০১:২৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪

চিড় ধরা নন–স্টিক প্যানে রান্না করছেন, কতটা ভয়াবহ ক্ষতি হচ্ছে জানেন কি

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০৪:২৩:২৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৩
  • / ৪১৪৬ বার দেখা হয়েছে

রান্নাঘরে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন জিনিসের মধ্যে একটি হচ্ছে নন-স্টিক ফ্রাই প্যান। রান্নার সময় কোনো খাবার এতে আটকে থাকে না বলে সব রাঁধুনির পছন্দ এটি। আবার তেলও অনেক কম খরচ হয়। ১৯৫৪ সালে বিজ্ঞানীরা প্রথম নন-স্টিক প্যান আবিষ্কারের পর বিশ্বজুড়ে অল্প সময়ের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠে এটি।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

মহামারি করোনাভাইরাসের সময় থেকে রান্নাঘরে এই নন-স্টিক প্যানের ব্যবহার বেড়েছে। ২০২০ সালে এই পাত্রের চাহিদা বেড়ে ২০ কোটি ৬১ লাখ ইউনিটে পৌঁছায়। এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিজ্ঞানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম পপুলার সায়েন্সের এক প্রতিবেদন বলছে, প্যানের নন-স্টিক প্রলেপটি সিনথেটিক ফ্লুরোপলিমার দিয়ে তৈরি। এটাকে বলা হয় পলিটেট্রাফ্লুরোইথিলিন (পিটিএফই)। তবে এটি সাধারণত টেফলন নামে অধিক পরিচিত। ২০২২ সালে অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ইকোলজি সেন্টারের প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৭৯ শতাংশ নন-স্টিক রান্নার পাত্র এবং ২০ শতাংশ নন-স্টিক বেকিং প্যানের মধ্যে পিটিএফইর প্রলেপ ব্যবহার হয়।

এছাড়া সায়েন্স অব দ্য টোটাল এনভায়রনমেন্টে বাজারে প্রচলিত বিভিন্ন ধরনের নন-স্টিক প্যান নিয়ে পরীক্ষা চালায়। সেখানে গবেষকরা রান্নার যাবতীয় প্রক্রিয়া অনুযায়ী প্যানগুলো পরীক্ষা করেন। এই রান্নায় তারা স্টিল ও কাঠের খুন্তি ব্যবহার করেছেন। গবেষণায় দেখা যায়, টেফলনের প্রলেপ দেয়া নন-স্টিক পাত্রে ছোটখাটো কোনো চিড় ধরলে তাতে রান্নার সময় ৯ হাজার ১০০টি প্লাস্টিক কণা উঠে আসে। আর প্রলেপ উঠে যাওয়ার পর রান্না করা খাবারের সঙ্গে প্রায় ২৩ লাখ মাইক্রোপ্লাস্টিক এবং ন্যানো প্লাস্টিক কণা মিশে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

গবেষণায় বলা হয়েছে, এ ধরনের চিড় খুবই বিপজ্জনক। পিটিএফই এক প্রকার পার ও পলি ফ্লুওরিনেটেড পদার্থ। এটি এমন এক প্রকার রাসায়নিক যৌগ, যা পরিবেশের সঙ্গে মিশে না। এতে মাটি ও পানি দূষণ হয় এবং জীবিত প্রাণীর দেহে জমা হতে থাকে। পিএফএএসের লাখ পরিমাণ কণা যদি একবার ছড়িয়ে যায়, তাহলে বাস্তুতন্ত্রে তা দীর্ঘসময় অক্ষত থাকে। ফলে এই উপাদানকে চিরস্থায়ী রাসায়নিকও বলা হয়।

এই চিরস্থায়ী রাসায়নিক উপাদান পরিবেশে ছড়িয়ে পড়লে তা মানবদেহে আরও অধিক পরিমাণে জমা হতে থাকবে। এতে মানুষের বিপাকীয় কাজে পরিবর্তন আসা ছাড়াও ওজন বৃদ্ধির ঝুঁকি বাড়বে এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ক্ষমতা হ্রাস পাবে।

আরও পড়ুন: দিনটা কেমন যেতে পারে আপনার, জেনে নিন রাশিফলে

গবেষকরা এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে এবং তথ্য সংগ্রহের জন্য নানা ধরনের নন-স্টিক প্যানের উপরিতল পরীক্ষা করেন। একই সঙ্গে সেসব প্যান থেকে ছড়িয়ে পড়া প্লাস্টিক কণার পরিমাণ বের করেন। এ ব্যাপারে অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব নিউক্যাসলের গ্লোবাল সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল রেমেডিয়েশনের সিনিয়র গবেষক চেঙ ফ্যাং বলেন, মাইক্রোপ্লাস্টিক ও ন্যানো প্লাস্টিক সরাসরি দৃশ্যমানের জন্য পরীক্ষা থেকে পাওয়া তথ্য তিনটি অ্যালগরিদম ব্যবহার করে ছবি আকারে রূপ দেয়া হয়। এতে বিপজ্জনক পরিমাণে প্লাস্টিক কণা দেখেছেন বলে জানিয়েছেন তারা।

ইউনিভার্সিটি অব নটর ড্যামের পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক গ্রাহাম পিসলি জানান, পিএফএএস হচ্ছে এক প্রকার রাসায়নিক পদার্থ যা দীর্ঘ সময় পরিবেশে টিকে থাকে। তুলনামূলক ক্ষুদ্র পিএফএএসে সূর্যের আলোর কারণে মাইক্রোঅর্গানিজম বা অন্য কোনো নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ভাঙন শুরু হয় না। অর্থাৎ, একবার তৈরি হলে এগুলো শত শত বছর ধরে প্রকৃতিতে টিকে থাকতে পারে। তবে তিনি এই গবেষণায় যুক্ত ছিলেন না।

এদিকে বিজ্ঞানীরা বিপদ এড়িয়ে চলতে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। খাবারে বা পরিবেশে পিটিএফই পাত্র থেকে যেন কোনোভাবে প্লাস্টিক কণা ছড়িয়ে না পরে, সে জন্য রাধুনীকে নরম খুন্তি ব্যবহারের কথা বলেছেন তারা। রান্নার সময় সতর্ক থাকতে হবে যে, রান্নার সময় ও পরিষ্কারের সময় নন-স্টিক প্যানের উপরিতলে যেন কোনোভাবে চিড় বা আঁচড় না পড়ে। আর যদি কখনো চিড় ধরে, তাহলে প্যানটি পরিবর্তনের পরামর্শ দিয়েছেন গবেষক ফ্যাং।

টেফলন পাত্রে রান্না করলে চিড় বা আঁচড়েই নয়, অতিরিক্ত তাপমাত্রার সংস্পর্শে যেন না যায় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। অতিরিক্ত তাপে প্যানের প্রলেপ থেকে বাতাসে বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। ফলে অনেকের মধ্যে পলিমার ধোঁয়ার মাধ্যমে হওয়া অস্থায়ী সর্দি-জ্বরের লক্ষণ দেখা দিতে পারে।

এছাড়া পিসলি জানিয়েছেন, ১৯৫০-এর দশকে যুগান্তকারী প্রযুক্তি হিসেবে টেফলনকে প্রচার করা হলেও ঢালাই লোহাও একই ধরনের কার্যকর। অর্থাৎ, ঢালাই লোহার পাত্র এই নন-স্টিক প্যানের বিকল্প হতে পারে। তবে এর থেকেও যেসব সাশ্রয়ী বিকল্প রয়েছে, যা তুলনামূলক পরিবেশের ক্ষতি কম করে, সেসব ব্যবহার করা উচিত।

ঢাকা/এসএম

শেয়ার করুন

x

চিড় ধরা নন–স্টিক প্যানে রান্না করছেন, কতটা ভয়াবহ ক্ষতি হচ্ছে জানেন কি

আপডেট: ০৪:২৩:২৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৩

রান্নাঘরে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন জিনিসের মধ্যে একটি হচ্ছে নন-স্টিক ফ্রাই প্যান। রান্নার সময় কোনো খাবার এতে আটকে থাকে না বলে সব রাঁধুনির পছন্দ এটি। আবার তেলও অনেক কম খরচ হয়। ১৯৫৪ সালে বিজ্ঞানীরা প্রথম নন-স্টিক প্যান আবিষ্কারের পর বিশ্বজুড়ে অল্প সময়ের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠে এটি।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

মহামারি করোনাভাইরাসের সময় থেকে রান্নাঘরে এই নন-স্টিক প্যানের ব্যবহার বেড়েছে। ২০২০ সালে এই পাত্রের চাহিদা বেড়ে ২০ কোটি ৬১ লাখ ইউনিটে পৌঁছায়। এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিজ্ঞানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম পপুলার সায়েন্সের এক প্রতিবেদন বলছে, প্যানের নন-স্টিক প্রলেপটি সিনথেটিক ফ্লুরোপলিমার দিয়ে তৈরি। এটাকে বলা হয় পলিটেট্রাফ্লুরোইথিলিন (পিটিএফই)। তবে এটি সাধারণত টেফলন নামে অধিক পরিচিত। ২০২২ সালে অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ইকোলজি সেন্টারের প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৭৯ শতাংশ নন-স্টিক রান্নার পাত্র এবং ২০ শতাংশ নন-স্টিক বেকিং প্যানের মধ্যে পিটিএফইর প্রলেপ ব্যবহার হয়।

এছাড়া সায়েন্স অব দ্য টোটাল এনভায়রনমেন্টে বাজারে প্রচলিত বিভিন্ন ধরনের নন-স্টিক প্যান নিয়ে পরীক্ষা চালায়। সেখানে গবেষকরা রান্নার যাবতীয় প্রক্রিয়া অনুযায়ী প্যানগুলো পরীক্ষা করেন। এই রান্নায় তারা স্টিল ও কাঠের খুন্তি ব্যবহার করেছেন। গবেষণায় দেখা যায়, টেফলনের প্রলেপ দেয়া নন-স্টিক পাত্রে ছোটখাটো কোনো চিড় ধরলে তাতে রান্নার সময় ৯ হাজার ১০০টি প্লাস্টিক কণা উঠে আসে। আর প্রলেপ উঠে যাওয়ার পর রান্না করা খাবারের সঙ্গে প্রায় ২৩ লাখ মাইক্রোপ্লাস্টিক এবং ন্যানো প্লাস্টিক কণা মিশে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

গবেষণায় বলা হয়েছে, এ ধরনের চিড় খুবই বিপজ্জনক। পিটিএফই এক প্রকার পার ও পলি ফ্লুওরিনেটেড পদার্থ। এটি এমন এক প্রকার রাসায়নিক যৌগ, যা পরিবেশের সঙ্গে মিশে না। এতে মাটি ও পানি দূষণ হয় এবং জীবিত প্রাণীর দেহে জমা হতে থাকে। পিএফএএসের লাখ পরিমাণ কণা যদি একবার ছড়িয়ে যায়, তাহলে বাস্তুতন্ত্রে তা দীর্ঘসময় অক্ষত থাকে। ফলে এই উপাদানকে চিরস্থায়ী রাসায়নিকও বলা হয়।

এই চিরস্থায়ী রাসায়নিক উপাদান পরিবেশে ছড়িয়ে পড়লে তা মানবদেহে আরও অধিক পরিমাণে জমা হতে থাকবে। এতে মানুষের বিপাকীয় কাজে পরিবর্তন আসা ছাড়াও ওজন বৃদ্ধির ঝুঁকি বাড়বে এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ক্ষমতা হ্রাস পাবে।

আরও পড়ুন: দিনটা কেমন যেতে পারে আপনার, জেনে নিন রাশিফলে

গবেষকরা এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে এবং তথ্য সংগ্রহের জন্য নানা ধরনের নন-স্টিক প্যানের উপরিতল পরীক্ষা করেন। একই সঙ্গে সেসব প্যান থেকে ছড়িয়ে পড়া প্লাস্টিক কণার পরিমাণ বের করেন। এ ব্যাপারে অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব নিউক্যাসলের গ্লোবাল সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল রেমেডিয়েশনের সিনিয়র গবেষক চেঙ ফ্যাং বলেন, মাইক্রোপ্লাস্টিক ও ন্যানো প্লাস্টিক সরাসরি দৃশ্যমানের জন্য পরীক্ষা থেকে পাওয়া তথ্য তিনটি অ্যালগরিদম ব্যবহার করে ছবি আকারে রূপ দেয়া হয়। এতে বিপজ্জনক পরিমাণে প্লাস্টিক কণা দেখেছেন বলে জানিয়েছেন তারা।

ইউনিভার্সিটি অব নটর ড্যামের পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক গ্রাহাম পিসলি জানান, পিএফএএস হচ্ছে এক প্রকার রাসায়নিক পদার্থ যা দীর্ঘ সময় পরিবেশে টিকে থাকে। তুলনামূলক ক্ষুদ্র পিএফএএসে সূর্যের আলোর কারণে মাইক্রোঅর্গানিজম বা অন্য কোনো নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ভাঙন শুরু হয় না। অর্থাৎ, একবার তৈরি হলে এগুলো শত শত বছর ধরে প্রকৃতিতে টিকে থাকতে পারে। তবে তিনি এই গবেষণায় যুক্ত ছিলেন না।

এদিকে বিজ্ঞানীরা বিপদ এড়িয়ে চলতে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। খাবারে বা পরিবেশে পিটিএফই পাত্র থেকে যেন কোনোভাবে প্লাস্টিক কণা ছড়িয়ে না পরে, সে জন্য রাধুনীকে নরম খুন্তি ব্যবহারের কথা বলেছেন তারা। রান্নার সময় সতর্ক থাকতে হবে যে, রান্নার সময় ও পরিষ্কারের সময় নন-স্টিক প্যানের উপরিতলে যেন কোনোভাবে চিড় বা আঁচড় না পড়ে। আর যদি কখনো চিড় ধরে, তাহলে প্যানটি পরিবর্তনের পরামর্শ দিয়েছেন গবেষক ফ্যাং।

টেফলন পাত্রে রান্না করলে চিড় বা আঁচড়েই নয়, অতিরিক্ত তাপমাত্রার সংস্পর্শে যেন না যায় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। অতিরিক্ত তাপে প্যানের প্রলেপ থেকে বাতাসে বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। ফলে অনেকের মধ্যে পলিমার ধোঁয়ার মাধ্যমে হওয়া অস্থায়ী সর্দি-জ্বরের লক্ষণ দেখা দিতে পারে।

এছাড়া পিসলি জানিয়েছেন, ১৯৫০-এর দশকে যুগান্তকারী প্রযুক্তি হিসেবে টেফলনকে প্রচার করা হলেও ঢালাই লোহাও একই ধরনের কার্যকর। অর্থাৎ, ঢালাই লোহার পাত্র এই নন-স্টিক প্যানের বিকল্প হতে পারে। তবে এর থেকেও যেসব সাশ্রয়ী বিকল্প রয়েছে, যা তুলনামূলক পরিবেশের ক্ষতি কম করে, সেসব ব্যবহার করা উচিত।

ঢাকা/এসএম