০৯:৪৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

গাড়ির তৃতীয় পক্ষের বিমা: নতুন বিধান ‘ছয় মাসে’

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০৮:২১:৪৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ অগাস্ট ২০২১
  • / ১০৩৭০ বার দেখা হয়েছে

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: তৃতীয় পক্ষের বিমা ফিরিয়ে এনে গাড়ির মালিকের প্রিমিয়াম ও বিমা দাবি ব্যাপকভাবে বাড়ানোর যে পরিকল্পনা করা হচ্ছে, তা কিছুটা কমাতে চাইছে কোম্পানিগুলো।

প্রিমিয়াম দুই থেকে চার গুণ বাড়ানোর ক্ষেত্রে আপত্তি না থাকলেও বিমা কোম্পানিগুলো ক্ষতিপূরণ ৫ লাখ টাকা করার পরিকল্পনার বিরোধিতা করছে।

তারা বলছে, সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ মানুষ হতাহত হয়। তাদের এ পরিমাণ ক্ষতিপূরণ দিতে গেলে যে হারে প্রিমিয়াম নির্ধারণ করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে, তা সম্ভব নয়।

সড়ক দুর্ঘটনায় বছরে যে পাঁচ থেকে ছয় হাজার মানুষের প্রাণহানি ও এর চেয়ে বেশিসংখ্যক মানুষের আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে, তাতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর আর্থিক অবস্থার ব্যাপক অবনতি হয়। এ ক্ষেত্রে বিমা হতে পারত আর্থিক রক্ষাকবচ।

গাড়ির মালিকের তৃতীয় পক্ষের বিমা সুবিধার আওতায় থাকতে পারত এ মানুষগুলো। কিন্তু সেই সুবিধা দেশে ছিল নামকাওয়াস্তে। এর প্রিমিয়ামও যেমন ছিল ন্যূনতম, তেমনি বিমা দাবির পরিমাণও এতটাই অনুল্লেখযোগ্য যে, ক্ষতিগ্রস্তরা তা দাবিও করত না।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

অকার্যকর বিধায় সেই বিমা ব্যবস্থা বাতিলও করা হয়েছে। তবে তা আবার নতুন করে ফিরিয়ে এনে ‍যুগোপযোগী করার যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, তাতে সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে আর্থিক নিরাপত্তা দিতে পারে।

এবার আগের চেয়েও বেশি প্রিমিয়াম, বেশি ক্ষতিপূরণ ও শক্ত আইনি কাঠামোর সঙ্গে সঙ্গে তা কার্যকরও করতে চাইছে সরকার। এরই মধ্যে নতুন থার্ড পার্টি ইন্স্যুরেন্সের প্রাথমিক রূপরেখাও তৈরি করেছে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)।

১৯৮৩ সালের মোটরযানসংক্রান্ত পুরোনো আইনে তৃতীয় পক্ষের ঝুঁকি বিমা করা বাধ্যতামূলক এবং এর অধীনে দণ্ডের বিধানও ছিল। তবে ২০১৮ সালের নতুন সড়ক পরিবহন আইনে তা বাতিল করা হয়, যা ২০১৯ সালের নভেম্বরে কার্যকর হয়।

গত ডিসেম্বরে বিমার বিধান বাতিল করে বিজ্ঞপ্তি দেয় আইডিআরএ। তবে বছর না পেরোতেই আবারও মোটরযান বিমায় ফিরছে সংস্থাটি।

আইডিআরএ বলছে, নতুন সড়ক পরিবহন আইনের সঙ্গে বিমা আইনের সমন্বয়হীনতা ছিল। এটি দূর করতে তৃতীয় পক্ষের ঝুঁকি বিমা বাতিল করা হয়। এখন গুরুত্ব অনুধাবন করে আরও কার্যকরভাবে তা ফেরানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আগের চেয়ে বাড়ছে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ, বাড়ছে প্রিমিয়ামের হারও।

তৃতীয় পক্ষের বিমা কী

এটি দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তকে অর্থিক সুবিধা দিতে বিমা পলিসি। এখানে প্রথম পক্ষ গাড়ির মালিক। তিনি বছরে একটা নির্দিষ্ট হারে প্রিমিয়াম জমা দেবেন কোনো বিমা কোম্পানির কাছে।

বিমা কোম্পানি দ্বিতীয় পক্ষ, যারা প্রিমিয়াম নেয়ার বিপরীতে গাড়ি দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ দেবে। আর যিনি মোটরযান দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, তিনি তৃতীয় পক্ষ, পাবেন বিমার ক্ষতিপূরণ।

কেন কার্যকর হয়নি

আগে মোটরযানের তৃতীয় পক্ষের ঝুঁকি বিমায় বার্ষিক প্রিমিয়ামের পরিমাণ ছিল একেবারেই কম। দুর্ঘটনায় কোনো ব্যক্তি নিহত হলেও ক্ষতিপূরণের পরিমাণ ছিল সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা। তা ছাড়া বিমার টাকা পেতেও ছিল নানা ভোগান্তি।

কম প্রিমিয়ামের কারণে গাড়ির মালিকরাও তেমন একটা গুরুত্ব দিতেন না। তা ছাড়া ক্ষতিপূরণ কম হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্তরাও বিমা দাবি করত না।

নতুন করে তৃতীয় পক্ষের বিমা ফেরানো নিয়ে আইডিআরএর নির্বাহী পরিচালক এস এ শাকিল আখতার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ক্লেইম না করার পেছনে কারণ ছিল। ১৯৮৩ সালের যে আইন, তাতে ক্লজ ছিল। এতে ক্ষতিপূরণের যে খাতগুলো নির্ধারণ ছিল তা এখন চলে না।

‘যেমন: কোনো লোক যদি দুর্ঘটনায় মারা যায়, তার সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণ ২০ হাজার টাকা। এটা এখন কোনো টাকা হলো? একটা লোক গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা গেল, আর তাকে ২০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেবে। এটা ২০২১ সালে মানায়? কেউ মারা গেলে ২০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণের জন্য কে ক্লেইম করবে? ২০ হাজার টাকা পেতে ২২ হাজার টাকা খরচ হবে।’

নতুন প্রস্তাবে কত প্রিমিয়াম, ক্ষতিপূরণ কেমন হতে পারে

পুরোনো মোটরযান বিমায় মোটরসাইকেলের ক্ষেত্রে বছরে ৩০০ টাকা প্রিমিয়াম থাকলেও তা বাড়িয়ে ৫০০ টাকা বা তার বেশি করার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।

গাড়ির ক্ষেত্রে তা প্রায় ৪ গুণ করার কথা বলা হচ্ছে। আগের প্রিমিয়াম ৫০০ টাকার মতো ছিল, যা বাড়িয়ে দুই হাজার টাকা করার কথা ভাবা হচ্ছে।

নতুন প্রস্তাবে ক্ষতিপূরণ কয়েক গুণ বাড়ানোর কথা বলা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণের পরিমাণ বিদ্যমান অঙ্কের চেয়ে প্রায় ২৫ গুণ করার বা ৫ লাখ টাকা করার কথা ভাবছে আইডিআরএ। যদিও বিমা কোম্পানিগুলো তা কিছুটা কমাতে চাচ্ছে। তা হতে পারে ৩ থেকে ৪ লাখ।

তবে মৃত্যুতে সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণসহ দুর্ঘটনায় পড়া ব্যক্তি কতটা গুরুতর আহত হয়েছেন তার ওপর ভিত্তি করে আরও চার স্তরের (স্ল্যাব) ক্ষতিপূরণের কথাও আলোচনায় রয়েছে।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, মারাত্মক ক্ষতির ক্ষেত্রে ৩ থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা, তার চেয়ে একটু কম ক্ষতি হলে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা, তার চেয়ে একটু কম হলে এক থেকে দেড় লাখ টাকা এবং অনেকটা কম আহত হলে কেউ যেন সর্বনিম্ন ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ পায়।

নতুন উদ্যোগ কত দূর

নতুন করে আবারও দুর্ঘটনায় ঝুঁকি বিমার রূপরেখা ঠিক করতে আইডিআরএ সদস্য মো. দলিল উদ্দিনকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। পরে আইডিআরএর নির্বাহী পরিচালক এস এ শাকিল আখতারকে প্রধান করে আরেকটি উপকমিটি করা হয়। ওই কমিটিকে নতুন প্রস্তাবের খসড়ার দায়িত্ব দেয়া হয়।

কমিটি এরই মধ্যে কয়েকবার বিমাসংশ্লিষ্ট পক্ষের সঙ্গে সভা করেছে। তারা কেমন ক্ষতিপূরণ হবে, প্রিমিয়াম কত হবে, কত ধরনের ক্ষতিপূরণ হবে সেসব বিষয়ে একটি প্রাথমিক প্রস্তাবও তৈরি করেছে।

এটি আরও পাঁচ-ছয় ধাপ পার হয়ে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো হবে। তবে এতে ক্ষতিপূরণের হার বর্তমানের চেয়ে প্রায় ২৫ গুণ বাড়াতে চায় আইডিআরএ। তবে এ নিয়ে বিমা কোম্পানিগুলোর সঙ্গে দর-কষাকষি চলছে। তারা এত ক্ষতিপূরণে রাজি হচ্ছে না।

দলিল উদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা দ্রুতই বিষয়টি এগিয়ে নিতে কাজ করছি। প্রস্তাব তৈরিসহ আরও খুঁটিনাটি কাজ করছে আমাদের নির্বাহী পরিচালকের নেতৃত্বে গঠিত উপকমিটি।’

আইডিআরএর নির্বাহী পরিচালক এস এম শাকিল আখতার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা মোটামুটি একটি প্রপোজাল রেডি করেছি। তা শিগগিরই আমাদের উপরের কমিটির (সদস্যের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি) কাছে পেশ করব।

‘কমিটি যদি ওকে বলে তবে আমরা সেটার বিষয়ে অংশীজনদের নিয়ে ওয়ার্কশপ করব। এতে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয়, এফআইডি (ফিন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক), আইডিআরএ এবং নন লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির সিইওরা থাকবেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘তাতে যদি কোনো সংশোধনী না লাগে তা সামারি আকারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠাব। তখন পাঁচ-ছয় মাসের মধ্যে এটা কার্যকর করা যাবে।’

বিমা কোম্পানির সঙ্গে আলোচনায় কী ফল

আইডিআরএর নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘ক্ষতিপূরণ কত দেয়া যায়, এ নিয়ে বিমা কোম্পানিগুলোর সঙ্গে তিনটি বৈঠকে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। এখনও প্রস্তাব আকারেই রয়েছে। আমার পারসোনাল অপিনিয়ন হচ্ছে, কেউ মারা গেলে ক্ষতিপূরণ ৫ লাখ টাকা হবে।

‘আহতের ক্ষেত্রে মোট তিন থেকে চারটি স্তর থাকবে। কেউ মারাত্মক আহত হলে ৩ লাখ, তার চেয়ে একটু কম হলে ২ লাখ টাকা, এর পর ১ লাখ এবং কম আহত হলে ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ পাবে।

‘তবে এতে কোম্পানিগুলোর মনে হয় একটু আপত্তি আছে। ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলো যেন ক্লেইমের টাকা শোধ করে তার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের কথা থাকবে সেখানে।’

তিনি বলেন, ‘কোনো গাড়ি যদি দুর্ঘটনা না ঘটায়, তার ক্ষেত্রে কী হতে হবে, এটা আমরা ওয়ার্কশপে আলোচনা করব। শুধু এক বছর হলে হবে না, পরপর তিন বছর যদি কোনো গাড়ি দুর্ঘটনা না ঘটায়, তাহলে তার ক্ষেত্রে কী ইনসেনটিভ দেয়া যায়। হয়তো চতুর্থ বছরে তার প্রিমিয়াম একটু কম জমা দেয়া লাগল, ১২০০ টাকা দেবে।’

প্রথম পক্ষের বিমায় আগ্রহ কম

গাড়ির প্রথম পক্ষের বিমার সুবিধাও আছে। এ ক্ষেত্রে অবশ্য ক্ষতিপূরণ যা পাওয়ার, তা গাড়ির মালিক পেয়ে থাকেন। অর্থাৎ তার গাড়ি দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হলে যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তার বিপরীতে তিনি অর্থ পাবেন। তাতে অবশ্য ক্ষতিগ্রস্ত সাধারণ মানুষের আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার সুযোগ থাকে না।

তৃতীয় পক্ষের বিমাসুবিধা বাতিলে আইডিআরের আদেশে আরও বলা হয়েছিল, কোনো মোটরযানের মালিক বা প্রতিষ্ঠান ইচ্ছা করলে তার মালিকানাধীন যেকোনো মোটরযানের জন্য জীবন ও সম্পদের বিমা করতে পারবে। মোটরযানের মালিক বা প্রতিষ্ঠানের অধীন পরিচালিত মোটরযানের জন্য যথানিয়মে বিমা করবেন। বিমাকারী ক্ষতিপূরণ পাওয়ার অধিকারী হবেন। তবে তা তেমন কার্যকর হয়নি।

আর মোটরসাইকেলের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা ও তুলনামূলক বেশি দুর্ঘটনা হয় বলে বিমা কোম্পানিগুলোও এ ক্ষেত্রে ব্যক্তির প্রথম পক্ষের বিমা করতে চায় না। প্রতিষ্ঠান হলে তারা আগ্রহ দেখায়।

বিমা কোম্পানিগুলো কী বলছে

তৃতীয় পক্ষের ঝুঁকি বিমা তুলে নেয়ায় বিরূপ প্রভাব পড়েছে বলে মনে করে বিমা খাত। তারা বলেছে, বাংলাদেশে মোটরযানের যেসব বিমা করা হতো তার প্রায় সবটাই ছিল তৃতীয় পক্ষের। এটি বাতিল করায় সাধারণ বিমা ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

সাধারণ বিমা খাতের (নন-লাইফ) আয় কমে যাবে। আবার যাত্রীর ক্ষতিপূরণের পথও বন্ধ হয়ে গেল। সরকারেরও রাজস্ব হারাতে হচ্ছে।

প্রাইম ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) বায়েজিদ মুজতবা সিদ্দিকী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ইন্স্যুরেন্স ছাড়া তো গাড়ি রাস্তায় চলা ঠিক না। কেন যে থার্ড পার্টি বন্ধ করল তাও জানি না। এখানে থার্ড পার্টি লায়্যাবিলিটি বা তৃতীয় পক্ষের যে ক্ষতি তা অনেকে জানি না।

‘এখানে ড্রাইভারের লায়্যাবিলিটি, প্যাসেঞ্জারের লায়্যাবিলিটি নিচ্ছে বিমা কোম্পানি। এটা যদি আবার চালু হয় তাহলেও সব পক্ষের জন্যই ভালো। আগে কম পয়সা প্রিমিয়াম ছিল, তার থেকে যদি বাড়তি কিছু নেয়া হয়, তাহলে ভালো হবে। এটা যারা গাড়ির মালিক তাদের জন্য ভালো হবে। প্যাসেঞ্জার যারা দুর্ঘটনায় পড়বে তাদের জন্যও ভালো হবে।’

প্রিমিয়াম বাড়লে গাড়ির মালিক ও চালকরা আরও সাবধান থাকবেন বলেও মনে করেন তিনি।

মুজতবা সিদ্দিকী আরও বলেন, এতে দুর্ঘটনা কমে আসবে।

তৃতীয় পক্ষের বিমাসুবিধা ফিরিয়ে প্রিমিয়াম ও বিমা দাবি বাড়ানোর উদ্যোগে সমর্থনে দিয়েছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক শামসুল হক।

নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘এটার মাল্টিপল বেনিফিট থাকার কারণে সারা পৃথিবীতেই ড্রাইভারকে রেসপনসিবল করার একটা ভালো টুল এটা। কোনো দুর্ঘটনায় ইন্স্যুরেন্স ক্লেইমের জন্য পুলিশকে ইনভলভ করতে হয়। এটা ডকুমেন্ট হয়ে যায়।

‘আবার এতে ড্রাইভারের নামে ক্লেইম থাকলে পরের বার প্রিমিয়াম বেড়ে যায়। ফলে ড্রাইভারের অবহেলাজনিত যেকোনো ধরনের দুর্ঘটনা কমিয়ে আনে। ড্রাইভার চেষ্টা করে তার গাড়িতে যেন কোনো দাগ না লাগে। তাই এ ধরনের বিমা আবারও ফিরিয়ে আনতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘প্রিমিয়াম বাড়ানোর চেয়েও এটা ফাংশনাল (কার্যকর) করা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এটা যেন তামাশায় পরিণত না হয়।

‘ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি এটা দিতেও চায় না, হ্যাসেল করে, দীর্ঘদিন ঘোরায়। তাই এটাকে কার্যকর করতে হবে। বিশেষ করে ছোট-বড় প্রতিটি ঘটনায় পুলিশকে ইনভলভ করতেই হবে।’

ঢাকা/এনইউ

আরও পড়ুন:

ট্যাগঃ

শেয়ার করুন

গাড়ির তৃতীয় পক্ষের বিমা: নতুন বিধান ‘ছয় মাসে’

আপডেট: ০৮:২১:৪৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ অগাস্ট ২০২১

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: তৃতীয় পক্ষের বিমা ফিরিয়ে এনে গাড়ির মালিকের প্রিমিয়াম ও বিমা দাবি ব্যাপকভাবে বাড়ানোর যে পরিকল্পনা করা হচ্ছে, তা কিছুটা কমাতে চাইছে কোম্পানিগুলো।

প্রিমিয়াম দুই থেকে চার গুণ বাড়ানোর ক্ষেত্রে আপত্তি না থাকলেও বিমা কোম্পানিগুলো ক্ষতিপূরণ ৫ লাখ টাকা করার পরিকল্পনার বিরোধিতা করছে।

তারা বলছে, সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ মানুষ হতাহত হয়। তাদের এ পরিমাণ ক্ষতিপূরণ দিতে গেলে যে হারে প্রিমিয়াম নির্ধারণ করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে, তা সম্ভব নয়।

সড়ক দুর্ঘটনায় বছরে যে পাঁচ থেকে ছয় হাজার মানুষের প্রাণহানি ও এর চেয়ে বেশিসংখ্যক মানুষের আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে, তাতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর আর্থিক অবস্থার ব্যাপক অবনতি হয়। এ ক্ষেত্রে বিমা হতে পারত আর্থিক রক্ষাকবচ।

গাড়ির মালিকের তৃতীয় পক্ষের বিমা সুবিধার আওতায় থাকতে পারত এ মানুষগুলো। কিন্তু সেই সুবিধা দেশে ছিল নামকাওয়াস্তে। এর প্রিমিয়ামও যেমন ছিল ন্যূনতম, তেমনি বিমা দাবির পরিমাণও এতটাই অনুল্লেখযোগ্য যে, ক্ষতিগ্রস্তরা তা দাবিও করত না।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

অকার্যকর বিধায় সেই বিমা ব্যবস্থা বাতিলও করা হয়েছে। তবে তা আবার নতুন করে ফিরিয়ে এনে ‍যুগোপযোগী করার যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, তাতে সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে আর্থিক নিরাপত্তা দিতে পারে।

এবার আগের চেয়েও বেশি প্রিমিয়াম, বেশি ক্ষতিপূরণ ও শক্ত আইনি কাঠামোর সঙ্গে সঙ্গে তা কার্যকরও করতে চাইছে সরকার। এরই মধ্যে নতুন থার্ড পার্টি ইন্স্যুরেন্সের প্রাথমিক রূপরেখাও তৈরি করেছে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)।

১৯৮৩ সালের মোটরযানসংক্রান্ত পুরোনো আইনে তৃতীয় পক্ষের ঝুঁকি বিমা করা বাধ্যতামূলক এবং এর অধীনে দণ্ডের বিধানও ছিল। তবে ২০১৮ সালের নতুন সড়ক পরিবহন আইনে তা বাতিল করা হয়, যা ২০১৯ সালের নভেম্বরে কার্যকর হয়।

গত ডিসেম্বরে বিমার বিধান বাতিল করে বিজ্ঞপ্তি দেয় আইডিআরএ। তবে বছর না পেরোতেই আবারও মোটরযান বিমায় ফিরছে সংস্থাটি।

আইডিআরএ বলছে, নতুন সড়ক পরিবহন আইনের সঙ্গে বিমা আইনের সমন্বয়হীনতা ছিল। এটি দূর করতে তৃতীয় পক্ষের ঝুঁকি বিমা বাতিল করা হয়। এখন গুরুত্ব অনুধাবন করে আরও কার্যকরভাবে তা ফেরানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আগের চেয়ে বাড়ছে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ, বাড়ছে প্রিমিয়ামের হারও।

তৃতীয় পক্ষের বিমা কী

এটি দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তকে অর্থিক সুবিধা দিতে বিমা পলিসি। এখানে প্রথম পক্ষ গাড়ির মালিক। তিনি বছরে একটা নির্দিষ্ট হারে প্রিমিয়াম জমা দেবেন কোনো বিমা কোম্পানির কাছে।

বিমা কোম্পানি দ্বিতীয় পক্ষ, যারা প্রিমিয়াম নেয়ার বিপরীতে গাড়ি দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ দেবে। আর যিনি মোটরযান দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, তিনি তৃতীয় পক্ষ, পাবেন বিমার ক্ষতিপূরণ।

কেন কার্যকর হয়নি

আগে মোটরযানের তৃতীয় পক্ষের ঝুঁকি বিমায় বার্ষিক প্রিমিয়ামের পরিমাণ ছিল একেবারেই কম। দুর্ঘটনায় কোনো ব্যক্তি নিহত হলেও ক্ষতিপূরণের পরিমাণ ছিল সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা। তা ছাড়া বিমার টাকা পেতেও ছিল নানা ভোগান্তি।

কম প্রিমিয়ামের কারণে গাড়ির মালিকরাও তেমন একটা গুরুত্ব দিতেন না। তা ছাড়া ক্ষতিপূরণ কম হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্তরাও বিমা দাবি করত না।

নতুন করে তৃতীয় পক্ষের বিমা ফেরানো নিয়ে আইডিআরএর নির্বাহী পরিচালক এস এ শাকিল আখতার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ক্লেইম না করার পেছনে কারণ ছিল। ১৯৮৩ সালের যে আইন, তাতে ক্লজ ছিল। এতে ক্ষতিপূরণের যে খাতগুলো নির্ধারণ ছিল তা এখন চলে না।

‘যেমন: কোনো লোক যদি দুর্ঘটনায় মারা যায়, তার সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণ ২০ হাজার টাকা। এটা এখন কোনো টাকা হলো? একটা লোক গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা গেল, আর তাকে ২০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেবে। এটা ২০২১ সালে মানায়? কেউ মারা গেলে ২০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণের জন্য কে ক্লেইম করবে? ২০ হাজার টাকা পেতে ২২ হাজার টাকা খরচ হবে।’

নতুন প্রস্তাবে কত প্রিমিয়াম, ক্ষতিপূরণ কেমন হতে পারে

পুরোনো মোটরযান বিমায় মোটরসাইকেলের ক্ষেত্রে বছরে ৩০০ টাকা প্রিমিয়াম থাকলেও তা বাড়িয়ে ৫০০ টাকা বা তার বেশি করার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।

গাড়ির ক্ষেত্রে তা প্রায় ৪ গুণ করার কথা বলা হচ্ছে। আগের প্রিমিয়াম ৫০০ টাকার মতো ছিল, যা বাড়িয়ে দুই হাজার টাকা করার কথা ভাবা হচ্ছে।

নতুন প্রস্তাবে ক্ষতিপূরণ কয়েক গুণ বাড়ানোর কথা বলা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণের পরিমাণ বিদ্যমান অঙ্কের চেয়ে প্রায় ২৫ গুণ করার বা ৫ লাখ টাকা করার কথা ভাবছে আইডিআরএ। যদিও বিমা কোম্পানিগুলো তা কিছুটা কমাতে চাচ্ছে। তা হতে পারে ৩ থেকে ৪ লাখ।

তবে মৃত্যুতে সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণসহ দুর্ঘটনায় পড়া ব্যক্তি কতটা গুরুতর আহত হয়েছেন তার ওপর ভিত্তি করে আরও চার স্তরের (স্ল্যাব) ক্ষতিপূরণের কথাও আলোচনায় রয়েছে।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, মারাত্মক ক্ষতির ক্ষেত্রে ৩ থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা, তার চেয়ে একটু কম ক্ষতি হলে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা, তার চেয়ে একটু কম হলে এক থেকে দেড় লাখ টাকা এবং অনেকটা কম আহত হলে কেউ যেন সর্বনিম্ন ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ পায়।

নতুন উদ্যোগ কত দূর

নতুন করে আবারও দুর্ঘটনায় ঝুঁকি বিমার রূপরেখা ঠিক করতে আইডিআরএ সদস্য মো. দলিল উদ্দিনকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। পরে আইডিআরএর নির্বাহী পরিচালক এস এ শাকিল আখতারকে প্রধান করে আরেকটি উপকমিটি করা হয়। ওই কমিটিকে নতুন প্রস্তাবের খসড়ার দায়িত্ব দেয়া হয়।

কমিটি এরই মধ্যে কয়েকবার বিমাসংশ্লিষ্ট পক্ষের সঙ্গে সভা করেছে। তারা কেমন ক্ষতিপূরণ হবে, প্রিমিয়াম কত হবে, কত ধরনের ক্ষতিপূরণ হবে সেসব বিষয়ে একটি প্রাথমিক প্রস্তাবও তৈরি করেছে।

এটি আরও পাঁচ-ছয় ধাপ পার হয়ে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো হবে। তবে এতে ক্ষতিপূরণের হার বর্তমানের চেয়ে প্রায় ২৫ গুণ বাড়াতে চায় আইডিআরএ। তবে এ নিয়ে বিমা কোম্পানিগুলোর সঙ্গে দর-কষাকষি চলছে। তারা এত ক্ষতিপূরণে রাজি হচ্ছে না।

দলিল উদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা দ্রুতই বিষয়টি এগিয়ে নিতে কাজ করছি। প্রস্তাব তৈরিসহ আরও খুঁটিনাটি কাজ করছে আমাদের নির্বাহী পরিচালকের নেতৃত্বে গঠিত উপকমিটি।’

আইডিআরএর নির্বাহী পরিচালক এস এম শাকিল আখতার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা মোটামুটি একটি প্রপোজাল রেডি করেছি। তা শিগগিরই আমাদের উপরের কমিটির (সদস্যের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি) কাছে পেশ করব।

‘কমিটি যদি ওকে বলে তবে আমরা সেটার বিষয়ে অংশীজনদের নিয়ে ওয়ার্কশপ করব। এতে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয়, এফআইডি (ফিন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক), আইডিআরএ এবং নন লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির সিইওরা থাকবেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘তাতে যদি কোনো সংশোধনী না লাগে তা সামারি আকারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠাব। তখন পাঁচ-ছয় মাসের মধ্যে এটা কার্যকর করা যাবে।’

বিমা কোম্পানির সঙ্গে আলোচনায় কী ফল

আইডিআরএর নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘ক্ষতিপূরণ কত দেয়া যায়, এ নিয়ে বিমা কোম্পানিগুলোর সঙ্গে তিনটি বৈঠকে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। এখনও প্রস্তাব আকারেই রয়েছে। আমার পারসোনাল অপিনিয়ন হচ্ছে, কেউ মারা গেলে ক্ষতিপূরণ ৫ লাখ টাকা হবে।

‘আহতের ক্ষেত্রে মোট তিন থেকে চারটি স্তর থাকবে। কেউ মারাত্মক আহত হলে ৩ লাখ, তার চেয়ে একটু কম হলে ২ লাখ টাকা, এর পর ১ লাখ এবং কম আহত হলে ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ পাবে।

‘তবে এতে কোম্পানিগুলোর মনে হয় একটু আপত্তি আছে। ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলো যেন ক্লেইমের টাকা শোধ করে তার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের কথা থাকবে সেখানে।’

তিনি বলেন, ‘কোনো গাড়ি যদি দুর্ঘটনা না ঘটায়, তার ক্ষেত্রে কী হতে হবে, এটা আমরা ওয়ার্কশপে আলোচনা করব। শুধু এক বছর হলে হবে না, পরপর তিন বছর যদি কোনো গাড়ি দুর্ঘটনা না ঘটায়, তাহলে তার ক্ষেত্রে কী ইনসেনটিভ দেয়া যায়। হয়তো চতুর্থ বছরে তার প্রিমিয়াম একটু কম জমা দেয়া লাগল, ১২০০ টাকা দেবে।’

প্রথম পক্ষের বিমায় আগ্রহ কম

গাড়ির প্রথম পক্ষের বিমার সুবিধাও আছে। এ ক্ষেত্রে অবশ্য ক্ষতিপূরণ যা পাওয়ার, তা গাড়ির মালিক পেয়ে থাকেন। অর্থাৎ তার গাড়ি দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হলে যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তার বিপরীতে তিনি অর্থ পাবেন। তাতে অবশ্য ক্ষতিগ্রস্ত সাধারণ মানুষের আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার সুযোগ থাকে না।

তৃতীয় পক্ষের বিমাসুবিধা বাতিলে আইডিআরের আদেশে আরও বলা হয়েছিল, কোনো মোটরযানের মালিক বা প্রতিষ্ঠান ইচ্ছা করলে তার মালিকানাধীন যেকোনো মোটরযানের জন্য জীবন ও সম্পদের বিমা করতে পারবে। মোটরযানের মালিক বা প্রতিষ্ঠানের অধীন পরিচালিত মোটরযানের জন্য যথানিয়মে বিমা করবেন। বিমাকারী ক্ষতিপূরণ পাওয়ার অধিকারী হবেন। তবে তা তেমন কার্যকর হয়নি।

আর মোটরসাইকেলের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা ও তুলনামূলক বেশি দুর্ঘটনা হয় বলে বিমা কোম্পানিগুলোও এ ক্ষেত্রে ব্যক্তির প্রথম পক্ষের বিমা করতে চায় না। প্রতিষ্ঠান হলে তারা আগ্রহ দেখায়।

বিমা কোম্পানিগুলো কী বলছে

তৃতীয় পক্ষের ঝুঁকি বিমা তুলে নেয়ায় বিরূপ প্রভাব পড়েছে বলে মনে করে বিমা খাত। তারা বলেছে, বাংলাদেশে মোটরযানের যেসব বিমা করা হতো তার প্রায় সবটাই ছিল তৃতীয় পক্ষের। এটি বাতিল করায় সাধারণ বিমা ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

সাধারণ বিমা খাতের (নন-লাইফ) আয় কমে যাবে। আবার যাত্রীর ক্ষতিপূরণের পথও বন্ধ হয়ে গেল। সরকারেরও রাজস্ব হারাতে হচ্ছে।

প্রাইম ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) বায়েজিদ মুজতবা সিদ্দিকী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ইন্স্যুরেন্স ছাড়া তো গাড়ি রাস্তায় চলা ঠিক না। কেন যে থার্ড পার্টি বন্ধ করল তাও জানি না। এখানে থার্ড পার্টি লায়্যাবিলিটি বা তৃতীয় পক্ষের যে ক্ষতি তা অনেকে জানি না।

‘এখানে ড্রাইভারের লায়্যাবিলিটি, প্যাসেঞ্জারের লায়্যাবিলিটি নিচ্ছে বিমা কোম্পানি। এটা যদি আবার চালু হয় তাহলেও সব পক্ষের জন্যই ভালো। আগে কম পয়সা প্রিমিয়াম ছিল, তার থেকে যদি বাড়তি কিছু নেয়া হয়, তাহলে ভালো হবে। এটা যারা গাড়ির মালিক তাদের জন্য ভালো হবে। প্যাসেঞ্জার যারা দুর্ঘটনায় পড়বে তাদের জন্যও ভালো হবে।’

প্রিমিয়াম বাড়লে গাড়ির মালিক ও চালকরা আরও সাবধান থাকবেন বলেও মনে করেন তিনি।

মুজতবা সিদ্দিকী আরও বলেন, এতে দুর্ঘটনা কমে আসবে।

তৃতীয় পক্ষের বিমাসুবিধা ফিরিয়ে প্রিমিয়াম ও বিমা দাবি বাড়ানোর উদ্যোগে সমর্থনে দিয়েছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক শামসুল হক।

নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘এটার মাল্টিপল বেনিফিট থাকার কারণে সারা পৃথিবীতেই ড্রাইভারকে রেসপনসিবল করার একটা ভালো টুল এটা। কোনো দুর্ঘটনায় ইন্স্যুরেন্স ক্লেইমের জন্য পুলিশকে ইনভলভ করতে হয়। এটা ডকুমেন্ট হয়ে যায়।

‘আবার এতে ড্রাইভারের নামে ক্লেইম থাকলে পরের বার প্রিমিয়াম বেড়ে যায়। ফলে ড্রাইভারের অবহেলাজনিত যেকোনো ধরনের দুর্ঘটনা কমিয়ে আনে। ড্রাইভার চেষ্টা করে তার গাড়িতে যেন কোনো দাগ না লাগে। তাই এ ধরনের বিমা আবারও ফিরিয়ে আনতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘প্রিমিয়াম বাড়ানোর চেয়েও এটা ফাংশনাল (কার্যকর) করা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এটা যেন তামাশায় পরিণত না হয়।

‘ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি এটা দিতেও চায় না, হ্যাসেল করে, দীর্ঘদিন ঘোরায়। তাই এটাকে কার্যকর করতে হবে। বিশেষ করে ছোট-বড় প্রতিটি ঘটনায় পুলিশকে ইনভলভ করতেই হবে।’

ঢাকা/এনইউ

আরও পড়ুন: