বিনিয়োকারীরা নি:স্ব হলেও অ্যাসেট ম্যানেজারদের পোয়াবারো!

- আপডেট: ০২:০৪:৫৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ ২০২৫
- / ১০৫৫৭ বার দেখা হয়েছে
সারা বিশ্বেই ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের নিরাপদ বিনিয়োগের মাধ্যম হচ্ছে মিউচুয়াল ফান্ড। বিনিয়োগকারীদের তহবিল ব্যবস্থাপনা করে আকর্ষণীয় রিটার্ন নিশ্চিত করে দক্ষ সম্পদ ব্যবস্থাপকরা। ভারতেও মিউচুয়াল ফান্ড দারুণ জনপ্রিয়।
যদিও এর পুরো বিপরীত চিত্র বাংলাদেশে। দেশের পুঁজিবাজারের সবচেয়ে দুর্দশাগ্রস্ত খাতের নাম মিউচুয়াল ফান্ড। সম্পদ ব্যবস্থাপকদের অদক্ষতা ও অনিয়মের কারণে খাতটির প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা একেবারে তলানিতে ঠেকেছে। মিউচুয়াল ফান্ডের বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সম্পদ ব্যবস্থাপনা ফি বাবদ গত ১৫ বছরে ৬৬৩ কোটি টাকা নিয়েছে মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ড খাতের শীর্ষ দুই সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি রেইস ও এলআর গ্লোবাল। মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতার জন্যও শীর্ষ এ দুই সম্পদ ব্যবস্থাপকের দায় সবচেয়ে বেশি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুক–টুইটার–লিংকডইন–ইন্সটাগ্রাম–ইউটিউব
দেশের মিউচুয়াল ফান্ড খাতের মোট সম্পদের পরিমাণ বর্তমানে ১০ হাজার ১৮৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডের সম্পদের পরিমাণ ৪ হাজার ৮১০ কোটি টাকা এবং বেমেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডের সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকায়। দেশের মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডের সংখ্যা ৩৭ এবং এর সবক’টিই পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত। বর্তমানে ৩৫টি মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ড ডিসকাউন্টে (যেগুলোর ফান্ড ইউনিটের বাজারদর নিট সম্পদমূল্যের তুলনায় কম) লেনদেন হচ্ছে। বর্তমানে বেমেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডের সংখ্যা ৬১।
দেশের মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ড খাতে সবচেয়ে বেশি ১০টি ফান্ড ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে রেইস। ফান্ডগুলোর সর্বশেষ প্রকাশিত তথ্যানুসারে রেইসের ব্যবস্থাপনাধীন সম্পদের পরিমাণ ২ হাজার ২৮০ কোটি টাকা। মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ড খাতের ৪৭ দশমিক ৫০ শতাংশই তাদের দখলে। তবে সম্পদের আকারে শীর্ষে থাকলেও পারফরম্যান্সের দিক দিয়ে রেইসের ফান্ড পিছিয়ে রয়েছে। লভ্যাংশ বাদে নিট সম্পদমূল্যের (এনএভি) ভিত্তিতে পাঁচ বছরের কম্পাউন্ড অ্যানুয়াল গ্রোথ রেট (সিএজিআর) বিবেচনায় রেইসের রিটার্ন ঋণাত্মক ২ দশমিক ৭ শতাংশ। বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ না থাকায় রেইসের সবক’টি ফান্ডের ইউনিট বর্তমানে ডিসকাউন্টে লেনদেন হচ্ছে। রেইস পরিচালিত ১০টি ফান্ডের ইউনিটদর সর্বশেষ গতকাল সর্বোচ্চ ৭ টাকা থেকে সর্বনিম্ন ৩ টাকা ২০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে। রেইসে মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানটি ফি বাবদ গত ১৫ বছরে বড় অংকের অর্থ পেয়েছে। ২০১০ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত সময়ে ব্যবস্থাপনা ফি বাবদ মিউচুয়াল ফান্ডের আয় থেকে ৫১৮ কোটি টাকা নিয়েছে।
মেয়াদির পাশাপাশি রেইসের ব্যবস্থাপনাধীন দুটি বেমেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডও রয়েছে। রেইসের মিউচুয়াল ফান্ডগুলো থেকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজের পাশাপাশি অতালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজ ও মুদ্রাবাজারে বিনিয়োগ করা হয়েছে। এর মধ্যে বেশকিছু অতালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজে বিনিয়োগের বিপরীতে রিটার্ন না আসার কারণে এর যথার্থতা নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও প্রশ্ন রয়েছে। সব মিলিয়ে তালিকা-বহির্ভূত সিকিউরিটিজে গত বছরের ডিসেম্বর শেষে ক্রয়মূল্যে ৬৩৫ কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে রেইসের। বাজারমূল্যে এ বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৮৭ কোটি টাকায়। এসব বিনিয়োগ করা হয়েছে মূলত মাল্টি সিকিউরিটিজ অ্যান্ড সার্ভিস লিমিটেড, পদ্মা ব্যাংক লিমিটেড, রিজেন্ট স্পিনিং মিলস করপোরেট বন্ড ও প্রিমিয়ার ব্যাংক লিমিটেড সাব-অর্ডিনেটেড বন্ডে।
সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা চৌধুরী নাফিজ সরাফাত ২০০৮ সালে রেইস ম্যানেজমেন্ট পিসিএল নামে একটি সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানির লাইসেন্স নেন। তার সঙ্গে সহযোগী হিসেবে ছিলেন ওয়াল স্ট্রিটের সাবেক নির্বাহী ড. হাসান তাহের ইমাম। সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানিটি সে সময়ে বিভিন্ন কর্মশালার মাধ্যমে পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্টদের মধ্যে বেশ সাড়া ফেলে দিয়েছিল। দেশের মিউচুয়াল ফান্ড খাতের পুরো চেহারাই বদলে দেয়ার কথা বলেছিলেন। যদিও বাস্তবে ঘটেছে তার বিপরীত। ফান্ড পরিচালনায় তাদের অদক্ষতা ও অনিয়মের কারণে বিনিয়োগকারীদের ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে। অভিযোগ আছে, বিগত সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার প্রভাব খাটিয়ে তারা নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে তটস্থ রাখতেন। ফলে তাদের অনিয়মের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। বরং অনেক ক্ষেত্রেই গত ১৫ বছরে রেইসকে আনুকূল্য দেখিয়েছেন বিএসইসির তৎকালীন শীর্ষ কর্তারা। এমনকি নিজেদের ফান্ডের মেয়াদ ফুরিয়ে আসায় সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাকে প্রভাবিত করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে এসব ফান্ড অবসায়ন করা হলে পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে—এমন প্রতিবেদন পাঠানোর অভিযোগ রয়েছে রেইসের বিরুদ্ধে। এ প্রতিবেদনের ভিত্তিতে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডের মেয়াদ আরো ১০ বছর বাড়াতে সুপারিশ করা হয়। এর ভিত্তিতে বিএসইসির পক্ষ থেকে মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডের মেয়াদ ২০ বছর পর্যন্ত বাড়ানোর সুযোগ রেখে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
আরও পড়ুন: তিন কোম্পানির শেয়ার কারসাজির অভিযোগে ৮০ কোটি টাকা জরিমানা
এসব অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য রেইসের চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফাত এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী হাসান তাহের ইমামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের সাড়া পাওয়া যায়নি।
বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, যেসব সম্পদ ব্যবস্থাপকের কারণে মিউচুয়াল ফান্ড খাতটি ধ্বংস হয়ে গেছে, নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রথমেই উচিত ছিল সেসব সম্পদ ব্যবস্থাপককে অপসারণ করে সেখানে প্রশাসক নিয়োগ দেয়া। যদিও সেটি হয়নি। এটি করা সম্ভব হলে এ খাতের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে আসত। অতীতে যারা অনিয়মের সঙ্গে যুক্ত ছিল তাদের বহাল রেখে এ খাতে পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে না।
ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মিউচুয়াল ফান্ড ছাড়া পৃথিবীতে কোনো পুঁজিবাজার উন্নত হতে পারে না। মিউচুয়াল ফান্ড মানেই হচ্ছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী। মিউচুয়াল ফান্ড খাত বর্তমানে যে অবস্থায় আছে, সেখান থেকে খাতটিকে কীভাবে বের করে আনা যায় সেটিই সংস্কারের প্রধান ও প্রথম এজেন্ডা হওয়া উচিত। গত ১৫ বছরে এ খাতে কী হয়েছে সেটি সবাই আমরা জানি। অতীতে যেসব অনিয়ম হয়েছে সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে মিউচুয়াল ফান্ড খাতের উন্নয়ন সম্ভব নয়। যেসব সম্পদ ব্যবস্থাপক ইউনিটহোল্ডারদের রিটার্ন দিতে পারছে না তারা ফান্ড থেকে কোনো ফি নিতে পারবে না কিংবা যতটুকু খরচ হয়েছে শুধু ততটুকু ফি নিতে পারবে এমন নিয়ম করা উচিত। ইউনিটহোল্ডারদের মতামত ছাড়ই মিউচুয়াল ফান্ডের মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়টি কোনোভাবেই যৌক্তিক হয়নি। এ বিষয়টিরও একটি ন্যায়সংগত সমাধান করা উচিত।’
এলআর গ্লোবালের ব্যবস্থাপনাধীন ছয়টি মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডের সম্পদের পরিমাণ বর্তমানে ৭৭০ কোটি টাকা। মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডের ১৬ শতাংশ তাদের দখলে। তালিকা-বহির্ভূত সিকিউরিটিজে এ ফান্ডগুলো থেকে ক্রয়মূল্যে ২১৬ কোটি টাকার বিনিয়োগ করা হয়েছে। বাজারমূল্যের ভিত্তিতে এ বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১১১ কোটি টাকা। এসব বিনিয়োগ করা হয়েছে এনার্জিপ্রিমা লিমিটেড, ইউনিকর্ন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ও বাংলাদেশ নিউজ ২৪ আওয়ার্স লিমিটেডে। লভ্যাংশ বাদে এনএভির ভিত্তিতে পাঁচ বছরের সিএজিআর বিবেচনায় এলআর গ্লোবালের রিটার্ন ঋণাত্মক দশমিক ৯ শতাংশ। ফান্ড ব্যবস্থাপনার জন্য গত ১৫ বছরে ব্যবস্থাপনা ফি বাবদ ১৪৫ কোটি টাকা নিয়েছে সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে এ ছয় ফান্ডের ইউনিট ডিসকাউন্টে লেনদেন হচ্ছে। এলআর গ্লোবাল পরিচালিত ছয়টি মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট গতকাল সর্বোচ্চ ৫ টাকা ৪০ পয়সা থেকে সর্বনিম্ন ৩ টাকা ৫০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে।
১৮ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের সিটি গ্রুপে কাজ করেছেন এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী রিয়াজ ইসলাম। ২০০৮ সালে সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানির লাইসেন্স পায় এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশ অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড। ওয়াল স্ট্রিটের অভিজ্ঞ নির্বাহী হিসেবে তিনি ফান্ড পরিচালনায় দক্ষতার পরিচয় দেবেন বলে প্রত্যাশা করেছিলেন পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীরা। যদিও অতালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজে বিতর্কিত বিনিয়োগের মাধ্যমে তিনি ইউনিটহোল্ডারদের স্বার্থকে ঝুঁকিতে ফেলেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। অতীতে ফান্ড পরিচালনায় অনিয়মের কারণে এলআর গ্লোবালকে একাধিকবার জরিমানাও করেছে বিএসইসি। সর্বশেষ ওটিসিতে থাকা পদ্মা প্রিন্টার্সের (বর্তমানে কোয়েস্ট বিডিসি) শেয়ারে মিউচুয়াল ফান্ডের অর্থে বিতর্কিত বিনিয়োগের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
এলআর গ্লোবালের প্রধান নির্বাহী রিয়াজ ইসলামের বক্তব্য জানতে তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘একসঙ্গে অনেকগুলো মিউচুয়াল এসেছে। এর বেশির ভাগই ২০১০ সালে এসেছে যখন পুঁজিবাজার বেশ ঊর্ধ্বমুখী ছিল। এরপর কিন্তু পুঁজিবাজার খুব একটা ভালো যায়নি। তাছাড়া মিউচুয়াল ফান্ডের সম্পদ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোয় হয়তো সে ধরনের যোগ্য ব্যক্তি নেই যারা সঠিক মূল্যায়নের মাধ্যমে বিনিয়োগ করতে সক্ষম। মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগকারীরা অর্থ লগ্নি করেন, কারণ তারা মনে করেন যে তাদের চেয়ে দক্ষ ও যোগ্য ব্যক্তি এ ফান্ড ব্যবস্থাপনা করে তাদের রিটার্ন দেবে। গ্রাহকের সর্বোচ্চ স্বার্থ রক্ষা ও বিচার-বিশ্লেষণের মাধ্যমে ফান্ডের অর্থ বিনিয়োগ করার মতো যোগ্যতা বা প্রতিশ্রুতি সম্পদ ব্যবস্থাপকদের মধ্যে নেই। এ কারণে দেশে মিউচুয়াল ফান্ড খাতের উন্নতি হয়নি। পাশাপাশি কেউ যদি ফান্ডের অর্থ তছরুপ করে, সেক্ষেত্রে সেটি চিহ্নিত করে বিএসইসি ব্যবস্থা নিতে পারে।’
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, মিউচুয়াল ফান্ডের বিও হিসাবের নিয়ন্ত্রণ কাস্টডিয়ানের কাছে থাকলেও ব্যাংক হিসাব ফান্ড ম্যানেজারের নিয়ন্ত্রণে থাকে। এর ফলে ফান্ড ম্যানেজাররা নগদ অর্থের অপব্যবহারে সুযোগ পান। তাছাড়া ট্রাস্টির দায়িত্ব রয়েছে ফান্ডের অর্থ কোথায় বিনিয়োগ করা হচ্ছে সেটি নিয়মিত নজরদারি করা। বিশ্বের কোথাও মিউচুয়াল ফান্ডের অর্থ অতালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করা হয় না। যদিও বাংলাদেশে সে সুযোগ দেয়া হয়েছে, যার ফলে মিউচুয়াল ফান্ডের অর্থ তছরুপ করা হয়েছে। রেইস ও এলআর গ্লোবালের অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থতার কারণে পরবর্তী সময়ে এ খাতের আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠান অনিয়মে জড়িয়েছে। এর মধ্যে সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান ইউএফএস অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট ও অ্যালায়েন্স ক্যাপিটালের বিরুদ্ধেও ইউনিটহোল্ডারদের অর্থ তছরুপের অভিযোগ রয়েছে। যদিও এখন পর্যন্ত এসব অর্থ ফেরত আনতে পারেনি বিএসইসি।
ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘লাভজনকভাবে ব্যবসা পরিচালনার জন্য যে পরিমাণ সম্পদ ব্যবস্থাপক থাকা প্রয়োজন দেশে তার চেয়ে বেশি রয়েছে। ভারতের মতো বিশাল পুঁজিবাজারে ৪৪টি সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেখানে বাংলাদেশে এর পরিমাণ ৬৭টি। এর ফলে প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অশুভ প্রতিযোগিতা তৈরি হয়েছে এবং তারা বিভিন্ন ধরনের অনিয়মে জড়িয়ে পড়েছে। যেহেতু খাতটি সেভাবে জবাবদিহিতার আওতায় আসেনি, সেহেতু তারা অনিয়মে আরো বেশি উৎসাহিত হয়েছে। অনেক সময় নিয়ন্ত্রক সংস্থা এসব অনিয়ম বন্ধ করার পরিবর্তে নিজেই অনিয়মের সহযোগী হয়ে গেছে। ট্রাস্টিরা তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। যদি কোনো সম্পদ ব্যবস্থাপক স্বচ্ছতার সঙ্গে ফান্ড পরিচালনায় ব্যর্থ হয় কিংবা ইউনিটহোল্ডারদের স্বার্থ রক্ষায় ব্যর্থ হয় তাহলে সেক্ষেত্রে সম্পদ ব্যবস্থাপক পরিবর্তনের ক্ষমতা ট্রাস্টির রয়েছে। যদিও ট্রাস্টির পক্ষ থেকে এ ধরনের ভূমিকা কখনো দেখা যায়নি। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডের মেয়াদ বাড়ানোর মাধ্যমে এর মৌলিক কাঠামোটাকেই ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্সে মিউচুয়াল ফান্ড খাতের উন্নয়নে বেশকিছু সংস্কারের সুপারিশ করা হয়েছে। এগুলো বাস্তবায়ন হলে এ খাতের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে। পাশাপাশি যারা অতীতে অনিয়ম করেছে তাদের বড় ধরনের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে হবে।’
সূত্র: বণিক বার্তা
ঢাকা/এসএইচ