০৫:৩৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪

আর্থিক প্রতিষ্ঠানে এক পরিবারের ১৫ শতাংশের বেশি শেয়ার নয়

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০৮:০৪:২৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৩
  • / ৪১৫৯ বার দেখা হয়েছে

নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা লিজিং কোম্পানিতে এক ব্যক্তি বা এক পরিবার থেকে ১৫ শতাংশের বেশি শেয়ার ধারণ করা যাবে না— এমন বিধান রেখে ‘ফাইন্যান্স কোম্পানি আইন ২০২৩’-এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

সোমবার (২৩ অক্টোবর) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বৈঠক শেষে বিকেলে সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন এ তথ্য জানিয়েছেন।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আমাদের একটা আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইন আছে। এটি দিয়ে বিভিন্ন নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। সেটি ১৯৯৩ সালে প্রণীত একটা আইন এবং বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় এসে নানা রকম অভিজ্ঞতা এবং নতুন বাস্তবতা তৈরি হয়েছে। দেখা গেছে আইনের দুর্বলতার কারণে এই সেক্টরে বেশকিছু চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। সে কারণে আইনটি যুগোপযোগী করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।

তিনি জানান, আইনটি যুগোপযোগী করতে একটি খসড়া ২০২১ সালে মন্ত্রিসভা নীতিগত অনুমোদন দিয়েছিল। অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সেটি আজকে উপস্থাপন করা হয় এবং চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বিদ্যমান আইনে একজন ব্যক্তি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কত শতাংশ শেয়ার ধারণ করতে পারবেন এটি বেঁধে দেওয়া ছিল না। এখন বলা হচ্ছে, এক ব্যক্তি বা একই পরিবার থেকে ১৫ শতাংশের বেশি শেয়ার নেওয়া যাবে না।

তিনি বলেন, বর্তমান আইনে পরিচালকদের সংখ্যা নির্দিষ্ট ছিল না। এখন দুইজন স্বতন্ত্র এবং সবমিলিয়ে ১৫ জন পরিচালক থাকতে পারবেন। তবে একটি পরিবার থেকে শেয়ারের পরিমাণ ৫ শতাংশের কম হলে একজন পরিচালক থাকবেন। ৫ শতাংশের বেশি হলে সর্বোচ্চ দুইজন থাকতে পারবেন। এক পরিবার থেকে দুইজনের বেশি পরিচালক থাকতে পারবেন না।

মো. মাহবুব হোসেন বলেন, বিদ্যমান আইনে পরিচালকের কোনো মেয়াদ বেঁধে দেওয়া ছিল না। এখন পরিচালকের মেয়াদ তিন বছর করা হচ্ছে। পরপর তিন মেয়াদে পরিচালক থাকতে পারবেন। অর্থাৎ একজন একটানা নয় বছর পরিচালক থাকতে পারবেন।

তিনি বলেন, ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপির একটি সংজ্ঞা সন্নিবেশিত করা হয়েছে। কিছুদিন আগে যে ব্যাংক কোম্পানি আইন করা হয়েছে সেখানে যেভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে সেভাবে। বলা হয়েছে- একজন ব্যক্তিকে তিনটি কারণে ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপি হিসেবে গণ্য করা যাবে। সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যদি ঋণ সময়মতো পরিশোধ না করেন। এছাড়া যে কারণ দেখিয়ে ঋণ দিয়েছেন সেই কারণে ব্যবহার না করে যদি অন্য কারণে ব্যবহার করেন এবং যেসব কাগজপত্র জমা দিয়ে ঋণ নিয়েছিলেন পরে সেগুলো যদি ভুয়া বলে চিহ্নিত হয়।

আরও পড়ুন: সুদের হার নয়-ছয় না থাকলে আজ ব্যাংকিং খাত খুঁজে পেতেন না: অর্থমন্ত্রী

ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপির শাস্তির বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, যখন একজন ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি হবেন, তখন বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের একটি তালিকা রাখবে। তালিকা হওয়ার পর যখন তারা নোটিশ পাবেন, সেই নোটিশ পাওয়ার দুই মাসের মধ্যে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি ঋণ গ্রহীতার কাছে তার প্রাপ্য অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট ফাইন্যান্স কোম্পানি পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদনক্রমে তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করবে। এ মামলা সংশ্লিষ্ট ঋণ বা অগ্রিম বা পাওনা আদায়ের ক্ষেত্রে অর্থ ঋণ আদালতের কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করবে না।

তিনি আরও বলেন, যখন কেউ ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি হিসেবে চিহ্নিত থাকবেন পরবর্তীতে কোনো ব্যবসা করার ক্ষেত্রে অথবা বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে তার উপর নিষেধাজ্ঞা থাকবে। দুই মাসের মধ্যে যদি উনি শোধ না করেন সরাসরি ফৌজদারি মামলা দায়ের করা যাবে।

মো. মাহবুব হোসেন বলেন, সুদ মওকুফের বিষয়ে বিদ্যমান আইনে কোনো নির্দেশনা ছিল না। এখন বলা হয়েছে- বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি ছাড়া সুদ মওকুফ করা যাবে না। সম্পূর্ণ সুদ কখনো মওকুফ করা যাবে না। কস্ট অব ফান্ড অবশ্যই আদায় করতে হবে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে জরিমানা ও শাস্তি বাড়ানো হয়েছে। লাইসেন্সের শর্ত না মানার শাস্তি ১০ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, বিধিবিধান লঙ্ঘন করে ঋণ দিলে বিদ্যমান আইনে প্রতিষ্ঠানকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা দিতে হয়। এটিকে সংশোধন করে বলা হয়েছে- ১০ লাখ টাকা বা ছাড়কৃত ঋণের বিদ্যমান স্থিতির মধ্যে যেটি বেশি সেটি প্রত্যেক পরিচালক ও কর্মকর্তাকে জরিমানা হিসেবে দিতে হবে। বিদেশিরা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার নিতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হবে। কি পরিমাণ শেয়ার বিদেশি প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি পাবে তা বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারণ করবে। পাশাপাশি একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান অন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মালিকানায় থাকতে পারবে না।

ঢাকা/এসএম

শেয়ার করুন

x
English Version

আর্থিক প্রতিষ্ঠানে এক পরিবারের ১৫ শতাংশের বেশি শেয়ার নয়

আপডেট: ০৮:০৪:২৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৩

নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা লিজিং কোম্পানিতে এক ব্যক্তি বা এক পরিবার থেকে ১৫ শতাংশের বেশি শেয়ার ধারণ করা যাবে না— এমন বিধান রেখে ‘ফাইন্যান্স কোম্পানি আইন ২০২৩’-এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

সোমবার (২৩ অক্টোবর) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বৈঠক শেষে বিকেলে সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন এ তথ্য জানিয়েছেন।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আমাদের একটা আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইন আছে। এটি দিয়ে বিভিন্ন নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। সেটি ১৯৯৩ সালে প্রণীত একটা আইন এবং বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় এসে নানা রকম অভিজ্ঞতা এবং নতুন বাস্তবতা তৈরি হয়েছে। দেখা গেছে আইনের দুর্বলতার কারণে এই সেক্টরে বেশকিছু চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। সে কারণে আইনটি যুগোপযোগী করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।

তিনি জানান, আইনটি যুগোপযোগী করতে একটি খসড়া ২০২১ সালে মন্ত্রিসভা নীতিগত অনুমোদন দিয়েছিল। অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সেটি আজকে উপস্থাপন করা হয় এবং চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বিদ্যমান আইনে একজন ব্যক্তি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কত শতাংশ শেয়ার ধারণ করতে পারবেন এটি বেঁধে দেওয়া ছিল না। এখন বলা হচ্ছে, এক ব্যক্তি বা একই পরিবার থেকে ১৫ শতাংশের বেশি শেয়ার নেওয়া যাবে না।

তিনি বলেন, বর্তমান আইনে পরিচালকদের সংখ্যা নির্দিষ্ট ছিল না। এখন দুইজন স্বতন্ত্র এবং সবমিলিয়ে ১৫ জন পরিচালক থাকতে পারবেন। তবে একটি পরিবার থেকে শেয়ারের পরিমাণ ৫ শতাংশের কম হলে একজন পরিচালক থাকবেন। ৫ শতাংশের বেশি হলে সর্বোচ্চ দুইজন থাকতে পারবেন। এক পরিবার থেকে দুইজনের বেশি পরিচালক থাকতে পারবেন না।

মো. মাহবুব হোসেন বলেন, বিদ্যমান আইনে পরিচালকের কোনো মেয়াদ বেঁধে দেওয়া ছিল না। এখন পরিচালকের মেয়াদ তিন বছর করা হচ্ছে। পরপর তিন মেয়াদে পরিচালক থাকতে পারবেন। অর্থাৎ একজন একটানা নয় বছর পরিচালক থাকতে পারবেন।

তিনি বলেন, ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপির একটি সংজ্ঞা সন্নিবেশিত করা হয়েছে। কিছুদিন আগে যে ব্যাংক কোম্পানি আইন করা হয়েছে সেখানে যেভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে সেভাবে। বলা হয়েছে- একজন ব্যক্তিকে তিনটি কারণে ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপি হিসেবে গণ্য করা যাবে। সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যদি ঋণ সময়মতো পরিশোধ না করেন। এছাড়া যে কারণ দেখিয়ে ঋণ দিয়েছেন সেই কারণে ব্যবহার না করে যদি অন্য কারণে ব্যবহার করেন এবং যেসব কাগজপত্র জমা দিয়ে ঋণ নিয়েছিলেন পরে সেগুলো যদি ভুয়া বলে চিহ্নিত হয়।

আরও পড়ুন: সুদের হার নয়-ছয় না থাকলে আজ ব্যাংকিং খাত খুঁজে পেতেন না: অর্থমন্ত্রী

ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপির শাস্তির বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, যখন একজন ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি হবেন, তখন বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের একটি তালিকা রাখবে। তালিকা হওয়ার পর যখন তারা নোটিশ পাবেন, সেই নোটিশ পাওয়ার দুই মাসের মধ্যে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি ঋণ গ্রহীতার কাছে তার প্রাপ্য অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট ফাইন্যান্স কোম্পানি পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদনক্রমে তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করবে। এ মামলা সংশ্লিষ্ট ঋণ বা অগ্রিম বা পাওনা আদায়ের ক্ষেত্রে অর্থ ঋণ আদালতের কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করবে না।

তিনি আরও বলেন, যখন কেউ ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি হিসেবে চিহ্নিত থাকবেন পরবর্তীতে কোনো ব্যবসা করার ক্ষেত্রে অথবা বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে তার উপর নিষেধাজ্ঞা থাকবে। দুই মাসের মধ্যে যদি উনি শোধ না করেন সরাসরি ফৌজদারি মামলা দায়ের করা যাবে।

মো. মাহবুব হোসেন বলেন, সুদ মওকুফের বিষয়ে বিদ্যমান আইনে কোনো নির্দেশনা ছিল না। এখন বলা হয়েছে- বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি ছাড়া সুদ মওকুফ করা যাবে না। সম্পূর্ণ সুদ কখনো মওকুফ করা যাবে না। কস্ট অব ফান্ড অবশ্যই আদায় করতে হবে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে জরিমানা ও শাস্তি বাড়ানো হয়েছে। লাইসেন্সের শর্ত না মানার শাস্তি ১০ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, বিধিবিধান লঙ্ঘন করে ঋণ দিলে বিদ্যমান আইনে প্রতিষ্ঠানকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা দিতে হয়। এটিকে সংশোধন করে বলা হয়েছে- ১০ লাখ টাকা বা ছাড়কৃত ঋণের বিদ্যমান স্থিতির মধ্যে যেটি বেশি সেটি প্রত্যেক পরিচালক ও কর্মকর্তাকে জরিমানা হিসেবে দিতে হবে। বিদেশিরা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার নিতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হবে। কি পরিমাণ শেয়ার বিদেশি প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি পাবে তা বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারণ করবে। পাশাপাশি একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান অন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মালিকানায় থাকতে পারবে না।

ঢাকা/এসএম