০৮:৩৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ মে ২০২৪

অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের বিশেষ সুযোগ দিয়ে পাশ হচ্ছে অর্থবিল

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ১০:৩০:৫৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ জুন ২০২১
  • / ৪২০৭ বার দেখা হয়েছে

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের বিশেষ সুযোগ দিয়ে জাতীয় সংসদে আজ অর্থবিল, ২০২১-২২ পাস হচ্ছে। চলতি অর্থবছরে অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার অবারিত সুযোগ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে তা বহাল থাকছে না। তবে করোনাকালে শিল্পে বিনিয়োগের স্থবিরতা কটিয়ে নতুন কর্মসংস্থান তৈরিতে উৎপাদনশীল শিল্পে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের বিশেষ সুযোগ রাখা হচ্ছে। এজন্য ১০ শতাংশ কর দিতে হবে। এ সুযোগ ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে। শুধু তা-ই নয়, নির্ধারিত হারে কর ও জরিমানা দিয়ে অপ্রদর্শিত অর্থ পুঁজিবাজার, আবাসন শিল্পে বিনিয়োগ করলেও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বা অন্য কোনো সংস্থা প্রশ্ন করতে পারবে না, আয়কর অধ্যাদেশে এমন ধারাও যুক্ত করা হচ্ছে।

এদিকে দেশের মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) প্রতিষ্ঠানগুলো মুনাফার দেখা পাচ্ছে না। মোটা দাগে গোটা খাতই এখন চলছে লোকসানে। এর মধ্যেই আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর করপোরেট করহার বাড়ানোর ঘোষণা আসে। অন্যান্য খাতে করপোরেট কর কমানো হলেও লোকসানে থাকা এ খাতে কর বাড়ানোর প্রস্তাবে সমালোচনার মুখে পড়ে সরকার। এমন পরিস্থিতিতে এ খাতে করপোরেট কর আগের চেয়েও কমানো হচ্ছে। এছাড়া শিল্পের কাঁচামাল কেনার ক্ষেত্রে ক্রস চেকের শর্ত শিথিল করা হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন সংশোধনীর মাধ্যমে এ-সংক্রান্ত ধারাগুলো সংশোধন করা হচ্ছে।

সূত্র জানায়, করোনাকালে শিল্পে বিনিয়োগ প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে। ফলে নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হয়নি। উল্টো ভোগ-চাহিদা কমে যাওয়ায় অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে, নয়তো টিকে থাকতে কর্মী ছাঁটাই করেছে। এ অবস্থায় শিল্পের চাকা সচল রাখতে ও কর্মসংস্থান বাড়াতে উৎপাদনশীল খাতে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের বিশেষ সুযোগ দেয়া হচ্ছে। নতুন ধারা (১৯এএএএএএ) অনুযায়ী, দেশের সব স্থানে উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগ করা যাবে। এজন্য ১০ শতাংশ কর দিতে হবে। এ সুযোগ ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে। এ পদ্ধতিতে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগ করলে দুদক বা অন্য কোনো সংস্থা প্রশ্ন করবে না। ১০ শতাংশ কর দিয়ে উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগের সুযোগ দেয়ায় একে বিশেষ সুবিধা বলা হচ্ছে। যদিও ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকেই ১০ শতাংশ কর দিয়ে (১৯ডিডি) শিল্পে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। তবে সেটি শুধু হাই-টেক পার্ক বা অর্থনৈতিক অঞ্চলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এ সুবিধা ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

এ বিষয়ে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের পক্ষে ছিলাম না। তবে এটি যদি দেয়া হয় তাহলে একটা নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য দিতে হবে। যদি সবসময় এ সুবিধা দেয়া হয় তাহলে যারা নিয়মিত ট্যাক্স দেয় তারা উৎসাহ হারাবে। তবে করোনার প্রেক্ষাপটে উৎপাদনশীল খাতে অপ্রদর্শিত আয় বিনিয়োগের সুযোগ দেয়া সময়োচিত পদক্ষেপ হবে বলে মনে করেন তিনি। এতে কর্মসংস্থান বাড়বে, যা অর্থনীতি গতিশীল রাখতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

তবে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর মনে করেন, অপ্রদর্শিত অর্থ কোনো পদ্ধতিতেই বৈধ করার সুযোগ দেয়া উচিত নয়। বেআইনি কার্যক্রমকে কোনোভাবেই উৎসাহিত করা ঠিক নয় বলে মত দেন তিনি।

১৯এএএএ ধারা অনুযায়ী, আগামীকাল পর্যন্ত ১০ শতাংশ কর দিয়ে পুঁজিবাজারে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। আগামী অর্থবছরে এ সুযোগ আর থাকছে না। আগামী ১ জুলাই থেকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নির্ধারিত করের অতিরিক্ত ৫ শতাংশ জরিমানা দিতে হবে। এজন্য বিদ্যমান ধারাটি প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে। অর্থাৎ কর ২৫ শতাংশের সঙ্গে আরো ৫ শতাংশ হারে ১ দশমিক ২৫ শতাংশসহ মোট ২৬ দশমিক ২৫ শতাংশ কর দিয়ে টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা যাবে। এ নিয়ম মেনে বিনিয়োগ করলে দুদক বা অন্য কোনো সংস্থা প্রশ্ন করবে না।

এছাড়া চলতি বছরের বাজেটে রিটার্নে অপ্রদর্শিত প্লট-ফ্ল্যাট ও নগদ অর্থ প্রদর্শনের সুযোগ (১৯এএএএএ ধারা) দেয়া হয়। প্লট ও ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে এলাকাভেদে বর্গমিটারপ্রতি নির্ধারিত হারে কর দিয়ে ও নগদ অর্থ প্রদর্শনের ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ হারে কর দিয়ে তা বৈধ করার সুযোগ দেয়া হয়েছিল। আগামী ১ জুলাই থেকে এ পদ্ধতিতে পরিবর্তন আসছে। প্লট বা ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে নির্ধারিত হারের করের সঙ্গে ৫ শতাংশ জরিমানা আরোপ করা হচ্ছে। অর্থাৎ আগামী বৃহস্পতিবার থেকে অপ্রদর্শিত অর্থে ফ্ল্যাট বা প্লট কিনতে চাইলে নির্দিষ্ট করের সঙ্গে ৫ শতাংশ হারে জরিমানাও দিতে হবে। এক্ষেত্রে আগের মতো দুদক বা অন্য কোনো সংস্থা প্রশ্ন করবে না। সংসদে অর্থবিলের মাধ্যমে আয়কর অধ্যাদেশে ধারাটি প্রতিস্থাপন করা হবে।

এদিকে প্রস্তাবিত বাজেটে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ ও তালিকাবহির্ভূত এমএফএসের ক্ষেত্রে সাড়ে ৭ শতাংশ করপোরেট কর বাড়ানো হয়েছে। দেশে এমএফএস সেবার পরিধি বাড়লেও এ খাতের শীর্ষ প্রতিষ্ঠান ব্র্যাক ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি বিকাশ দুই বছর ধরে লোকসান গুনছে। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মুনাফার অবস্থাও সুবিধাজনক নয়।

বাজেট ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী অর্থবছরে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর করহার বর্তমানের সাড়ে ৩২ থেকে বেড়ে দাঁড়াবে সাড়ে ৩৭ শতাংশে। তালিকাবহির্ভূত এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে বিদ্যমান করপোরেট করহার সাড়ে ৩২ শতাংশ। বাজেটে এটি বাড়িয়ে ৪০ শতাংশ করা হয়। বর্তমানে দেশে কার্যরত ১৫টি এমএফএস প্রতিষ্ঠানের কোনোটিই পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয়। ফলে এ খাতের সব প্রতিষ্ঠানের জন্যই ৪০ শতাংশ হারে কর প্রযোজ্য হওয়ার কথা। এছাড়া যেসব এমএফএস সেবাপ্রতিষ্ঠান কোনো না কোনো ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি হিসেবে সেবা দিচ্ছে, সেগুলোর করপোরেট কর বাড়ায় সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের মুনাফায়ও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে এমন দাবিতে এ খাতে করপোরেট কর বাড়ানোর পরিবর্তে কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

এক্ষেত্রে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর করহার বর্তমানের সাড়ে ৩২ থেকে কমিয়ে সাড়ে ২২ শতাংশে নামিয়ে আনা হচ্ছে। একই সঙ্গে তালিকাবহির্ভূত এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে বিদ্যমান করপোরেট করহার সাড়ে ৩২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩০ শতাংশ করা হচ্ছে।

সরকারের এ সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলো এখন লাভে নেই। লাভে না থাকলে ট্যাক্স বাড়বে কেন? তাছাড়া আগামীতে লাভ হবে এ আশায় উদ্যোক্তারা এ খাতে বিনিয়োগ করছেন। এ অবস্থায় কর বাড়ানো হলে বিনিয়োগ কমে যাবে। এছাড়া এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রে গরিব মানুষকে সেবা দেয়। তাই এ খাতে ট্যাক্স বাড়ালে গরিব মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হতো।

এছাড়া শিল্পের কাঁচামাল ক্রয়ে ক্রস চেকের শর্তও শিথিল করা হচ্ছে। বর্তমানে ৫০ হাজার টাকার বেশি কাঁচামাল ক্রয়ের ক্ষেত্রে চেকে লেনদেনের বিধান চালু আছে। এটি বাড়িয়ে ৫ লাখ টাকা করা হচ্ছে। এতে শিল্পোদ্যোক্তারা কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবেন। পাশাপাশি কর্মীদের বেতন পরিশোধে নতুন নিয়ম আসছে। বিদ্যমান আয়কর অধ্যাদেশে কর্মীদের বেতন-ভাতা ও সম্মানীর পরিমাণ ১৫ হাজার টাকার বেশি হলে তা ক্রস চেক বা ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে করার বিধান রয়েছে। তা না হলে এ খাতে ব্যয় করা অর্থ আয় হিসেবে দেখানো হয় না। আর আয় হিসেবে গণ্য করলে তা করযোগ্য হয়ে যায়। সংশোধিত অর্থবিলে এ সীমা ১৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে ২০ হাজার টাকা করা হচ্ছে।

ঢাকা/এনইউ

আরও পড়ুন:

শেয়ার করুন

x

অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের বিশেষ সুযোগ দিয়ে পাশ হচ্ছে অর্থবিল

আপডেট: ১০:৩০:৫৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ জুন ২০২১

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের বিশেষ সুযোগ দিয়ে জাতীয় সংসদে আজ অর্থবিল, ২০২১-২২ পাস হচ্ছে। চলতি অর্থবছরে অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার অবারিত সুযোগ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে তা বহাল থাকছে না। তবে করোনাকালে শিল্পে বিনিয়োগের স্থবিরতা কটিয়ে নতুন কর্মসংস্থান তৈরিতে উৎপাদনশীল শিল্পে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের বিশেষ সুযোগ রাখা হচ্ছে। এজন্য ১০ শতাংশ কর দিতে হবে। এ সুযোগ ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে। শুধু তা-ই নয়, নির্ধারিত হারে কর ও জরিমানা দিয়ে অপ্রদর্শিত অর্থ পুঁজিবাজার, আবাসন শিল্পে বিনিয়োগ করলেও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বা অন্য কোনো সংস্থা প্রশ্ন করতে পারবে না, আয়কর অধ্যাদেশে এমন ধারাও যুক্ত করা হচ্ছে।

এদিকে দেশের মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) প্রতিষ্ঠানগুলো মুনাফার দেখা পাচ্ছে না। মোটা দাগে গোটা খাতই এখন চলছে লোকসানে। এর মধ্যেই আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর করপোরেট করহার বাড়ানোর ঘোষণা আসে। অন্যান্য খাতে করপোরেট কর কমানো হলেও লোকসানে থাকা এ খাতে কর বাড়ানোর প্রস্তাবে সমালোচনার মুখে পড়ে সরকার। এমন পরিস্থিতিতে এ খাতে করপোরেট কর আগের চেয়েও কমানো হচ্ছে। এছাড়া শিল্পের কাঁচামাল কেনার ক্ষেত্রে ক্রস চেকের শর্ত শিথিল করা হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন সংশোধনীর মাধ্যমে এ-সংক্রান্ত ধারাগুলো সংশোধন করা হচ্ছে।

সূত্র জানায়, করোনাকালে শিল্পে বিনিয়োগ প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে। ফলে নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হয়নি। উল্টো ভোগ-চাহিদা কমে যাওয়ায় অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে, নয়তো টিকে থাকতে কর্মী ছাঁটাই করেছে। এ অবস্থায় শিল্পের চাকা সচল রাখতে ও কর্মসংস্থান বাড়াতে উৎপাদনশীল খাতে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের বিশেষ সুযোগ দেয়া হচ্ছে। নতুন ধারা (১৯এএএএএএ) অনুযায়ী, দেশের সব স্থানে উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগ করা যাবে। এজন্য ১০ শতাংশ কর দিতে হবে। এ সুযোগ ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে। এ পদ্ধতিতে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগ করলে দুদক বা অন্য কোনো সংস্থা প্রশ্ন করবে না। ১০ শতাংশ কর দিয়ে উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগের সুযোগ দেয়ায় একে বিশেষ সুবিধা বলা হচ্ছে। যদিও ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকেই ১০ শতাংশ কর দিয়ে (১৯ডিডি) শিল্পে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। তবে সেটি শুধু হাই-টেক পার্ক বা অর্থনৈতিক অঞ্চলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এ সুবিধা ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

এ বিষয়ে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের পক্ষে ছিলাম না। তবে এটি যদি দেয়া হয় তাহলে একটা নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য দিতে হবে। যদি সবসময় এ সুবিধা দেয়া হয় তাহলে যারা নিয়মিত ট্যাক্স দেয় তারা উৎসাহ হারাবে। তবে করোনার প্রেক্ষাপটে উৎপাদনশীল খাতে অপ্রদর্শিত আয় বিনিয়োগের সুযোগ দেয়া সময়োচিত পদক্ষেপ হবে বলে মনে করেন তিনি। এতে কর্মসংস্থান বাড়বে, যা অর্থনীতি গতিশীল রাখতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

তবে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর মনে করেন, অপ্রদর্শিত অর্থ কোনো পদ্ধতিতেই বৈধ করার সুযোগ দেয়া উচিত নয়। বেআইনি কার্যক্রমকে কোনোভাবেই উৎসাহিত করা ঠিক নয় বলে মত দেন তিনি।

১৯এএএএ ধারা অনুযায়ী, আগামীকাল পর্যন্ত ১০ শতাংশ কর দিয়ে পুঁজিবাজারে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। আগামী অর্থবছরে এ সুযোগ আর থাকছে না। আগামী ১ জুলাই থেকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নির্ধারিত করের অতিরিক্ত ৫ শতাংশ জরিমানা দিতে হবে। এজন্য বিদ্যমান ধারাটি প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে। অর্থাৎ কর ২৫ শতাংশের সঙ্গে আরো ৫ শতাংশ হারে ১ দশমিক ২৫ শতাংশসহ মোট ২৬ দশমিক ২৫ শতাংশ কর দিয়ে টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা যাবে। এ নিয়ম মেনে বিনিয়োগ করলে দুদক বা অন্য কোনো সংস্থা প্রশ্ন করবে না।

এছাড়া চলতি বছরের বাজেটে রিটার্নে অপ্রদর্শিত প্লট-ফ্ল্যাট ও নগদ অর্থ প্রদর্শনের সুযোগ (১৯এএএএএ ধারা) দেয়া হয়। প্লট ও ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে এলাকাভেদে বর্গমিটারপ্রতি নির্ধারিত হারে কর দিয়ে ও নগদ অর্থ প্রদর্শনের ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ হারে কর দিয়ে তা বৈধ করার সুযোগ দেয়া হয়েছিল। আগামী ১ জুলাই থেকে এ পদ্ধতিতে পরিবর্তন আসছে। প্লট বা ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে নির্ধারিত হারের করের সঙ্গে ৫ শতাংশ জরিমানা আরোপ করা হচ্ছে। অর্থাৎ আগামী বৃহস্পতিবার থেকে অপ্রদর্শিত অর্থে ফ্ল্যাট বা প্লট কিনতে চাইলে নির্দিষ্ট করের সঙ্গে ৫ শতাংশ হারে জরিমানাও দিতে হবে। এক্ষেত্রে আগের মতো দুদক বা অন্য কোনো সংস্থা প্রশ্ন করবে না। সংসদে অর্থবিলের মাধ্যমে আয়কর অধ্যাদেশে ধারাটি প্রতিস্থাপন করা হবে।

এদিকে প্রস্তাবিত বাজেটে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ ও তালিকাবহির্ভূত এমএফএসের ক্ষেত্রে সাড়ে ৭ শতাংশ করপোরেট কর বাড়ানো হয়েছে। দেশে এমএফএস সেবার পরিধি বাড়লেও এ খাতের শীর্ষ প্রতিষ্ঠান ব্র্যাক ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি বিকাশ দুই বছর ধরে লোকসান গুনছে। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মুনাফার অবস্থাও সুবিধাজনক নয়।

বাজেট ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী অর্থবছরে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর করহার বর্তমানের সাড়ে ৩২ থেকে বেড়ে দাঁড়াবে সাড়ে ৩৭ শতাংশে। তালিকাবহির্ভূত এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে বিদ্যমান করপোরেট করহার সাড়ে ৩২ শতাংশ। বাজেটে এটি বাড়িয়ে ৪০ শতাংশ করা হয়। বর্তমানে দেশে কার্যরত ১৫টি এমএফএস প্রতিষ্ঠানের কোনোটিই পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয়। ফলে এ খাতের সব প্রতিষ্ঠানের জন্যই ৪০ শতাংশ হারে কর প্রযোজ্য হওয়ার কথা। এছাড়া যেসব এমএফএস সেবাপ্রতিষ্ঠান কোনো না কোনো ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি হিসেবে সেবা দিচ্ছে, সেগুলোর করপোরেট কর বাড়ায় সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের মুনাফায়ও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে এমন দাবিতে এ খাতে করপোরেট কর বাড়ানোর পরিবর্তে কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

এক্ষেত্রে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর করহার বর্তমানের সাড়ে ৩২ থেকে কমিয়ে সাড়ে ২২ শতাংশে নামিয়ে আনা হচ্ছে। একই সঙ্গে তালিকাবহির্ভূত এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে বিদ্যমান করপোরেট করহার সাড়ে ৩২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩০ শতাংশ করা হচ্ছে।

সরকারের এ সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলো এখন লাভে নেই। লাভে না থাকলে ট্যাক্স বাড়বে কেন? তাছাড়া আগামীতে লাভ হবে এ আশায় উদ্যোক্তারা এ খাতে বিনিয়োগ করছেন। এ অবস্থায় কর বাড়ানো হলে বিনিয়োগ কমে যাবে। এছাড়া এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রে গরিব মানুষকে সেবা দেয়। তাই এ খাতে ট্যাক্স বাড়ালে গরিব মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হতো।

এছাড়া শিল্পের কাঁচামাল ক্রয়ে ক্রস চেকের শর্তও শিথিল করা হচ্ছে। বর্তমানে ৫০ হাজার টাকার বেশি কাঁচামাল ক্রয়ের ক্ষেত্রে চেকে লেনদেনের বিধান চালু আছে। এটি বাড়িয়ে ৫ লাখ টাকা করা হচ্ছে। এতে শিল্পোদ্যোক্তারা কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবেন। পাশাপাশি কর্মীদের বেতন পরিশোধে নতুন নিয়ম আসছে। বিদ্যমান আয়কর অধ্যাদেশে কর্মীদের বেতন-ভাতা ও সম্মানীর পরিমাণ ১৫ হাজার টাকার বেশি হলে তা ক্রস চেক বা ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে করার বিধান রয়েছে। তা না হলে এ খাতে ব্যয় করা অর্থ আয় হিসেবে দেখানো হয় না। আর আয় হিসেবে গণ্য করলে তা করযোগ্য হয়ে যায়। সংশোধিত অর্থবিলে এ সীমা ১৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে ২০ হাজার টাকা করা হচ্ছে।

ঢাকা/এনইউ

আরও পড়ুন: