট ব্রেকার কার্যকর হবে।
এর আগে গত ১৫ নভেম্বর বিএসইসি বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে ফ্লোর প্রাইস থেকে ১০ শতাংশ কম দামে শেয়ার বিক্রির অনুমোদন দিয়েছিল। বিএসইসির ওই নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশে প্রদত্ত ক্ষমতা প্রয়োগ করে কমিশন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) এবং সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশকে (সিডিবিএল) নির্দেশ দেয় যে, বর্তমান বাজার পরিস্থিতি বিবেচনা করে এক্সচেঞ্জগুলো ব্লক মার্কেটের গ্রাহকদের ক্ষেত্রে বর্তমানে সার্কিট ব্রেকার সিস্টেম ও ফ্লোর প্রাইস থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত কম দামে শেয়ার লেনদেন করার অনুমতি দিতে পারবে। এক্ষেত্রে আগের দিনে পাবলিক বা স্পট মার্কেটে লেনদেন শেষে শেয়ারের সর্বশেষ দর থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত কম দামে শেয়ার বিক্রি করা যাবে।
সার্কিট ব্রেকারের বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী, ২০০ টাকার নিচে থাকা প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বা ইউনিটের দাম একদিনে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ বাড়তে পারে। একইভাবে ২০০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে থাকা প্রতিষ্ঠানের ৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ, ৫০০ থেকে ১০০০ টাকার মধ্যে থাকলে ৭ দশমিক ৭০ শতাংশ, ১০০০ থেকে ২০০০ টাকার মধ্যে থাকলে ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ, ২০০০ থেকে ৫০০০ হাজার টাকার মধ্যে থাকলে ৫ শতাংশ এবং ৫০০০ টাকার ওপর হলে সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত দাম বাড়তে পারে।
যেসব কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়া হয়েছে:
ঢাকা/এইচকে