০১:৫১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৪ মে ২০২৪

উন্নয়নে এত প্রকল্প, তবুও উপেক্ষিত লেভেলক্রসিং

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ১০:৩৪:৫৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩০ জুলাই ২০২২
  • / ৪১১১ বার দেখা হয়েছে

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: সড়কপথে দুর্ঘটনা নিয়ে বেশ আলোচনা হলেও রেলপথের অঘটন নিয়ে খুব কমই কথা হয়। অথচ ট্রেন দুর্ঘটনাও নিয়মিতভাবেই ঘটছে। এসব দুর্ঘটনার ৮০ থেকে ৮৫ ভাগই ঘটছে লেভেলক্রসিংয়ে। তবে এ অবস্থার পরিবর্তনের কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয় না। রেলের উন্নয়নে ব্যয়বহুল প্রকল্প নেওয়া হলেও ক্রসিংগুলো উপেক্ষিতই থেকে যায়।

সংশ্নিষ্টরা বলছেন, মোটা দাগে তিন কারণে রেলের লেভেলক্রসিংয়ে ঘটছে দুর্ঘটনা। অবৈধ, অর্থাৎ রেল কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে বা সমন্বয় না করে যেসব রাস্তা বানানো হয়ছে সেসয লেভেলক্রসিংগুলোর বেশিরভাগই অরক্ষিত। গেটম্যান না থাকায় অনেক বৈধ লেভেলক্রসিংও সুরক্ষিত নয়। আবার রেলের লেভেলক্রসিং পারাপারে অনেক সময় সচেতনতার পরিচয় দেন না চালক-পথচারীরা। এ ছাড়া রেলক্রসিংয়ের গেটম্যানদের অবহেলা তো রয়েছেই। ফলে থামছে না দুর্ঘটনা, দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল শুক্রবার চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের বড়তাকিয়া লেভেলক্রসিংয়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটল।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

অনুমোদিত এ লেভেলক্রসিংয়ে রেলওয়ের গেটম্যান রয়েছেন। তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, দুর্ঘটনার সময় সেখানে কোনো গেটম্যানকে দেখেনি তাঁরা। ফলে নির্বিঘ্নে রেললাইনে উঠে পড়ে পর্যটকবাহী মাইক্রোবাসটি। অবশ্য রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর হোসেন জানিয়েছেন, ট্রেনটি রেলক্রসিং পার হওয়ার আগেই বাঁশ ফেলে গেট বন্ধ করে দেন গেটম্যান। বাঁশ ঠেলেই রেললাইনে উঠে পড়ে মাইক্রোবাসটি। ফলে দুর্ঘটনা ঘটেছে।

ওই রেলক্রসিংয়ের অস্থায়ী গেটম্যান সাদ্দাম হোসেনও কাছে একই দাবি করেছে। সরেজমিন অবশ্য সেই রেলক্রসিংয়ে গেট বন্ধের কোনো বাঁশ দেখা যায়নি। তবে দু’পাশে লোহার দুটি পাইপ রয়েছে। সেগুলো ট্রেন আসার প্রাক্কালে ফেলা হয়নি বলে জানিয়েছে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় দোকানদার নিজাম উদ্দিন।

রেলওয়ের তথ্যমতে, রেলের পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চল মিলে সারাদেশে ২ হাজার ৮৫৬টি লেভেলক্রসিং রয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৩৬১টিরই অনুমোদন নেই রেলের। আবার বৈধ ১ হাজার ৪৯৫টির মধ্যে ৬৩২টিতে গেটম্যান নেই। রেলের তথ্য অনুযায়ী, শুধু চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২৫ মে পর্যন্ত ট্রেনে কাটা পড়ে কিংবা ধাক্কা খেয়ে অন্তত ৩৭৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। ২০২১ সালে ৩২২ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। ২০২০ সালে ৩৯৫ জনের মৃত্যু হয়। ২০১৯ সালে ৯৮০ জন নিহত হন। এসব দুর্ঘটনার অন্তত ৮৫ ভাগই ঘটেছে অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে।

জানা গেছে, ২০২১ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত গত ৭ বছরে কেবল লেভেলক্রসিংয়ে ট্রেনের সঙ্গে অন্য যানবাহনের ১৩২টি দুর্ঘটনা ঘটে। এসব দুর্ঘটনায় ১৪৮ জনের মৃত্যু হয়। গত তিন বছরে বিভিন্ন স্থানে নানা ধরনের ট্রেন দুর্ঘটনায় অন্তত হাজারখানেক মানুষের মৃত্যু ঘটেছে। রেলের বৈধ ও অবৈধ ৮৪ শতাংশ ক্রসিংয়েই গেটম্যান নেই। আবার অনেক সময় গেটম্যান থাকলেও তাদের অবহেলায় দুর্ঘটনা ঘটছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অরক্ষিত ক্রসিংগুলো মৃত্যুফাঁদে পরিণত হলেও এগুলোকে সুরক্ষিত করার তেমন কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয় না। বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে লোকবল সংকট ও মানুষের অসচেতনতাকেই দায়ী করে পার পেয়ে যায় রেলওয়ে। বিশেষ করে, যেসব ক্রসিংয়ে গেটম্যান নেই, সেগুলোতে ছোট্ট একটি সতর্কীকরণ নোটিশ টানিয়েই দায় এড়ায় রেলওয়ে। দুর্ঘটনা ঘটলে তড়িঘড়ি করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। মাঝেমধ্যে সংশ্নিষ্ট গেটম্যানকে সাময়িক বরখাস্ত করাও হয়। ব্যবস্থা বলতে এতটুকুই। বাস্তবায়ন করা হয় না তদন্ত রিপোর্টের সুপারিশ।

অভিযোগ রয়েছে, লেভেলক্রসিংয়ের উন্নয়ন, আধুনিকায়ন কিংবা লোকবল নিয়োগে উদ্যোগ নেয় না রেলওয়ে। আবার গেটম্যান বা গেটকিপারদের বড় অংশই অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ পাওয়া। অনেক জায়গায় ২৪ ঘণ্টার জন্য শিফট নেই। সর্বশেষ ২০১৯ সালে ২৬৩ জন অস্থায়ী গেটম্যান নিয়োগ দিয়েছিল রেলওয়ে।

বিপুলসংখ্যক রেলক্রসিং অরক্ষিত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছেন রেলওয়ের কর্মকর্তারাও। রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর হোসেন বিষয়টির সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেন, ‘রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনা বন্ধে আমাদের সামনে দুটি উপায় রয়েছে। এর একটি হচ্ছে অবৈধ ও অরক্ষিত ক্রসিং একেবারে বন্ধ করে দেওয়া। আরেকটি হচ্ছে সব ক্রসিংয়ে গেটম্যান নিয়োগ দেওয়া। তবে বর্তমানে যেভাবে দুর্ঘটনা ঘটছে, তা কমিয়ে আনতে হলে গুরুত্বপূর্ণ রেলক্রসিংগুলোতে গেটম্যান নিয়োগ দিতে হবে। একই সঙ্গে বন্ধ করে দিতে হবে তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ণ রেলক্রসিংগুলো।’ তবে তাঁর দ্বিতীয় ফর্মুলা বাস্তবভিত্তিক কিনা, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

জানা গেছে, গত বছরের ৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের খুলশী থানার ঝাউতলা এলাকায় ডেমু ট্রেনের সঙ্গে সিএনজিচালিত অটোরিকশার সংঘর্ষে ট্রাফিক পুলিশের এক সদস্যসহ তিনজনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। সেই ক্রসিংয়ে গেটম্যান ছিলেন। তবে ট্রেন যাওয়ার আসার সময় তা খোলা ছিল। একই বছরের ৫ সেপ্টেম্বর মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার ভাটেরা রেলস্টেশন এলাকার ক্রসিংয়ে ট্রেন একটি মাইক্রোবাসকে ঠেলে প্রায় আধকিলোমিটার নিয়ে যায়। এ দুর্ঘটনায় দুই বরযাত্রীর মৃত্যু ঘটে। এর আগে ২০২০ সালে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার বেতকান্দি এলাকায় অরক্ষিত লেভেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে বর-কনেসহ মাইক্রোবাসের ১১ জন যাত্রী নিহত হন।

মর্জিমাফিক লেভেলক্রসিং: রেলওয়ের তথ্যমতে, বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানও রেলকে না জানিয়ে অবৈধ লেভেলক্রসিং তৈরি করেছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) রেলপথে সবচেয়ে বেশি অবৈধ লেভেলক্রসিং বানিয়েছে। সংস্থাটির ৪৫২টি অবৈধ লেভেলক্রসিং রয়েছে। একইভাবে ইউনিয়ন পরিষদের ৩৬৩টি, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের ১১টি, পৌরসভার ৭৯টি, সিটি করপোরেশনের ৩৪টি, জেলা পরিষদের ১৩টি, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের ৩টি, বেনাপোল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের একটি, জয়পুরহাট চিনিকলের একটি লেভেলক্রসিং রয়েছে। অন্যদিকে ৩৩টি ক্রসিংয়ের মালিকানার তথ্যই জানে না রেলওয়ে। অর্থাৎ রাস্তা কোন কর্তৃপক্ষ তৈরি করেছে তার হদিস করতে পারে না রেল।

ঢাকা/এসএ

শেয়ার করুন

x
English Version

উন্নয়নে এত প্রকল্প, তবুও উপেক্ষিত লেভেলক্রসিং

আপডেট: ১০:৩৪:৫৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩০ জুলাই ২০২২

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: সড়কপথে দুর্ঘটনা নিয়ে বেশ আলোচনা হলেও রেলপথের অঘটন নিয়ে খুব কমই কথা হয়। অথচ ট্রেন দুর্ঘটনাও নিয়মিতভাবেই ঘটছে। এসব দুর্ঘটনার ৮০ থেকে ৮৫ ভাগই ঘটছে লেভেলক্রসিংয়ে। তবে এ অবস্থার পরিবর্তনের কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয় না। রেলের উন্নয়নে ব্যয়বহুল প্রকল্প নেওয়া হলেও ক্রসিংগুলো উপেক্ষিতই থেকে যায়।

সংশ্নিষ্টরা বলছেন, মোটা দাগে তিন কারণে রেলের লেভেলক্রসিংয়ে ঘটছে দুর্ঘটনা। অবৈধ, অর্থাৎ রেল কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে বা সমন্বয় না করে যেসব রাস্তা বানানো হয়ছে সেসয লেভেলক্রসিংগুলোর বেশিরভাগই অরক্ষিত। গেটম্যান না থাকায় অনেক বৈধ লেভেলক্রসিংও সুরক্ষিত নয়। আবার রেলের লেভেলক্রসিং পারাপারে অনেক সময় সচেতনতার পরিচয় দেন না চালক-পথচারীরা। এ ছাড়া রেলক্রসিংয়ের গেটম্যানদের অবহেলা তো রয়েছেই। ফলে থামছে না দুর্ঘটনা, দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল শুক্রবার চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের বড়তাকিয়া লেভেলক্রসিংয়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটল।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

অনুমোদিত এ লেভেলক্রসিংয়ে রেলওয়ের গেটম্যান রয়েছেন। তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, দুর্ঘটনার সময় সেখানে কোনো গেটম্যানকে দেখেনি তাঁরা। ফলে নির্বিঘ্নে রেললাইনে উঠে পড়ে পর্যটকবাহী মাইক্রোবাসটি। অবশ্য রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর হোসেন জানিয়েছেন, ট্রেনটি রেলক্রসিং পার হওয়ার আগেই বাঁশ ফেলে গেট বন্ধ করে দেন গেটম্যান। বাঁশ ঠেলেই রেললাইনে উঠে পড়ে মাইক্রোবাসটি। ফলে দুর্ঘটনা ঘটেছে।

ওই রেলক্রসিংয়ের অস্থায়ী গেটম্যান সাদ্দাম হোসেনও কাছে একই দাবি করেছে। সরেজমিন অবশ্য সেই রেলক্রসিংয়ে গেট বন্ধের কোনো বাঁশ দেখা যায়নি। তবে দু’পাশে লোহার দুটি পাইপ রয়েছে। সেগুলো ট্রেন আসার প্রাক্কালে ফেলা হয়নি বলে জানিয়েছে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় দোকানদার নিজাম উদ্দিন।

রেলওয়ের তথ্যমতে, রেলের পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চল মিলে সারাদেশে ২ হাজার ৮৫৬টি লেভেলক্রসিং রয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৩৬১টিরই অনুমোদন নেই রেলের। আবার বৈধ ১ হাজার ৪৯৫টির মধ্যে ৬৩২টিতে গেটম্যান নেই। রেলের তথ্য অনুযায়ী, শুধু চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২৫ মে পর্যন্ত ট্রেনে কাটা পড়ে কিংবা ধাক্কা খেয়ে অন্তত ৩৭৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। ২০২১ সালে ৩২২ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। ২০২০ সালে ৩৯৫ জনের মৃত্যু হয়। ২০১৯ সালে ৯৮০ জন নিহত হন। এসব দুর্ঘটনার অন্তত ৮৫ ভাগই ঘটেছে অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে।

জানা গেছে, ২০২১ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত গত ৭ বছরে কেবল লেভেলক্রসিংয়ে ট্রেনের সঙ্গে অন্য যানবাহনের ১৩২টি দুর্ঘটনা ঘটে। এসব দুর্ঘটনায় ১৪৮ জনের মৃত্যু হয়। গত তিন বছরে বিভিন্ন স্থানে নানা ধরনের ট্রেন দুর্ঘটনায় অন্তত হাজারখানেক মানুষের মৃত্যু ঘটেছে। রেলের বৈধ ও অবৈধ ৮৪ শতাংশ ক্রসিংয়েই গেটম্যান নেই। আবার অনেক সময় গেটম্যান থাকলেও তাদের অবহেলায় দুর্ঘটনা ঘটছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অরক্ষিত ক্রসিংগুলো মৃত্যুফাঁদে পরিণত হলেও এগুলোকে সুরক্ষিত করার তেমন কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয় না। বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে লোকবল সংকট ও মানুষের অসচেতনতাকেই দায়ী করে পার পেয়ে যায় রেলওয়ে। বিশেষ করে, যেসব ক্রসিংয়ে গেটম্যান নেই, সেগুলোতে ছোট্ট একটি সতর্কীকরণ নোটিশ টানিয়েই দায় এড়ায় রেলওয়ে। দুর্ঘটনা ঘটলে তড়িঘড়ি করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। মাঝেমধ্যে সংশ্নিষ্ট গেটম্যানকে সাময়িক বরখাস্ত করাও হয়। ব্যবস্থা বলতে এতটুকুই। বাস্তবায়ন করা হয় না তদন্ত রিপোর্টের সুপারিশ।

অভিযোগ রয়েছে, লেভেলক্রসিংয়ের উন্নয়ন, আধুনিকায়ন কিংবা লোকবল নিয়োগে উদ্যোগ নেয় না রেলওয়ে। আবার গেটম্যান বা গেটকিপারদের বড় অংশই অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ পাওয়া। অনেক জায়গায় ২৪ ঘণ্টার জন্য শিফট নেই। সর্বশেষ ২০১৯ সালে ২৬৩ জন অস্থায়ী গেটম্যান নিয়োগ দিয়েছিল রেলওয়ে।

বিপুলসংখ্যক রেলক্রসিং অরক্ষিত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছেন রেলওয়ের কর্মকর্তারাও। রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর হোসেন বিষয়টির সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেন, ‘রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনা বন্ধে আমাদের সামনে দুটি উপায় রয়েছে। এর একটি হচ্ছে অবৈধ ও অরক্ষিত ক্রসিং একেবারে বন্ধ করে দেওয়া। আরেকটি হচ্ছে সব ক্রসিংয়ে গেটম্যান নিয়োগ দেওয়া। তবে বর্তমানে যেভাবে দুর্ঘটনা ঘটছে, তা কমিয়ে আনতে হলে গুরুত্বপূর্ণ রেলক্রসিংগুলোতে গেটম্যান নিয়োগ দিতে হবে। একই সঙ্গে বন্ধ করে দিতে হবে তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ণ রেলক্রসিংগুলো।’ তবে তাঁর দ্বিতীয় ফর্মুলা বাস্তবভিত্তিক কিনা, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

জানা গেছে, গত বছরের ৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের খুলশী থানার ঝাউতলা এলাকায় ডেমু ট্রেনের সঙ্গে সিএনজিচালিত অটোরিকশার সংঘর্ষে ট্রাফিক পুলিশের এক সদস্যসহ তিনজনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। সেই ক্রসিংয়ে গেটম্যান ছিলেন। তবে ট্রেন যাওয়ার আসার সময় তা খোলা ছিল। একই বছরের ৫ সেপ্টেম্বর মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার ভাটেরা রেলস্টেশন এলাকার ক্রসিংয়ে ট্রেন একটি মাইক্রোবাসকে ঠেলে প্রায় আধকিলোমিটার নিয়ে যায়। এ দুর্ঘটনায় দুই বরযাত্রীর মৃত্যু ঘটে। এর আগে ২০২০ সালে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার বেতকান্দি এলাকায় অরক্ষিত লেভেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে বর-কনেসহ মাইক্রোবাসের ১১ জন যাত্রী নিহত হন।

মর্জিমাফিক লেভেলক্রসিং: রেলওয়ের তথ্যমতে, বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানও রেলকে না জানিয়ে অবৈধ লেভেলক্রসিং তৈরি করেছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) রেলপথে সবচেয়ে বেশি অবৈধ লেভেলক্রসিং বানিয়েছে। সংস্থাটির ৪৫২টি অবৈধ লেভেলক্রসিং রয়েছে। একইভাবে ইউনিয়ন পরিষদের ৩৬৩টি, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের ১১টি, পৌরসভার ৭৯টি, সিটি করপোরেশনের ৩৪টি, জেলা পরিষদের ১৩টি, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের ৩টি, বেনাপোল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের একটি, জয়পুরহাট চিনিকলের একটি লেভেলক্রসিং রয়েছে। অন্যদিকে ৩৩টি ক্রসিংয়ের মালিকানার তথ্যই জানে না রেলওয়ে। অর্থাৎ রাস্তা কোন কর্তৃপক্ষ তৈরি করেছে তার হদিস করতে পারে না রেল।

ঢাকা/এসএ