০১:৪০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৫ মে ২০২৪

ইতিহাসে প্রথমবার ৯ মাসেই সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ছাড়ালো

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ১২:৩২:১৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২১ মে ২০২১
  • / ৪১৫২ বার দেখা হয়েছে

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে এ নিয়ে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই ২০২০ থেকে ৩১মার্চ ২০২১) সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৮৫ হাজার ৯৯০ কোটি ৬৫ লাখ টাকার। এরমধ্যে শুধু মার্চ মাসে নতুন করে আরও ১০ হাজার ৭৬২ কোটি ৫৪ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে।

বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনোই ৯ মাসে এত বেশি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়নি। চলতি অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে যে পরিমাণ ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল, ৯ মাসেই তার চেয়ে অনেক বেশি ঋণ নিয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংকে আমানতের সুদহার কম হওয়ায় সাধারণ মানুষ এখন সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগকে সবচেয়ে বেশি ‘নিরাপদ’ মনে করছেন। তাই বিভিন্ন শর্ত পরিপালন করেও সঞ্চয়পত্রে ঝুঁকছেন বিনিয়োগকারীরা। বাজেট ঘাটতি মেটাতে চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে সরকার যে পরিমাণ ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ধরেছিল, তার চেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মার্চ মাসের তথ্য বলছে, বেশিরভাগ বাণিজ্যিক ব্যাংক আমানতের বিপরীতে ৩ থেকে ৬ শতাংশ সুদ বা মুনাফা দিচ্ছে। অন্যদিকে সঞ্চয়পত্রে সুদ মিলছে ১১ শতাংশের বেশি।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধের পর যা অবশিষ্ট থাকে, তাকে নিট বিক্রি বলা হয়। বিক্রির ওই অর্থ সরকারের কোষাগারে জমা থাকে এবং সরকার তা রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি বাস্তবায়নে কাজে লাগায়। এর বিনিময়ে সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকদের প্রতি মাসে সুদ দিতে হয়। এ কারণে অর্থনীতির পরিভাষায় সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রিকে সরকারের ‘ঋণ’ বা ‘ধার’ হিসেবে গণ্য করা হয়।

জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই-মার্চ পর্যন্ত মোট ৮৫ হাজার ৯৯০ কোটি ৬৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। সুদ-আসল বাবদ গ্রাহকদের শোধ করা হয়েছে ৫২ হাজার ৯৭০ কোটি টাকা। এ হিসেবে নিট বিক্রির পরিমাণ হচ্ছে ৩৩ হাজার ২০ কোটি ৬৫ লাখ টাকা।

২০২১ সালের মার্চে সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ১০ হাজার ৭৬২ কোটি ৫৪ লাখ টাকার। তার মধ্যে ৩ হাজার ৮৯১ কোটি ২৮ লাখ টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। সুদ-আসল বাবদ বাকি টাকা গ্রাহকদের শোধ করা হয়েছে।

সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনের ত‌থ্যে জানা গে‌ছে, চলতি ২০২০-২১ পু‌রো অর্থবছরের সঞ্চয়পত্র থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা নে‌বে ব‌লে লক্ষ্য ঠিক ক‌রে সরকার। কিন্তু প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) সঞ্চয়পত্র নিট বিক্রি হয়েছে ৩৩ হাজার ২০ কোটি টাকার। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫০ শতাংশ বেশি। এর আগে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে এ খাত থেকে সরকারকে দুই হাজার ২৪০ কোটি ১৬ লাখ টাকা ঋণ নিতে হয়েছিল।

জাতীয় বাজেটে ঘাটতি পূরণে অভ্যন্তরীণ উৎসাহের মধ্যে অন্যতম সঞ্চয়পত্র। চলতি (২০২০-২১) অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। বিশাল ঘাটতি মেটাতে এবার সঞ্চয়পত্র থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছে সরকার। গত ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের বাজেটে যার লক্ষ্য ছিল ২৭ কোটি টাকা।

জানা গেছে, সঞ্চয়পত্রের বিক্রির চাপ কমাতে ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে সঞ্চয়পত্রে মুনাফার ওপর উৎসে করের হার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়। একইসঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্র এবং টিআইএন (কর শনাক্তকরণ নম্বর) বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এছাড়া এখন ব্যাংক হিসাব ছাড়া সঞ্চয়পত্র কেনার সুযোগ নেই। কিন্তু ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দা ও ব্যাংকের আমানতের সুদহার কম হওয়ায় নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে সঞ্চয়পত্রে ঝুঁকছেন সাধারণ গ্রাহকরা।

এর আগে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করতে সর্বশেষ ২০১৫ সালের মে মাসে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদহার গড়ে ২ শতাংশ করে কমানো হয়েছিল।

বর্তমানে পরিবার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ। পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ, তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ০৪ শতাংশ, পরিবার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ এবং পেনশনার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। ২০১৫ সালের ২৩ মের পর থেকে এ হার কার্যকর রয়েছে। এর আগে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ছিল ১৩ শতাংশেরও বেশি।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, জাতীয় সঞ্চয় স্কিমগুলোতে বিনিয়োগ করা অর্থের ওপর একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর মুনাফা দেয় সরকার। মেয়াদপূর্তির পরে বিনিয়োগ করা অর্থও ফেরত দেওয়া হয়।

ঢাকা/এসআর

শেয়ার করুন

x
English Version

ইতিহাসে প্রথমবার ৯ মাসেই সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ছাড়ালো

আপডেট: ১২:৩২:১৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২১ মে ২০২১

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে এ নিয়ে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই ২০২০ থেকে ৩১মার্চ ২০২১) সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৮৫ হাজার ৯৯০ কোটি ৬৫ লাখ টাকার। এরমধ্যে শুধু মার্চ মাসে নতুন করে আরও ১০ হাজার ৭৬২ কোটি ৫৪ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে।

বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনোই ৯ মাসে এত বেশি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়নি। চলতি অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে যে পরিমাণ ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল, ৯ মাসেই তার চেয়ে অনেক বেশি ঋণ নিয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংকে আমানতের সুদহার কম হওয়ায় সাধারণ মানুষ এখন সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগকে সবচেয়ে বেশি ‘নিরাপদ’ মনে করছেন। তাই বিভিন্ন শর্ত পরিপালন করেও সঞ্চয়পত্রে ঝুঁকছেন বিনিয়োগকারীরা। বাজেট ঘাটতি মেটাতে চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে সরকার যে পরিমাণ ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ধরেছিল, তার চেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মার্চ মাসের তথ্য বলছে, বেশিরভাগ বাণিজ্যিক ব্যাংক আমানতের বিপরীতে ৩ থেকে ৬ শতাংশ সুদ বা মুনাফা দিচ্ছে। অন্যদিকে সঞ্চয়পত্রে সুদ মিলছে ১১ শতাংশের বেশি।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধের পর যা অবশিষ্ট থাকে, তাকে নিট বিক্রি বলা হয়। বিক্রির ওই অর্থ সরকারের কোষাগারে জমা থাকে এবং সরকার তা রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি বাস্তবায়নে কাজে লাগায়। এর বিনিময়ে সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকদের প্রতি মাসে সুদ দিতে হয়। এ কারণে অর্থনীতির পরিভাষায় সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রিকে সরকারের ‘ঋণ’ বা ‘ধার’ হিসেবে গণ্য করা হয়।

জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই-মার্চ পর্যন্ত মোট ৮৫ হাজার ৯৯০ কোটি ৬৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। সুদ-আসল বাবদ গ্রাহকদের শোধ করা হয়েছে ৫২ হাজার ৯৭০ কোটি টাকা। এ হিসেবে নিট বিক্রির পরিমাণ হচ্ছে ৩৩ হাজার ২০ কোটি ৬৫ লাখ টাকা।

২০২১ সালের মার্চে সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ১০ হাজার ৭৬২ কোটি ৫৪ লাখ টাকার। তার মধ্যে ৩ হাজার ৮৯১ কোটি ২৮ লাখ টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। সুদ-আসল বাবদ বাকি টাকা গ্রাহকদের শোধ করা হয়েছে।

সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনের ত‌থ্যে জানা গে‌ছে, চলতি ২০২০-২১ পু‌রো অর্থবছরের সঞ্চয়পত্র থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা নে‌বে ব‌লে লক্ষ্য ঠিক ক‌রে সরকার। কিন্তু প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) সঞ্চয়পত্র নিট বিক্রি হয়েছে ৩৩ হাজার ২০ কোটি টাকার। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫০ শতাংশ বেশি। এর আগে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে এ খাত থেকে সরকারকে দুই হাজার ২৪০ কোটি ১৬ লাখ টাকা ঋণ নিতে হয়েছিল।

জাতীয় বাজেটে ঘাটতি পূরণে অভ্যন্তরীণ উৎসাহের মধ্যে অন্যতম সঞ্চয়পত্র। চলতি (২০২০-২১) অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। বিশাল ঘাটতি মেটাতে এবার সঞ্চয়পত্র থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছে সরকার। গত ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের বাজেটে যার লক্ষ্য ছিল ২৭ কোটি টাকা।

জানা গেছে, সঞ্চয়পত্রের বিক্রির চাপ কমাতে ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে সঞ্চয়পত্রে মুনাফার ওপর উৎসে করের হার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়। একইসঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্র এবং টিআইএন (কর শনাক্তকরণ নম্বর) বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এছাড়া এখন ব্যাংক হিসাব ছাড়া সঞ্চয়পত্র কেনার সুযোগ নেই। কিন্তু ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দা ও ব্যাংকের আমানতের সুদহার কম হওয়ায় নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে সঞ্চয়পত্রে ঝুঁকছেন সাধারণ গ্রাহকরা।

এর আগে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করতে সর্বশেষ ২০১৫ সালের মে মাসে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদহার গড়ে ২ শতাংশ করে কমানো হয়েছিল।

বর্তমানে পরিবার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ। পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ, তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ০৪ শতাংশ, পরিবার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ এবং পেনশনার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। ২০১৫ সালের ২৩ মের পর থেকে এ হার কার্যকর রয়েছে। এর আগে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ছিল ১৩ শতাংশেরও বেশি।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, জাতীয় সঞ্চয় স্কিমগুলোতে বিনিয়োগ করা অর্থের ওপর একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর মুনাফা দেয় সরকার। মেয়াদপূর্তির পরে বিনিয়োগ করা অর্থও ফেরত দেওয়া হয়।

ঢাকা/এসআর