১০:২৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

করোনায় বাংলা একাডেমির সভাপতি শামসুজ্জামান খানের মৃত্যু

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০৭:২১:৪৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ এপ্রিল ২০২১
  • / ৪১৩৫ বার দেখা হয়েছে

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদকঃ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বাংলা একাডেমির সভাপতি শামসুজ্জামান খান মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। বাংলা একাডেমির জনসংযোগ কর্মকর্তা কবি পিয়াস মজিদ গণমাধ্যমেকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

 বুধবার (১৪ এপ্রিল) দুপুর ২টার দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

এর আগে শামসুজ্জামান খান গত ৮ এপ্রিল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সোমবার তার শারীরিক অবস্থায় অবনতি হলে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়।

শামসুজ্জামান খানের সঙ্গে তার স্ত্রীও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। এদিকে বইমেলা কমিটির সদস্য সচিব জালাল আহমেদসহ আরও কয়েকজন করোনায় আক্রান্ত বলে জানা গেছে।

২০২০ সালের ২৮ জুন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, শামসুজ্জামান খান বাংলা একাডেমির সভাপতি হিসেবে ৩ বছরের জন্য নিয়োগ পেয়েছেন।

এর আগে ২০০৯ সালে তিনি বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হন। এরপর তিন মেয়াদে ২০১৮ সাল পর্যন্ত তিনি ওই পদে ছিলেন। পরে তাকে একাডেমির সভাপতি করা হয়।

২০১২ সাল থেকে বাংলা একাডেমির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন ড. আনিসুজ্জামান। সবশেষ ২৯ জানুয়ারি ২০২০ থেকে ২৮ জানুয়ারি ২০২৩ সাল পর্যন্ত তিন বছর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য নিয়োগ পেয়েছিলেন আনিসুজ্জামান। ২০২০ সালের ১৪ মে আনিসুজ্জামান মারা যান।

বর্ণাঢ্য জীবন
অধ্যাপক শামসুজ্জামানের জন্ম ১৯৪০ সালের ২৯ ডিসেম্বর মানিকগঞ্জ জেলার চারিগ্রামে। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। তিনি স্ত্রী ও তিন মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

ঢাকা বিশ্বিবিদ্যালয়ের থেকে শিক্ষাজীবন শেষে শিক্ষকতা দিয়ে তার কর্মজীবনের সূচনা। বিভিন্ন সময় মুন্সীগঞ্জ হরগঙ্গা কলেজ, ঢাকা জগন্নাথ কলেজ, ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্বিবিদ্যালয় ও জাতীয় বিশ্বিবিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন তিনি। তিনি বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ও জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালকের দায়িত্বেও ছিলেন। তিনি ইসলামী বিশ্বিবিদ্যালয়, কুষ্টিয়ার বঙ্গবন্ধু চেয়ার প্রফেসর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য ছিলেন।

লোকশিল্প গবেষক শামসুজ্জামানের রচিত ও সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যা শতাধিক। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- ফোকলোর চর্চা, বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্রচিন্তা ও বর্তমান বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলাপ ও অন্যান্য প্রসঙ্গ, মুক্তবুদ্ধি, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমকাল, বাঙালির বহুত্ববাদী লোকমনীষা, মীর মশাররফ হোসেন : নতুন তথ্যে নতুন ভাষ্যে, সৃজনভুবনের আলোকিত মানুষেরা, রঙ্গরসের গল্পসমগ্র, কিশোর রচনাসমগ্র, বাংলাদেশের উৎসব, বাংলা সন ও পঞ্জিকা, ফোকলোরচিন্তা ইত্যাদি।

বাংলাদেশের লোকজ সংস্কৃতি গ্রন্থমালা শিরোনামে ৬৪ খণ্ডে ৬৪ জেলার লোকজ সংস্কৃতির সংগ্রহসালা সম্পাদনা এবং ১১৪ খণ্ডে বাংলাদেশের ফোকলোর সংগ্রহমালা সম্পাদনা শামসুজ্জামান খানের বিশেষ উল্লেখযোগ্য কর্ম।

সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতি হিসেবে ২০০১ সালে তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পান। ২০০৯ সালে একুশ পদক পাওয়ার পর ২০১৭ সালে তিনি সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান স্বাধীনতা পুরস্কার অর্জন করেন।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শোক
বাংলা একাডেমির সভাপতি ও সাবেক মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান এর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। রাষ্ট্রপতি তার রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

শোকবার্তায় রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলা ভাষা ও সাহিত্যাঙ্গনে শামসুজ্জামান খানের অবদান বাংলাদেশের মানুষ শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।

অধ্যাপক শামসুজ্জামান খানের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি মরহুমের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন।

শামসুজ্জামান খানের মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ ও নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।

এদিকে শামসুজ্জামান খানের মৃত্যুতে শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন। বুধবার (১৪ এপ্রিল) দুপুরে সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো এক শোক বার্তায় তিনি বলেন, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান দেশের লোক সংস্কৃতি ও পল্লীসাহিত্য গবেষক হিসেবে অসামান্য অবদান রেখেছেন।

তিনি আরও বলেন, সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান তার সৃজনশীল কাজের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

শেয়ার করুন

x
English Version

করোনায় বাংলা একাডেমির সভাপতি শামসুজ্জামান খানের মৃত্যু

আপডেট: ০৭:২১:৪৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ এপ্রিল ২০২১

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদকঃ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বাংলা একাডেমির সভাপতি শামসুজ্জামান খান মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। বাংলা একাডেমির জনসংযোগ কর্মকর্তা কবি পিয়াস মজিদ গণমাধ্যমেকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

 বুধবার (১৪ এপ্রিল) দুপুর ২টার দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

এর আগে শামসুজ্জামান খান গত ৮ এপ্রিল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সোমবার তার শারীরিক অবস্থায় অবনতি হলে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়।

শামসুজ্জামান খানের সঙ্গে তার স্ত্রীও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। এদিকে বইমেলা কমিটির সদস্য সচিব জালাল আহমেদসহ আরও কয়েকজন করোনায় আক্রান্ত বলে জানা গেছে।

২০২০ সালের ২৮ জুন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, শামসুজ্জামান খান বাংলা একাডেমির সভাপতি হিসেবে ৩ বছরের জন্য নিয়োগ পেয়েছেন।

এর আগে ২০০৯ সালে তিনি বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হন। এরপর তিন মেয়াদে ২০১৮ সাল পর্যন্ত তিনি ওই পদে ছিলেন। পরে তাকে একাডেমির সভাপতি করা হয়।

২০১২ সাল থেকে বাংলা একাডেমির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন ড. আনিসুজ্জামান। সবশেষ ২৯ জানুয়ারি ২০২০ থেকে ২৮ জানুয়ারি ২০২৩ সাল পর্যন্ত তিন বছর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য নিয়োগ পেয়েছিলেন আনিসুজ্জামান। ২০২০ সালের ১৪ মে আনিসুজ্জামান মারা যান।

বর্ণাঢ্য জীবন
অধ্যাপক শামসুজ্জামানের জন্ম ১৯৪০ সালের ২৯ ডিসেম্বর মানিকগঞ্জ জেলার চারিগ্রামে। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। তিনি স্ত্রী ও তিন মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

ঢাকা বিশ্বিবিদ্যালয়ের থেকে শিক্ষাজীবন শেষে শিক্ষকতা দিয়ে তার কর্মজীবনের সূচনা। বিভিন্ন সময় মুন্সীগঞ্জ হরগঙ্গা কলেজ, ঢাকা জগন্নাথ কলেজ, ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্বিবিদ্যালয় ও জাতীয় বিশ্বিবিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন তিনি। তিনি বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ও জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালকের দায়িত্বেও ছিলেন। তিনি ইসলামী বিশ্বিবিদ্যালয়, কুষ্টিয়ার বঙ্গবন্ধু চেয়ার প্রফেসর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য ছিলেন।

লোকশিল্প গবেষক শামসুজ্জামানের রচিত ও সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যা শতাধিক। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- ফোকলোর চর্চা, বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্রচিন্তা ও বর্তমান বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলাপ ও অন্যান্য প্রসঙ্গ, মুক্তবুদ্ধি, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমকাল, বাঙালির বহুত্ববাদী লোকমনীষা, মীর মশাররফ হোসেন : নতুন তথ্যে নতুন ভাষ্যে, সৃজনভুবনের আলোকিত মানুষেরা, রঙ্গরসের গল্পসমগ্র, কিশোর রচনাসমগ্র, বাংলাদেশের উৎসব, বাংলা সন ও পঞ্জিকা, ফোকলোরচিন্তা ইত্যাদি।

বাংলাদেশের লোকজ সংস্কৃতি গ্রন্থমালা শিরোনামে ৬৪ খণ্ডে ৬৪ জেলার লোকজ সংস্কৃতির সংগ্রহসালা সম্পাদনা এবং ১১৪ খণ্ডে বাংলাদেশের ফোকলোর সংগ্রহমালা সম্পাদনা শামসুজ্জামান খানের বিশেষ উল্লেখযোগ্য কর্ম।

সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতি হিসেবে ২০০১ সালে তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পান। ২০০৯ সালে একুশ পদক পাওয়ার পর ২০১৭ সালে তিনি সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান স্বাধীনতা পুরস্কার অর্জন করেন।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শোক
বাংলা একাডেমির সভাপতি ও সাবেক মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান এর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। রাষ্ট্রপতি তার রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

শোকবার্তায় রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলা ভাষা ও সাহিত্যাঙ্গনে শামসুজ্জামান খানের অবদান বাংলাদেশের মানুষ শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।

অধ্যাপক শামসুজ্জামান খানের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি মরহুমের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন।

শামসুজ্জামান খানের মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ ও নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।

এদিকে শামসুজ্জামান খানের মৃত্যুতে শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন। বুধবার (১৪ এপ্রিল) দুপুরে সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো এক শোক বার্তায় তিনি বলেন, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান দেশের লোক সংস্কৃতি ও পল্লীসাহিত্য গবেষক হিসেবে অসামান্য অবদান রেখেছেন।

তিনি আরও বলেন, সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান তার সৃজনশীল কাজের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।