ইসরায়েলবিরোধী মন্তব্য, জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা

- আপডেট: ১১:৩১:৩০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫
- / ১০২৮৯ বার দেখা হয়েছে
ইসরায়েলবিরোধী মন্তব্যের জেরে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ ফ্রানচেস্কা আলবানেজের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে প্রতিবেদন দিয়েছিলেন তিনি। আজ বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুক–টুইটার–লিংকডইন–ইন্সটাগ্রাম–ইউটিউব
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, গাজার যুদ্ধ চলাকালে ইসরায়েলের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে প্রতিবেদন দেওয়ার কারণে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ ফ্রানচেস্কা আলবানেজের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বুধবার এ ঘোষণা দেন। তিনি অভিযোগ করেন, আলবানেজ “যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক যুদ্ধ চালাচ্ছেন”।
ফ্রানচেস্কা আলবানেজ অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ র্যাপোর্টিয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ইসরায়েলের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে তিনি অন্যতম কণ্ঠস্বর হিসেবে পরিচিত।
ইসরায়েল ও তার মিত্ররা বহু বছর ধরেই আলবানেজকে এই পদ থেকে অপসারণের দাবি জানিয়ে আসছে।
অবশ্য আলবানেজ এই নিষেধাজ্ঞা নিয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, তিনি এখন ব্যস্ত আছেন রাষ্ট্রগুলোকে তাদের দায়িত্ব স্মরণ করিয়ে দিতে। আর সেটি হলো গণহত্যা বন্ধ করা এবং এর জন্য দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত করা।
তিনি আল জাজিরাকে পাঠানো এক টেক্সট বার্তায় লেখেন: “মাফিয়া-স্টাইল ভয়ভীতির কৌশল নিয়ে কোনো মন্তব্য নেই। ব্যস্ত আছি রাষ্ট্রগুলোকে তাদের দায়িত্ব মনে করিয়ে দিতে— গণহত্যা থামাও, শাস্তি দাও এবং যারা এসব কর্মকাণ্ড থেকে লাভবান হচ্ছে, তাদেরও জবাবদিহির আওতায় আনো।”
বুধবার আলবানেজ সামাজিক মাধ্যমে লেখেন, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)-এর ওয়ারেন্টভুক্ত ব্যক্তি হলেও ইউরোপের আকাশসীমা ব্যবহার করতে পারছেন, যা অগ্রহণযোগ্য।
তিনি লিখেছেন: “ইতালি, ফ্রান্স ও গ্রিসের নাগরিকদের জানা উচিত প্রত্যেকটি রাজনৈতিক কাজ, যা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে, তা শুধু এই আইনকে নয়, সবাইকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে।”
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত নেতানিয়াহু ও ইসরায়েলের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োয়াভ গালান্তকে গাজায় মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা ফিলিস্তিনিদের খাদ্য, পানি ও ওষুধের মতো জীবনরক্ষাকারী উপকরণ থেকে বঞ্চিত করেছেন।
এর আগে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশ জারি করে জানান, যেসব আইসিসি কর্মকর্তা ইসরায়েলকে লক্ষ্যবস্তু করছে, তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে। এরপর গত মাসে চারজন আইসিসি বিচারকের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ওয়াশিংটন।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও বলেন, আলবানেজ “ইহুদিবিদ্বেষী” এবং নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে আইসিসির ওয়ারেন্ট ইস্যুর কোনো বৈধ ভিত্তি ছিল না। তিনি আরও দাবি করেন, আলবানেজের সাম্প্রতিক একটি প্রতিবেদন মার্কিন কোম্পানিসহ একাধিক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করেছে, যারা গাজায় ইসরায়েলের অভিযানে সহায়তা করেছে।
আরও পড়ুন: ব্রাজিলের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি ট্রাম্পের
ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ অনুযায়ী, যেসব ব্যক্তি নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বে, তাদের যুক্তরাষ্ট্রে থাকা সম্পদ জব্দ করা হবে এবং তাদের ও তাদের পরিবারের সদস্যদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হবে।
এদিকে ‘সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল পলিসি’ নামের যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক থিংক ট্যাংকের প্রধান ন্যান্সি ওকাইল এই নিষেধাজ্ঞাকে “ভয়াবহ এবং কর্তৃত্ববাদী আচরণ” বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন, “জাতিসংঘের একজন বিশেষজ্ঞের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র স্বৈরশাসকদের মতো আচরণ করছে।”
প্রসঙ্গত, গত ২১ মাসে গাজায় ইসরায়েলের মার্কিন-সমর্থিত অভিযান ফিলিস্তিন ভূখণ্ডকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। স্থানীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, এতে কমপক্ষে ৫৭ হাজার ৫৭৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
ঢাকা/এসএইচ