খালেদা জিয়ার লন্ডন যাত্রার প্রস্তুতি শুরু, কঠিন নিরাপত্তা

- আপডেট: ০৭:৩৩:০৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ জানুয়ারী ২০২৫
- / ১০৩১৯ বার দেখা হয়েছে
উন্নত চিকিৎসার জন্য রাতে যুক্তরাজ্যের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এরই মধ্যে তিনবারের প্রধানমন্ত্রীর লন্ডন যাত্রার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। রাজধানীর গুলশানে খালেদা জিয়ার বাসার সামনে এবং আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুক–টুইটার–লিংকডইন–ইন্সটাগ্রাম–ইউটিউব
মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটার দিকে বিএনপি নেত্রীর গুলশান বাসভবন ফিরোজার সামনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ব্যাপক উপস্থিতি দেখা গেছে। সেই সঙ্গে তার বাসভবনের সামনে হচ্ছেন দলটির নেতাকর্মীরা। এছাড়া বাসভবনের আশপাশের সড়কগুলোতেও দলটির নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।
ফিরোজার সামনের রাস্তায় গাড়ি চলাচল বন্ধ রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তৎপর রয়েছেন। সেই সঙ্গে গণমাধ্যম ও সংবাদকর্মীদের সংখ্যাও গত দিনের তুলনায় বেশি দেখা যাচ্ছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেখানে ভিড় বাড়ছে। ফিরোজা বাসভবনের সামনে সবাইকে যেতেও দেয়াও হচ্ছে না।
রাত আটটায় গুলশানের বাসা থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রওয়ানা হবেন খালেদা জিয়া। রাত ৯টায় তিনি বিমানবন্দরে পৌঁছাবেন। এরপর সেখানের সবশেষ আনুষ্ঠানিকতা শেষ রাত ১০টায় কাতারের আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তিনি ঢাকা ছেড়ে যাবেন।
সাড়ে সাত বছর পর লন্ডনে ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হবে। তবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বাসায় নয়, খালেদা জিয়াকে সরাসরি নেওয়া হবে লন্ডনের হাসপাতালে। তাকে নিতে কাতারের আমিরের পাঠানো এয়ার অ্যাম্বুলেন্স সোমবার রাতেই ঢাকায় এসেছে।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য লন্ডনযাত্রাকে ঘিরে শাহজালাল বিমানবন্দর এলাকা নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে বিমানবন্দরের বহিরাঙ্গন এলাকার প্রবেশমুখগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থান লক্ষ করা গেছে। এপিবিএনের ডগ স্কোয়াড ও কুইক রেসপন্স টিমও রয়েছে।
খালেদা জিয়ার লন্ডন সফর উপলক্ষ্যে বিমানবন্দরের ভেতরে ও বাইরে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে বেবিচক। এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশের ৮ শতাধিক সদস্যের পাশাপাশি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নসহ সাদা পোশাকে অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন।
আরও পড়ুন: এইচএসসি পরীক্ষা জুনের শেষ সপ্তাহে
বিমানবন্দরের বাইরে মূল ফটক থেকে শুরু করে পুরো এলাকা নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার আওতায় আনা হয়েছে। মূল ফটক, ডমিস্টিক টার্মিনালের প্রবেশ পথ থেকে শুরু পুরো এলাকা, বেবিচক সদর দফতর থেকে হ্যাঙ্গারগেট হয়ে পুরো এলাকা এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশের নিয়ন্ত্রণে।
এখানে চলাচলকারী ব্যক্তিদের সন্দেহ হলে তল্লাশি করতেও দেখা যাচ্ছে। এছাড়া মূল ফটক দিয়ে ভেতরে প্রবেশের সব গাড়ি তল্লাশির আওতায় আনা হচ্ছে। বিমানবন্দরের কর্মকর্তারা বলছেন, এখানে বাইরে ও ভেতরে মূলত তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
সকাল থেকেই আমর্ড পুলিশের অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন রয়েছে। বিকাল চারটার পর পুরো বিমানবন্দর এলাকা আমাদের সদস্যরা নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দিয়েছে। আমাদের অতিরিক্ত সদস্যদের পাশাপাশি কুইক রেসপঞ্জ টিম, ডগ স্কোয়াড মোতায়েন রয়েছে। সন্দেহজনক হলেই তল্লাশি চালানো হচ্ছে।
বিএনপি নেত্রীকে বহনকারী বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি লন্ডনের স্থানীয় সময় বুধবার সকাল ১০টায় হিথ্রো বিমানবন্দরে অবতরণ করবে। সেখানে তাকে ভিআইপি প্রটোকল দেবে হিথ্রো কর্তৃপক্ষ। অভ্যর্থনা জানাতে উপস্থিত থাকবেন তার বড় ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও পুত্রবধূ ডা. জুবাইদা রহমানসহ পরিবারের সদস্যরা। এছাড়াও উপস্থিত হবেন যুক্তরাজ্য বিএনপির নেতাকর্মীরা।
ঢাকা থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স খালেদা জিয়ার সাথে থাকবেন কাতারের চার চিকিৎসক ও প্যারামেডিকস এবং খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের ছয় সদস্য। এ ছাড়া খালেদা জিয়ার ছোট ছেলের স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলা রহমান, উপদেষ্টা এনামুল হক চৌধুরী, নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল এবং একান্ত সচিব এ বি এম আবদুস সাত্তারসহ আরও কয়েকজন তার সঙ্গে যাবেন।
দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ ও কিডনি সমস্যাসহ নানা স্বাস্থ্য জটিলতায় ভুগছেন তিনবারের এই প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা সরকারের আমলে অসুস্থ খালেদা জিয়া উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে ১৮ বার আবেদন করলেও হাসিনা সরকার তাকে বিদেশে যেতে অনুমতি দেয়নি।
সবশেষ গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে মুখে হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। এরপর খালেদা জিয়াকে সব মিথ্যা মামলা থেকে অব্যাহতি দিলে বিদেশে চিকিৎসার পথ খুলে যায়। এরপরই খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে বিএনপি।
ঢাকা/এসএইচ