০২:০৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪

বেনজীর পরিবারের ৩৪৫ বিঘা জমি!

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০১:১২:৫০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ মে ২০২৪
  • / ১০২৭৯ বার দেখা হয়েছে

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ এবং তাঁর স্ত্রী, সন্তান ও কয়েকজন স্বজনের নামে প্রায় ১১৪ একর বা ৩৪৫ বিঘা জমি খুঁজে পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সবচেয়ে বেশি জমি পাওয়া গেছে তাঁর স্ত্রী জীশান মীর্জার নামে।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

বেনজীরের সম্পদ জব্দ করার জন্য দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের আদেশে জমির এই হিসাব পাওয়া গেছে। আদালতে পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) উল্লেখ করেন, বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে নিজ নামে এবং স্ত্রী-সন্তানদের নামে দেশে-বিদেশে শত শত কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ করা হয়েছে। তাঁরা এই সম্পদ (তফসিলে বর্ণিত) অবৈধভাবে অর্জন করেছেন।

ঢাকা মহানগর আদালতের সিনিয়র স্পেশাল জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন গত বৃহস্পতিবার বেনজীর আহমেদ, তাঁর স্ত্রী ও সন্তানদের নামে থাকা স্থাবর সম্পদ জব্দ (ক্রোক) করার আদেশ দেন। একই সঙ্গে তাঁদের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ (ফ্রিজ) করারও আদেশ দেওয়া হয়। বেনজীর ও তাঁর স্ত্রী-সন্তানদের নামে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকে ৩৩টি ব্যাংক হিসাব (অ্যাকাউন্ট) রয়েছে। যদিও নথিতে ওই সব ব্যাংক হিসাবে কত টাকা রয়েছে, তা উল্লেখ নেই।

আদেশের পর দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, বেনজীর আহমেদের সম্পদ কেনার ৮৩টি দলিল জব্দ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। নথিপত্রে দেখা যায়, এই ৮৩টি দলিলে জমি রয়েছে প্রায় ১১৪ একর (৩৩ শতাংশে এক বিঘা ধরে ৩৪৫ বিঘা)। এর মধ্যে বেনজীরের স্ত্রী জীশান মীর্জার নামে অন্তত ৮১ একর বা ২৪৫ বিঘা জমি রয়েছে। বেনজীরের নিজের নামে জমি কম, ৭ দশমিক ৬০ একর (২৩ বিঘা)। বাকি প্রায় ২৬ একর (প্রায় ৭৯ বিঘা) জমি রয়েছে তাঁর তিন মেয়ে ও কয়েকজন স্বজনের নামে।

বেনজীর আহমেদের তিন মেয়ে হলেন ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর, তাহসিন রাইশা বিনতে বেনজীর ও জারা জেরিন বিনতে বেনজীর। কোন মেয়ের নামে কত জমি, তা আলাদাভাবে বের করা যায়নি। তবে দেখা যায়, ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীরের নামের গোপালগঞ্জের সাহাপুরে একটি দলিলে রয়েছে ১৩ একরের (৩৯ বিঘা) বেশি জমি।

আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় প্রস্তুত খুলনার ৬০৪টি সাইক্লোন শেল্টার

দুদকের অনুসন্ধান অনুযায়ী, বেনজীর আহমেদ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে গোপালগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলা, কক্সবাজারের ইনানী সমুদ্রসৈকত ও সেন্ট মার্টিন দ্বীপে জমি কেনা হয়েছে। জমিগুলোর মোট দলিলমূল্য দেখানো হয়েছে ১৬ কোটি ১৫ লাখ টাকার কিছু বেশি। উল্লেখ্য, বেনজীরের বাড়ি গোপালগঞ্জ।

বেনজীর আহমেদের স্ত্রী জীশান মীর্জার নামে জমি কেনা হয়েছে সাউদার্ন বিজনেস ইনিশিয়েটিভ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা অংশীদার পরিচয়ে। বেনজীর পুলিশে চাকরিরত থাকার সময় তাঁর স্ত্রী কোনো পেশায় রয়েছেন বলে জানা যায়নি। তবে সম্প্রতি দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর বেনজীর এক ভিডিও বার্তায় বলেছিলেন, তাঁর স্ত্রী ও সন্তানদের মৎস্য খামার রয়েছে। পরে আরও জানা যায়, তাঁর স্ত্রী ও সন্তানেরা বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদে রয়েছেন।

বেনজীর আহমেদ ২০২০ সালের ১৫ এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আইজিপি ছিলেন। এর আগে তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার ও র‍্যাবের মহাপরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র‍্যাব এবং র‍্যাবের সাবেক ও বর্তমান যে সাত কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দেয়, তাঁদের মধ্যে বেনজীর আহমেদের নামও ছিল। তখন তিনি আইজিপির দায়িত্বে ছিলেন।

সম্প্রতি বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে বিপুল সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগ ওঠে। এরপর তাঁর জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অনুসন্ধানে একটি কমিটি করার কথা গত ২২ এপ্রিল সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছিলেন দুদকের সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন। পরদিন (২৩ এপ্রিল) হাইকোর্ট এক আদেশে বেনজীরের বিরুদ্ধে আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানের অগ্রগতির বিষয়টি হলফনামা আকারে দুই মাস পর জানাতে দুদককে নির্দেশ দেন।

দুদক অনুসন্ধান শেষে আদালতে প্রতিবেদন দিয়ে বেনজীর আহমেদ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের সম্পদ জব্দের আবেদন করে। আদালতে পাবলিক প্রসিকিউটর এ-ও বলেন, বেনজীর ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ বিক্রি/হস্তান্তর করে বিদেশে পাচারের চেষ্টা করছেন।

ঢাকা/এসএইচ

শেয়ার করুন

x

বেনজীর পরিবারের ৩৪৫ বিঘা জমি!

আপডেট: ০১:১২:৫০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ মে ২০২৪

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ এবং তাঁর স্ত্রী, সন্তান ও কয়েকজন স্বজনের নামে প্রায় ১১৪ একর বা ৩৪৫ বিঘা জমি খুঁজে পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সবচেয়ে বেশি জমি পাওয়া গেছে তাঁর স্ত্রী জীশান মীর্জার নামে।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

বেনজীরের সম্পদ জব্দ করার জন্য দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের আদেশে জমির এই হিসাব পাওয়া গেছে। আদালতে পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) উল্লেখ করেন, বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে নিজ নামে এবং স্ত্রী-সন্তানদের নামে দেশে-বিদেশে শত শত কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ করা হয়েছে। তাঁরা এই সম্পদ (তফসিলে বর্ণিত) অবৈধভাবে অর্জন করেছেন।

ঢাকা মহানগর আদালতের সিনিয়র স্পেশাল জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন গত বৃহস্পতিবার বেনজীর আহমেদ, তাঁর স্ত্রী ও সন্তানদের নামে থাকা স্থাবর সম্পদ জব্দ (ক্রোক) করার আদেশ দেন। একই সঙ্গে তাঁদের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ (ফ্রিজ) করারও আদেশ দেওয়া হয়। বেনজীর ও তাঁর স্ত্রী-সন্তানদের নামে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকে ৩৩টি ব্যাংক হিসাব (অ্যাকাউন্ট) রয়েছে। যদিও নথিতে ওই সব ব্যাংক হিসাবে কত টাকা রয়েছে, তা উল্লেখ নেই।

আদেশের পর দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, বেনজীর আহমেদের সম্পদ কেনার ৮৩টি দলিল জব্দ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। নথিপত্রে দেখা যায়, এই ৮৩টি দলিলে জমি রয়েছে প্রায় ১১৪ একর (৩৩ শতাংশে এক বিঘা ধরে ৩৪৫ বিঘা)। এর মধ্যে বেনজীরের স্ত্রী জীশান মীর্জার নামে অন্তত ৮১ একর বা ২৪৫ বিঘা জমি রয়েছে। বেনজীরের নিজের নামে জমি কম, ৭ দশমিক ৬০ একর (২৩ বিঘা)। বাকি প্রায় ২৬ একর (প্রায় ৭৯ বিঘা) জমি রয়েছে তাঁর তিন মেয়ে ও কয়েকজন স্বজনের নামে।

বেনজীর আহমেদের তিন মেয়ে হলেন ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর, তাহসিন রাইশা বিনতে বেনজীর ও জারা জেরিন বিনতে বেনজীর। কোন মেয়ের নামে কত জমি, তা আলাদাভাবে বের করা যায়নি। তবে দেখা যায়, ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীরের নামের গোপালগঞ্জের সাহাপুরে একটি দলিলে রয়েছে ১৩ একরের (৩৯ বিঘা) বেশি জমি।

আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় প্রস্তুত খুলনার ৬০৪টি সাইক্লোন শেল্টার

দুদকের অনুসন্ধান অনুযায়ী, বেনজীর আহমেদ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে গোপালগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলা, কক্সবাজারের ইনানী সমুদ্রসৈকত ও সেন্ট মার্টিন দ্বীপে জমি কেনা হয়েছে। জমিগুলোর মোট দলিলমূল্য দেখানো হয়েছে ১৬ কোটি ১৫ লাখ টাকার কিছু বেশি। উল্লেখ্য, বেনজীরের বাড়ি গোপালগঞ্জ।

বেনজীর আহমেদের স্ত্রী জীশান মীর্জার নামে জমি কেনা হয়েছে সাউদার্ন বিজনেস ইনিশিয়েটিভ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা অংশীদার পরিচয়ে। বেনজীর পুলিশে চাকরিরত থাকার সময় তাঁর স্ত্রী কোনো পেশায় রয়েছেন বলে জানা যায়নি। তবে সম্প্রতি দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর বেনজীর এক ভিডিও বার্তায় বলেছিলেন, তাঁর স্ত্রী ও সন্তানদের মৎস্য খামার রয়েছে। পরে আরও জানা যায়, তাঁর স্ত্রী ও সন্তানেরা বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদে রয়েছেন।

বেনজীর আহমেদ ২০২০ সালের ১৫ এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আইজিপি ছিলেন। এর আগে তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার ও র‍্যাবের মহাপরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র‍্যাব এবং র‍্যাবের সাবেক ও বর্তমান যে সাত কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দেয়, তাঁদের মধ্যে বেনজীর আহমেদের নামও ছিল। তখন তিনি আইজিপির দায়িত্বে ছিলেন।

সম্প্রতি বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে বিপুল সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগ ওঠে। এরপর তাঁর জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অনুসন্ধানে একটি কমিটি করার কথা গত ২২ এপ্রিল সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছিলেন দুদকের সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন। পরদিন (২৩ এপ্রিল) হাইকোর্ট এক আদেশে বেনজীরের বিরুদ্ধে আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানের অগ্রগতির বিষয়টি হলফনামা আকারে দুই মাস পর জানাতে দুদককে নির্দেশ দেন।

দুদক অনুসন্ধান শেষে আদালতে প্রতিবেদন দিয়ে বেনজীর আহমেদ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের সম্পদ জব্দের আবেদন করে। আদালতে পাবলিক প্রসিকিউটর এ-ও বলেন, বেনজীর ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ বিক্রি/হস্তান্তর করে বিদেশে পাচারের চেষ্টা করছেন।

ঢাকা/এসএইচ