যতটুকু জমি আছে তা চাষের আওতায় এনে খাদ্য উৎপাদন বাড়ান: প্রধানমন্ত্রী

- আপডেট: ০২:৫৩:৫৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ অক্টোবর ২০২২
- / ১০৩৬৩ বার দেখা হয়েছে
বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে সম্ভাব্য বৈশ্বিক দুর্ভিক্ষ বা খাদ্য সংকট থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করার জন্য প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আবারো অনুরোধ করছি কোন খাদ্যের অপচয় নয়, যার যেখানে যতটুকু জমি আছে তা চাষের আওতায় এনে খাদ্য উৎপাদন বাড়ান, সারা বিশ্বে যে দুর্যোগের আভাস আমরা পাচ্ছি, তা থেকে বাংলাদেশকে সুরক্ষিত করুন। আমি বিশ্বাস করি সকলের প্রচেষ্টায় এটা করা সম্ভব।’
অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুক–টুইটার–লিংকডইন–ইন্সটাগ্রাম–ইউটিউব
আজ সকালে ‘বিশ্ব খাদ্য দিবস-২০২২’ উদযাপন উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে কৃষি মন্ত্রনালয় আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘পুষ্টিকর খাদ্য, সুষম খাদ্য, নিরাপদ খাদ্য-এটাই আমরা নিশ্চিত করতে চাই। যা আমাদের দেশের মানুষ কেবল নয়, সারাবিশ্বের মানুষেরই এটা একান্তভাবে প্রয়োজন।’ খাদ্যের চাহিদা কোনদিন কমে না, বরং বাড়ে সেই কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘কাজেই আমি যত উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পারি আর যত বেশি খাদ্য চাহিদা মেটাতে পারি ততই আমাদের মঙ্গল হবে বলে আমি বিশ্বাস করি এবং যেটা আমাদের অর্থনীতিতেও বিরাট অবদান রাখতে পারে।’
নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন ও পুষ্টির চাহিদা পূরণে সবাইকে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, ‘সেই সঙ্গে আমি বলবো সুষম খাদ্য গ্রহণ করা, খাদ্যের অপচয় বন্ধ করা এবং উদ্বৃত্ত খাদ্য সংরক্ষণ এবং পুর্নব্যবহারের ব্যবস্থা করতে হবে। তাছাড়া সারাদেশে গড়ে তোলা ১শ’ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে যাতে কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পও গড়ে ওঠে সেই বিষয়টাতেও আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি।’
‘নিজের খাবার নিজেরা উৎপাদন করার চেষ্টা করবেন, যাতে পরিবেশের ওপর চাপ কমে, বাজারের ওপর চাপ কমে। সকলে মিলে আমরা কাজ করলে অবশ্যই আমাদের বাংলাদেশের ওপর কোন রকম আঘাত আসবে না, এটা আমার দৃঢ বিশ্বাস’, যোগ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি অর্জনে ৬টি থিম্যাটিক এরিয়াতে কাজ করে যাচ্ছি। প্রথমত, কৃষি গবেষণা এবং উন্নয়ন; দ্বিতীয়ত, কৃষি উপকরণ সরবরাহ; তৃতীয়ত, কৃষি সম্প্রসারণ; চতুর্থত, সেচ কাজে পানির সাশ্রয়ী ব্যবহার; পঞ্চমত, জলবায়ু পরিবর্তন জনিত প্রভাব মোকাবিলা এবং ৬ষ্ঠত, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি ও মানব সম্পদ উন্নয়ন। এই বিষয়গুলোর দিকে লক্ষ্য রেখেই তাঁর সরকার প্রতিটি পদক্ষেপ নিয়ে যাচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, তাঁর সরকার নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার জন্য নিরাপদ খাদ্য আইন-২০১৩ প্রণয়ন করেছে, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কতৃর্পক্ষ প্রতিষ্ঠাসহ সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধিবিধান তৈরী করেছে এবং ২০১৮ সাল থেকে নিরাপদ খাদ্য দিবস পালন শুরু করেছে।
পাশাপশি তিনি বলেন, ভেজাল খাদ্য প্রতিরোধে ‘অন দ্যা স্পট স্ক্রিনিং,’ ‘মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে এবং যারা খাদ্যে ভেজাল দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষনিক শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। যাতে মানুষ নিরাপদ খাদ্য পেতে পারে। আর এই নিরাপদ খাদ্যটাই হচ্ছে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিরাপদ খাদ্য কতৃর্পক্ষের প্রধান কার্যালয় স্থাপন এবং কেন্দ্রীয় ও বিভাগীয় ল্যাবরেটরী স্থাপনে পূনর্বাঞ্চলে ৫ একর জমিও বরাদ্দ করেছে। আটটি বিভাগে আটটি রেফারেন্স ল্যাবরেটরী স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে এবং নিরাপদ খাদ্য কতৃর্পক্ষের হটলাইন চালু করা হয়েছে।
তিনি আশা ব্যক্ত করে বলেন, আমাদের যে মাটি ও মানুষের শক্তি রয়েছে তা নিয়ে আমাদের কৃষকদের একটু সহায়তা দিলেই আমরা ভোজ্যতেল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারবো। আর তাঁর সরকার মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ উন্নয়নের মাধ্যমে মানুষের আমিষের চাহিদা পূরণের উদ্যোগ নিয়েছে। এ প্রসঙ্গে জাতির পিতার গ্রামীণ উন্নয়ন ও কৃষির ওপর গুরুত্বারোপ করে দেয়া দেয়া এক ভাষণের উদ্ধৃতি তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আমার মাটির সঙ্গে, আমার মানুষের সঙ্গে, আমার কালচারের সঙ্গে, আমার ব্যাকগ্রাউন্ডের সঙ্গে, আমার ইতিহাসের সঙ্গে যুক্ত করেই আমার ইকোনমিক সিস্টেম গড়তে হবে।’
‘আমিও এটা বিশ্বাস করি যে, আমাদের মাটি ও মানুষ, আমাদের প্রকৃতির সাথে মিল রেখেই আমাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমেই আমরা আমাদেও দেশকে উন্নত, সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলবো। আমাদের দেশকে আরো উন্নত করবো এটাই আমাদের লক্ষ্য,’বলেন তিনি।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এবং কৃষি মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্য দেন কৃষি সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে বিশ্ব খাদ্য দিবস এবং কৃষি খাতের উন্নয়নে সরকারের প্রচেষ্টা নিয়ে একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়।
আরও পড়ুন: দুই কোটি কৃষক উপকরণ কার্ড পেয়েছে
ঢাকা/এসএ