১০:৪৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
শেয়ারবাজারে কোন সমস্যা নেই: বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান

নতুন বছরে ভালো কিছুর প্রত্যাশা করছি: বিএসইসি চেয়ারম্যান

এইচ কে জনি:
  • আপডেট: ০৭:৩৮:৪৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২২
  • / ৫৬৩০ বার দেখা হয়েছে

শেয়ারবাজারে কোন সমস্যা নেই, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দাই বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে বলে মনে করছেন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। বাজারের বর্তমান পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত না হয়ে ধৈর্য্য ধরার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, বাজারের স্থিতিশীলতায় বিএসইসি বদ্ধপরিকর। চলমান সঙ্কট কেটে গেলে নতুন বছরে ভালো কিছুর প্রত্যাশা করছি। বর্তমান বাজার পরিস্থিতির অবনতি ও এ সময়ে বিনিয়োগকারীদের করনীয় সম্পর্কে জানতে চাইলে বিজনেস জার্নালকে বিএসইসির চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

তিনি বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের শেয়ারবাজারে কোন সমস্যা নেই। বাজারের জন্য যেসব সংস্কার বা পদক্ষেপ নেয়ার দরকার তার সবই আমরা করেছি। তবে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সঙ্কট ডলারের ক্রাইসিস, মূল্যস্ফীতি এবং সামনের দিনগুলোতে অর্থনৈতিক কিংবা অন্য সূচকগুলো নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যেসব আশঙ্কার কথা বলা হচ্ছে- তা শেয়ারবাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।’

ডলারের সঙ্কট ও মূল্যবৃদ্ধির কারণে ব্যাংকগুলোতে তারল্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিক করোনা বিপর্যয়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট বিশ্ব অর্থনৈতিক সঙ্কটে আমদানি রপ্তানির ভারসাম্যহীনতার মাশুল দিতে হয়েছে বাংলাদেশি মুদ্রা টাকাকে৷ রপ্তানির তুলনায় আমদানি ব্যয় অনেক বেড়ে যাওয়ায় টান পড়ে ডলারের রিজার্ভে৷ ফলে ডলারের তুলনায় টাকার অবমূল্যায়ন ঘটতে থাকে৷ কিছুদিন আগে যেখানে ১ মার্কিন ডলারের বিনিময় হার ছিল ৮৬-৮৭ টাকা, তা বর্তমানে ১০৪-১০৫ টাকায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে৷ এখানেও প্রতি ডলারে ব্যয় বেড়েছে ১৫ থেকে ১৭ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া, ব্যাংক এক্সপোজার লিমিট সংক্রান্ত নির্দেশনার কারণে শেয়ারবাজার থেকেও কিছু টাকা বেরিয়ে গেছে’ বলেও তিনি জানান।

আরও পড়ুন: বাজার উন্নয়নে বিএসইসির উদ্যোগের সুফল পাচ্ছে না বিনিয়োগকারীরা

বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, ‘এসব প্রতিকূল সমস্যার কারণেই প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী এমনকি অধিকাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারীরাও বাজারের গতিবিধি পর্যবেক্ষন করছেন। আর সবচেয়ে বড় বিষয় হলো বছর শেষ হতে আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। এ সময়ে ব্যাংক ও এর সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো স্বভাবতই নতুন বিনিয়োগে যায় না। কারণ তাদের ক্লোজিং করতে হয়।’

বাজারের দু:সময়ে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা কি নিষ্ক্রিয় আছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নিষ্ক্রিয় আছেন, এমনটা বলা যাবে না। একটু আগেই বললাম বছর শেষে তাদের হিসাব-নিকাশ ক্লোজিংয়ের বিষয় রয়েছে। এছাড়াও বছরের পুরো সময়ে যা বিনিয়োগ করেছেন, সেসব বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অর্থ্যাৎ আন-রিয়েলাইজড গেইন বা লসের বিপরীতে প্রভিশনিংয়ের ‍মতো গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় রয়েছে, যা ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যেই তাদেরকে শেষ করতে হবে।’

বাজার উন্নয়নে নতুন কমিশনের নানা পদক্ষেপের সুফল কি পেয়েছে দেশের পুঁজিবাজার তথা বিনিয়োগকারীরা- এমন প্রশ্নের জবাবে শিবলী রুবাইতুল ইসলাম জানান, বর্তমান কমিশন দায়িত্ব্য নেয়ার পর থেকে বিভিন্ন আইনের সংশোধন, রোডশো, ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড গঠন, ‘আইপিও প্রক্রিয়ায় পরিবর্তনসহ অসংখ্য পদক্ষেপ নিয়েছে। এছাড়া বাজার উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া একটি চলমান প্রক্রিয়া। এর সুফল কখনো কখনো স্বল্পমেয়াদে আবার কখনও দীর্ঘমেয়াদে পাওয়া যায়। অদূর ভবিষ্যতে দেশের পুঁজিবাজারও এর সুফল পাবে।’

আরও পড়ুন: শতাধিক ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে ৬০ কোটি টাকা জরিমানা

তবে কমিশন বাজারের সার্বিক বিষয়ে নজর রেখেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাজারে তারল্য প্রবাহ বাড়াতে কমিশন কাজ করে যাচ্ছে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীসহ সকল স্টেকহোল্ডারদের সাথেই আমরা বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সঙ্কট সমাধানের পাশাপাশি সকলের সম্মিলিত প্রয়াসে নতুন বছরের শুরুতে ভালো কিছুই হবে’- বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

উল্লেখ্য, পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতায় বিএসইসি অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিলেও তা বাজারে প্রতিফলিত হচ্ছে না। পরিণতিতে রোববার বড়দিনের ছুটির পর সোমবার প্রথম কর্মদিবসে সূচক পতনের সঙ্গে লেনদেন নামল ২০০ কোটির নিচে। এর আগে সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস বৃহস্পতিবার লেনদেন হয়েছিল ২২৭ কোটি ৭৪ লাখ ৭৮ হাজার টাকার শেয়ার। সেটি ছিল ২০২০ সালের ১৬ জুলাইয়ের পর সর্বনিম্ন লেনদেন।

তলানিতে নামলেও গত দুই বছরে লেনদেন ২০০ কোটির নিচে নামেনি, কিন্তু সোমবার হাতবদল হয় ১৯৮ কোটি ৮০ লাখ ৭৩ হাজার টাকা, যা চলতি বছরের তো বটেই, গত ২ বছর ৫ মাসে সর্বনিম্ন।

এর চেয়ে কমল লেনদেন হয়েছিল ২০২০ সালের ৭ জুলাই। ওই দিন হাতবদল হয়েছিল ১৩৮ কোটি ৫৬ লাখ ৫৫ হাজার টাকা।

আরও পড়ুন: বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রকট আকার ধারণ করছে সঙ্কট

অর্ধেকের কিছু বেশি কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত আসার দিন বুধবার লেনদেন ছিল ৩৩৩ কোটি ৫৮ লাখ ৯৮ হাজার টাকা। বৃহস্পতিবার লেনদেন কমে ১০৫ কোটি ৮৪ লাখ ২০ হাজার টাকা বা ৩১.৭২ শতাংশ। সোমবার সেটি কমল ২৮ কোটি ৯৪ লাখ ৫ হাজার টাকা বা ১২.৭০ শতাংশ।

প্রসঙ্গত, করোনা পরিস্থিতির মধ্যে ২০২০ সালের ১৭ মে পুঁজিবাজারের হাল ধরেন পুনর্গঠিত বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। কাজে যোগদানের পর থেকে নতুন কমিশনের নানামুখী কার্যকর উদ্যোগে গতিশীলতা পায় পুঁজিবাজার। আস্থা ফেরায় প্রাণ ফিরে পান বিনিয়োগকারীরা। তবে দেড় বছর ধারাবাহিক উত্থানের পর গত বছরের শেষের দিকে পুঁজিবাজারে শুরু হয় সংশোধন। তার সঙ্গে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে যুক্ত হয় ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধসহ নানান বৈশ্বিক সংকট। এর প্রভাব থেকে রক্ষা পায়নি দেশের পুঁজিবাজার।

অথচ, বাজারের স্থিতিশীলতায় নতুন কমিশনের পদক্ষেপও কম ছিল না।  বিশেষ করে চলতি বছরের বিএসইসির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলো ফ্লোর প্রাইস আরোপ। বৈশ্বিক সংকটের কারণে পুঁজিবাজারে ধারাবাহিক পতন রোধে চলতি বছরের গত ২৮ জুলাই দ্বিতীয় দফায় ফ্লোর প্রাইস আরোপ করে শেয়ারের দাম কমানো ঠেকিয়ে রাখার উদ্যোগ নেয় বিএসইসি। এ ধরনের পদ্ধতি পৃথিবীর অন্য কোনও দেশের পুঁজিবাজারে না থাকলেও দেশের সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে বহাল রাখা হয়েছে।

এছাড়া সবার জন্য প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) শেয়ার নিশ্চিত করার  লটারি প্রথা বাতিল, ব্যাংকের বিনিয়োগ-সীমার গণনা শেয়ারের বাজারমূল্যের বদলে ক্রয়মূল্যে নির্ধারণ করার দাবি বাস্তবায়ন, বিভিন্ন কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা বেশ কিছু কোম্পানিতে পুনরায় উৎপাদন শুরু, যেসব কোম্পানি পুঁজিবাজার থেকে টাকা তুলে লাপাত্তা হয়ে গিয়েছিল, সেগুলোকে ডি লিস্টিং করিয়ে বিনিয়োগকারীদের টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার পদক্ষেপ, কোম্পানিগুলোকে স্টক ডিভিডেন্ডের বদলে ক্যাশ ডিভিডেন্ডে দিতে অনুপ্রাণিত করা, সরকারি সিকিউরিটিজ লেনদেন ও বন্ড মার্কেট উন্নয়নেও কমিশনের ভূমিকা রয়েছে।

আরও পড়ুন: আইপিও ইস্যুতে ধীরে চলো নীতিতে বিএসইসি: কমেছে অর্থ সংগ্রহের পরিমাণ

পুঁজিবাজারের উন্নয়ন, বাজারে শৃঙ্খলা ও স্বচ্ছতা রক্ষার স্বার্থে বছরজুড়েই কারসাজির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে হার্ডলাইনে ছিল বিএসইসি। সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘনের কারণে বিভিন্ন কারসাজি চক্রের সদস্যদের মোটা অঙ্কের জরিমানা ও পুঁজিবাজারে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে কমিশন।

এছাড়া বছরজুড়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখা, জাপানে ভার্চুয়ালি রোড শো আয়োজন করা, মার্কেট ইন্টারমিডিয়ারিদের কাজে উৎসাহ বাড়াতে স্বাধীনতা সুবর্ণজয়ন্তী পুরস্কার- ২০২২ প্রদান, বাজেটে পুঁজিবাজারে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগ পুনর্বহাল রাখা; এসএমই প্ল্যাটফর্মে বিনিয়োগ সহজ করা, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জকে (সিএসই) কমোডিটি এক্সচেঞ্জ গঠনে সহায়তা, সিএসইর স্ট্রাটেজিক পার্টনার হিসেবে বসুন্ধরা গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এবিজিকে অনুমোদন, এক্সচেঞ্জ ট্রেডেট ফান্ড (ইটিএফ) ও অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড (এটিবি) গঠনে আইন প্রণয়ন, বিনিয়োগকারীদের প্রাপ্য লভ্যাংশ ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডের (সিএমএসএফ) মাধ্যমে ফেরত প্রদান, চেক জমা দিয়েই শেয়ার কেনার সুযোগ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পুঁজিবাজার নিয়ে গুজব বা ভীতি ছড়ানো কমাতে পদক্ষেপ গ্রহণ, ব্যাংক ও বিমা কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ, দেশের জনগণকে বিনিয়োগ শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে মাধ্যমিক পর্যায় থেকে পাঠ্যপুস্তকে বিনিয়োগ শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ, শেয়ারহোল্ডারদের নগদ লভ্যাংশ প্রদানে উৎসাহিত করা ও বোনাস শেয়ার অনুমোদনের ক্ষেত্রে নীতিমালা পরিবর্তন করার পদক্ষেপ নিয়েছে বিএসইসি।

আরও পড়ুন: পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছেন বিদেশী বিনিয়োগকারীরা

শুধু তাই নয়, আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলেও নিজের অবস্থান শক্তিশালী করতে বিএসইসি একাধিক দেশে রোডশো’ও করেছে। সবশেষ ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অফ সিকিউরিটিজ কমিশনসের (আইওএসকো) এশিয়া প্যাসিফিক রিজিওনালের ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। ২০২২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত তিনি এই পদে দায়িত্ব পালন করবেন। গত ১৭ অক্টোবর তিনি এ দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দেশের পুঁজিবাজারে এটাই প্রথম কোনও বড় অর্জন।

বিজনেস জার্নাল/ঢাকা

শেয়ার করুন

x
English Version

শেয়ারবাজারে কোন সমস্যা নেই: বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান

নতুন বছরে ভালো কিছুর প্রত্যাশা করছি: বিএসইসি চেয়ারম্যান

আপডেট: ০৭:৩৮:৪৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২২

শেয়ারবাজারে কোন সমস্যা নেই, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দাই বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে বলে মনে করছেন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। বাজারের বর্তমান পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত না হয়ে ধৈর্য্য ধরার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, বাজারের স্থিতিশীলতায় বিএসইসি বদ্ধপরিকর। চলমান সঙ্কট কেটে গেলে নতুন বছরে ভালো কিছুর প্রত্যাশা করছি। বর্তমান বাজার পরিস্থিতির অবনতি ও এ সময়ে বিনিয়োগকারীদের করনীয় সম্পর্কে জানতে চাইলে বিজনেস জার্নালকে বিএসইসির চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

তিনি বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের শেয়ারবাজারে কোন সমস্যা নেই। বাজারের জন্য যেসব সংস্কার বা পদক্ষেপ নেয়ার দরকার তার সবই আমরা করেছি। তবে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সঙ্কট ডলারের ক্রাইসিস, মূল্যস্ফীতি এবং সামনের দিনগুলোতে অর্থনৈতিক কিংবা অন্য সূচকগুলো নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যেসব আশঙ্কার কথা বলা হচ্ছে- তা শেয়ারবাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।’

ডলারের সঙ্কট ও মূল্যবৃদ্ধির কারণে ব্যাংকগুলোতে তারল্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিক করোনা বিপর্যয়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট বিশ্ব অর্থনৈতিক সঙ্কটে আমদানি রপ্তানির ভারসাম্যহীনতার মাশুল দিতে হয়েছে বাংলাদেশি মুদ্রা টাকাকে৷ রপ্তানির তুলনায় আমদানি ব্যয় অনেক বেড়ে যাওয়ায় টান পড়ে ডলারের রিজার্ভে৷ ফলে ডলারের তুলনায় টাকার অবমূল্যায়ন ঘটতে থাকে৷ কিছুদিন আগে যেখানে ১ মার্কিন ডলারের বিনিময় হার ছিল ৮৬-৮৭ টাকা, তা বর্তমানে ১০৪-১০৫ টাকায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে৷ এখানেও প্রতি ডলারে ব্যয় বেড়েছে ১৫ থেকে ১৭ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া, ব্যাংক এক্সপোজার লিমিট সংক্রান্ত নির্দেশনার কারণে শেয়ারবাজার থেকেও কিছু টাকা বেরিয়ে গেছে’ বলেও তিনি জানান।

আরও পড়ুন: বাজার উন্নয়নে বিএসইসির উদ্যোগের সুফল পাচ্ছে না বিনিয়োগকারীরা

বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, ‘এসব প্রতিকূল সমস্যার কারণেই প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী এমনকি অধিকাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারীরাও বাজারের গতিবিধি পর্যবেক্ষন করছেন। আর সবচেয়ে বড় বিষয় হলো বছর শেষ হতে আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। এ সময়ে ব্যাংক ও এর সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো স্বভাবতই নতুন বিনিয়োগে যায় না। কারণ তাদের ক্লোজিং করতে হয়।’

বাজারের দু:সময়ে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা কি নিষ্ক্রিয় আছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নিষ্ক্রিয় আছেন, এমনটা বলা যাবে না। একটু আগেই বললাম বছর শেষে তাদের হিসাব-নিকাশ ক্লোজিংয়ের বিষয় রয়েছে। এছাড়াও বছরের পুরো সময়ে যা বিনিয়োগ করেছেন, সেসব বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অর্থ্যাৎ আন-রিয়েলাইজড গেইন বা লসের বিপরীতে প্রভিশনিংয়ের ‍মতো গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় রয়েছে, যা ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যেই তাদেরকে শেষ করতে হবে।’

বাজার উন্নয়নে নতুন কমিশনের নানা পদক্ষেপের সুফল কি পেয়েছে দেশের পুঁজিবাজার তথা বিনিয়োগকারীরা- এমন প্রশ্নের জবাবে শিবলী রুবাইতুল ইসলাম জানান, বর্তমান কমিশন দায়িত্ব্য নেয়ার পর থেকে বিভিন্ন আইনের সংশোধন, রোডশো, ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড গঠন, ‘আইপিও প্রক্রিয়ায় পরিবর্তনসহ অসংখ্য পদক্ষেপ নিয়েছে। এছাড়া বাজার উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া একটি চলমান প্রক্রিয়া। এর সুফল কখনো কখনো স্বল্পমেয়াদে আবার কখনও দীর্ঘমেয়াদে পাওয়া যায়। অদূর ভবিষ্যতে দেশের পুঁজিবাজারও এর সুফল পাবে।’

আরও পড়ুন: শতাধিক ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে ৬০ কোটি টাকা জরিমানা

তবে কমিশন বাজারের সার্বিক বিষয়ে নজর রেখেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাজারে তারল্য প্রবাহ বাড়াতে কমিশন কাজ করে যাচ্ছে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীসহ সকল স্টেকহোল্ডারদের সাথেই আমরা বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সঙ্কট সমাধানের পাশাপাশি সকলের সম্মিলিত প্রয়াসে নতুন বছরের শুরুতে ভালো কিছুই হবে’- বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

উল্লেখ্য, পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতায় বিএসইসি অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিলেও তা বাজারে প্রতিফলিত হচ্ছে না। পরিণতিতে রোববার বড়দিনের ছুটির পর সোমবার প্রথম কর্মদিবসে সূচক পতনের সঙ্গে লেনদেন নামল ২০০ কোটির নিচে। এর আগে সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস বৃহস্পতিবার লেনদেন হয়েছিল ২২৭ কোটি ৭৪ লাখ ৭৮ হাজার টাকার শেয়ার। সেটি ছিল ২০২০ সালের ১৬ জুলাইয়ের পর সর্বনিম্ন লেনদেন।

তলানিতে নামলেও গত দুই বছরে লেনদেন ২০০ কোটির নিচে নামেনি, কিন্তু সোমবার হাতবদল হয় ১৯৮ কোটি ৮০ লাখ ৭৩ হাজার টাকা, যা চলতি বছরের তো বটেই, গত ২ বছর ৫ মাসে সর্বনিম্ন।

এর চেয়ে কমল লেনদেন হয়েছিল ২০২০ সালের ৭ জুলাই। ওই দিন হাতবদল হয়েছিল ১৩৮ কোটি ৫৬ লাখ ৫৫ হাজার টাকা।

আরও পড়ুন: বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রকট আকার ধারণ করছে সঙ্কট

অর্ধেকের কিছু বেশি কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত আসার দিন বুধবার লেনদেন ছিল ৩৩৩ কোটি ৫৮ লাখ ৯৮ হাজার টাকা। বৃহস্পতিবার লেনদেন কমে ১০৫ কোটি ৮৪ লাখ ২০ হাজার টাকা বা ৩১.৭২ শতাংশ। সোমবার সেটি কমল ২৮ কোটি ৯৪ লাখ ৫ হাজার টাকা বা ১২.৭০ শতাংশ।

প্রসঙ্গত, করোনা পরিস্থিতির মধ্যে ২০২০ সালের ১৭ মে পুঁজিবাজারের হাল ধরেন পুনর্গঠিত বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। কাজে যোগদানের পর থেকে নতুন কমিশনের নানামুখী কার্যকর উদ্যোগে গতিশীলতা পায় পুঁজিবাজার। আস্থা ফেরায় প্রাণ ফিরে পান বিনিয়োগকারীরা। তবে দেড় বছর ধারাবাহিক উত্থানের পর গত বছরের শেষের দিকে পুঁজিবাজারে শুরু হয় সংশোধন। তার সঙ্গে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে যুক্ত হয় ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধসহ নানান বৈশ্বিক সংকট। এর প্রভাব থেকে রক্ষা পায়নি দেশের পুঁজিবাজার।

অথচ, বাজারের স্থিতিশীলতায় নতুন কমিশনের পদক্ষেপও কম ছিল না।  বিশেষ করে চলতি বছরের বিএসইসির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলো ফ্লোর প্রাইস আরোপ। বৈশ্বিক সংকটের কারণে পুঁজিবাজারে ধারাবাহিক পতন রোধে চলতি বছরের গত ২৮ জুলাই দ্বিতীয় দফায় ফ্লোর প্রাইস আরোপ করে শেয়ারের দাম কমানো ঠেকিয়ে রাখার উদ্যোগ নেয় বিএসইসি। এ ধরনের পদ্ধতি পৃথিবীর অন্য কোনও দেশের পুঁজিবাজারে না থাকলেও দেশের সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে বহাল রাখা হয়েছে।

এছাড়া সবার জন্য প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) শেয়ার নিশ্চিত করার  লটারি প্রথা বাতিল, ব্যাংকের বিনিয়োগ-সীমার গণনা শেয়ারের বাজারমূল্যের বদলে ক্রয়মূল্যে নির্ধারণ করার দাবি বাস্তবায়ন, বিভিন্ন কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা বেশ কিছু কোম্পানিতে পুনরায় উৎপাদন শুরু, যেসব কোম্পানি পুঁজিবাজার থেকে টাকা তুলে লাপাত্তা হয়ে গিয়েছিল, সেগুলোকে ডি লিস্টিং করিয়ে বিনিয়োগকারীদের টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার পদক্ষেপ, কোম্পানিগুলোকে স্টক ডিভিডেন্ডের বদলে ক্যাশ ডিভিডেন্ডে দিতে অনুপ্রাণিত করা, সরকারি সিকিউরিটিজ লেনদেন ও বন্ড মার্কেট উন্নয়নেও কমিশনের ভূমিকা রয়েছে।

আরও পড়ুন: আইপিও ইস্যুতে ধীরে চলো নীতিতে বিএসইসি: কমেছে অর্থ সংগ্রহের পরিমাণ

পুঁজিবাজারের উন্নয়ন, বাজারে শৃঙ্খলা ও স্বচ্ছতা রক্ষার স্বার্থে বছরজুড়েই কারসাজির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে হার্ডলাইনে ছিল বিএসইসি। সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘনের কারণে বিভিন্ন কারসাজি চক্রের সদস্যদের মোটা অঙ্কের জরিমানা ও পুঁজিবাজারে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে কমিশন।

এছাড়া বছরজুড়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখা, জাপানে ভার্চুয়ালি রোড শো আয়োজন করা, মার্কেট ইন্টারমিডিয়ারিদের কাজে উৎসাহ বাড়াতে স্বাধীনতা সুবর্ণজয়ন্তী পুরস্কার- ২০২২ প্রদান, বাজেটে পুঁজিবাজারে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগ পুনর্বহাল রাখা; এসএমই প্ল্যাটফর্মে বিনিয়োগ সহজ করা, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জকে (সিএসই) কমোডিটি এক্সচেঞ্জ গঠনে সহায়তা, সিএসইর স্ট্রাটেজিক পার্টনার হিসেবে বসুন্ধরা গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এবিজিকে অনুমোদন, এক্সচেঞ্জ ট্রেডেট ফান্ড (ইটিএফ) ও অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড (এটিবি) গঠনে আইন প্রণয়ন, বিনিয়োগকারীদের প্রাপ্য লভ্যাংশ ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডের (সিএমএসএফ) মাধ্যমে ফেরত প্রদান, চেক জমা দিয়েই শেয়ার কেনার সুযোগ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পুঁজিবাজার নিয়ে গুজব বা ভীতি ছড়ানো কমাতে পদক্ষেপ গ্রহণ, ব্যাংক ও বিমা কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ, দেশের জনগণকে বিনিয়োগ শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে মাধ্যমিক পর্যায় থেকে পাঠ্যপুস্তকে বিনিয়োগ শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ, শেয়ারহোল্ডারদের নগদ লভ্যাংশ প্রদানে উৎসাহিত করা ও বোনাস শেয়ার অনুমোদনের ক্ষেত্রে নীতিমালা পরিবর্তন করার পদক্ষেপ নিয়েছে বিএসইসি।

আরও পড়ুন: পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছেন বিদেশী বিনিয়োগকারীরা

শুধু তাই নয়, আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলেও নিজের অবস্থান শক্তিশালী করতে বিএসইসি একাধিক দেশে রোডশো’ও করেছে। সবশেষ ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অফ সিকিউরিটিজ কমিশনসের (আইওএসকো) এশিয়া প্যাসিফিক রিজিওনালের ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। ২০২২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত তিনি এই পদে দায়িত্ব পালন করবেন। গত ১৭ অক্টোবর তিনি এ দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দেশের পুঁজিবাজারে এটাই প্রথম কোনও বড় অর্জন।

বিজনেস জার্নাল/ঢাকা