০৭:৫৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪

আরাভ খানকে ফিরিয়ে আনতে ইন্টারপোলের সহায়তা চাইবে পুলিশ

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০৯:৫৬:৪৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ মার্চ ২০২৩
  • / ৪৩৫০ বার দেখা হয়েছে

দুবাইয়ের আলোচিত স্বর্ণ ব্যবসায়ী আরাভ খানকে ফিরিয়ে আনতে ইন্টারপোলের সহায়তা চাইবে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই আরাভ খানই মূলত ঢাকার স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) পুলিশ ইন্সপেক্টর মামুন ইমরান খান হত্যা মামলার পলাতক আসামি রবিউল ইসলাম। পুলিশ কর্মকর্তা হত্যা মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি আরাভ খানের মালিকানাধীন আরাভ জুয়েলার্সের শোরুম দুবাইয়ে উদ্বোধন করতে গিয়ে সমালোচনার ঘূর্ণি বয়ে দিয়েছেন ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। নানামুখী আলোচনা তুঙ্গে রেখেই দুবাইয়ের স্থানীয় সময় গতকাল বুধবার রাত ৮টায় সাকিব ওই জুয়েলার্সের শোরুম উদ্বোধন করেন।

জুয়েলার্সটির মালিক আরাভ খানের প্রকৃত নাম রবিউল ইসলাম। তিনি পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পরিদর্শক মামুন এমরান খান হত্যা মামলার আসামি। ওই মামলায় ২০১৯ সালের ১১ এপ্রিল রবিউলসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। রবিউলের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা ছাড়াও অস্ত্র, নারী নির্যাতন, প্রতারণাসহ বিভিন্ন অপরাধের ৯ মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। দুবাই থেকে তাঁকে দেশে ফেরাতে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলে চিঠিও দিয়েছিল বাংলাদেশ পুলিশ।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউভ

এদিকে, হত্যা মামলার আসামি রবিউল দুবাইয়ে গিয়ে কীভাবে রাতারাতি কোটি কোটি টাকার মালিক হলেন– তা নিয়েও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ নানা মহলে আলোচনা চলছে। কয়েক বছর আগেও দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়ছিল তাঁর পরিবার। এখন মা-বাবা ও বোনকে দুবাই নিয়ে গেছেন রবিউল। একটি সূত্র বলছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাবেক এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার টাকায় দুবাই ব্যবসা শুরু করেন রবিউল। দুবাইয়ের বাংলাদেশি কমিউনিটিতে রবিউল এক রহস্য। দুবাইয়ে গিয়ে এভাবে বিত্তের মালিক হওয়া ও রাজকীয় চলাফেরা করতে কোনো বাংলাদেশিকে খুব একটা দেখা যায়নি।

হত্যা মামলার সাজা থেকে বাঁচতে আবু ইউসুফ লিমন নামের এক তরুণকে বিকেএসপিতে খেলার সুযোগ ও পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতার প্রলোভন দেখান রবিউল। এই ফাঁদে পা দিয়ে লিমন আদালতে রবিউল হিসেবে পরিচয় দিয়ে আত্মসমর্পণ করেন। পরে আদালত লিমনকে কারাগারে পাঠান। এই ফাঁকে রবিউল ঊর্ধ্বতন এক সরকারি কর্মকর্তার সহায়তায় নকল পাসপোর্ট বানিয়ে দুবাই চলে যান। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে লিমনকে খালাস দেন আদালত।

পুলিশ সদরদপ্তরের মুখপাত্র সহকারী পুলিশ মহাপরিদর্শক (এআইজি) মনজুর রহমান বলেন, ইন্টারপোল পুলিশের সহায়তায় রবিউলকে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।

ডিবির খিলগাঁও জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহিদুর রহমান বলেন, পলাতক আসামি রবিউল গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার আশুটিয়া গ্রামের মতিউর রহমান মোল্লার ছেলে। আপন, সোহাগ, হৃদয় নামেও পরিচিত তিনি। তাঁর পাসপোর্টের তথ্য পাওয়া গেছে। তাঁকে দেশে ফিরিয়ে এনে আদালতে সোপর্দ করার চেষ্টা চলছে।

দুবাইয়ে রবিউলের অনুষ্ঠানে উপস্থাপক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা দেবাশীষ বিশ্বাসকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তিনি এখন দুবাই রয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে দেবাশীষ বিশ্বাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি নিজেকে একজন পারফরমার মনে করি। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন শোর জন্য আমার সঙ্গে অনেকেই যোগাযোগ করেন। সময় আর অর্থের বিষয়টি মিললে শো করি। এই শোটির ব্যাপারে অনেক দিন আগেই যোগাযোগ করা হয়েছিল। আর যার কথা বলা হচ্ছে, দুবাই আসার পর তাঁকে দেখে আমার তেমন মনে হয়নি। তিনি আমাদের যথেষ্ট আপ্যায়ন করছেন। তারপরও মানুষের মনে কী আছে, তা তাঁর চেহারা বা আপায়্যন দেখে বোঝা যায় না।’

ডিবি জানায়, তদন্তে দেখা যায়– পুলিশ কর্মকর্তা মামুন হত্যার পর জড়িত রবিউল ভারতে পালিয়ে যান। এর মধ্যে তিনি তাঁর নাম-পরিচয়ে আদালতে আত্মসমর্পণ করার জন্য আবু ইউসুফ নামে একজনকে ভাড়া করেন। ওই ব্যক্তি আত্মসমর্পণের পর ৯ মাস কারাগারে ছিলেন। পরে তিনি আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতকে নিজের প্রকৃত পরিচয় জানান। ২০২০ সালে ভারতের পাসপোর্ট সংগ্রহ করেন রবিউল। ওই বছরের ২৮ জুলাই কলকাতা থেকে ইস্যু করা তাঁর পাসপোর্টের নম্বর ইউ ৪৯৮৫৩৮৯। সেখানে রবিউলের নাম আরাভ খান এবং তাঁর বাবার নাম জাকির খান, মা রেহানা বিবি খান ও স্ত্রী সাজিমা নাসরিন বলে উল্লেখ করা হয়। পরিচয় গোপন করে নেওয়া পাসপোর্টের তথ্য অনুযায়ী, আরাভের জন্ম ১৯৯৩ সালের ৩১ জুলাই পশ্চিমবঙ্গের নরেন্দ্রপুরে। অবশ্য রবিউলের ঘনিষ্ঠ এক ব্যক্তি নিশ্চিত করেন, তাঁকে আপন আরাভ নামে চেনেন এবং তার জন্ম গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায়। তাঁর নামে বাংলাদেশে মামলা থাকার কথাও জানান তিনি। সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকার ২০২১ সালের ৩১ অক্টোবর আরাভকে তিন বছর মেয়াদি রেসিডেন্ট পারমিট দেয়।

কোটালীপাড়ার হিরণ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাজহারুল আলম পান্না জানান, পুলিশ কর্মকর্তা হত্যা ছাড়াও আরও কয়েকটি মামলার আসামি রবিউল। পুলিশ বিভিন্ন সময়ে তাঁর খোঁজে ওই ইউনিয়নের আশুটিয়া গ্রামে এসেছে। সর্বশেষ আড়াই মাস আগে তিনি ওমরাহ করতে সৌদি আরবে যান। তখন রবিউল তাঁকে রিয়াদে ডেকে নিয়ে দেখা করেন। তখন তিনি দুবাইয়ে তাঁর জুয়েলারি ব্যবসা থাকার কথা জানান।

সম্প্রতি সাকিব আল হাসান ফেসবুকে পোস্ট করা একটি ভিডিওতে আরাভ জুয়েলার্সের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে থাকার কথা জানান। সেখানে বাংলাদেশের বিনোদন জগতের বেশ কয়েকজন তারকারও উপস্থিত থাকার কথা। এই খবর প্রচার হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। সামনে চলে আসে পলাতক আসামি রবিউলের নাম।

আরও পড়ুন: হজযাত্রীদের বিমানভাড়া কমিয়ে দেড় লাখ টাকা করার সুপারিশ

২০১৮ সালের ৭ জুলাই রহমত নামের একজনের আমন্ত্রণে বনানীর একটি ফ্ল্যাটে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে যান পুলিশের বিশেষ শাখার পরিদর্শক মামুন এমরান খান। এরপর প্রতারণা করে তাঁর কাছ থেকে টাকা আদায়ের চেষ্টা করা হয়। তবে সেখানে গিয়ে ফাঁদে পড়েন তিনি। তাঁকে স্কচটেপ দিয়ে মুখ আটকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় মামলার আসামিরা হলেন– রহমত উল্লাহ, রবিউল ইসলাম, তাঁর স্ত্রী সুরাইয়া আক্তার কেয়া, স্বপন সরকার, দিদার পাঠান, মিজান শেখ, আতিক হাসান, সারোয়ার হোসেন, মেহেরুন্নিসা ওরফে স্বর্ণা ও ফারিয়া বিনতে মাইসা। হত্যার দুই বছর পর ২০২০ সালের ২০ অক্টোবর রবিউলের নাম-পরিচয় ব্যবহার করে ঢাকার একটি আদালতে আত্মসমর্পণ করেন আবু ইউসুফ। তাঁকে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। পরে জানা যায়, তাঁর পরিবারকে প্রতি মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দেওয়ার চুক্তিতে নকল নাম-পরিচয়ে কারাগারে যেতে রাজি হন ইউসুফ। তবে রবিউল একপর্যায়ে টাকা দেওয়া বন্ধ করলে তিনি আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতকে সত্য ঘটনা জানান। পুলিশকে বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব দেন আদালত। তদন্তে তাঁর দাবির সত্যতা পাওয়া যায়।

আরাভ খান নিজের ফেসবুকে ঘোষণা দিয়েছেন, দুবাইয়ের বুর্জ খলিফা টাওয়ারের ৬৫ তলায় ফ্ল্যাট কিনেছেন। যার নম্বর ৬৫১০। আরও ৪-৫টি ফ্ল্যাটের মালিকও তিনি। পাশাপাশি রয়েছে একটি সুইমিংপুল, বাগানসহ বড় ডুপ্লেক্স বাড়িও। যেখানে মাঝেমাঝে মায়াবী হরিণ জবাই দিয়ে বাংলাদেশিদের দাওয়াত খাওয়াচ্ছেন তিনি। বাগানে চাষ করছেন বাংলাদেশি সবজি। রয়েছে একাধিক দামি গাড়ি। আরাভ জুয়েলার্সের উদ্বোধন উপলক্ষে ৬০ কেজি স্বর্ণ দিয়ে বানানো হয়েছে বাজপাখির আদলে লোগো। যা তৈরিতে সময় লাগে আড়াই মাস। এটা তৈরিতে খরচ হয়েছে প্রায় ৪৫ কোটি টাকা।
দুবাই অনেক দিন ধরেই স্বর্ণ ব্যবসার অন্যতম প্রধান কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। অবৈধ পথে দুবাই থেকে দেশেও ঢুকছে স্বর্ণের চালান। অনেক বাংলাদেশি দুবাইয়ে ‘সেকেন্ড হোম’ গড়ে তোলেন। অর্থ পাচার করে ফ্ল্যাট, বাড়ি, তারকা হোটেল কিনছেন। কেউ কেউ স্বর্ণ ব্যবসাতেও বিনিয়োগ করছেন। এ প্রসঙ্গে বিসিবির সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন বলেন, ‘দুবাইয়ে সাকিবের শোরুম উদ্বোধনের খবর আমার জানা নেই।’

ঢাকা/এসএ

শেয়ার করুন

x
English Version

আরাভ খানকে ফিরিয়ে আনতে ইন্টারপোলের সহায়তা চাইবে পুলিশ

আপডেট: ০৯:৫৬:৪৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ মার্চ ২০২৩

দুবাইয়ের আলোচিত স্বর্ণ ব্যবসায়ী আরাভ খানকে ফিরিয়ে আনতে ইন্টারপোলের সহায়তা চাইবে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই আরাভ খানই মূলত ঢাকার স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) পুলিশ ইন্সপেক্টর মামুন ইমরান খান হত্যা মামলার পলাতক আসামি রবিউল ইসলাম। পুলিশ কর্মকর্তা হত্যা মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি আরাভ খানের মালিকানাধীন আরাভ জুয়েলার্সের শোরুম দুবাইয়ে উদ্বোধন করতে গিয়ে সমালোচনার ঘূর্ণি বয়ে দিয়েছেন ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। নানামুখী আলোচনা তুঙ্গে রেখেই দুবাইয়ের স্থানীয় সময় গতকাল বুধবার রাত ৮টায় সাকিব ওই জুয়েলার্সের শোরুম উদ্বোধন করেন।

জুয়েলার্সটির মালিক আরাভ খানের প্রকৃত নাম রবিউল ইসলাম। তিনি পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পরিদর্শক মামুন এমরান খান হত্যা মামলার আসামি। ওই মামলায় ২০১৯ সালের ১১ এপ্রিল রবিউলসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। রবিউলের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা ছাড়াও অস্ত্র, নারী নির্যাতন, প্রতারণাসহ বিভিন্ন অপরাধের ৯ মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। দুবাই থেকে তাঁকে দেশে ফেরাতে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলে চিঠিও দিয়েছিল বাংলাদেশ পুলিশ।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউভ

এদিকে, হত্যা মামলার আসামি রবিউল দুবাইয়ে গিয়ে কীভাবে রাতারাতি কোটি কোটি টাকার মালিক হলেন– তা নিয়েও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ নানা মহলে আলোচনা চলছে। কয়েক বছর আগেও দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়ছিল তাঁর পরিবার। এখন মা-বাবা ও বোনকে দুবাই নিয়ে গেছেন রবিউল। একটি সূত্র বলছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাবেক এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার টাকায় দুবাই ব্যবসা শুরু করেন রবিউল। দুবাইয়ের বাংলাদেশি কমিউনিটিতে রবিউল এক রহস্য। দুবাইয়ে গিয়ে এভাবে বিত্তের মালিক হওয়া ও রাজকীয় চলাফেরা করতে কোনো বাংলাদেশিকে খুব একটা দেখা যায়নি।

হত্যা মামলার সাজা থেকে বাঁচতে আবু ইউসুফ লিমন নামের এক তরুণকে বিকেএসপিতে খেলার সুযোগ ও পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতার প্রলোভন দেখান রবিউল। এই ফাঁদে পা দিয়ে লিমন আদালতে রবিউল হিসেবে পরিচয় দিয়ে আত্মসমর্পণ করেন। পরে আদালত লিমনকে কারাগারে পাঠান। এই ফাঁকে রবিউল ঊর্ধ্বতন এক সরকারি কর্মকর্তার সহায়তায় নকল পাসপোর্ট বানিয়ে দুবাই চলে যান। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে লিমনকে খালাস দেন আদালত।

পুলিশ সদরদপ্তরের মুখপাত্র সহকারী পুলিশ মহাপরিদর্শক (এআইজি) মনজুর রহমান বলেন, ইন্টারপোল পুলিশের সহায়তায় রবিউলকে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।

ডিবির খিলগাঁও জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহিদুর রহমান বলেন, পলাতক আসামি রবিউল গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার আশুটিয়া গ্রামের মতিউর রহমান মোল্লার ছেলে। আপন, সোহাগ, হৃদয় নামেও পরিচিত তিনি। তাঁর পাসপোর্টের তথ্য পাওয়া গেছে। তাঁকে দেশে ফিরিয়ে এনে আদালতে সোপর্দ করার চেষ্টা চলছে।

দুবাইয়ে রবিউলের অনুষ্ঠানে উপস্থাপক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা দেবাশীষ বিশ্বাসকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তিনি এখন দুবাই রয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে দেবাশীষ বিশ্বাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি নিজেকে একজন পারফরমার মনে করি। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন শোর জন্য আমার সঙ্গে অনেকেই যোগাযোগ করেন। সময় আর অর্থের বিষয়টি মিললে শো করি। এই শোটির ব্যাপারে অনেক দিন আগেই যোগাযোগ করা হয়েছিল। আর যার কথা বলা হচ্ছে, দুবাই আসার পর তাঁকে দেখে আমার তেমন মনে হয়নি। তিনি আমাদের যথেষ্ট আপ্যায়ন করছেন। তারপরও মানুষের মনে কী আছে, তা তাঁর চেহারা বা আপায়্যন দেখে বোঝা যায় না।’

ডিবি জানায়, তদন্তে দেখা যায়– পুলিশ কর্মকর্তা মামুন হত্যার পর জড়িত রবিউল ভারতে পালিয়ে যান। এর মধ্যে তিনি তাঁর নাম-পরিচয়ে আদালতে আত্মসমর্পণ করার জন্য আবু ইউসুফ নামে একজনকে ভাড়া করেন। ওই ব্যক্তি আত্মসমর্পণের পর ৯ মাস কারাগারে ছিলেন। পরে তিনি আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতকে নিজের প্রকৃত পরিচয় জানান। ২০২০ সালে ভারতের পাসপোর্ট সংগ্রহ করেন রবিউল। ওই বছরের ২৮ জুলাই কলকাতা থেকে ইস্যু করা তাঁর পাসপোর্টের নম্বর ইউ ৪৯৮৫৩৮৯। সেখানে রবিউলের নাম আরাভ খান এবং তাঁর বাবার নাম জাকির খান, মা রেহানা বিবি খান ও স্ত্রী সাজিমা নাসরিন বলে উল্লেখ করা হয়। পরিচয় গোপন করে নেওয়া পাসপোর্টের তথ্য অনুযায়ী, আরাভের জন্ম ১৯৯৩ সালের ৩১ জুলাই পশ্চিমবঙ্গের নরেন্দ্রপুরে। অবশ্য রবিউলের ঘনিষ্ঠ এক ব্যক্তি নিশ্চিত করেন, তাঁকে আপন আরাভ নামে চেনেন এবং তার জন্ম গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায়। তাঁর নামে বাংলাদেশে মামলা থাকার কথাও জানান তিনি। সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকার ২০২১ সালের ৩১ অক্টোবর আরাভকে তিন বছর মেয়াদি রেসিডেন্ট পারমিট দেয়।

কোটালীপাড়ার হিরণ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাজহারুল আলম পান্না জানান, পুলিশ কর্মকর্তা হত্যা ছাড়াও আরও কয়েকটি মামলার আসামি রবিউল। পুলিশ বিভিন্ন সময়ে তাঁর খোঁজে ওই ইউনিয়নের আশুটিয়া গ্রামে এসেছে। সর্বশেষ আড়াই মাস আগে তিনি ওমরাহ করতে সৌদি আরবে যান। তখন রবিউল তাঁকে রিয়াদে ডেকে নিয়ে দেখা করেন। তখন তিনি দুবাইয়ে তাঁর জুয়েলারি ব্যবসা থাকার কথা জানান।

সম্প্রতি সাকিব আল হাসান ফেসবুকে পোস্ট করা একটি ভিডিওতে আরাভ জুয়েলার্সের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে থাকার কথা জানান। সেখানে বাংলাদেশের বিনোদন জগতের বেশ কয়েকজন তারকারও উপস্থিত থাকার কথা। এই খবর প্রচার হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। সামনে চলে আসে পলাতক আসামি রবিউলের নাম।

আরও পড়ুন: হজযাত্রীদের বিমানভাড়া কমিয়ে দেড় লাখ টাকা করার সুপারিশ

২০১৮ সালের ৭ জুলাই রহমত নামের একজনের আমন্ত্রণে বনানীর একটি ফ্ল্যাটে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে যান পুলিশের বিশেষ শাখার পরিদর্শক মামুন এমরান খান। এরপর প্রতারণা করে তাঁর কাছ থেকে টাকা আদায়ের চেষ্টা করা হয়। তবে সেখানে গিয়ে ফাঁদে পড়েন তিনি। তাঁকে স্কচটেপ দিয়ে মুখ আটকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় মামলার আসামিরা হলেন– রহমত উল্লাহ, রবিউল ইসলাম, তাঁর স্ত্রী সুরাইয়া আক্তার কেয়া, স্বপন সরকার, দিদার পাঠান, মিজান শেখ, আতিক হাসান, সারোয়ার হোসেন, মেহেরুন্নিসা ওরফে স্বর্ণা ও ফারিয়া বিনতে মাইসা। হত্যার দুই বছর পর ২০২০ সালের ২০ অক্টোবর রবিউলের নাম-পরিচয় ব্যবহার করে ঢাকার একটি আদালতে আত্মসমর্পণ করেন আবু ইউসুফ। তাঁকে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। পরে জানা যায়, তাঁর পরিবারকে প্রতি মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দেওয়ার চুক্তিতে নকল নাম-পরিচয়ে কারাগারে যেতে রাজি হন ইউসুফ। তবে রবিউল একপর্যায়ে টাকা দেওয়া বন্ধ করলে তিনি আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতকে সত্য ঘটনা জানান। পুলিশকে বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব দেন আদালত। তদন্তে তাঁর দাবির সত্যতা পাওয়া যায়।

আরাভ খান নিজের ফেসবুকে ঘোষণা দিয়েছেন, দুবাইয়ের বুর্জ খলিফা টাওয়ারের ৬৫ তলায় ফ্ল্যাট কিনেছেন। যার নম্বর ৬৫১০। আরও ৪-৫টি ফ্ল্যাটের মালিকও তিনি। পাশাপাশি রয়েছে একটি সুইমিংপুল, বাগানসহ বড় ডুপ্লেক্স বাড়িও। যেখানে মাঝেমাঝে মায়াবী হরিণ জবাই দিয়ে বাংলাদেশিদের দাওয়াত খাওয়াচ্ছেন তিনি। বাগানে চাষ করছেন বাংলাদেশি সবজি। রয়েছে একাধিক দামি গাড়ি। আরাভ জুয়েলার্সের উদ্বোধন উপলক্ষে ৬০ কেজি স্বর্ণ দিয়ে বানানো হয়েছে বাজপাখির আদলে লোগো। যা তৈরিতে সময় লাগে আড়াই মাস। এটা তৈরিতে খরচ হয়েছে প্রায় ৪৫ কোটি টাকা।
দুবাই অনেক দিন ধরেই স্বর্ণ ব্যবসার অন্যতম প্রধান কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। অবৈধ পথে দুবাই থেকে দেশেও ঢুকছে স্বর্ণের চালান। অনেক বাংলাদেশি দুবাইয়ে ‘সেকেন্ড হোম’ গড়ে তোলেন। অর্থ পাচার করে ফ্ল্যাট, বাড়ি, তারকা হোটেল কিনছেন। কেউ কেউ স্বর্ণ ব্যবসাতেও বিনিয়োগ করছেন। এ প্রসঙ্গে বিসিবির সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন বলেন, ‘দুবাইয়ে সাকিবের শোরুম উদ্বোধনের খবর আমার জানা নেই।’

ঢাকা/এসএ