০৬:২০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

চার নেতাকে হত্যা জিয়া-মোস্তাকচক্রের আরেকটি কালো অধ্যায় : ড. কামালউদ্দীন আহমেদ

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০৬:০২:৩৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ নভেম্বর ২০২২
  • / ৪৩৫৪ বার দেখা হয়েছে

৭৫ নভেম্বরের ১,২,৩ এই তিনটি দিন মনে পড়ে গেলেই সেই অন্ধকারাচ্ছন্ন সময়গুলির স্মৃতি ভেসে ওঠে। বঙ্গবন্ধুকে মিগ- ২১ বিমানগুলো দেয়া হয়েছিল দেশের আকাশসীমা পাহারা দেয়ার জন্য। এই মিগগুলো ৭১ এর ডিসেম্বরের ঝাকে ঝাকে যেভাবে তেজগাঁওয়ে বোমা বর্ষণ করতো, তাতে এই বিশ্বাস জন্মেছিল যে বাংলাদেশ স্বাধীন হতে আর বেশিদিন লাগবে না।

৭৪ এর বিজয় দিবসে মানিক মিয়া এভিনিউতে কুচকাওয়াজে মিগ দেখে বঙ্গবন্ধু সে হাসিমাখা মুখটি এখনো মনে আছে। বিমান বাহিনীর মিগ ছিল শত্রুমুক্ত আকাশের অতন্দ্র প্রহরী। ৭৫ এর আগস্ট এর কালো রাতের পর এই মিগ বিমান হয়ে গেল আতঙ্কের বস্তু। হঠাৎ করে দিনে রাতে মিগ বিমানের উড্ডয়ন ছিল শত্রুর আগমনের মতো।

৭৫ এর নভেম্বরে ১,২,৩,৪,৫,৬,৭ তারিখের মিগগুলি বাংলাদেশের মনে হয়নি। ঢাকা শহর নীরব, নিথর,ভীতিকর। সেই ৭১ এর ডিসেম্বরের মত, তখনতো রেডিও-ই ছিল ভরসা, সরকার কবিরুদ্দীনের কন্ঠ, মাঝে মধ্যে ঘোষণা কে যে দেশ পরিচালনা করছিল বোঝা যাচ্ছিল না।

৭৫ এর আগস্টে রেডিওর ঘোষকরা কি অবস্থায় ছিলো তাও জানার আগ্রহ ছিল। নিশ্চয়ই বন্দুকের নলের আওতায় তারা ছিলেন। অনেক ঘোষণা ভয়েই দিতে হয়েছে। তখন বাংলাদেশ ছিল ক্যু-কাউন্টার ক্যু এর দেশ। সবাই ছিল অন্ধকারে। বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন পরশক্তির দালালরা সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করেছে। এর মধ্যে যে জিয়া ও মোস্তাকচক্র জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করে ফেলেছে।

তার কোনোটাই আমরা কেউই জানতে পারিনি। বঙ্গববন্ধু ও তাঁর পরিবার এবং জাতীয় চার নেতাকে হত্যাকারীদের যে নিরাপদে দেশ ত্যাগ করার সুযেগ করে দেয়া হয়েছে, সেটাও ছিল আমাদের অজানা।

আমার বাবা খুব ভোরে আরমানিটোলা মাঠে হাঁটতে যেতেন। ৪ তারিখেও গিয়েছিলেন। বাসায় এসে সেই হত্যাকান্ডের একটি ভয়াবহ বর্ননা দিলেন। মাঠের উত্তরদিকে একটি বাড়িতে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের মৃতদেহ রাখা হয়েছিল। কিভাবে যেন জানলেন সেখানে তাকে রাখা হয়েছে। তিনি গিয়ে দেখলেন তাকে একটি খাটে রাখা হয়েছে, কাপড় দিয়ে ঢাকা। পেটটা নাকি অনেক ফুলে ছিল।

এই নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের ভেতর দিয়েই বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় আদর্শের প্রকৃত বিকৃতি শুরু। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর জাতীয় চার নেতার একজনকেও জীবিত রাখা সমিচিন মনে করেনি জিয়া, মোস্তাক চক্র এবং তাদের অনুসারীরা। প্রকৃত হত্যার রহস্য জানা যায়নি।

খালেদ মোশারফ সেনাবাহিনীর প্রধান হওয়ার পর যখন ৩২ নম্বর পর্যন্ত একটি মিছিল গিয়েছিল তখন আশাবাদী ছিলাম হয়তো বা জিয়া-মোশতাকচক্রের অবসান হয়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর সেক্টর কমান্ডার খালেদ মুশারফ যদি সেদিন সেনাবাহিনীর চেইন অফ কমান্ড ফিরিয়ে আনা এবং জেলখানায় বন্দি জাতীয় চার নেতাকে মুক্ত করার পদক্ষেপ নাও নিতেন তাহলেও হত্যা করা হতো। জেলখানার ভেতরে না হোক বাহিরে হলেও আমাদের অবশিষ্ট এই জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হতো।

বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যাকে এখনও হত্যা করার প্রচেষ্টা থেমে নেই। ২০০৪ সালে আজকের প্রধানমন্ত্রী অলৌকিকভাবে বেঁচে গিয়েছেন। ৭৫ হত্যাকারীরা এখনো ভিন্নরূপে সক্রিয়। এখনো বলা হয় ৭৫ এর হাতিয়ার গর্জে ওঠুক আরেকবার। ধিক্কার ঐ সমস্ত নেতাদের প্রতি যারা এখনো স্বপ্ন দেখে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর সকল আদর্শকে ছুড়ে ফেলে দেওয়ার। আমরা সৌভাগ্যবান যে জাতির পিতার কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আছেন। এই নেতৃত্বই আমাদের নিয়ে গেছে সম্মানের আসনে। এই নেতৃত্বেই আর পথ হারাবে না বাংলাদেশ।

লেখক: অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমেদ
কোষাধ্যক্ষ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

শেয়ার করুন

x
English Version

চার নেতাকে হত্যা জিয়া-মোস্তাকচক্রের আরেকটি কালো অধ্যায় : ড. কামালউদ্দীন আহমেদ

আপডেট: ০৬:০২:৩৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ নভেম্বর ২০২২

৭৫ নভেম্বরের ১,২,৩ এই তিনটি দিন মনে পড়ে গেলেই সেই অন্ধকারাচ্ছন্ন সময়গুলির স্মৃতি ভেসে ওঠে। বঙ্গবন্ধুকে মিগ- ২১ বিমানগুলো দেয়া হয়েছিল দেশের আকাশসীমা পাহারা দেয়ার জন্য। এই মিগগুলো ৭১ এর ডিসেম্বরের ঝাকে ঝাকে যেভাবে তেজগাঁওয়ে বোমা বর্ষণ করতো, তাতে এই বিশ্বাস জন্মেছিল যে বাংলাদেশ স্বাধীন হতে আর বেশিদিন লাগবে না।

৭৪ এর বিজয় দিবসে মানিক মিয়া এভিনিউতে কুচকাওয়াজে মিগ দেখে বঙ্গবন্ধু সে হাসিমাখা মুখটি এখনো মনে আছে। বিমান বাহিনীর মিগ ছিল শত্রুমুক্ত আকাশের অতন্দ্র প্রহরী। ৭৫ এর আগস্ট এর কালো রাতের পর এই মিগ বিমান হয়ে গেল আতঙ্কের বস্তু। হঠাৎ করে দিনে রাতে মিগ বিমানের উড্ডয়ন ছিল শত্রুর আগমনের মতো।

৭৫ এর নভেম্বরে ১,২,৩,৪,৫,৬,৭ তারিখের মিগগুলি বাংলাদেশের মনে হয়নি। ঢাকা শহর নীরব, নিথর,ভীতিকর। সেই ৭১ এর ডিসেম্বরের মত, তখনতো রেডিও-ই ছিল ভরসা, সরকার কবিরুদ্দীনের কন্ঠ, মাঝে মধ্যে ঘোষণা কে যে দেশ পরিচালনা করছিল বোঝা যাচ্ছিল না।

৭৫ এর আগস্টে রেডিওর ঘোষকরা কি অবস্থায় ছিলো তাও জানার আগ্রহ ছিল। নিশ্চয়ই বন্দুকের নলের আওতায় তারা ছিলেন। অনেক ঘোষণা ভয়েই দিতে হয়েছে। তখন বাংলাদেশ ছিল ক্যু-কাউন্টার ক্যু এর দেশ। সবাই ছিল অন্ধকারে। বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন পরশক্তির দালালরা সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করেছে। এর মধ্যে যে জিয়া ও মোস্তাকচক্র জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করে ফেলেছে।

তার কোনোটাই আমরা কেউই জানতে পারিনি। বঙ্গববন্ধু ও তাঁর পরিবার এবং জাতীয় চার নেতাকে হত্যাকারীদের যে নিরাপদে দেশ ত্যাগ করার সুযেগ করে দেয়া হয়েছে, সেটাও ছিল আমাদের অজানা।

আমার বাবা খুব ভোরে আরমানিটোলা মাঠে হাঁটতে যেতেন। ৪ তারিখেও গিয়েছিলেন। বাসায় এসে সেই হত্যাকান্ডের একটি ভয়াবহ বর্ননা দিলেন। মাঠের উত্তরদিকে একটি বাড়িতে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের মৃতদেহ রাখা হয়েছিল। কিভাবে যেন জানলেন সেখানে তাকে রাখা হয়েছে। তিনি গিয়ে দেখলেন তাকে একটি খাটে রাখা হয়েছে, কাপড় দিয়ে ঢাকা। পেটটা নাকি অনেক ফুলে ছিল।

এই নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের ভেতর দিয়েই বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় আদর্শের প্রকৃত বিকৃতি শুরু। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর জাতীয় চার নেতার একজনকেও জীবিত রাখা সমিচিন মনে করেনি জিয়া, মোস্তাক চক্র এবং তাদের অনুসারীরা। প্রকৃত হত্যার রহস্য জানা যায়নি।

খালেদ মোশারফ সেনাবাহিনীর প্রধান হওয়ার পর যখন ৩২ নম্বর পর্যন্ত একটি মিছিল গিয়েছিল তখন আশাবাদী ছিলাম হয়তো বা জিয়া-মোশতাকচক্রের অবসান হয়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর সেক্টর কমান্ডার খালেদ মুশারফ যদি সেদিন সেনাবাহিনীর চেইন অফ কমান্ড ফিরিয়ে আনা এবং জেলখানায় বন্দি জাতীয় চার নেতাকে মুক্ত করার পদক্ষেপ নাও নিতেন তাহলেও হত্যা করা হতো। জেলখানার ভেতরে না হোক বাহিরে হলেও আমাদের অবশিষ্ট এই জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হতো।

বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যাকে এখনও হত্যা করার প্রচেষ্টা থেমে নেই। ২০০৪ সালে আজকের প্রধানমন্ত্রী অলৌকিকভাবে বেঁচে গিয়েছেন। ৭৫ হত্যাকারীরা এখনো ভিন্নরূপে সক্রিয়। এখনো বলা হয় ৭৫ এর হাতিয়ার গর্জে ওঠুক আরেকবার। ধিক্কার ঐ সমস্ত নেতাদের প্রতি যারা এখনো স্বপ্ন দেখে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর সকল আদর্শকে ছুড়ে ফেলে দেওয়ার। আমরা সৌভাগ্যবান যে জাতির পিতার কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আছেন। এই নেতৃত্বই আমাদের নিয়ে গেছে সম্মানের আসনে। এই নেতৃত্বেই আর পথ হারাবে না বাংলাদেশ।

লেখক: অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমেদ
কোষাধ্যক্ষ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।