০৯:২৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৪

সমস্যা শেয়ারবাজারের নয়, ভুল আমাদেরই: শাকিল রিজভী

এইচ কে জনি:
  • আপডেট: ০৪:৪৩:১২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২২
  • / ১১২৩১ বার দেখা হয়েছে

শেয়ারবাজারে কোন সমস্যা নেই বলে জানিয়েছেন দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক শাকিল রিজভী। তিনি বলেন, আমরা অর্থ্যাৎ বিনিয়োগকারীরাই কারসাজি চক্রের পাতানো ফাঁদে পা দিয়ে ১০ টাকার শেয়ার ১০০ টাকায় কিনেছি। এখন সে শেয়ার যখন ৫০ টাকায় এসেছে, তখন আমরাই ফ্লোর প্রাইজের দাবি জানিয়েছি। সে শেয়ারতো আর এর এখন নিচে নামতে পারছে না। এখন যারা বুঝে যে ওই শেয়ারের মূল্য ১০ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়, তারোতো ওই শেয়ার কখনোই কিনবে না-এটাই স্বাভাবিক। তবে এটাও সত্য বাজার নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থাসহ বিনিয়োগকারীরা যেমনটা প্রত্যাশা করেছিলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ বৈশ্বিক সঙ্কট দেখা না দিলে পরিস্থিতিটা এতো খারাপ নাও হতে পারতো। আজ মঙ্গলবার বাজারের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলাপকালে বিজনেস জার্নালকে তিনি এসব কথা বলেন।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

এ সময় শাকিল রিজভী বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং ডলার সঙ্কটতো সমস্যার সৃষ্টি করেছে- এটা অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই। তাছাড়া বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনীতি ও এ সম্পর্কিত আগাম পূর্বাভাসও কোন শুভ ইঙ্গিত করছে না। আর এ সুযোগে একটি চক্র গুটিকয়েক কোম্পানিকে দিয়ে নিজেদের ফায়দা হাসিল করে নিয়েছে। তবে এর দায় বিনিয়োগকারীরাও এড়াতে পারে না। কারণ বিনিয়োগকারীরা ২০ টাকার শেয়ার ২০০ টাকায় না কিনলেতো আর তারা বিক্রি করে নাই।’ তিনি বলেন, ‘যেসব শেয়ার ফ্লোর প্রাইসে আটকে আছে, তার অধিকাংশই ওভারপ্রাইসড, যদিও সাধারণ বিনিয়োগকারীরা সেসব শেয়ারে লোকসানে থাকতে পারেন।  তবে ১০ টাকার শেয়ার কোন বুদ্ধিমান বিনিয়োগকারীই ২০ বা ৫০ টাকায় না কেনাই স্বাভাবিক।’

তিনি আরো বলেন, ‘বাজারে বায়ার নেই বা তারল্য সঙ্কট রয়েছে- এটা ঠিক নয়। বাজারে বায়ার বা ক্রেতা ঠিকই আছে, হয়তো শেয়ার যে দামে ফ্লোরে আটকে আছে সে দামে নেই। আর টাকাও সবার হাতে আছে, তবে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে তারা বাজারের গতিবিধি ও শেয়ারের দাম পর্যবেক্ষন করছেন।’ উদাহরন হিসেবে তিনি বলেন, ‘২০ লাখ টাকার একটি গাড়ি যদি ২৫ লাখ টাকায় বিক্রির ঘোষণা দেয় তবে বাংলাদেশের কেউ এ গাড়ি কিনবেন না। তার মানে কি কারও কাছেই টাকা নেই? আপনি ২০ লাখ টাকার গাড়ি ১৫ বা ১৮ লাখ টাকায় বিক্রির ঘোষণা দেন, দেখবেন টাকা আছে কি নাই। থিওরিটিক্যালি শেয়ারবাজারও এর বাইরে নয়। কাজেই শেয়ারবাজারে তারল্য সঙ্কট নয়, বরং প্রাইস সঙ্কট রয়েছে’- বলে তিনি মন্তব্য করেন।

আরও পড়ুন: নতুন বছরে ভালো কিছুর প্রত্যাশা করছি: বিএসইসি চেয়ারম্যান

বাজারের বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ভূমিকা সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিএসইর এ পরিচালক বলেন, ‘প্রথমে আমি বলবো সত্য সবসময়ই তেতো হয়। বিনিয়োগকারী ভূল করেই হোক আর যে কারণেই হোক যে শেয়ার ওভারপ্রাইসে কিনেছেন, তা কখনোই একটা ইন্সটিটিউট বা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী কিনবেন না। কারণ তারাও মুনাফার জন্য অর্থলগ্নী করে থাকেন। এছাড়া আপনারা জানেন আমাদের দেশে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী বলতে আমরা যাদেরকে বুঝি, তাদের অধিকাংশই কোন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা অন্য কোন প্রতিষ্ঠানের সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান। তারা যে অর্থ বাজারে বিনিয়োগ করে তা তাদের নিজস্ব অর্থ নয়। সে প্রতিষ্ঠানটি যদি কোন ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি হয়ে থাকে তবে তারা সে ব্যাংকের গ্রাহকদের আমানতের একটি  অংশ শেয়ারবাজারকে সাপোর্ট দেয়া ও মুনাফার উদ্দেশ্যেই বিনিয়োগ করেন। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো তাদেরকেও জবাবদিহিতার মধ্যে থাকতে হয়। তারা চাইলেই অনিশ্চিত বা বে-খেয়ালি বিনিয়োগ করতে পারেন না। ’

এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘বছর শেষ হতে আর কয়েকদিন বাকি। বছর শেষে তাদের হিসাব-নিকাশ ক্লোজিংয়ের বিষয় রয়েছে। এছাড়াও বছরের পুরো সময়ে যা বিনিয়োগ করেছেন, সেসব বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অর্থ্যাৎ আন-রিয়েলাইজড গেইন বা লসের বিপরীতে প্রভিশনিংয়ের ‍মতো গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় রয়েছে, যা ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যেই তাদেরকে শেষ করতে হবে।  সে অর্থে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা নিষ্ক্রিয় আছেন- এটা বলা যাবে না।  তবে বছরের শুরুতে তারা নতুন করে বিনিয়োগে ফিরবেন’- বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

আরও পড়ুন: বিএসইসির সংস্কার কার্যক্রমে শেয়ারবাজারের ভিত অনেক মজবুত হয়েছে: বিএসইসি চেয়ারম্যান

শাকিল রিজভী বলেন, ‘আমি নতুন মেয়াদে ডিএসইর পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব্য গ্রহণের পর গতকাল বিএসইসির চেয়ারম্যান মহোদয়ের সঙ্গে সাক্ষাত করেছি। এ সময় আমাদের মধ্যে বাজারের সার্বিক বিষয় নিয়েও কথা হয়েছে। বাজারের স্থিতিশীলতায় বিএসইসির আন্তরিকতায় আমি কোন ঘাটতি দেখছি না। কাজেই নিজেরা সচেতন না হয়ে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী কিংবা বিএসইসি বা ডিএসই-সিএসইকে দোষ দেয়া ঠিক নয়’- বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্যে ডিএসই’র এ পরিচালক বলেন, ‘বিনিয়োগের মূল উদ্দ্যেশ্যই মুনাফা করা। তবে তা হতে হবে যৌক্তিক পর্যায়ে। এজন্য প্রয়োজন সুচিন্তিত ও বিশ্লেষনধর্মী বিনিয়োগ। আপনি যেকোন ব্যবসায়ই করেন না কেন- আপনি যদি ভেবেচিন্তে বিনিয়োগ না করেন তবে আপনাকে লোকসানের সম্মুখীন হতে হবে। আর সেটা যদি হয় পুঁজিবাজার তাহলেতো আর কথায় নেই। বিনিয়োগের জন্য এটি অত্যন্ত সংবেদনশীল একটি খাত। একটু হের-ফের হলেই আপনি এবং আপনার পুরো পরিবারকে পথে বসতে হতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘আমি স্বীকার করছি তালিকাভূক্ত কোম্পানি বা বাজারের যেকোন অনিয়ম বা অব্যবস্থাপনার বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের দায়ভার নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং স্টক এক্সচেঞ্জগুলোর। কেউই এ দায়িত্ব এড়াতে পারে না। তবে পুঁজিবাজারে শৃঙ্খলা রক্ষার দায়-দায়িত্ব সবার কাঁধেই পড়ে।’

প্রসঙ্গত, পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতায় বিএসইসি অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিলেও তা বাজারে প্রতিফলিত হচ্ছে না। পরিণতিতে রোববার বড়দিনের ছুটির পর সোমবার প্রথম কর্মদিবসে সূচক পতনের সঙ্গে লেনদেন নামল ২০০ কোটির নিচে। এর আগে সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস বৃহস্পতিবার লেনদেন হয়েছিল ২২৭ কোটি ৭৪ লাখ ৭৮ হাজার টাকার শেয়ার। সেটি ছিল ২০২০ সালের ১৬ জুলাইয়ের পর সর্বনিম্ন লেনদেন।

আরও পড়ুন: বাজার উন্নয়নে বিএসইসির উদ্যোগের সুফল পাচ্ছে না বিনিয়োগকারীরা

তলানিতে নামলেও গত দুই বছরে লেনদেন ২০০ কোটির নিচে নামেনি, কিন্তু সোমবার হাতবদল হয় ১৯৮ কোটি ৮০ লাখ ৭৩ হাজার টাকা, যা চলতি বছরের তো বটেই, গত ২ বছর ৫ মাসে সর্বনিম্ন।

এর চেয়ে কমল লেনদেন হয়েছিল ২০২০ সালের ৭ জুলাই। ওই দিন হাতবদল হয়েছিল ১৩৮ কোটি ৫৬ লাখ ৫৫ হাজার টাকা।

অর্ধেকের কিছু বেশি কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত আসার দিন বুধবার লেনদেন ছিল ৩৩৩ কোটি ৫৮ লাখ ৯৮ হাজার টাকা। বৃহস্পতিবার লেনদেন কমে ১০৫ কোটি ৮৪ লাখ ২০ হাজার টাকা বা ৩১.৭২ শতাংশ। সোমবার সেটি কমল ২৮ কোটি ৯৪ লাখ ৫ হাজার টাকা বা ১২.৭০ শতাংশ।

আর আজ মঙ্গলবার দিনশেষে লেনদেন কিছুটা বেড়ে ২৬৯ কোটি টাকা হলেও সার্বিক বাজার পরিস্থিতির অবনতিই হয়েছে। দিনশেষে মাত্র ১৭টি কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে, কমেছে ১৩৬টির আর অপরিবর্তিত রয়েছে ১৬০ কোম্পানির শেয়ার দর।

বিজনেস জার্নাল/ঢাকা/এইচকে

শেয়ার করুন

x

সমস্যা শেয়ারবাজারের নয়, ভুল আমাদেরই: শাকিল রিজভী

আপডেট: ০৪:৪৩:১২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২২

শেয়ারবাজারে কোন সমস্যা নেই বলে জানিয়েছেন দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক শাকিল রিজভী। তিনি বলেন, আমরা অর্থ্যাৎ বিনিয়োগকারীরাই কারসাজি চক্রের পাতানো ফাঁদে পা দিয়ে ১০ টাকার শেয়ার ১০০ টাকায় কিনেছি। এখন সে শেয়ার যখন ৫০ টাকায় এসেছে, তখন আমরাই ফ্লোর প্রাইজের দাবি জানিয়েছি। সে শেয়ারতো আর এর এখন নিচে নামতে পারছে না। এখন যারা বুঝে যে ওই শেয়ারের মূল্য ১০ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়, তারোতো ওই শেয়ার কখনোই কিনবে না-এটাই স্বাভাবিক। তবে এটাও সত্য বাজার নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থাসহ বিনিয়োগকারীরা যেমনটা প্রত্যাশা করেছিলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ বৈশ্বিক সঙ্কট দেখা না দিলে পরিস্থিতিটা এতো খারাপ নাও হতে পারতো। আজ মঙ্গলবার বাজারের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলাপকালে বিজনেস জার্নালকে তিনি এসব কথা বলেন।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

এ সময় শাকিল রিজভী বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং ডলার সঙ্কটতো সমস্যার সৃষ্টি করেছে- এটা অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই। তাছাড়া বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনীতি ও এ সম্পর্কিত আগাম পূর্বাভাসও কোন শুভ ইঙ্গিত করছে না। আর এ সুযোগে একটি চক্র গুটিকয়েক কোম্পানিকে দিয়ে নিজেদের ফায়দা হাসিল করে নিয়েছে। তবে এর দায় বিনিয়োগকারীরাও এড়াতে পারে না। কারণ বিনিয়োগকারীরা ২০ টাকার শেয়ার ২০০ টাকায় না কিনলেতো আর তারা বিক্রি করে নাই।’ তিনি বলেন, ‘যেসব শেয়ার ফ্লোর প্রাইসে আটকে আছে, তার অধিকাংশই ওভারপ্রাইসড, যদিও সাধারণ বিনিয়োগকারীরা সেসব শেয়ারে লোকসানে থাকতে পারেন।  তবে ১০ টাকার শেয়ার কোন বুদ্ধিমান বিনিয়োগকারীই ২০ বা ৫০ টাকায় না কেনাই স্বাভাবিক।’

তিনি আরো বলেন, ‘বাজারে বায়ার নেই বা তারল্য সঙ্কট রয়েছে- এটা ঠিক নয়। বাজারে বায়ার বা ক্রেতা ঠিকই আছে, হয়তো শেয়ার যে দামে ফ্লোরে আটকে আছে সে দামে নেই। আর টাকাও সবার হাতে আছে, তবে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে তারা বাজারের গতিবিধি ও শেয়ারের দাম পর্যবেক্ষন করছেন।’ উদাহরন হিসেবে তিনি বলেন, ‘২০ লাখ টাকার একটি গাড়ি যদি ২৫ লাখ টাকায় বিক্রির ঘোষণা দেয় তবে বাংলাদেশের কেউ এ গাড়ি কিনবেন না। তার মানে কি কারও কাছেই টাকা নেই? আপনি ২০ লাখ টাকার গাড়ি ১৫ বা ১৮ লাখ টাকায় বিক্রির ঘোষণা দেন, দেখবেন টাকা আছে কি নাই। থিওরিটিক্যালি শেয়ারবাজারও এর বাইরে নয়। কাজেই শেয়ারবাজারে তারল্য সঙ্কট নয়, বরং প্রাইস সঙ্কট রয়েছে’- বলে তিনি মন্তব্য করেন।

আরও পড়ুন: নতুন বছরে ভালো কিছুর প্রত্যাশা করছি: বিএসইসি চেয়ারম্যান

বাজারের বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ভূমিকা সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিএসইর এ পরিচালক বলেন, ‘প্রথমে আমি বলবো সত্য সবসময়ই তেতো হয়। বিনিয়োগকারী ভূল করেই হোক আর যে কারণেই হোক যে শেয়ার ওভারপ্রাইসে কিনেছেন, তা কখনোই একটা ইন্সটিটিউট বা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী কিনবেন না। কারণ তারাও মুনাফার জন্য অর্থলগ্নী করে থাকেন। এছাড়া আপনারা জানেন আমাদের দেশে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী বলতে আমরা যাদেরকে বুঝি, তাদের অধিকাংশই কোন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা অন্য কোন প্রতিষ্ঠানের সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান। তারা যে অর্থ বাজারে বিনিয়োগ করে তা তাদের নিজস্ব অর্থ নয়। সে প্রতিষ্ঠানটি যদি কোন ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি হয়ে থাকে তবে তারা সে ব্যাংকের গ্রাহকদের আমানতের একটি  অংশ শেয়ারবাজারকে সাপোর্ট দেয়া ও মুনাফার উদ্দেশ্যেই বিনিয়োগ করেন। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো তাদেরকেও জবাবদিহিতার মধ্যে থাকতে হয়। তারা চাইলেই অনিশ্চিত বা বে-খেয়ালি বিনিয়োগ করতে পারেন না। ’

এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘বছর শেষ হতে আর কয়েকদিন বাকি। বছর শেষে তাদের হিসাব-নিকাশ ক্লোজিংয়ের বিষয় রয়েছে। এছাড়াও বছরের পুরো সময়ে যা বিনিয়োগ করেছেন, সেসব বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অর্থ্যাৎ আন-রিয়েলাইজড গেইন বা লসের বিপরীতে প্রভিশনিংয়ের ‍মতো গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় রয়েছে, যা ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যেই তাদেরকে শেষ করতে হবে।  সে অর্থে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা নিষ্ক্রিয় আছেন- এটা বলা যাবে না।  তবে বছরের শুরুতে তারা নতুন করে বিনিয়োগে ফিরবেন’- বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

আরও পড়ুন: বিএসইসির সংস্কার কার্যক্রমে শেয়ারবাজারের ভিত অনেক মজবুত হয়েছে: বিএসইসি চেয়ারম্যান

শাকিল রিজভী বলেন, ‘আমি নতুন মেয়াদে ডিএসইর পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব্য গ্রহণের পর গতকাল বিএসইসির চেয়ারম্যান মহোদয়ের সঙ্গে সাক্ষাত করেছি। এ সময় আমাদের মধ্যে বাজারের সার্বিক বিষয় নিয়েও কথা হয়েছে। বাজারের স্থিতিশীলতায় বিএসইসির আন্তরিকতায় আমি কোন ঘাটতি দেখছি না। কাজেই নিজেরা সচেতন না হয়ে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী কিংবা বিএসইসি বা ডিএসই-সিএসইকে দোষ দেয়া ঠিক নয়’- বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্যে ডিএসই’র এ পরিচালক বলেন, ‘বিনিয়োগের মূল উদ্দ্যেশ্যই মুনাফা করা। তবে তা হতে হবে যৌক্তিক পর্যায়ে। এজন্য প্রয়োজন সুচিন্তিত ও বিশ্লেষনধর্মী বিনিয়োগ। আপনি যেকোন ব্যবসায়ই করেন না কেন- আপনি যদি ভেবেচিন্তে বিনিয়োগ না করেন তবে আপনাকে লোকসানের সম্মুখীন হতে হবে। আর সেটা যদি হয় পুঁজিবাজার তাহলেতো আর কথায় নেই। বিনিয়োগের জন্য এটি অত্যন্ত সংবেদনশীল একটি খাত। একটু হের-ফের হলেই আপনি এবং আপনার পুরো পরিবারকে পথে বসতে হতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘আমি স্বীকার করছি তালিকাভূক্ত কোম্পানি বা বাজারের যেকোন অনিয়ম বা অব্যবস্থাপনার বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের দায়ভার নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং স্টক এক্সচেঞ্জগুলোর। কেউই এ দায়িত্ব এড়াতে পারে না। তবে পুঁজিবাজারে শৃঙ্খলা রক্ষার দায়-দায়িত্ব সবার কাঁধেই পড়ে।’

প্রসঙ্গত, পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতায় বিএসইসি অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিলেও তা বাজারে প্রতিফলিত হচ্ছে না। পরিণতিতে রোববার বড়দিনের ছুটির পর সোমবার প্রথম কর্মদিবসে সূচক পতনের সঙ্গে লেনদেন নামল ২০০ কোটির নিচে। এর আগে সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস বৃহস্পতিবার লেনদেন হয়েছিল ২২৭ কোটি ৭৪ লাখ ৭৮ হাজার টাকার শেয়ার। সেটি ছিল ২০২০ সালের ১৬ জুলাইয়ের পর সর্বনিম্ন লেনদেন।

আরও পড়ুন: বাজার উন্নয়নে বিএসইসির উদ্যোগের সুফল পাচ্ছে না বিনিয়োগকারীরা

তলানিতে নামলেও গত দুই বছরে লেনদেন ২০০ কোটির নিচে নামেনি, কিন্তু সোমবার হাতবদল হয় ১৯৮ কোটি ৮০ লাখ ৭৩ হাজার টাকা, যা চলতি বছরের তো বটেই, গত ২ বছর ৫ মাসে সর্বনিম্ন।

এর চেয়ে কমল লেনদেন হয়েছিল ২০২০ সালের ৭ জুলাই। ওই দিন হাতবদল হয়েছিল ১৩৮ কোটি ৫৬ লাখ ৫৫ হাজার টাকা।

অর্ধেকের কিছু বেশি কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত আসার দিন বুধবার লেনদেন ছিল ৩৩৩ কোটি ৫৮ লাখ ৯৮ হাজার টাকা। বৃহস্পতিবার লেনদেন কমে ১০৫ কোটি ৮৪ লাখ ২০ হাজার টাকা বা ৩১.৭২ শতাংশ। সোমবার সেটি কমল ২৮ কোটি ৯৪ লাখ ৫ হাজার টাকা বা ১২.৭০ শতাংশ।

আর আজ মঙ্গলবার দিনশেষে লেনদেন কিছুটা বেড়ে ২৬৯ কোটি টাকা হলেও সার্বিক বাজার পরিস্থিতির অবনতিই হয়েছে। দিনশেষে মাত্র ১৭টি কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে, কমেছে ১৩৬টির আর অপরিবর্তিত রয়েছে ১৬০ কোম্পানির শেয়ার দর।

বিজনেস জার্নাল/ঢাকা/এইচকে