০৬:০০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪

৫ বছর রাজস্ব নীতিগুলো অপরিবর্তিত রাখার আহ্বান বিজিএমইএ’র

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০৪:৩১:২৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ মে ২০২২
  • / ৪১৬৮ বার দেখা হয়েছে

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: আসন্ন ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেটে কর ও রাজস্ব সংক্রান্ত নীতিগুলো অন্তত ৫ বছরের জন্য অপরিবর্তিত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন তৈরি পোশাক খাতের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি ফারুক হাসান। 

শনিবার (১৪ মে) ৩৭ তম ‘ওয়ার্ল্ড ফ্যাশন কনভেনশন এবং মেইড ইন বাংলাদেশ’ সপ্তাহের লোগো উন্মোচন উপলক্ষ্যে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ আহ্বান জানান। 

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

বিজিএমইএ’র সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, শিল্পের সক্ষমতা ধরে রাখতে ও বিনিয়োগের জন্য অনুকুল পরিবেশ প্রয়োজন। সেই সঙ্গে আর্থিক ও অন্যান্য্য নীতির ধারাবাহিকতা, বিশেষ করে শুল্ক-কর ও মূসক হার একটি নির্দিষ্ট সময়কালের জন্য নির্ধারিত করা দরকার। কর ও রাজস্ব সংক্রান্ত নীতিগুলো অন্তত ৫ বছরের জন্য অপরিবর্তিত রাখলে উদ্যোক্তাদের জন্য মঙ্গলজনক হবে।

দেশের কটনের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গত  চার দশকে দেশের তৈরী পোশাক রফতানি একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে পৌঁছালেও আমাদের পণ্যের ম্যাটেরিয়াল ডাইভারসিফিকেশন হয়নি। বর্তমানে দেশের মোট পোশাক রফতানির প্রায় ৭৪ শতাংশ’ই কটনের তৈরি, যা দশ বছর আগে ২০০৮-২০০৯ অর্থবছরে ছিল ৬৯ শতাংশ, অর্থাৎ বিগত দশ বছরে আমাদের শিল্পটির কটন নির্ভরতা বেড়েছে। তবে বিশ্বের মোট টেক্সটাইল কনজাম্পশনের প্রায় ৭৫ শতাংশ’ই নন-কটন, এর মধ্যে ৬৪ শতাংশই সিনথেটিক (ম্যান মেড ফাইবার) যা বার্ষিক তিন থেকে চার শতাংশ হারে বাড়ছে। বিশ্ব বাজারে ভোক্তাদের ক্রমাগত জীবনযাত্রার পরিবর্তন এবং টেকসই ও পরিবেশবান্ধব পোশাকের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষিতে নন-কটন পণ্যের চাহিদা বাড়ছে। 

২০১৭ সালে  ম্যান মেড ফাইবার বেসড টেক্সটাইল ট্রেড এর পরিমাণ ছিল প্রায় ১৫০ বিলিয়ন ডলার, যার মধ্যে বাংলাদেশের শেয়ার ছিল মাত্র পাঁচ শতাংশ, অথচ আমাদের প্রতিযোগী দেশ ভিয়েতনামের দখলে ছিল ১০ শতাংশ শেয়ার।  অর্থাৎ বৈশ্বিক ফাইবার চাহিদার বিচারে আমরা অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ কটনের মধ্যে সীমাবদ্ধ আছি। 

উল্লেখ্য যে, বিগত দশকে আমাদের দেশে নন-কটন, বিশেষত ম্যান-মেড-ফাইবার খাতে কিছু বিনিয়োগ হলেও এসকল বিনিয়োগ মূলত মূলধন এবং টেকনোলজি নির্ভর। আমাদের প্রতিযোগী দেশগুলোতে এই শিল্পের কাঁচামাল ‘পেট্রোক্যামিকেল চিপস’ থাকায় এবং তাদের স্কেল ইকনোমির কারণে তারা প্রতিযোগী সক্ষমতায় অনেক এগিয়ে আছে। এই পরিস্থিতিতে নন-কটন খাতে বিনিয়োগ ও রফতানি উৎসাহিত করতে, বিশেষকরে প্রতিযোগী সক্ষমতা ধরে রাখতে নন-কটন পোশাক রফতানির উপর বিশেষ প্রণোদনা প্রদান করতে হবে।

তিনি বলেন, বিশ্ববাজারে টিকে থাকার জন্য লীড টাইম কমানো এবং দ্রুত পণ্য ডেলিভারি দেওয়ার সক্ষমতা অর্জন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই পরিস্থিতিতে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা এবং ব্যবসা-বাণিজ্য তথা সার্বিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সহজ করার জন্য এবং গতি আনার জন্য আরও পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।  বিশেষকরে আমদানি-রফতানি পর্যায়ে যেসকল সেবাগুলো প্রয়োজন হয় যেমন: কাস্টমস, বন্ড ও ব্যাংকিং, এবং নতুন শিল্প কারখানা স্থাপনের সময় যেসকল পারমিশন ও লাইসেন্স প্রয়োজন হয় তার সহজলভ্যতা ও সহজীকরণের জন্য আরও উদ্যোগ প্রয়োজন।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব পোশাক শিল্পে পড়ার আশঙ্কা জানিয়েছে বিজিএমইএ’র সভাপতি বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে একদিকে যেমন জ্বালানি তেলসহ খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে, অন্যদিকে ইউরোপসহ বিশ্বের বেশ কিছু দেশে অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কাও বাড়ছে। এর পাশাপাশি সমগ্র বিশ্বে মূল্যস্ফীতি ভয়াবহভাবে বাড়ছে, যা আন্তর্জাতিক বাজারে পোশাকের চাহিদা ও ক্রয় ক্ষমতাকে প্রভাবিত করতে পারে। বিষয়টি আমাদের উদ্যোক্তাদের জন্য একটি  দুশ্চিন্তার কারণ। এই পরিস্থিতিতে, পোশাক রফতানিতে বর্তমানে যেই প্রবৃদ্ধিটি দেখা যাচ্ছে, সেটির দিকে না তাকিয়ে থেকে বরং কিভাবে আমরা প্রতিযোগী সক্ষমতা আরও বাড়াতে পারি, কিভাবে নতুন সুযোগ তৈরি করতে পারি, সেটিই আমাদের কৌশল হওয়া উচিত। তবে সমস্ত প্রতিকূলতার পরেও ২০২১-২০২২ অর্থবছর শেষে আমাদের রফতানি ৪১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছি। 

বিজিএমইএ’র সভাপতি আশা প্রকাশ করে বলেন, ২০২২ সালে বিশ্ববাজারে আমাদের শেয়ার সাড়ে ৭ শতাংশ অতিক্রম করবে। এছাড়া আগামী ২০২৫-এর শেষে এই শেয়ার ১০ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, আগামী ১২-১৮ নভেম্বর ঢাকায় সাত দিনব্যাপী ৩৭তম  ‘ওয়ার্ল্ড ফ্যাশন কনভেনশন’ অনুষ্ঠিত হবে বলে জানানো হয়।

ঢাকা/টিএ

শেয়ার করুন

x
English Version

৫ বছর রাজস্ব নীতিগুলো অপরিবর্তিত রাখার আহ্বান বিজিএমইএ’র

আপডেট: ০৪:৩১:২৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ মে ২০২২

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: আসন্ন ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেটে কর ও রাজস্ব সংক্রান্ত নীতিগুলো অন্তত ৫ বছরের জন্য অপরিবর্তিত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন তৈরি পোশাক খাতের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি ফারুক হাসান। 

শনিবার (১৪ মে) ৩৭ তম ‘ওয়ার্ল্ড ফ্যাশন কনভেনশন এবং মেইড ইন বাংলাদেশ’ সপ্তাহের লোগো উন্মোচন উপলক্ষ্যে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ আহ্বান জানান। 

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

বিজিএমইএ’র সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, শিল্পের সক্ষমতা ধরে রাখতে ও বিনিয়োগের জন্য অনুকুল পরিবেশ প্রয়োজন। সেই সঙ্গে আর্থিক ও অন্যান্য্য নীতির ধারাবাহিকতা, বিশেষ করে শুল্ক-কর ও মূসক হার একটি নির্দিষ্ট সময়কালের জন্য নির্ধারিত করা দরকার। কর ও রাজস্ব সংক্রান্ত নীতিগুলো অন্তত ৫ বছরের জন্য অপরিবর্তিত রাখলে উদ্যোক্তাদের জন্য মঙ্গলজনক হবে।

দেশের কটনের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গত  চার দশকে দেশের তৈরী পোশাক রফতানি একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে পৌঁছালেও আমাদের পণ্যের ম্যাটেরিয়াল ডাইভারসিফিকেশন হয়নি। বর্তমানে দেশের মোট পোশাক রফতানির প্রায় ৭৪ শতাংশ’ই কটনের তৈরি, যা দশ বছর আগে ২০০৮-২০০৯ অর্থবছরে ছিল ৬৯ শতাংশ, অর্থাৎ বিগত দশ বছরে আমাদের শিল্পটির কটন নির্ভরতা বেড়েছে। তবে বিশ্বের মোট টেক্সটাইল কনজাম্পশনের প্রায় ৭৫ শতাংশ’ই নন-কটন, এর মধ্যে ৬৪ শতাংশই সিনথেটিক (ম্যান মেড ফাইবার) যা বার্ষিক তিন থেকে চার শতাংশ হারে বাড়ছে। বিশ্ব বাজারে ভোক্তাদের ক্রমাগত জীবনযাত্রার পরিবর্তন এবং টেকসই ও পরিবেশবান্ধব পোশাকের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষিতে নন-কটন পণ্যের চাহিদা বাড়ছে। 

২০১৭ সালে  ম্যান মেড ফাইবার বেসড টেক্সটাইল ট্রেড এর পরিমাণ ছিল প্রায় ১৫০ বিলিয়ন ডলার, যার মধ্যে বাংলাদেশের শেয়ার ছিল মাত্র পাঁচ শতাংশ, অথচ আমাদের প্রতিযোগী দেশ ভিয়েতনামের দখলে ছিল ১০ শতাংশ শেয়ার।  অর্থাৎ বৈশ্বিক ফাইবার চাহিদার বিচারে আমরা অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ কটনের মধ্যে সীমাবদ্ধ আছি। 

উল্লেখ্য যে, বিগত দশকে আমাদের দেশে নন-কটন, বিশেষত ম্যান-মেড-ফাইবার খাতে কিছু বিনিয়োগ হলেও এসকল বিনিয়োগ মূলত মূলধন এবং টেকনোলজি নির্ভর। আমাদের প্রতিযোগী দেশগুলোতে এই শিল্পের কাঁচামাল ‘পেট্রোক্যামিকেল চিপস’ থাকায় এবং তাদের স্কেল ইকনোমির কারণে তারা প্রতিযোগী সক্ষমতায় অনেক এগিয়ে আছে। এই পরিস্থিতিতে নন-কটন খাতে বিনিয়োগ ও রফতানি উৎসাহিত করতে, বিশেষকরে প্রতিযোগী সক্ষমতা ধরে রাখতে নন-কটন পোশাক রফতানির উপর বিশেষ প্রণোদনা প্রদান করতে হবে।

তিনি বলেন, বিশ্ববাজারে টিকে থাকার জন্য লীড টাইম কমানো এবং দ্রুত পণ্য ডেলিভারি দেওয়ার সক্ষমতা অর্জন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই পরিস্থিতিতে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা এবং ব্যবসা-বাণিজ্য তথা সার্বিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সহজ করার জন্য এবং গতি আনার জন্য আরও পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।  বিশেষকরে আমদানি-রফতানি পর্যায়ে যেসকল সেবাগুলো প্রয়োজন হয় যেমন: কাস্টমস, বন্ড ও ব্যাংকিং, এবং নতুন শিল্প কারখানা স্থাপনের সময় যেসকল পারমিশন ও লাইসেন্স প্রয়োজন হয় তার সহজলভ্যতা ও সহজীকরণের জন্য আরও উদ্যোগ প্রয়োজন।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব পোশাক শিল্পে পড়ার আশঙ্কা জানিয়েছে বিজিএমইএ’র সভাপতি বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে একদিকে যেমন জ্বালানি তেলসহ খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে, অন্যদিকে ইউরোপসহ বিশ্বের বেশ কিছু দেশে অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কাও বাড়ছে। এর পাশাপাশি সমগ্র বিশ্বে মূল্যস্ফীতি ভয়াবহভাবে বাড়ছে, যা আন্তর্জাতিক বাজারে পোশাকের চাহিদা ও ক্রয় ক্ষমতাকে প্রভাবিত করতে পারে। বিষয়টি আমাদের উদ্যোক্তাদের জন্য একটি  দুশ্চিন্তার কারণ। এই পরিস্থিতিতে, পোশাক রফতানিতে বর্তমানে যেই প্রবৃদ্ধিটি দেখা যাচ্ছে, সেটির দিকে না তাকিয়ে থেকে বরং কিভাবে আমরা প্রতিযোগী সক্ষমতা আরও বাড়াতে পারি, কিভাবে নতুন সুযোগ তৈরি করতে পারি, সেটিই আমাদের কৌশল হওয়া উচিত। তবে সমস্ত প্রতিকূলতার পরেও ২০২১-২০২২ অর্থবছর শেষে আমাদের রফতানি ৪১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছি। 

বিজিএমইএ’র সভাপতি আশা প্রকাশ করে বলেন, ২০২২ সালে বিশ্ববাজারে আমাদের শেয়ার সাড়ে ৭ শতাংশ অতিক্রম করবে। এছাড়া আগামী ২০২৫-এর শেষে এই শেয়ার ১০ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, আগামী ১২-১৮ নভেম্বর ঢাকায় সাত দিনব্যাপী ৩৭তম  ‘ওয়ার্ল্ড ফ্যাশন কনভেনশন’ অনুষ্ঠিত হবে বলে জানানো হয়।

ঢাকা/টিএ