০৭:০৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

সুদিনের প্রত্যাশায় পুঁজিবাজারে বাড়ছে বিনিয়োগকারী

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০১:৫০:২৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ মে ২০২৩
  • / ৪৩৪৭ বার দেখা হয়েছে

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে বৈশ্বিক অর্থনীতি টানাপোড়নের মধ্যদিয়ে যাচ্ছে। চলমান এই যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাবে দেশের পুঁজিবাজার ছিল নিম্নমুখী। এমতাবস্থায়ও নতুন বছরে পুঁজিবাজার ভালো হবে, এমন প্রত্যাশা ছিল বিনিয়োগকারীদের। যে কারণে অনেক নতুন বিনিয়োগকারী বাজারে লেনদেনের জন্য নতুন বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) অ্যাকাউন্ট খোলেন। চলতি ২০২৩ সালের প্রথম পাঁচ (জানুয়ারী-মে) মাসে নতুন বিনিয়োগকারী এসেছে প্রায় ১১ হাজার।

চলতি বছরের বেশিরভাগ সময় পুঁজিবাজার খারাপ সময় পার করলেও মার্চ থেকে একটু একটু করে এ ধারা থেকে বেরিয়ে আসছে পুঁজিবাজার। চলতি বছরের মার্চ ও এপ্রিলে ধারাবাহিক ভাবে বাড়ছে বিদেশি বিনিয়োগকারী সাথে সক্রিয় হচ্ছে দেশীয় বিনিয়োগকারীরা। এ কারণে চলতি বছরের এপ্রিল ও মে মাসে ইতিবাচক ধারায় দেশের পুঁজিবাজারে লেনদেন হয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

বাজার বিশ্লেষনে দেখা গেছে, চলতি বছরের ৫ মাসে (জানুয়ারি-মে) ডিএসইর প্রধান সূচক ১৩০ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ৩২৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এই সময়ে দৈনিক লেনদেন ২শ কোটি টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৬ কোটি টাকায়।

এ সময়ে সূচকের পাশাপাশি লেনদেন বাড়ায় বাজার মূলধন অর্থাৎ বিনিয়োগকারীদের পুঁজি বেড়েছে ১২ হাজার ২৯৫ কোটি ৫০ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। নতুন বছরের শুরুতে সাড়ে ৮৯ লাখ বিনিয়োগকারীর পুঁজি ছিল ৭ লাখ ৬০ হাজার ৯৩৬ কোটি ৮৯ লাখ ৮৭ হাজার টাকা। সেখান থেকে বেড়ে ২৫ মে (সবশেষ কার্যদিবস) দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৭২ হাজার ৫৫৯ কোটি ৬০ লাখ ২ হাজার টাকা।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত এপ্রিলে রোজার ঈদের পর থেকে বাজার ভালো হচ্ছে, প্রায় শতাধিক কোম্পানি ফ্লোর প্রাইস থেকে বেরিয়ে এসেছে। নতুন করে প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তি বিনিয়োগকারীরা সক্রিয় হচ্ছেন। লেনদেন হাজার কোটি টাকার বেশি হচ্ছে। বিমা, আইটিও, খাদ্য এবং ওষুধ খাতের শেয়ারে বিনিয়োগকারীরা ভালো প্রফিট পাচ্ছেন। বিনিয়োগকারীরা নতুন করে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ শুরু করছেন। বিও হিসাবও বাড়ছে।

সিডিবিএলের তথ্য মতে, ২০২৩ সালের শুরুর দিন পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাবের সংখ্যা ছিল ১৮ লাখ ৬১ হাজার ৩০১টি। চার মাস ২৫ দিন পর বিও হিসাবের সেই সংখ্যা গত ২৫ মে দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ৭২ হাজার ২২২টি। একজন বিনিয়োগকারীর একটি বিও হিসাব ধরা হলে গত প্রায় ৫ মাসে ১০ হাজার ৯২১টি বিও বেড়েছে। তাতে প্রায় ১১ হাজার নতুন বিনিয়োগকারী বাজারে এসেছেন বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে।

আরও পড়ুন: নয় কোম্পানির বিক্রেতা উধাও

এদিকে, বিও হিসাব বিশ্লেষণে দেখা যায় গত ৫ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগকারী এসেছে বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে। জানুয়ারিতে নতুন বিও হিসাব খোলা হয়েছে ৪ হাজার ৩৭১টি, ফেব্রুয়ারিতে ২ হাজার ২৩৩টি, পরের মাস মার্চে খোলা হয়েছে ২ হাজার ৭০০টি বিও হিসাব।

২০২২ সালের ধারাবাহিতকায় নতুন বছরের প্রথম তিন মাসে কয়েকটি কোম্পানির শেয়ার প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে অর্থ উত্তোলন করেছে। এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগের লক্ষ্যে অনেকে বিও হিসাব খুলেছেন। যে কারণে প্রথম তিন মাসে বিও হিসাব খোলার সংখ্যা ছিল উল্লেখযোগ্য।

কিন্তু এপ্রিল থেকে আইপিওতে আসা কোম্পানির সংখ্যা কমে যাওয়ার নতুন বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাবও কমে যায়। যে কারণে এপ্রিলে নতুন করে মাত্র ১৮৯টি বিও হিসাব যোগ হয়েছে। তবে মে মাসে এসে বাজারের চিত্র পজিটিভ হওয়ায় বিও হিসাব খোলার সংখ্যাও আগের মাসে চেয়ে কয়েকগুণ বেড়েছে। সবশেষ তথ্যানুযায়ী মে মাসে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৪২৮টি বিও অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে।

জানা গেছে, নতুন ব্রোকার হাউজগুলোর মধ্যে বিও হিসাব খোলার শীর্ষে রয়েছে মোনার্ক হোল্ডিংস লিমিটেড, আল হারমাইন সিকিউরিটিজ, সোনালী সিকিউরিটিজ, থ্রিআই সিকিউরিটিজ, এনআরবি ব্যাংক সিকিউরিটিজ, এসবিএসি ব্যাংক ইনভেস্টমেন্ট, রহমান ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড।

এছাড়া রয়েছে- কবির সিকিউরিটিজ, সোহেল সিকিউরিটিজ, আরএকে ক্যাপিটাল, যমুনা ব্যাংক সিকিউরিটিজ, স্নিগ্ধা ইক্যুইটিজ, ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটিজ কোম্পানি, সাউথ এশিয়া সিকিউরিটজ, ট্রিস্টার সিকিউরিটিজ, কেডিএস শেয়ার অ্যান্ড সিকিউরিটিজ, মির সিকিউরিটিজ, টিকে শেয়ার অ্যান্ড সিকিউরিটজ, আমায়া সিকিউরিটিজ, প্রুডেন্সিয়াল ক্যাপিটাল, তাকাফুল ইসলামী সিকিউরিটিজ, বিএনবি সিকিউরিটিজ, অগ্রণী ইন্স্যুরেন্স সিকিউরিটিজ, মাহিদ সিকিউরিটিজ, বারাকা সিকিউরিটিজ, এএনসি সিকিউরিটিজ, এসএফআইএল সিকিউরিটিজ, তাসিয়া সিকিউরিটিজ, ডাইনেস্টি সিকিউরিটিজ, ক্রিস্টাল সিকিউরিটিজ ও ট্রেড এক্স সিকিউরিটিজ।

অপর এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চলতি বছর পুঁজিবাজারে নতুন করে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগকারী এসেছে দেশি ও প্রাতিষ্ঠানিক। অপরদিকে কমেছে বিদেশি বিনিয়োগকারীর সংখ্যা।

আরও পড়ুন: ক্যাশ ডিভিডেন্ড পাঠিয়েছে ওয়াইম্যাক্স ইলেকট্রোডস

গত ৫ মাসে দেশি বিনিয়োগকারীদের বিও বেড়েছে ১০ হাজার ৭৯০টি। নতুন বছরের শুরুতে দেশি বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব ছিল ১৭ লাখ ৮১ হাজার ৭৯৭টি। সর্বশেষ ২৫ মে দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ৯২ হাজার ৫৮৭টিতে।

এ সময়ে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর বিও হিসাব বেড়েছে ৪১৫টি। পক্ষান্তরে একই সময়ে বিদেশি বিনিয়োগকারী কমেছে ২৮৪টি।

ডিএসইর পরিচালক ও সাবেক সভাপতি শাকিল রিজভী বলেন, গত বছরের তুলনায় এবছর আইপিওর কম অনুমোদন দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এ কারণে বিদেশি বিও হিসাব কমেছে। এক মাস ধরে ইতিবাচক ধারায় পুঁজিবাজারে লেনদেন হচ্ছে। জুলাই থেকে ডিসেম্বর সময়ে যদি বাজারে এ ধারা অব্যাহত থাকে তাহলে তাতে নতুন করে বিনিয়োগকারী আসবে বলে আশা করছি।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক আল-আমিন বলেন, ঈদের আগে বাজারে যে নেগেটিভ ধারা ছিল, সেই ধারা থেকে পজিটিভ ধারায় এসেছে। এর মানে সাইডলাইনে যারা ছিল তারা বিনিয়োগের ফিরছে। তবে তারা ফিরছে স্বল্পমূলধনী কোম্পানির দিকে। কিছু জাঙ্ক শেয়ার অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। টাকা এখন সাপ্লাই হচ্ছে বিমা কোম্পানির দিকে। অর্থাৎ ফ্লোরের যেসব কোম্পানির অর্থ ব্লক ছিল, সেই জায়গাগুলো থেকে মানুষের ফান্ড রিলিজ হচ্ছে। এটা বাজারের পজিটিভ দিক। এটাকে আরও কিছুদিন ধরে রাখতে হবে। যখন বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়বে তখন বিনিয়োগকারীরা হুমড়ি খেয়ে পড়বেন।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার বাজারেও রোড শোর কারণে নতুন করে বিনিয়োগকারীরা বাজারে আসছে। ভালো কোম্পানির আইপিও এলে আবারও বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বাড়বে।

ঢাকা/এসএ

শেয়ার করুন

x
English Version

সুদিনের প্রত্যাশায় পুঁজিবাজারে বাড়ছে বিনিয়োগকারী

আপডেট: ০১:৫০:২৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ মে ২০২৩

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে বৈশ্বিক অর্থনীতি টানাপোড়নের মধ্যদিয়ে যাচ্ছে। চলমান এই যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাবে দেশের পুঁজিবাজার ছিল নিম্নমুখী। এমতাবস্থায়ও নতুন বছরে পুঁজিবাজার ভালো হবে, এমন প্রত্যাশা ছিল বিনিয়োগকারীদের। যে কারণে অনেক নতুন বিনিয়োগকারী বাজারে লেনদেনের জন্য নতুন বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) অ্যাকাউন্ট খোলেন। চলতি ২০২৩ সালের প্রথম পাঁচ (জানুয়ারী-মে) মাসে নতুন বিনিয়োগকারী এসেছে প্রায় ১১ হাজার।

চলতি বছরের বেশিরভাগ সময় পুঁজিবাজার খারাপ সময় পার করলেও মার্চ থেকে একটু একটু করে এ ধারা থেকে বেরিয়ে আসছে পুঁজিবাজার। চলতি বছরের মার্চ ও এপ্রিলে ধারাবাহিক ভাবে বাড়ছে বিদেশি বিনিয়োগকারী সাথে সক্রিয় হচ্ছে দেশীয় বিনিয়োগকারীরা। এ কারণে চলতি বছরের এপ্রিল ও মে মাসে ইতিবাচক ধারায় দেশের পুঁজিবাজারে লেনদেন হয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

বাজার বিশ্লেষনে দেখা গেছে, চলতি বছরের ৫ মাসে (জানুয়ারি-মে) ডিএসইর প্রধান সূচক ১৩০ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ৩২৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এই সময়ে দৈনিক লেনদেন ২শ কোটি টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৬ কোটি টাকায়।

এ সময়ে সূচকের পাশাপাশি লেনদেন বাড়ায় বাজার মূলধন অর্থাৎ বিনিয়োগকারীদের পুঁজি বেড়েছে ১২ হাজার ২৯৫ কোটি ৫০ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। নতুন বছরের শুরুতে সাড়ে ৮৯ লাখ বিনিয়োগকারীর পুঁজি ছিল ৭ লাখ ৬০ হাজার ৯৩৬ কোটি ৮৯ লাখ ৮৭ হাজার টাকা। সেখান থেকে বেড়ে ২৫ মে (সবশেষ কার্যদিবস) দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৭২ হাজার ৫৫৯ কোটি ৬০ লাখ ২ হাজার টাকা।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত এপ্রিলে রোজার ঈদের পর থেকে বাজার ভালো হচ্ছে, প্রায় শতাধিক কোম্পানি ফ্লোর প্রাইস থেকে বেরিয়ে এসেছে। নতুন করে প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তি বিনিয়োগকারীরা সক্রিয় হচ্ছেন। লেনদেন হাজার কোটি টাকার বেশি হচ্ছে। বিমা, আইটিও, খাদ্য এবং ওষুধ খাতের শেয়ারে বিনিয়োগকারীরা ভালো প্রফিট পাচ্ছেন। বিনিয়োগকারীরা নতুন করে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ শুরু করছেন। বিও হিসাবও বাড়ছে।

সিডিবিএলের তথ্য মতে, ২০২৩ সালের শুরুর দিন পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাবের সংখ্যা ছিল ১৮ লাখ ৬১ হাজার ৩০১টি। চার মাস ২৫ দিন পর বিও হিসাবের সেই সংখ্যা গত ২৫ মে দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ৭২ হাজার ২২২টি। একজন বিনিয়োগকারীর একটি বিও হিসাব ধরা হলে গত প্রায় ৫ মাসে ১০ হাজার ৯২১টি বিও বেড়েছে। তাতে প্রায় ১১ হাজার নতুন বিনিয়োগকারী বাজারে এসেছেন বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে।

আরও পড়ুন: নয় কোম্পানির বিক্রেতা উধাও

এদিকে, বিও হিসাব বিশ্লেষণে দেখা যায় গত ৫ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগকারী এসেছে বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে। জানুয়ারিতে নতুন বিও হিসাব খোলা হয়েছে ৪ হাজার ৩৭১টি, ফেব্রুয়ারিতে ২ হাজার ২৩৩টি, পরের মাস মার্চে খোলা হয়েছে ২ হাজার ৭০০টি বিও হিসাব।

২০২২ সালের ধারাবাহিতকায় নতুন বছরের প্রথম তিন মাসে কয়েকটি কোম্পানির শেয়ার প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে অর্থ উত্তোলন করেছে। এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগের লক্ষ্যে অনেকে বিও হিসাব খুলেছেন। যে কারণে প্রথম তিন মাসে বিও হিসাব খোলার সংখ্যা ছিল উল্লেখযোগ্য।

কিন্তু এপ্রিল থেকে আইপিওতে আসা কোম্পানির সংখ্যা কমে যাওয়ার নতুন বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাবও কমে যায়। যে কারণে এপ্রিলে নতুন করে মাত্র ১৮৯টি বিও হিসাব যোগ হয়েছে। তবে মে মাসে এসে বাজারের চিত্র পজিটিভ হওয়ায় বিও হিসাব খোলার সংখ্যাও আগের মাসে চেয়ে কয়েকগুণ বেড়েছে। সবশেষ তথ্যানুযায়ী মে মাসে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৪২৮টি বিও অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে।

জানা গেছে, নতুন ব্রোকার হাউজগুলোর মধ্যে বিও হিসাব খোলার শীর্ষে রয়েছে মোনার্ক হোল্ডিংস লিমিটেড, আল হারমাইন সিকিউরিটিজ, সোনালী সিকিউরিটিজ, থ্রিআই সিকিউরিটিজ, এনআরবি ব্যাংক সিকিউরিটিজ, এসবিএসি ব্যাংক ইনভেস্টমেন্ট, রহমান ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড।

এছাড়া রয়েছে- কবির সিকিউরিটিজ, সোহেল সিকিউরিটিজ, আরএকে ক্যাপিটাল, যমুনা ব্যাংক সিকিউরিটিজ, স্নিগ্ধা ইক্যুইটিজ, ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটিজ কোম্পানি, সাউথ এশিয়া সিকিউরিটজ, ট্রিস্টার সিকিউরিটিজ, কেডিএস শেয়ার অ্যান্ড সিকিউরিটিজ, মির সিকিউরিটিজ, টিকে শেয়ার অ্যান্ড সিকিউরিটজ, আমায়া সিকিউরিটিজ, প্রুডেন্সিয়াল ক্যাপিটাল, তাকাফুল ইসলামী সিকিউরিটিজ, বিএনবি সিকিউরিটিজ, অগ্রণী ইন্স্যুরেন্স সিকিউরিটিজ, মাহিদ সিকিউরিটিজ, বারাকা সিকিউরিটিজ, এএনসি সিকিউরিটিজ, এসএফআইএল সিকিউরিটিজ, তাসিয়া সিকিউরিটিজ, ডাইনেস্টি সিকিউরিটিজ, ক্রিস্টাল সিকিউরিটিজ ও ট্রেড এক্স সিকিউরিটিজ।

অপর এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চলতি বছর পুঁজিবাজারে নতুন করে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগকারী এসেছে দেশি ও প্রাতিষ্ঠানিক। অপরদিকে কমেছে বিদেশি বিনিয়োগকারীর সংখ্যা।

আরও পড়ুন: ক্যাশ ডিভিডেন্ড পাঠিয়েছে ওয়াইম্যাক্স ইলেকট্রোডস

গত ৫ মাসে দেশি বিনিয়োগকারীদের বিও বেড়েছে ১০ হাজার ৭৯০টি। নতুন বছরের শুরুতে দেশি বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব ছিল ১৭ লাখ ৮১ হাজার ৭৯৭টি। সর্বশেষ ২৫ মে দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ৯২ হাজার ৫৮৭টিতে।

এ সময়ে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর বিও হিসাব বেড়েছে ৪১৫টি। পক্ষান্তরে একই সময়ে বিদেশি বিনিয়োগকারী কমেছে ২৮৪টি।

ডিএসইর পরিচালক ও সাবেক সভাপতি শাকিল রিজভী বলেন, গত বছরের তুলনায় এবছর আইপিওর কম অনুমোদন দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এ কারণে বিদেশি বিও হিসাব কমেছে। এক মাস ধরে ইতিবাচক ধারায় পুঁজিবাজারে লেনদেন হচ্ছে। জুলাই থেকে ডিসেম্বর সময়ে যদি বাজারে এ ধারা অব্যাহত থাকে তাহলে তাতে নতুন করে বিনিয়োগকারী আসবে বলে আশা করছি।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক আল-আমিন বলেন, ঈদের আগে বাজারে যে নেগেটিভ ধারা ছিল, সেই ধারা থেকে পজিটিভ ধারায় এসেছে। এর মানে সাইডলাইনে যারা ছিল তারা বিনিয়োগের ফিরছে। তবে তারা ফিরছে স্বল্পমূলধনী কোম্পানির দিকে। কিছু জাঙ্ক শেয়ার অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। টাকা এখন সাপ্লাই হচ্ছে বিমা কোম্পানির দিকে। অর্থাৎ ফ্লোরের যেসব কোম্পানির অর্থ ব্লক ছিল, সেই জায়গাগুলো থেকে মানুষের ফান্ড রিলিজ হচ্ছে। এটা বাজারের পজিটিভ দিক। এটাকে আরও কিছুদিন ধরে রাখতে হবে। যখন বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়বে তখন বিনিয়োগকারীরা হুমড়ি খেয়ে পড়বেন।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার বাজারেও রোড শোর কারণে নতুন করে বিনিয়োগকারীরা বাজারে আসছে। ভালো কোম্পানির আইপিও এলে আবারও বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বাড়বে।

ঢাকা/এসএ