০২:৪৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৪ মে ২০২৪

চাইলেই স্টক ডিভিডেন্ড দিতে পারবে না কোন কোম্পানি!

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ১২:১৩:১৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ জুলাই ২০২১
  • / ৪৫১০ বার দেখা হয়েছে

ফাইল ফটো

এইচ কে জনি: এখন থেকে চাইলেই স্টক ডিভিডেন্ড দিতে পারবে না পুঁজিবাজারে কোম্পানিগুলো। এছাড়াও তালিকাভুক্ত হওয়ার আগে অন্তত দুই বছর ক্যাশ ডিভিডেন্ড বিতরণ করতে হবে। সবমিলিয়ে ডিভিডেন্ডের নামে কোম্পানিগুলোর স্বেচ্ছাচারিতার লাগাম টেনে ধরেছে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। মঙ্গলবার বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রেজাউল করিম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, অতিসম্প্রতি আইপিওতে অনুমোদন পাওয়া বিদ্যুৎ খাতের কোম্পানি বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার আগামী ৫ বছর স্টক ডিভিডেন্ড দিতে পারবে না। । গত ৯ মার্চ এ-সংক্রান্ত খসড়া নীতিমালা প্রকাশ করে বিএসইসি। বুধবার সেটিই চূড়ান্ত করে সংস্থাটি।

রেজাউল করিম বলেন, ‘কেবল তালিকাভুক্ত হওয়ার আগে নয়, তালিকাভুক্ত হওয়ার পরেও কোন কোম্পানি কত বছর স্টক ডিভিডেন্ড দিতে পারবে না, সেটিও বলে দেয়া হচ্ছে। আর আমরা এটা মনিটরও করব।’

তবে তালিকাভুক্তির পর ব্যাংকের বোনাস শেয়ার ইস্যুতে কোনো বাধা থাকবে না। কারণ, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিশোধিত মূলধন বেশি থাকতে হয় বলেও তিনি জানান।

এর আগে বিএসইসি ই-জেনারেশন স্টক ডিভিডেন্ড দিতে পারবে না বলে আলাদা এক আদেশে জানিয়েছিল। এখন সেটি সামগ্রিক হয়ে গেল।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়ে ডিভিডেন্ড হিসেবে স্টক ডিভিডেন্ড দিয়ে পরিশোধিত মূলধন বাড়ালেও এমন বহু কোম্পানি আছে যারা পুনর্বিনিয়োগ করে কোম্পানির স্বাস্থ্য বাড়াতে পারে না। বরং গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে কোনো বছরে শতভাগ বা তার চেয়ে বেশি স্টক ডিভিডেন্ড ঘোষণাকে কেন্দ্র করে শেয়ারের দর আকাশচুম্বি হয়ে যায়। কিন্তু পরে বিনিয়োগকারীরা ঠকে থাকে।

স্টক ডিভিডেন্ড দেয়ার বিপরীতে কোম্পানিগুলো যে পরিমাণ টাকা নিজের কাছে রেখে দিচ্ছে তা দিয়ে যে কোনো উন্নয়ন হচ্ছে তা বছর শেষে কোম্পানিগুলোর শেয়ার প্রতি আয় ও মুনাফা দেখেই অনুমেয়।

আবার দিলে বিনিয়োগকারীদেরও খুব একটা লাভ হয় এমন না। কারণ, যে পরিমাণ শেয়ার যোগ হয়, দামও তার সঙ্গে সমন্বয় হয়।

অর্থাৎ ১০০ টাকা দামের কোনো কোম্পানি যদি ১০ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড দেয়, তাহলে রেকর্ড ডেটের পর সে কোম্পানির শেয়ারের দামও ১০ শতাংশ কমবে। কিন্তু ক্যাশ দিলে শেয়ার দরে তা সমন্বয় হয় না।

সদ্য যেসব কোম্পানি অর্থবছর শেষে স্টক ডিভিডেন্ড ঘোষণা করছে তার কারণও এখন ব্যাখ্যা করতে হচ্ছে ডিএসই ওয়েবসাইটে।

এই বাস্তবতায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও নগদ লভ্যাংশ নিয়ে আগ্রহ যে বাড়তে শুরু করেছে, সেটাও স্পষ্ট। পুঁজিবাজারকেন্দ্রীক বিভিন্ন ফেসবুক পেজে নানা পোস্টেও নগদ লভ্যাংশের পক্ষে লিখে থাকেন তারা।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ বলেন, ‘একটি নতুন কোম্পানির পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েই কেন বোনাস শেয়ার ইস্যু করতে হবে? আইপিও থেকে কোম্পানি যে টাকা পেয়েছে সেটি তো তার কাছেই আছে। সেগুলো দিয়ে কোম্পানির উন্নয়ন করুক। ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করুক।’
অকারণে বোনাস শেয়ার ইস্যুর বিরোধিতা করে তিনি বলেন, ‘এটা কোম্পানির ভাঁওতাভাজি। আগে এসব কিছুর কোনো মনিটরিং ছিল না। ফলে বছর বছর বোনাস শেয়ার ইস্যু করে পরিচালকরা শেয়ার সংখ্যা বাড়িয়েছে। আর বেশি দামে বিক্রি করেছে।’

বোনাস শেয়ার দিলে যদি কোম্পানির ভালো হতো তাহলে বহুজাতিক কোম্পানি কেন ক্যাশ ডিভিডেন্ড দেয়-সে প্রশ্নও তোলেন তিনি। বলেন, ‘বিএসইসিকে আরও কঠোর হতে হবে। স্টক ডিভিডেন্ড কেন দেবে, কী কাজে ব্যবহার কববে তা যাচাই বাছাই করতে হবে। আর স্টক ডিভিডেন্ড দেয়ার পর তা ব্যবহৃত হয়েছে কী না সেটিও মনিটরিং করতে হবে।’

শেয়ার করুন

x
English Version

চাইলেই স্টক ডিভিডেন্ড দিতে পারবে না কোন কোম্পানি!

আপডেট: ১২:১৩:১৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ জুলাই ২০২১

এইচ কে জনি: এখন থেকে চাইলেই স্টক ডিভিডেন্ড দিতে পারবে না পুঁজিবাজারে কোম্পানিগুলো। এছাড়াও তালিকাভুক্ত হওয়ার আগে অন্তত দুই বছর ক্যাশ ডিভিডেন্ড বিতরণ করতে হবে। সবমিলিয়ে ডিভিডেন্ডের নামে কোম্পানিগুলোর স্বেচ্ছাচারিতার লাগাম টেনে ধরেছে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। মঙ্গলবার বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রেজাউল করিম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, অতিসম্প্রতি আইপিওতে অনুমোদন পাওয়া বিদ্যুৎ খাতের কোম্পানি বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার আগামী ৫ বছর স্টক ডিভিডেন্ড দিতে পারবে না। । গত ৯ মার্চ এ-সংক্রান্ত খসড়া নীতিমালা প্রকাশ করে বিএসইসি। বুধবার সেটিই চূড়ান্ত করে সংস্থাটি।

রেজাউল করিম বলেন, ‘কেবল তালিকাভুক্ত হওয়ার আগে নয়, তালিকাভুক্ত হওয়ার পরেও কোন কোম্পানি কত বছর স্টক ডিভিডেন্ড দিতে পারবে না, সেটিও বলে দেয়া হচ্ছে। আর আমরা এটা মনিটরও করব।’

তবে তালিকাভুক্তির পর ব্যাংকের বোনাস শেয়ার ইস্যুতে কোনো বাধা থাকবে না। কারণ, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিশোধিত মূলধন বেশি থাকতে হয় বলেও তিনি জানান।

এর আগে বিএসইসি ই-জেনারেশন স্টক ডিভিডেন্ড দিতে পারবে না বলে আলাদা এক আদেশে জানিয়েছিল। এখন সেটি সামগ্রিক হয়ে গেল।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়ে ডিভিডেন্ড হিসেবে স্টক ডিভিডেন্ড দিয়ে পরিশোধিত মূলধন বাড়ালেও এমন বহু কোম্পানি আছে যারা পুনর্বিনিয়োগ করে কোম্পানির স্বাস্থ্য বাড়াতে পারে না। বরং গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে কোনো বছরে শতভাগ বা তার চেয়ে বেশি স্টক ডিভিডেন্ড ঘোষণাকে কেন্দ্র করে শেয়ারের দর আকাশচুম্বি হয়ে যায়। কিন্তু পরে বিনিয়োগকারীরা ঠকে থাকে।

স্টক ডিভিডেন্ড দেয়ার বিপরীতে কোম্পানিগুলো যে পরিমাণ টাকা নিজের কাছে রেখে দিচ্ছে তা দিয়ে যে কোনো উন্নয়ন হচ্ছে তা বছর শেষে কোম্পানিগুলোর শেয়ার প্রতি আয় ও মুনাফা দেখেই অনুমেয়।

আবার দিলে বিনিয়োগকারীদেরও খুব একটা লাভ হয় এমন না। কারণ, যে পরিমাণ শেয়ার যোগ হয়, দামও তার সঙ্গে সমন্বয় হয়।

অর্থাৎ ১০০ টাকা দামের কোনো কোম্পানি যদি ১০ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড দেয়, তাহলে রেকর্ড ডেটের পর সে কোম্পানির শেয়ারের দামও ১০ শতাংশ কমবে। কিন্তু ক্যাশ দিলে শেয়ার দরে তা সমন্বয় হয় না।

সদ্য যেসব কোম্পানি অর্থবছর শেষে স্টক ডিভিডেন্ড ঘোষণা করছে তার কারণও এখন ব্যাখ্যা করতে হচ্ছে ডিএসই ওয়েবসাইটে।

এই বাস্তবতায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও নগদ লভ্যাংশ নিয়ে আগ্রহ যে বাড়তে শুরু করেছে, সেটাও স্পষ্ট। পুঁজিবাজারকেন্দ্রীক বিভিন্ন ফেসবুক পেজে নানা পোস্টেও নগদ লভ্যাংশের পক্ষে লিখে থাকেন তারা।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ বলেন, ‘একটি নতুন কোম্পানির পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েই কেন বোনাস শেয়ার ইস্যু করতে হবে? আইপিও থেকে কোম্পানি যে টাকা পেয়েছে সেটি তো তার কাছেই আছে। সেগুলো দিয়ে কোম্পানির উন্নয়ন করুক। ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করুক।’
অকারণে বোনাস শেয়ার ইস্যুর বিরোধিতা করে তিনি বলেন, ‘এটা কোম্পানির ভাঁওতাভাজি। আগে এসব কিছুর কোনো মনিটরিং ছিল না। ফলে বছর বছর বোনাস শেয়ার ইস্যু করে পরিচালকরা শেয়ার সংখ্যা বাড়িয়েছে। আর বেশি দামে বিক্রি করেছে।’

বোনাস শেয়ার দিলে যদি কোম্পানির ভালো হতো তাহলে বহুজাতিক কোম্পানি কেন ক্যাশ ডিভিডেন্ড দেয়-সে প্রশ্নও তোলেন তিনি। বলেন, ‘বিএসইসিকে আরও কঠোর হতে হবে। স্টক ডিভিডেন্ড কেন দেবে, কী কাজে ব্যবহার কববে তা যাচাই বাছাই করতে হবে। আর স্টক ডিভিডেন্ড দেয়ার পর তা ব্যবহৃত হয়েছে কী না সেটিও মনিটরিং করতে হবে।’