০৩:০৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪

শেয়ারবাজারে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ছেলেকে হত্যা করে নিজের আত্মহত্যা

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ১১:৩৯:২৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৮ এপ্রিল ২০২৪
  • / ৪৪৮৫ বার দেখা হয়েছে

রাজধানীর আগারগাঁওয়ের মোল্লাপাড়া এলাকায় একটি বাসা থেকে বাবা-ছেলের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আহত অবস্থায় মেয়েকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রোববার (০৭ এপ্রিল) সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে। লাশের পাশে একটি চিরকুট পাওয়া গেছে যাতে, “ঘটনার জন্য কেউ দায়ী নয়।”

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

পুলিশের ধারণা, ছেলেকে হত্যার পর বাবা আত্মহত্যা করেছেন। চিরকুটটি মশিউরের লেখা হতে পারে। এর পরও সেটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে।

নিহতরা হলেন– মশিউর রহমান ও তাঁর ছেলে মোদাব্বির হোসেন সাদাব। শ্যামলীর একটি হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন মশিউরের মেয়ে সিনথিয়া। তার অবস্থা সংকটাপন্ন। মোহাম্মদপুরে ঢাকা উদ্যান কলেজ থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল সাদাবের।

সিনথিয়া শেরেবাংলা নগরের একটি স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। মশিউরের গ্রামের বাড়ি বগুড়ায়। দীর্ঘদিন ধরে তিনি ঢাকায় বসবাস করতেন। পরিবার নিয়ে আগারগাঁও তালতলার মোল্লাপাড়ার একটি বাসার দোতলায় ভাড়া থাকতেন।

শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশ জানায়, ৯৯৯-এর মাধ্যমে খবর পেয়ে সন্ধ্যায় বাবা-ছেলেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এর পর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে তাদের মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। লাশ মর্গে রাখা হয়েছে; আজ সোমবার ময়নাতদন্ত করা হতে পারে।

নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, মশিউর দক্ষিণখানে একটি জমি কিনে প্রতারিত হন। এ ছাড়া শেয়ার ব্যবসায়ও অনেক ক্ষতিগ্রস্থ হন। ফলে আর্থিক সংকটে পড়ে যান। এতে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন তিনি। হতাশা থেকেই সন্তানকে হত্যা করে নিজে আত্মহত্যা করেছেন। ঘটনার সময় তাঁর স্ত্রী মজিদা খাতুন ডলি বাসায় ছিলেন না। তিনি শিক্ষার্থী পড়ানোর জন্য বাইরে গিয়েছিলেন।

জানা যায়, মশিউর একটি ডেভেলপার কোম্পানিতে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে চাকরি করতেন। পাঁচ-ছয় বছর আগে চাকরি ছেড়ে শেয়ার বাজারে লগ্নি করেন। এতে তেমন লাভবান হতে পারেননি তিনি। এ ছাড়া চার-পাঁচ বছর আগে দক্ষিণখান এলাকায় রতন নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে ১৪ লাখ টাকায় চার শতকের মতো জমি কেনেন মশিউর। পরবর্তী সময়ে জানতে পারেন, জমির দলিল ভুয়া।

জালিয়াতি করে রতন ওই জমি তাঁর কাছে বিক্রি করেছিলেন। এটি জানার পর জমির টাকা ফেরতের জন্য চাপ দেন মশিউর। জমির বর্তমান মূল্য ৩২ লাখ টাকা। রতন ১০ লাখ টাকা ফেরত দিতে রাজি হন। কিন্তু সেই টাকা দিচ্ছি-দেব করে ঘুরাতে থাকেন। কিছুদিন ধরে রতন মশিউরের ফোনও রিসিভ করছিলেন না। একদিকে টাকার ফেরত না পাওয়া, অন্যদিকে শেয়ারবাজারে ব্যবসা মন্দা যাওয়ায় আর্থিক টানাপোড়েনে পড়েন তিনি।

আরও পড়ুন: উত্তরা ব্যাংকের র্বোড সভার তারিখ ঘোষণা

স্ত্রী মজিদা খাতুন জানান, সংসারের খরচ জোগাতে চার শিক্ষার্থীকে পড়ান তিনি। তিন শিক্ষার্থীর বাসায় গিয়ে পড়াতে হয়। আরেকজন বাসায় এসে পড়ে যায়। গতকাল দুপুর দেড়টার দিকে তিনি বাসা থেকে টিউশনির জন্য বের হন। এ সময় তাঁর স্বামী ও দুই সন্তান বাসায় ছিলেন। বিকেল পৌনে ৪টার দিকে তিনি বাসায় ফিরে ভেতর থেকে দরজা বন্ধ পান। পরে ডাকাডাকি করে কোনো সাড়া না পেয়ে বাড়ির নিরাপত্তাকর্মীর সহায়তায় পেছনের জানালার কাছে যান। সেখান থেকেও ডেকে সাড়া মেলেনি।

এক পর্যায়ে দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে দেখেন, এক কক্ষে মেয়ে অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে। আরেক কক্ষের মেঝেতে ছেলের নিথর দেহ এবং সিলিং ফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় মশিউর ঝুলছেন। দ্রুত মেয়েকে শ্যামলী ডক্টরস কেয়ার হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভর্তি করা হয়। পরে পুলিশ এসে বাবা ও ছেলেকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

তিনি বলেন, ‘দুই সন্তানের পড়ালেখার খরচ চালিয়ে সংসারের ব্যয় বহন করা আমাদের জন্য খুব কষ্টকর হয়ে পড়েছিল। আমি প্রাইভেট পড়িয়ে ৮ হাজার টাকা আয় করি এবং তা সংসারে ব্যয় করি। এতেও সচ্ছলতা ফেরেনি। এসব কারণে আমার স্বামী কিছুদিন ধরে হতাশায় ভুগছিলেন। হতাশা থেকেই হয়তো ছেলেকে হত্যার পর আত্মহত্যা করেছেন। মেয়েকেও হত্যার চেষ্টা করেছিলেন। সিনথিয়া অচেতন হয়ে পড়ায় তিনি হয়তো ভেবেছিলেন মেয়ে মারা গেছে।’

শেরেবাংলা নগর থানার ওসি আব্দুল আহাদ গণমাধ্যমকে বলেন, প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে, ছেলেকে শ্বাসরোধে হত্যার পর মশিউর আত্মহত্যা করেছেন। মেয়েকেও শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

ঢাকা/এসএইচ

শেয়ার করুন

x
English Version

শেয়ারবাজারে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ছেলেকে হত্যা করে নিজের আত্মহত্যা

আপডেট: ১১:৩৯:২৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৮ এপ্রিল ২০২৪

রাজধানীর আগারগাঁওয়ের মোল্লাপাড়া এলাকায় একটি বাসা থেকে বাবা-ছেলের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আহত অবস্থায় মেয়েকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রোববার (০৭ এপ্রিল) সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে। লাশের পাশে একটি চিরকুট পাওয়া গেছে যাতে, “ঘটনার জন্য কেউ দায়ী নয়।”

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

পুলিশের ধারণা, ছেলেকে হত্যার পর বাবা আত্মহত্যা করেছেন। চিরকুটটি মশিউরের লেখা হতে পারে। এর পরও সেটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে।

নিহতরা হলেন– মশিউর রহমান ও তাঁর ছেলে মোদাব্বির হোসেন সাদাব। শ্যামলীর একটি হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন মশিউরের মেয়ে সিনথিয়া। তার অবস্থা সংকটাপন্ন। মোহাম্মদপুরে ঢাকা উদ্যান কলেজ থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল সাদাবের।

সিনথিয়া শেরেবাংলা নগরের একটি স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। মশিউরের গ্রামের বাড়ি বগুড়ায়। দীর্ঘদিন ধরে তিনি ঢাকায় বসবাস করতেন। পরিবার নিয়ে আগারগাঁও তালতলার মোল্লাপাড়ার একটি বাসার দোতলায় ভাড়া থাকতেন।

শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশ জানায়, ৯৯৯-এর মাধ্যমে খবর পেয়ে সন্ধ্যায় বাবা-ছেলেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এর পর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে তাদের মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। লাশ মর্গে রাখা হয়েছে; আজ সোমবার ময়নাতদন্ত করা হতে পারে।

নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, মশিউর দক্ষিণখানে একটি জমি কিনে প্রতারিত হন। এ ছাড়া শেয়ার ব্যবসায়ও অনেক ক্ষতিগ্রস্থ হন। ফলে আর্থিক সংকটে পড়ে যান। এতে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন তিনি। হতাশা থেকেই সন্তানকে হত্যা করে নিজে আত্মহত্যা করেছেন। ঘটনার সময় তাঁর স্ত্রী মজিদা খাতুন ডলি বাসায় ছিলেন না। তিনি শিক্ষার্থী পড়ানোর জন্য বাইরে গিয়েছিলেন।

জানা যায়, মশিউর একটি ডেভেলপার কোম্পানিতে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে চাকরি করতেন। পাঁচ-ছয় বছর আগে চাকরি ছেড়ে শেয়ার বাজারে লগ্নি করেন। এতে তেমন লাভবান হতে পারেননি তিনি। এ ছাড়া চার-পাঁচ বছর আগে দক্ষিণখান এলাকায় রতন নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে ১৪ লাখ টাকায় চার শতকের মতো জমি কেনেন মশিউর। পরবর্তী সময়ে জানতে পারেন, জমির দলিল ভুয়া।

জালিয়াতি করে রতন ওই জমি তাঁর কাছে বিক্রি করেছিলেন। এটি জানার পর জমির টাকা ফেরতের জন্য চাপ দেন মশিউর। জমির বর্তমান মূল্য ৩২ লাখ টাকা। রতন ১০ লাখ টাকা ফেরত দিতে রাজি হন। কিন্তু সেই টাকা দিচ্ছি-দেব করে ঘুরাতে থাকেন। কিছুদিন ধরে রতন মশিউরের ফোনও রিসিভ করছিলেন না। একদিকে টাকার ফেরত না পাওয়া, অন্যদিকে শেয়ারবাজারে ব্যবসা মন্দা যাওয়ায় আর্থিক টানাপোড়েনে পড়েন তিনি।

আরও পড়ুন: উত্তরা ব্যাংকের র্বোড সভার তারিখ ঘোষণা

স্ত্রী মজিদা খাতুন জানান, সংসারের খরচ জোগাতে চার শিক্ষার্থীকে পড়ান তিনি। তিন শিক্ষার্থীর বাসায় গিয়ে পড়াতে হয়। আরেকজন বাসায় এসে পড়ে যায়। গতকাল দুপুর দেড়টার দিকে তিনি বাসা থেকে টিউশনির জন্য বের হন। এ সময় তাঁর স্বামী ও দুই সন্তান বাসায় ছিলেন। বিকেল পৌনে ৪টার দিকে তিনি বাসায় ফিরে ভেতর থেকে দরজা বন্ধ পান। পরে ডাকাডাকি করে কোনো সাড়া না পেয়ে বাড়ির নিরাপত্তাকর্মীর সহায়তায় পেছনের জানালার কাছে যান। সেখান থেকেও ডেকে সাড়া মেলেনি।

এক পর্যায়ে দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে দেখেন, এক কক্ষে মেয়ে অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে। আরেক কক্ষের মেঝেতে ছেলের নিথর দেহ এবং সিলিং ফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় মশিউর ঝুলছেন। দ্রুত মেয়েকে শ্যামলী ডক্টরস কেয়ার হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভর্তি করা হয়। পরে পুলিশ এসে বাবা ও ছেলেকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

তিনি বলেন, ‘দুই সন্তানের পড়ালেখার খরচ চালিয়ে সংসারের ব্যয় বহন করা আমাদের জন্য খুব কষ্টকর হয়ে পড়েছিল। আমি প্রাইভেট পড়িয়ে ৮ হাজার টাকা আয় করি এবং তা সংসারে ব্যয় করি। এতেও সচ্ছলতা ফেরেনি। এসব কারণে আমার স্বামী কিছুদিন ধরে হতাশায় ভুগছিলেন। হতাশা থেকেই হয়তো ছেলেকে হত্যার পর আত্মহত্যা করেছেন। মেয়েকেও হত্যার চেষ্টা করেছিলেন। সিনথিয়া অচেতন হয়ে পড়ায় তিনি হয়তো ভেবেছিলেন মেয়ে মারা গেছে।’

শেরেবাংলা নগর থানার ওসি আব্দুল আহাদ গণমাধ্যমকে বলেন, প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে, ছেলেকে শ্বাসরোধে হত্যার পর মশিউর আত্মহত্যা করেছেন। মেয়েকেও শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

ঢাকা/এসএইচ