০২:৩৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৪ মে ২০২৪

করপোরেট করহার কমলেও তালিকায় নেই পুঁজিবাজারের কোম্পানি!

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০৮:২৪:৪৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ মে ২০২১
  • / ৪২২৯ বার দেখা হয়েছে

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে করের বোঝা বাড়ানো হচ্ছে না। বরং করপোরেট করসহ কোনো কোনো ক্ষেত্রে করহার কমছে। তবে কমছে না তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার। শুধুমাত্র অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার কমানোর চিন্তাভাবনা করছে সরকার।

এতে আগামী অর্থবছরে রাজস্ব কিছুটা কম এলেও বিনিয়োগ বাড়ার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ও কর্মসংস্থান বাড়বে বলে মনে করছে সরকার। এদিকে রাজস্ব বাড়াতে সম্পদশালীদের কাছ থেকে বেশি কর আদায়ের পরিকল্পনা রয়েছে। এ লক্ষ্যে বাড়ানো হচ্ছে সম্পদ কর বা সারচার্জ। ন্যূনতম সারচার্জ বাতিল করে স্ল্যাব পুনর্গঠন করা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, অভ্যন্তরীণ উৎপাদন, সরবরাহ ও কর্মসংস্থান বাড়াতে পুঁজিবাজারে নেই এমন প্রতিষ্ঠানের করপোরেট কর ২ দশমিক ৫ শতাংশ কমানো হতে পারে। নতুন বিনিয়োগে উদ্বুদ্ধ করা, কোম্পানি সম্প্রসারণ ও এফডিআই আকর্ষণে করপোরেট করে ছাড় দেয়ার পরিকল্পনা করেছে এনবিআর। বিভিন্ন ব্যবসায়িক সংগঠনের পক্ষ থেকেও করপোরেট কর কমানোর দাবি রয়েছে। ছয় বছর পর চলতি অর্থবছর ২ দশমিক ৫ শতাংশ কর কমানো হয়। আগামী বাজেটে করোনা বিবেচনায় আরো আড়াই শতাংশ কমানোর পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।

বর্তমানে করপোরেট কর থেকে বছরে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আসে। বিদ্যমান কর কাঠামো অনুযায়ী, করপোরেট করের স্তর রয়েছে আটটি। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ২৫ শতাংশ, তালিকাবহির্ভূত কোম্পানি ৩২ দশমিক ৫, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ও ২০১৩ সালে অনুমোদন পাওয়া নতুন ব্যাংক ৩৭ দশমিক ৫, তালিকাবহির্ভূত ব্যাংক ৪০, মার্চেন্ট ব্যাংক ৩৭ দশমিক ৫০, সিগারেট, জর্দা ও গুলসহ তামাকজাত দ্রব্য প্রস্তুতকারী কোম্পানি ৪৫, তালিকাভুক্ত মোবাইল কোম্পানি ৪০ ও তালিকাবহির্ভূত কোম্পানি ৪৫ এবং লভ্যাংশ আয়ের ওপর ২০ শতাংশ করপোরেট কর দেয়। এর বাইরে তৈরি পোশাক খাতের প্রতিষ্ঠান ১০ ও ১২ শতাংশ এবং সমবায় প্রতিষ্ঠানকে ১৫ শতাংশ হারে করপোরেট ট্যাক্স দিতে হয়।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, দেশে গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১ লাখ ৩৫ হাজার টিআইএন বা ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নাম্বারধারী কোম্পানি রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশই রিটার্ন দাখিল করে। গত অর্থবছর এ খাত থেকে রাজস্ব আহরণ হয়েছে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা।

জানতে চাইলে দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন এ প্রসঙ্গে বলেন, অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে করপোরেট ট্যাক্স অনেক বেশি। তাই করপোরেট ট্যাক্স কমাতে হবে। আগামী বাজেটে কমানোর যে উদ্যোগ এটা অবশ্যই ইতিবাচক। ট্যাক্স কমলে ব্যবসায় কিছুটা গতি আসবে।

সম্পদ কর বাড়ানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অন্যান্য ট্যাক্স দেয়ার পর আবার যদি বাড়তি কর দিতে হয় তাহলে মানুষ নিরুৎসাহিত হবে। যিনি কর দিচ্ছেন তার ওপরই আরো কর চাপানো হচ্ছে। আমরা সবসময় বলছি, করহার কমান তবে করের আওতা বাড়ান। কিন্তু এনবিআরের পলিসি হচ্ছে, যিনি দিচ্ছেন তার ওপর করের বোঝা চাপানো হচ্ছে। এখন গ্রামগঞ্জেও মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো হয়েছে। বর্তমানে এনবিআরের লোকবলও বেড়েছে। সুতরাং যারা কর দিচ্ছেন তার ওপর আর করের বোঝা না চাপিয়ে করের আওতা বাড়াতে কাজ করুক এনবিআর, এটাই আমরা চাই।

এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, পুঁজিবাজারের তালিকাবহির্ভূত কোম্পানিগুলোর জন্য যে করহার সেটা অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশি। এক্ষেত্রে করহার কমানো যেতে পারে। তবে কর কমালেই যে বিনিয়োগ বাড়বে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। বিনিয়োগের জন্য ব্যবসা সহজীকরণ সূচক, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, গ্যাস-বিদ্যুতের সহজলভ্যতার বিষয়গুলোতে যে ঘাটতি রয়েছে সেগুলো মেটাতে না পারলে বিনিয়োগ বাড়বে না।

ঢাকা/এসএ

শেয়ার করুন

x
English Version

করপোরেট করহার কমলেও তালিকায় নেই পুঁজিবাজারের কোম্পানি!

আপডেট: ০৮:২৪:৪৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ মে ২০২১

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে করের বোঝা বাড়ানো হচ্ছে না। বরং করপোরেট করসহ কোনো কোনো ক্ষেত্রে করহার কমছে। তবে কমছে না তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার। শুধুমাত্র অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার কমানোর চিন্তাভাবনা করছে সরকার।

এতে আগামী অর্থবছরে রাজস্ব কিছুটা কম এলেও বিনিয়োগ বাড়ার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ও কর্মসংস্থান বাড়বে বলে মনে করছে সরকার। এদিকে রাজস্ব বাড়াতে সম্পদশালীদের কাছ থেকে বেশি কর আদায়ের পরিকল্পনা রয়েছে। এ লক্ষ্যে বাড়ানো হচ্ছে সম্পদ কর বা সারচার্জ। ন্যূনতম সারচার্জ বাতিল করে স্ল্যাব পুনর্গঠন করা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, অভ্যন্তরীণ উৎপাদন, সরবরাহ ও কর্মসংস্থান বাড়াতে পুঁজিবাজারে নেই এমন প্রতিষ্ঠানের করপোরেট কর ২ দশমিক ৫ শতাংশ কমানো হতে পারে। নতুন বিনিয়োগে উদ্বুদ্ধ করা, কোম্পানি সম্প্রসারণ ও এফডিআই আকর্ষণে করপোরেট করে ছাড় দেয়ার পরিকল্পনা করেছে এনবিআর। বিভিন্ন ব্যবসায়িক সংগঠনের পক্ষ থেকেও করপোরেট কর কমানোর দাবি রয়েছে। ছয় বছর পর চলতি অর্থবছর ২ দশমিক ৫ শতাংশ কর কমানো হয়। আগামী বাজেটে করোনা বিবেচনায় আরো আড়াই শতাংশ কমানোর পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।

বর্তমানে করপোরেট কর থেকে বছরে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আসে। বিদ্যমান কর কাঠামো অনুযায়ী, করপোরেট করের স্তর রয়েছে আটটি। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ২৫ শতাংশ, তালিকাবহির্ভূত কোম্পানি ৩২ দশমিক ৫, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ও ২০১৩ সালে অনুমোদন পাওয়া নতুন ব্যাংক ৩৭ দশমিক ৫, তালিকাবহির্ভূত ব্যাংক ৪০, মার্চেন্ট ব্যাংক ৩৭ দশমিক ৫০, সিগারেট, জর্দা ও গুলসহ তামাকজাত দ্রব্য প্রস্তুতকারী কোম্পানি ৪৫, তালিকাভুক্ত মোবাইল কোম্পানি ৪০ ও তালিকাবহির্ভূত কোম্পানি ৪৫ এবং লভ্যাংশ আয়ের ওপর ২০ শতাংশ করপোরেট কর দেয়। এর বাইরে তৈরি পোশাক খাতের প্রতিষ্ঠান ১০ ও ১২ শতাংশ এবং সমবায় প্রতিষ্ঠানকে ১৫ শতাংশ হারে করপোরেট ট্যাক্স দিতে হয়।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, দেশে গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১ লাখ ৩৫ হাজার টিআইএন বা ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নাম্বারধারী কোম্পানি রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশই রিটার্ন দাখিল করে। গত অর্থবছর এ খাত থেকে রাজস্ব আহরণ হয়েছে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা।

জানতে চাইলে দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন এ প্রসঙ্গে বলেন, অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে করপোরেট ট্যাক্স অনেক বেশি। তাই করপোরেট ট্যাক্স কমাতে হবে। আগামী বাজেটে কমানোর যে উদ্যোগ এটা অবশ্যই ইতিবাচক। ট্যাক্স কমলে ব্যবসায় কিছুটা গতি আসবে।

সম্পদ কর বাড়ানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অন্যান্য ট্যাক্স দেয়ার পর আবার যদি বাড়তি কর দিতে হয় তাহলে মানুষ নিরুৎসাহিত হবে। যিনি কর দিচ্ছেন তার ওপরই আরো কর চাপানো হচ্ছে। আমরা সবসময় বলছি, করহার কমান তবে করের আওতা বাড়ান। কিন্তু এনবিআরের পলিসি হচ্ছে, যিনি দিচ্ছেন তার ওপর করের বোঝা চাপানো হচ্ছে। এখন গ্রামগঞ্জেও মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো হয়েছে। বর্তমানে এনবিআরের লোকবলও বেড়েছে। সুতরাং যারা কর দিচ্ছেন তার ওপর আর করের বোঝা না চাপিয়ে করের আওতা বাড়াতে কাজ করুক এনবিআর, এটাই আমরা চাই।

এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, পুঁজিবাজারের তালিকাবহির্ভূত কোম্পানিগুলোর জন্য যে করহার সেটা অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশি। এক্ষেত্রে করহার কমানো যেতে পারে। তবে কর কমালেই যে বিনিয়োগ বাড়বে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। বিনিয়োগের জন্য ব্যবসা সহজীকরণ সূচক, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, গ্যাস-বিদ্যুতের সহজলভ্যতার বিষয়গুলোতে যে ঘাটতি রয়েছে সেগুলো মেটাতে না পারলে বিনিয়োগ বাড়বে না।

ঢাকা/এসএ