০৭:৫৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৫

দক্ষ ব্যাংক ব্যবস্থাপনা গড়া এখন বড় চ্যালেঞ্জ: আহসান এইচ মনসুর

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ১০:৪৪:০৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৫
  • / ১০২২৮ বার দেখা হয়েছে

বাংলাদেশে দক্ষ ব্যাংক ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। গতকাল শনিবার (৪ অক্টোবর) সন্ধ্যায় রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে ফিন্যান্সিয়াল এক্সিলেন্স লিমিটেডের ১৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।

গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, দক্ষ ব্যাংক ব্যবস্থাপনা এখন সময়ের বড় চাহিদা। বর্তমানে ভালো ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। দেশের অধিকাংশ ব্যাংক ‘কোর ব্যাংকিং সিস্টেম’-এর জন্য ভারতের ওপর নির্ভরশীল—এ অবস্থায় আমাদের নিজেদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে।

তিনি আরও বলেন, যদিও দেশে ব্যাংকারদের প্রশিক্ষণের জন্য নানা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, তবে সবচেয়ে কার্যকর শিক্ষা হয় কর্মক্ষেত্রে। কিন্তু ব্যাংকখাতে প্রশিক্ষণ ও জনবল উন্নয়নে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগের সক্ষমতা এখনো আমাদের সীমিত।

রাজনৈতিক প্রভাব ব্যাংকখাতের সুশাসনের অন্যতম বড় বাধা বলে উল্লেখ করে গভর্নর বলেন, ঝুঁকি মূল্যায়নের আগেই অনেক ব্যাংক একই খাতে একযোগে ঋণ দেয়। এর ফলে ব্যাংকগুলো অপ্রয়োজনীয় ঝুঁকিতে পড়ে। তিনি জানান, দেশের আর্থিকখাতের আকার এখন জিডিপির মাত্র ৫২ থেকে ৫৩ শতাংশ, যেখানে চীনে তা ২০০ শতাংশের বেশি এবং ভারতে প্রায় ১০০ শতাংশ। এই অবস্থান আমাদের জন্য গ্রহণযোগ্য নয়।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, শুধু পেশাগত প্রশিক্ষণ যথেষ্ট নয়, ব্যাংক কর্মকর্তাদের মানসিক প্রশিক্ষণও প্রয়োজন। কারণ প্রশিক্ষিত কিন্তু অসৎ ব্যক্তি অনেক সময় অপ্রশিক্ষিত মানুষের চেয়েও বেশি ক্ষতি করতে পারে।

ড. সালেহউদ্দিন আরও বলেন, আগামী তিন-চার মাস দেশের জন্য আরও কঠিন সময় হতে পারে। আমাদের অন্তত এমন কিছু করতে হবে যাতে পরবর্তী সরকারের জন্য কার্যকর পদচিহ্ন রেখে যাওয়া যায়। যদি নিজেদের দায়িত্ব না বুঝি, জনগণই আমাদের জবাবদিহিতার মুখোমুখি করবে—ইতিহাস তা প্রমাণ করেছে।

নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও নীতিনির্ধারণে কিছু ঘাটতির কথা স্বীকার করে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, মাত্র ১৪ মাসে আগের সব ভুল শুধরে ফেলা সম্ভব নয়। তাই জনগণের ধৈর্য প্রয়োজন। আমরা চেষ্টা করছি আগামী কয়েক মাসে কিছু মৌলিক সংস্কার বাস্তবায়ন করতে।

অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্যে ফিন্যান্সিয়াল এক্সিলেন্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান মামুন রশীদ জানান, ব্যাংকিং খাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), প্রকল্প ব্যবস্থাপনা, আলোচনার কৌশল ও সম্পর্ক ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন বিষয়ে ইতিমধ্যে শতাধিক প্রশিক্ষণ আয়োজন করা হয়েছে।

সমাপনী বক্তব্য দেন অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ফিন্যান্সিয়াল এক্সিলেন্স লিমিটেডের পরিচালক সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশের সিইও নাসের এজাজ বিজয়, ইউসিবি চেয়ারম্যান শরীফ জহির, মাস্টারকার্ড বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নূরুন নাহার ও হাবিবুর রহমান এবং সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন প্রমুখ।

ঢাকা/এসএইচ

শেয়ার করুন

error: Content is protected ! Please Don't Try!

দক্ষ ব্যাংক ব্যবস্থাপনা গড়া এখন বড় চ্যালেঞ্জ: আহসান এইচ মনসুর

আপডেট: ১০:৪৪:০৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৫

বাংলাদেশে দক্ষ ব্যাংক ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। গতকাল শনিবার (৪ অক্টোবর) সন্ধ্যায় রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে ফিন্যান্সিয়াল এক্সিলেন্স লিমিটেডের ১৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।

গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, দক্ষ ব্যাংক ব্যবস্থাপনা এখন সময়ের বড় চাহিদা। বর্তমানে ভালো ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। দেশের অধিকাংশ ব্যাংক ‘কোর ব্যাংকিং সিস্টেম’-এর জন্য ভারতের ওপর নির্ভরশীল—এ অবস্থায় আমাদের নিজেদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে।

তিনি আরও বলেন, যদিও দেশে ব্যাংকারদের প্রশিক্ষণের জন্য নানা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, তবে সবচেয়ে কার্যকর শিক্ষা হয় কর্মক্ষেত্রে। কিন্তু ব্যাংকখাতে প্রশিক্ষণ ও জনবল উন্নয়নে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগের সক্ষমতা এখনো আমাদের সীমিত।

রাজনৈতিক প্রভাব ব্যাংকখাতের সুশাসনের অন্যতম বড় বাধা বলে উল্লেখ করে গভর্নর বলেন, ঝুঁকি মূল্যায়নের আগেই অনেক ব্যাংক একই খাতে একযোগে ঋণ দেয়। এর ফলে ব্যাংকগুলো অপ্রয়োজনীয় ঝুঁকিতে পড়ে। তিনি জানান, দেশের আর্থিকখাতের আকার এখন জিডিপির মাত্র ৫২ থেকে ৫৩ শতাংশ, যেখানে চীনে তা ২০০ শতাংশের বেশি এবং ভারতে প্রায় ১০০ শতাংশ। এই অবস্থান আমাদের জন্য গ্রহণযোগ্য নয়।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, শুধু পেশাগত প্রশিক্ষণ যথেষ্ট নয়, ব্যাংক কর্মকর্তাদের মানসিক প্রশিক্ষণও প্রয়োজন। কারণ প্রশিক্ষিত কিন্তু অসৎ ব্যক্তি অনেক সময় অপ্রশিক্ষিত মানুষের চেয়েও বেশি ক্ষতি করতে পারে।

ড. সালেহউদ্দিন আরও বলেন, আগামী তিন-চার মাস দেশের জন্য আরও কঠিন সময় হতে পারে। আমাদের অন্তত এমন কিছু করতে হবে যাতে পরবর্তী সরকারের জন্য কার্যকর পদচিহ্ন রেখে যাওয়া যায়। যদি নিজেদের দায়িত্ব না বুঝি, জনগণই আমাদের জবাবদিহিতার মুখোমুখি করবে—ইতিহাস তা প্রমাণ করেছে।

নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও নীতিনির্ধারণে কিছু ঘাটতির কথা স্বীকার করে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, মাত্র ১৪ মাসে আগের সব ভুল শুধরে ফেলা সম্ভব নয়। তাই জনগণের ধৈর্য প্রয়োজন। আমরা চেষ্টা করছি আগামী কয়েক মাসে কিছু মৌলিক সংস্কার বাস্তবায়ন করতে।

অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্যে ফিন্যান্সিয়াল এক্সিলেন্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান মামুন রশীদ জানান, ব্যাংকিং খাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), প্রকল্প ব্যবস্থাপনা, আলোচনার কৌশল ও সম্পর্ক ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন বিষয়ে ইতিমধ্যে শতাধিক প্রশিক্ষণ আয়োজন করা হয়েছে।

সমাপনী বক্তব্য দেন অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ফিন্যান্সিয়াল এক্সিলেন্স লিমিটেডের পরিচালক সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশের সিইও নাসের এজাজ বিজয়, ইউসিবি চেয়ারম্যান শরীফ জহির, মাস্টারকার্ড বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নূরুন নাহার ও হাবিবুর রহমান এবং সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন প্রমুখ।

ঢাকা/এসএইচ